এক ।
নভেম্বরের আকাশ , অ্যারিজোনা । টুকরো টুকরো মেঘ ঝুলে আছে । সূর্যের ম্লান আলোয় অপরাহ্ণের অ্যারিজোনা কেমন যেন এক অপার্থিব বিষণ্ণতার জন্ম দিয়েছে । দুরের সরু পথ গলিয়ে হেটে আসছে মেয়েটা । দু ' পাশে সারি সারি ম্যগনলিয়া গাছ । শুকনো পাতার মর্মর শব্দে ভেঙে হেটে আসছে ও । বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি , চোখ জুড়ে ভারী ফ্রেমের চশমা আর খোঁপাময় গাঁদাফুল । মার্কিন মুল্লকে এই বাঙ্গালিয়ানা কি করে সম্ভব করেছে মেয়েটা কে জানে ।
অর্ক ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে । মেয়েটাকে সে বারবার করে না করে দিয়েছে এমুখো হতে । তবুও সে আসবে । সপ্তাহান্তে সে একবার করে আসবেই , আসবে ।
অর্ক বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো । তার হাতে সময় কম । চারদিকের দেয়াল ক্রমশ সংকুচিত হয়েআসছে , অন্ধকার নেমে আসছে চোখজুড়ে ।
কংক্রিটের উঁচু স্লেপের উপর বসেছে মেয়েটা । মাথাভর্তি কালো চুল কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে ওর ডান হাতের আঙ্গুলগুলো , বা হাতটা কাঁপছে অস্থিরভাবে _যেন নিজের অজান্তেই ।
‘আজকের বিকেলটা যেন বিডোফেনের Moonlight sonata র মতই বিষণ্ণ। মেঘগুলো একটু একটু করে গ্রাস করে নিচ্ছে আকাশ ।
কেমন আছে অর্ক ?’
‘ অর্করা ভালো আছে আন্নী । এ এক অভিকর্ষ শূন্য ভালো থাকা । টান নেই , প্রান নেই _ তবুও। তা তোমার লেখালেখির খবর বল । নতুন কিছু লেখছ ?’
' বেঁচে থাকাটুকুই তো এখন এক মহাকাব্যিক দুঃসংবাদ , অর্ক । শরীরের ভেতরকার অন্ধকার এখন বিষণ্ণতার কণ্ঠ । কবিতা , অস্র কিবা কর্কশ কোন হাতের প্রতি এক অনিশ্চিত অসহায় দৃষ্টি । ডিস্কে ডিস্কে সাজানো গত শতকের পুরনো সব অনুভূতি ।
জানো , আমার না , আর লেখার কিছু নেই । এলএসডিরা ফুঁড়িয়ে গেছে , শব্দরা দিশেহারা , বাক্যগুলো প্রবল অস্থিরতায় চিরে - ছিঁড়ে যাচ্ছে । অনুভূতির ব্যাকরণ ধ্বসে গেছে কোয়ান্টাম শূন্যতার চাপে ।
চৌরাস্তার কেকোফনি , লেননের ইম্যাজিন , রাসেলের ' পাওয়ার ' , তোমার রক্তচক্ষু সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা , আরও ঝাপসা , আরও ঝাপসা হয়ে আসছে ।
আমি ফুঁড়িয়ে যাচ্ছি , বুড়িয়ে যাচ্ছি , মুড়িয়ে যাচ্ছি সময়ের অনন্যতায়, প্রাচুর্যের অসারতায় , চেতনার অস্থিরতায় আর তুমি এবং তুমিহীনতায়।'
অর্ক চোখবন্ধ করে আছে । অতীতের সোনালীক্ষণ গুলো আলতো করে ছুয়ে দিচ্ছে ।
‘আন্নী , তুমি জানো তা আর সম্ভব না । সময় আর জগতের এক অনতিক্রম্য দেয়ালের দু ‘ ধারে আমরা আঁটকে পরেছি । বিচ্ছিনতাই আমাদের নিয়তি ।মহাকাল হয়তো এমনি করেই চেয়েছিল আমাদের । যেখানে স্রেফ খণ্ড খণ্ড সুখস্মৃতি গুলোই শুধু বেঁচে থাকবে আমাদের ভবিষ্যতের টিকে থাকার রসদ হয়ে । তুমিও নাহয় এভাবেইবেঁচে থাকবে ।'
আন্নীর দম বন্ধ হয়ে আসছে । বুকের ভেতরের ঝড় টা যেন পার্থিব জগত অনুভব করে নিয়েছে । শো শো করে বাতাস বইছে । টুপ টাপ শব্দে শরীরে হাল ফুটাচ্ছে বৃষ্টি কনা । অর্ক নির্লিপ্ত চোখে চেয়ে আছে ।
‘ অর্ক ! আমি কফি চা এনেছি তোমার জন্য । মনে আছে আলাস্কায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চা খাওয়ার কথা ? তুমি কফিচা খাওয়ার জন্য কি পাগলামিটাই না করতে তখন ।'
অর্ক চায়ের কাপের গভীরে চেয়ে আছে । বৃষ্টির ক্ষুদে ফোঁটা গুলো টুক করে আছড়ে পড়ছে কফিচার গায়ে । আহ ! কি অসাধারণ দৃশ্য ।
' কি হল , খাচ্ছ না যে ?'
