somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


""ইউনিভার্সিটির প্রথম ক্লাসে পাশা পাশি বসা দুইজন অপরিচিত মানুষ। একদম অপরিচিত! জানেনা তারা- নাম জানার মত অতি সামান্য বিষয়টি থেকে তাদের যাত্রাপথ ঠিক কতদূর যেতে চলেছে।
অনেক কাছের মানুষের তালিকায় এই অচেনা মুখ এক সময় প্রথম স্থানে চলে আসে। নামকরণ করা হয় তাকে "বন্ধু" হিসেবে।
এই মানুষটির সাথেই রাগ করা হয়। ঠিক সময়ে কোথাও আসতে না পারলে অজানা অভিমান হয়। এসাইনমেন্টের পেপারে ভূল করলে ঝারি খেতে হয়। দিতে না চাইলেও নিজের পার্সের টাকায় তার সম্পূর্ণ অধিকার দিতে হয়। আর সব শেষে অজান্তেই কিছু ভালবাসা।
কিন্তু বলা হয়না,শুধু অনুভব করা হয়- মানুষটি পাশে থাকলে এক ভাললাগা কাজ করে। ""

রুবি ডায়রিটা বন্ধ করলো।আর লিখতে পারছেনা। ইউনিভার্সিটি লাইফটা শেষ হয়েছে অনেকদিন আগে। বাসায় বিয়ের চাপ। বড় ভাই কয়েকদিন পরপর রুবিকে বিভিন্ন ছেলের ছবি দেখায়। মা প্রায় বিরক্ত হয়ে গেছে। ঘরে বিয়ের যোগ্য মেয়ে বসে আছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছেনা। বড় ভাই যা ছবি দেখায় রুবি সব না করে দেয়। বড় ভাই একবার জানতে চেয়েছিল,

- "রুবি,তোর কোনো পছন্দ আছে কি?"

সেই দিন ঠোটের কোনায় "শিমুল" নামটা এসে প্রচন্ড বিরক্ত করছিল। কিন্তু দীর্ঘ নিশ্বাসের পর মুখ ফুটে শুধু "না" শব্দটি বের হয়েছিল। বড় ভাই আড়চোখে রুবির দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুখন। কিছু একটা বুঝতে চাচ্ছিল। কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব নিয়ে রুবি নিজের ঘরে চলে যায়। শিমুলটাই কিছু বুঝতে পারলোনা,বড় ভাই কি বুঝবে!

শিমুলের সাথে রুবির শেষবার দেখা হয়েছে ইউনিভার্সিটির রেগ ডে তে। এর পর আর দেখা হয়নি।শিমুল এক মাল্টিনেশনাল কম্পানিতে জব করে। যখনি ফোন করা হয় তখনি বলে ব্যস্ত আছি। এত ব্যস্ততা কিসের?দু মিনিট কথা বললে কি হয়!
অভিমান করে রুবি ফোন করেনি অনেক দিন।অপেক্ষা করেছে শিমুলটা যদি একটু ফোন করে।কিন্তু শিমুল একবারো ফোন করেনি। এক সময় অভিমান চলে যায়,আবার ফোন করতে হয় রুবিকেই। মনকে সান্তনা দেয় রুবি-হয়তো সে সত্যিই ব্যস্ত।

আজ কথা বলতে রুবির খুব ইচ্ছে হচ্ছে।ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে রুবি।একটি বোতাম চাপলেই কল চলে যায়,কিন্তু দিচ্ছেনা।মনে প্রশ্ন এখন কি শিমুল ব্যস্ত? মনে হয় না। রাত অনেক হয়েছে।খাবার খেয়ে হয়তো শুয়ে আছে।কলটা করেই ফেলি বলে রুবি ফোন কল করলো-
ফোন ধরেই শিমুল বলল,

-হ্যালো! রুবি, কি খবর তোর?
-এইতো ভাল! তুই কি ব্যস্ত?
-নাহ্, ব্যস্ত না। তোর গলা ভারী ভারী লাগছে কেনো?
-জানিনা!
-বাসায় কিছু হয়েছে?
-নাহ্,কিছু হয়নি। মা একটু রাগারাগি করেছে,আর কিছুনা।
-কেনো?
-বিয়ে করছিনা বলে।
-হাহা! এই জন্য কি কান্নাকাটি করছিস?
-আজব! কান্নাকাটি কেন করবো। হাসি বন্ধ কর।
-না, তোর বিয়ে ঠিক হইতেছে সেই জন্য।
-ঠিক হয়নি এখনো,ঠিক হবে হয়তো খুব তারাতারি।
-ও... তাই নাকি? তা দাওয়াত কবে পাবো।
-পাবি সমস্যা নেই।এখন চুপ যা। তুই বিয়ে করবি কবে?
-তুই যেদিন করবি সেই দিন করবো।
-মানে? ও... তার মানে মেয়ে দেখা শেষ।
-নাহ্! মেয়ে খুজঁতেছি।
-তুই বললে আমি মেয়ে দেখি? মেয়েরা মেয়েদের কে ভাল বুঝতে পারে। কিরে! দেখবো নাকি।
-হুম দেখ। সমস্যা নেই!
-আমিতো তোকে চিনি। তোর জন্য ভাল মেয়ে খুঁজেদিতে পারবো।
-ঠিকাছে দেখ।
-সত্যি দেখবো?
-হুম দেখ, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখ!

রুবি চুপ হয়ে গেল। চার বছর ধরে যে কথাটা শোনার অপেক্ষায় সে আছে, সেই কথা এভাবে রুবিকে শুনতে হবে তা কখনো ভাবেনি।

-আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখবো মানে।
-মেয়ে যেটা পছন্দ করেছি তাকে দেখতে চাইলে তোকে আয়নার সামনেই দাঁড়াতে হবে।

রুবির চোখের কাজল লোনা জলে ভিজতে শুরু করেছে। আজ অপেক্ষারত সুখের জল চোখে আটকে রাখার কোনো ইচ্ছেই তার নেই।

ঐ পাশ থেকে শিমুল বলছে,

-কিরে কান্নাকাটি করছিস নাকি?

চোখের জল রুবি মুছতে মুছতে বলল,

-আজব! কান্নাকাটি কেন করবো।

#অনুগল্প
#আরিয়ান_রাইটিং
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×