somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট: একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা

১০ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইসরায়েল ফিলিস্তিন সমস্যা তথা মধ্যপ্রাচ্যের এই সঙ্কট নিয়ে সম্ভবত এটাই আমার শেষ লেখা হতে চলেছে। এগুলো আসলে আমার বিষয় নয়। এখন জানি না কেন, তীব্রভাবে বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। এইসব যুদ্ধ মৃত্যু রক্ত কান্না হাহাকার সহ্যের সীমা পেরিয়ে যায়। তাই ইদানীং দেখা অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছি। আমি কবিতার মানুষ। কবিতা নিয়েই থাকতে চাই। এখানে এ বিষয়ের ওপর বেশ কিছু লেখা পড়ে নিরাশ হয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম। এটা আগের লেখারই সম্প্রসারিত অংশ হতে চলেছে। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আমার জানাশোনা অধ্যায়ন সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয়া উদ্দেশ্য। ব্লগে এ পর্যন্ত এর ওপর যতো লেখা পড়েছি, সেগুলো শতভাগ ভুল ধারণার ওপর স্থাপিত মনে হয়েছে। পাঠক মাত্রই সেসব পড়ে বিভ্রান্ত হবে। অল্প জ্ঞান অনেকক্ষেত্রে অজ্ঞতার থেকেও ক্ষতিকর। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশের জন্য ব্যাপারটা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এরকম উদাহরণ কম নেই এখানে। সেটা ভেবেই কলম তুলে নেয়া। এক পর্যায়ে নিজের ভিতর গভীর তাগিদ অনুভব করলাম যে, এখন নীরব থাকার সময় নয়। সুযোগ যখন আছে, তখন সবাইকে সত্য ও সঠিকতার সঙ্গে পরিচয় করানো নিজের পবিত্র নাগরিক দায়িত্ব বলে মনে হলো। ব্লগ আছে বলেই আজ লিখতে পারছি, বলতে পারছি, নাহলে কথাগুলো সম্ভবত অব্যক্তই থেকে যেতো। বিভিন্ন সময় আলোচনায় বলেছি, এই সাইটটি আমার খুব প্রিয়। অনেককিছু পেয়েছি এখান থেকে। আরেকবার গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি জনা আপুসহ ব্লগ সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

এ ব্লগে আমার পঠিত লেখাগুলো যে সব সূত্র অবলম্বন করে লেখা হয়েছে, সেগুলো নিরপেক্ষতার ধারেকাছেও নেই। সফেদ মিথ্যচার, কুযুক্তি কুতর্কে পরিপূর্ণ নির্লজ্জ আরব প্রোপাগাণ্ডার ওপর তৈরি। আগে লিখেছি কিছুটা। এখন সেটাকে বর্ধিত করছি। মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল ফিলিস্তিন দীর্ঘ সঙ্কট ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমার যা জানাশোনা অধ্যায়ন তাতে মনে হয়েছে যে, দেশে কারোই এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা নেই। সাধারণ মানুষদের কথা না হয় বাদই দিলাম। বিভিন্ন মিডিয়ায় যারা এসব বিষয়ে নিজেদের গবেষক বিশ্লেষক দাবি করে থাকে, তাদের আলোচনা কথোপকথন শুনে যার পর নেই লজ্জা পাই। এসব আলোচনায় ইসরায়েল ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যের ওপর তাদের বেসিক জানাশোনারও ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। সেখানে শুধু ঢালাওভাবে ইসরায়েলিদের ইহুদিদের ঘৃণা অপবাদ অপমান গালিগালাজের ক্রোধিত প্রদর্শন। আদতে সব পূর্ণ হাওয়াবাজী, অপালাপ। সত্যি বড়ো দুর্ভাগ্যজনক যে, ইহুদিদের ব্যাপারে হামাসের সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষের মনমানসিকতার তেমন কোনও পার্থক্য নেই। এটা আমাকে খুব ব্যথিত করে। ব্লগে এ ব্যাপারে দেখেছি, অনেকে হিটলারের ইহুদীবিদ্বেষের পক্ষে পর্যন্ত কথা বলছে। ইহুদি গণহত্যার প্রসংশা করে মতামত দিচ্ছে। এদের মনমনমানসিকতা অত্যন্ত বিপদজনক। এভাবে আমাদের দেশের প্রধান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও তারা বিভিন্ন সময় ইনিয়েবিনিয়ে অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ করে থাকে। এখানেও হয়। কথায় আছে দুরাত্মার ছলের অভাব নেই। এরা হচ্ছে সেই দুরাত্মা। ব্লগের এডমিন মডারেটরের এগুলো দেখা উচিত। সে আশা অবশ্য বহু আগে ছেড়ে দিয়েছি। সভ্য সমাজে ভায়োলেন্সের