‘ না , ভাবছি । বৃষ্টির জলের কোয়ার্কগুলো চায়ের জলের কোয়ার্কের সাথে মিশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কি একবারও ভেবেছিল যে তারা পতিত হতে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে তীব্রতম মমতামাখা এককাপ কফি চায়ে ?'
আন্নী মাথা নিচু করে হাসছে । চোখের জল আর বৃষ্টির জলের রং যদি ভিন্ন হত তবে হয়তো আন্নীর গাল বেয়ে এখন দু ‘ রঙ্গা জলের ধারা দেখা যেতো ।
মেয়েটা একটুস খানি এগিয়ে অর্কের শরীর ঘেঁষে বসলো । কাঁধে মাথা রেখে অর্কর হাতে বাচ্চাদের মতো আঁকিবুকি করে যাচ্ছে ও ।
‘আন্নী ! ‘
‘ হু , বল ।‘
‘ আজকের পর থেকে আর কখনোই দেখা হবেনা । তুমি জানো আমি কেন বলছি । আমায় ক্ষমা করে দিও । আমার সময় ফুঁড়িয়ে আসছে ।তোমায় এখনি যেতে হবে আন্নী । ভালো থেকো ।
করুণ চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটা । সে চোখের ভাষা পড়তে পারছে অর্ক । কিন্তু ওর কিছুই করার নেই ।এ যে প্রকৃতির নিয়ম ।
ক্লান্ত পায়ে উঠে দাঁড়ালো ও । ‘ অর্ক ।তোমার একটা স্মৃতি আমার গালে একে দিবা প্লিজ ?
‘ না , আন্নী । আমাদের একসাথে থাকা সময় গুলোই আমাদের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি । যদি সেই স্মৃতি গুলো ভবিষ্যতের ক্যানভাসে আঁকতে পারতাম তাহলে হয়তো তোমার
গাল , কপাল আর ঠোঁটের ইলেকট্রনদের শুষে নিতাম ।কিন্তু এখন আর টা সম্ভব নয় ।'
অর্ক ঘুরে হাঁটতে শুরু করল । এই মুহূর্তে হয়তো একজন মানুষের বুকের ভেতরে সবচে যন্ত্রণাময় অনুভূতির জন্ম নেয়ার কথা । হাহ ।
দুরের সরু পথ গলিয়ে হেটে যাচ্ছে মেয়েটা । অর্কর কুঁচকে থাকা চোখজোড়া একবার দেখে নিলো হাতের সাদা ফিনিক্স কলমটা । আন্নীর দেয়া শেষ উপহার ।
দুই ।
পিট সিগার । মাউণ্ট হলি সিমেট্রির কেয়ারটেকার । মুখ থেকে গলগল করে ধুঁয়া ছাড়তে ছাড়তে উঠে দাঁড়ালো । দূরের সরু পথ গলিয়ে পাশের সারি সারি ম্যগনলিয়া গাছ ফেলে এশিয়ান মেয়েটা হেটে যাচ্ছে । বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি , চোখ জুড়ে ভারী ফ্রেমের চশমা আর খোঁপাময় গাঁদাফুল ।প্রতি সপ্তাহান্তে তাকে একবার দেখা যায় । গত একবছরের কোন উইকএন্ড বাদ যায়নি । মেয়েটি যেন ঘড়ি ধরে আসে , ঘড়ি ধরে আবার চলে যায় । আহ । কি চমৎকার দেখতে মেয়েটা । না জানি তার কোন প্রিয় মানুষ শুয়ে আছে এখানে ।
পাদটীকা _
মাংস পচা গন্ধে শরীর গুলিয়ে যাচ্ছে আমার । পায়ের নিচের অংশ অসাড় হয়ে গেছে , কোন অনুভূতি পাচ্ছিনা । মাথার ভেতরটাও ভোঁ ভোঁ করছে ।
চারদিকের মাটির দেয়াল কফিন চিরে ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে , অন্ধকার নেমে আসছে চোখজুড়ে । আমার সময় ফুঁড়িয়ে আসছে । ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার মধ্যেও পরম পরিতৃপ্তি পাচ্ছি । ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলাম । যাক গল্পটা লিখে ফেলা গেছে । সাদা রঙ্গের ফিনিক্স কলমটার কালি শেষ হয়ে আসছে । বড়জোড় এক আধটা শব্দ আর লিখা যাবে । এইবার একশব্দে গল্পের নামটুকু লিখি ফেলি _ ‘ ফিনিক্স ‘ ।
আলোচিত ব্লগ
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।
কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।
ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।
কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।