somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পলিসি অফ আইসোলেসন ! _ একশোটা বছর শান্তিতে থাকতে দে ।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।


উনিশ শতকের গোঁড়া থেকে বিংশ শতক পর্যন্ত আমেরিকার পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতি আবর্তিত হয়েছে ' মনরো ডকট্রিন ' কে কেন্দ্র করে । ' মনরো ডকট্রিন ' হল ১৮২৩ সালে আমেরিকার পঞ্চম প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর কংগ্রেসে দেয়া একটি লিখিত ভাষণ । এর মূল কথা হল _ মার্কিনীরা ইউরোপে কোন হস্তক্ষেপ করবেনা এবং একই ভাবে ইউরোপিয়ানরাও মার্কিনীদের বিষয়ে নাক গলাবেনা ! বলাই বাহুল্য যে , সে সময় বিশ্বসাম্রাজ্যবাদের হর্তা - কর্তা ছিল মূলত ব্রিটিশরা । মার্কিন উপনিবেশ হারানোর ক্ষয় - ক্ষতি ইতিমধ্যে তারা কাঁটিয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ায় ঘাটি গেড়ে । ফলে মার্কিনীদের ঘাঁটানোর আর কেউ থাকলনা । তারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রইল গোটা একশো বছর । এই সময়ে মার্কিনীরা নিজেদের মতো করে এগুতে লাগলো , শিল্পায়ন , নগরায়ন , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ফলে বিংশ শতাব্দীতে তারা আত্মপ্রকাশ করল বিশ্ব সভ্যতার নিয়ন্ত্রক হিসেবে !

আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের মানুষ শান্তিকামি । আমরা যুদ্ধে বিশ্বাস করিনা ! আমরা সম্প্রিতি ও সংহতির মাঝে বাঁচতে চাই । আমরা বাইরের কোন রাষ্ট্রের উপর হস্তক্ষেপে আগ্রহী নই , এবং তার সাথে সাথে ভিনদেশী সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া - উপনিবেশবাদের অধীনে ও থাকতে রাজি নই । বিশ্বায়নের যুগে একেবারে বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্ভব কিনা সেটা হুট করে বলা শক্ত । ফলে একশো বছর শান্তিতে থাকা আমাদের জন্য মরীচিকা ! অন্তত তিনটা কাজ করা যেতে পারে _

১। বিশ্বব্যাংক , আইএমেফ , বিদেশী এনজিও , খ্রিষ্টান মিশন , সহ সমস্ত অর্থলগ্নিকারি ও ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান এর কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে ।

২। ভারি শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে । অন্তত প্রাথমিক স্তরে এই তিনধরনের কারাখানা তৈরি প্রয়োজন , ক _বৃহৎ বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প ( কুইক রেন্টাল না )। খ _ ইস্পাত শিল্প কারখানা । গ_ ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা ।

৩। বাংলাদেশ ও বঙ্গপসাগর অর্থনৈতিক ও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভোগোলিক স্থান । এই বিষয়টি মাথায় রেখে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে জিওপলিটিক্স টা বুঝে এবং সেই মতো কাজ করতে পারলেই ভারতীয় সম্প্রসারনবাদ বন্ধ করা যাবে ।


২ ।

বাংলাদেশের প্রধানতম সমস্যা কোনটি ? কোরাপসন নাকি অপ্রতুল জ্বালানী শক্তি ?ট্রাফিক জ্যাম নাকি কীটনাশক বা সার ? উহু ! আমাদের সবচে বড় সমস্যাটা হল আমরা স্বপ্ন দেখতে পারিনা । আমরা একটা ডিপরেসড জাতি । বাসে ঝুলতে ঝুলতে , চায়ের দোকানের খুপচিতে , বা ডাইনিঙে ঢেকুর তুলতে তুলতে আমরা রাষ্ট্রীয় হতাশার গল্প করি ।হতাশা আমাদের ডিএনএ প্রতিলিপিতে পার্মানেন্ট স্থান করে নিয়েছে ।

জাতিকে মাথা তুলে দাড়াতে হলে রাষ্ট্রীয় হতাশা কে অবশ্যই ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে । এর জন্য প্রয়োজন সংস্কার ;মনস্তাত্ত্বিক সংস্কার ! এই সংস্কারের জন্য প্রয়োজন সাংস্কৃতিক বিপ্লব !আমরা একটা শক্তিশালী সাংস্কৃতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি যা গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে কাপিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে ।

বিপ্লবের কি আদৌ কোন প্রয়োজনীয়তা আছে ? বিপ্লবের জন্য আমরা কি প্রস্তুত ? বিপ্লবের ধরন কি হবে ? আদর্শ কি হবে ?- এই প্রশ্ন গুলো গুরুত্বপূর্ণ ।সমগ্র রাষ্ট্র তার সাথে সাথে বিশ্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা না থাকলে এই বিষয়ে সঠিক উত্তর দেয়া মুস্কিল !তবে আমি শুধু এই টুকু বলতে চাই _ বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা ছিল , আছে এবং থাকবে !

এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন _ সঠিক পরিকল্পনা আটা । নিজেদের সামর্থ্য , সম্ভবনা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে পুঙ্খানু পুঙ্খানু পরিসংখ্যান তৈরি করা ।

আমাদের একটা পঞ্চাশ বছর মেয়াদি দীর্ঘ পরিকল্পনা নিতে হবে । পঞ্চাশ বছর পর আমারা নিজেদের কোথায় দেখতে চাই সেটা পরিস্কার হওয়া জরুরি । মজার বিষয় হল , পাঁচসালা বা পঞ্চবার্ষিক যে পরিকল্পনা করা হয় , এককালে সেটা ও করা হতো প্যারিসে বসে , হার্ভার্ডের পিনিকগ্রস্থ অধ্যাপকদের দ্বারা । পশ্চিমা অর্থনীতি হল ' অর্থ , মরনাস্র আর ঋণের ' অর্থনীতি । আমাদের অর্থনীতি হল - ভাত , মাছ , আর পাঁটের অর্থনীতি । আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্প হার্ভার্ড পিএসডি রা ঠিক করলে বুঝ কি অবস্থা হবে ? কথাটা এই কারনেই বললাম , যে পঞ্চাশ বছরি পরিকল্পনা করার জন্য আমাদের সেই মেধা আছে কিনা ? উহ , এ কাজটা অসম্ভব শক্ত । একইসাথে রাজনীতি , অর্থনীতি , সমাজ , ধর্ম , বিজ্ঞান ,অসংখ্য বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকা সুপারকম্পিউটার টাইপ থিঙ্কট্যাংকার দরকার । কিভাবে পাব ?

পৃথিবীর সবচে মূল্যবান সম্পদ হল _ বিশ্ববিদ্যালয় । উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো দেখ_ কতখানি এগিয়ে আছে । আমরা এগুতে পারছিনা । যে কোন বিষয়ে উচ্চ ডিগ্রি পর্যন্ত ফ্যাসিলিটি তথা গবেষণাগারের অভাবে সম্ভব হয়না । সরকার কে চোখ বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে , বাজেটের পরিমান বাড়াতে হবে সর্বোপরি সমগ্র শিক্ষা বেবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে ।রিলিজিয়ন এবং সেকুলারিজম নিয়ে যে কুতকুত খেলা চলছে , এটা বন্ধ করতে হবে । একটা দেশের উন্নতি সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কোয়ালিটির সাথে সমানুপাতিক ।

টাকা তো নাই ! তাহলে কি ঋণ নিতেই থাকব ?

আমাদের সেই আর্থিক সঙ্গতি এবং কারিগরি দক্ষতা নেই । কিন্তু এই ঋণ ঋণ খেলার মধ্যে থাকলে যে সম্ভবনা টুকু আছে সেটিও শেষ হয়ে যাবে । এখন আমরা কি করব ? এটা অল্প কথায় বলা কঠিন ! বিকল্প কি করা যায় তা বলার আগে কেন ঋণের সাথে জড়াতে অনিচ্ছুক সেটা ব্যাখ্যা করা যাক । ১। অর্থনীতি নির্ভরশীল হয়ে যায় , ২। গণতান্ত্রিক বেবস্থা ব্যাহত হয় ,৩। নয়া -উপনবেশবাদ ঘাটি গাড়ে ৪। বাজার দখল হয় বিদেশী পণ্যে ৫। নিজস্ব ভারী শিল্পকারখানা গড়ে উঠেনা । খেয়াল করলে দেখবে , বড় ঋণ দানকারী সংগঠন গুলো পৃথিবীর কোথাও ভারীশিল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেনা , করলেও এতোরকমের শর্ত থাকে যে রাষ্ট্র বেহাল অবস্থায় পড়ে ! একবার কোন রাষ্ট্র যদি পশ্চিমা ঋণের খাতায় নাম লেখায় তবেই শেষ ! এবার বিকল্প কাজের কথা বলা যাক _ ১। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন কে শক্তিশালী করা ২।চীন - জাপান বছর খানেক আগে নিজেদেরমুদ্রায় কেনা কাটা করেছে , সেই ভাবে চীন , জাপান , বা রাশিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক চুক্তি করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা, বিশেষ করে বিনিময় বাণিজ্য করা যেতে পারে । ৩। অভ্যন্তরীণ কৃষি বিপ্লব ঘটানো ৪। সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলুর মধ্যে বিনিময় চুক্তি করা যায় কিনা তা ও খতিয়ে দেখা উচিৎ ।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×