স্থান থাকতে পারে না। এর পক্ষে একটা বাক্যকেও গ্রহণ করার কোনওরকমের কোনও সুযোগ নেই। ইসরায়েল রাষ্ট্র, সেখানকার শাসন প্রশাসন, শাসকগোষ্ঠীর নীতি কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা সমালোচনা করা যেতেই পারে। সেটা একটা ব্যাপার। আর পুরো ইহুদি ধর্মালম্বী মানুষদের প্রতি নির্বিচারে উগ্র বিদ্বেষ ঘৃণার হিংস্রক প্রকাশ আরেক ব্যাপার। এখানে কয়েকজনকে দেখলাম, রীতিমতো ইহুদিদের ধ্বংস মৃত্যু চেয়ে উগ্র উস্কানি দিচ্ছে লেখায়, মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে। জানি না ব্লগের কোন নীতিমালায় নির্দিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে এভাবে উগ্র ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানো গ্রহণযোগ্য হতে পারে! সবচেয়ে আজব লেগেছে দুয়েকজনকে বলতে দেখলাম, ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলের ভিতর হামাসের বর্বরোচিত হামলা নাকি ইসরায়েল আমেরিকা ও হামাসের একটি সম্মিলিত ষড়যন্ত্র, সাজানো নাটক। পড়ে ভীষণ অবাক হলাম। দীর্ঘদিন ব্লগে থেকেও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এদের জানশোনার দৌড় দেখে সহব্লগার হিসেবে খুব লজ্জা পেয়েছি। এদের আসলে কোনওরকমের কোনও ধারণাই নেই এ ব্যাপারে। এক্কেবারে শূন্য। এরকম অকাট অজ্ঞতা অজ্ঞানতা নিয়ে দুয়েকজনকে রীতিমতো এর ওপর সিরিজ চালাতে দেখলাম। একজন প্রবীণ ভদ্রলোক উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে ভাসিয়ে দিয়েছে ব্লগ। সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে ৭ অক্টোবরের ঘটনা ষড়যন্ত্র, নাটক, হামাস আমেরিকা মিলে করেছে ইত্যাদি। বাস্তবতা হলো, ওই ভদ্রলোক যদি ফিলিস্তিন বানান সঠিকভাবে ইংরেজিতে করতে পারে, সেটাও আমার কাছে আশাতীত হবে। অল্পবিস্তর মোটামুটি পুরো মুসলিম বিশ্বেই এসব ঘটছে। বিভিন্ন জায়গায় কিল জুস, এলিমিনেট জুস লেখা পোস্টার ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সভা সমাবেশ মিছিল মিটিঙে মুখর লোকজন। এসব ইহুদি বিরোধী প্রতিবাদে চার পাঁচ বছর বয়সের মাসুম বাচ্চার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে খেলনা একে৪৭, গ্রেনেড, রকেট লাঞ্চার। পারলে এখনই বোমা মেরে সব ইহুদিদের উড়িয়ে দেয়। সত্যি দুঃখজনক।

আশির দশকের জঙ্গি সংগঠন হামাস। এটা আমার তোমার কথা নয়, স্বয়ং হামাসই দাবি করে। তারা ইসরায়েল রাষ্ট্র তো দূর, মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের অবস্থানকেও গ্রহণ করে না। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইহুদিদের সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত তাদের সশস্ত্র যুদ্ধ জঙ্গিবাদ চলবে বলে নিজেরাই দাবি করে। এটাই তাদের মিশন। খুব দুঃখ হয় যখন দেখি এরকম একটি হিংসক উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের তুলনা করা হয় ব্লগে। সত্যি হতাশাজনক। অজ্ঞতা অজ্ঞানতার এরকম চরম প্রকাশ সহ্যের বাইরে। বোকো হারাম আল কায়েদা আই এস এগুলো তো সাম্প্রতিককালে এসেছে। উগ্রবাদ জঙ্গিবাদে এদের আসল অভিভাবক হামাসই। হামাস থেকেই প্রেরণা নিয়েছে। মিসর জর্ডান থেকে বিতারিত হয়ে হামাস ঘাঁটি গেড়ে বসেছে ফিলিস্তিনে। এদের নির্মমতা বর্বরতার শেষ নেই। এরা টার্গেট করে থাকে সাধারণ নিরস্ত্র ইসরায়েলি ইহুদিদের। এদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ফিলিস্তিনিরাও রেহাই পায় না। ভয়ঙ্কর মৃত্যু ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। স্বস্বীকৃত কট্টর জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস। ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতিও কোনওরকমের কোনও মমত্ববোধ নেই। এ যুদ্ধেই সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে হামাস। তাদের গাজা ছাড়তে দিচ্ছে না। এরা আসলে পিশাচ। এদের নিশ্চিতরূপেই ধ্বংস করতে হবে। নাহলে এরাই বহু কষ্টার্জিত এ মানবসভ্যতাকে ধ্বংস করে দিবে। তাই হামাস বিরোধী এ যুদ্ধে আজ আমিও একজন ইসরায়েলি, আমিও ইহুদি। হামাস ও সমমনা আরও কিছু উগ্র সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যকেই নরক বানিয়ে রেখেছে। দুঃখজনক যে, হামাসের আজকের এই বাড়বাড়ন্তের জন্য সাধারণ ফিলিস্তিনিরাও তাদের দায় এড়াতে পারে না। তাদের নির্বুদ্ধিতার পরিণামই আজ তাদের ভোগ করতে হচ্ছে। গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিরা সব ভালো জানে। সব তাদের নখদর্পনে। গাজার চারিদিকে ছড়ানো হামাসের জঙ্গি সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক। এখানে ওখানে রকেট বোমা নিক্ষেপের বড়ো বড়ো সামরিক স্থাপনা এগুলো সব ফিলিস্তিনিদের চোখের সামনে গড়ে উঠেছে। এই সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলো গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিরাই। আশা করেছিলো যুদ্ধ করে স্বাধীন দেশ দিবে। ফলাফল, তারপর থেকে ফিলিস্তিনে সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রকৃয়া সমাপ্ত। আর কোনও নির্বাচন ভোট কিচ্ছু নেই। পিএলওসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল মতাদর্শকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের এইডের টাকা দিয়ে ইসরায়েলে জঙ্গি হামলার জন্য বিরাট ব্যয়বহুল সামরিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে হামাস। গাজার সর্বত্র সমরাস্ত্রের গোডাউন বানিয়েছে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে খুঁড়ে। সেখান থেকে চব্বিশ ঘন্টা ইসরায়েলের আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে রকেট বোমা নিক্ষেপ করা হয়। তাদের টার্গেট সাধারণ বেসামরিক ইহুদি। যেমন বলেছি, হামাস ফিলিস্তিনিদেরও বন্ধু নয়। আগাগোড়াই বর্বর জঙ্গি সংগঠন। এদের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের পরিণামই আজ ভোগ করতে হচ্ছে গাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিদের। এই দীর্ঘ সময়ে হামাস বিশাল বিষবৃক্ষ হয়ে উঠেছে। ৭ অক্টোবর সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে ইসরায়েলে যেয়ে ১৪০০ ইসরায়েলি হত্যার পর আর কোনও অপশন খোলা রাখেনি তারা ইসরায়েলের জন্য। প্রতিঘাত হবেই। সেটারই অনিবার্য পরিণাম, ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে যেয়ে আইডিএফ’র সামরিক অভিযান। এ যুদ্ধে ইসরায়েলের বিন্দু পরিমাণও দোষ নেই। তারা পরিস্থিতির শিকার। তাদের সামনে কোনও বিকল্প ছিলো না। বিস্তারিত পরবর্তীতে আলোচনায় আসতে পারে। এগুলো আসলে বড়ো আলোচনার বিষয়। অল্প কথায় শেষ করা যায় না। হামাসকে নির্মূলে ইসরায়েল এছাড়া কি করতে পারতো? আকাশপথে বিমান যোগে কোটি কোটি লিফলেট ছড়িয়েছে তারা সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জন্য। সেখানে আরবিতে পরিষ্কার লেখা, গাজা ছেড়ে আপনারা চলে যান। নইলে সামরিক অভিযানে মৃত্যু হতে পারে। যুদ্ধের সবরকম নিয়মকানুন মেনেই যুদ্ধ পরিচালিত করছে ইসরায়েল। যেমন বলেছি, এর মাঝে হামাস বিরাট বিষবৃক্ষ হয়ে উঠেছে। ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর ইসরায়েলের নাকের উপর পানি উঠে গেছে। তাদের সামনে হামাস বিরোধী এ যুদ্ধের বিকল্প ছিলো না। যুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রায় বারো হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। আহত কয়েক গুন। অনেকেকে বাকি জীবন অঙ্গহানির অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে। গাজা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সামান্য বিবেকের তাড়না যার মাঝে অবশিষ্ট আছে, তার কাছে এসব কোনওরকমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর সবার মতো আমিও চাই যুদ্ধ বন্ধ হোক। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ইহুদি মুসলমান আমার কাছে আলাদা কিছু নয়। মাতৃগর্ভের ধর্ম হয় না। সবাই আমার কাছে সেই একই মায়ের সন্তান। আমি পৃথিবীর শুভবোধসম্পন্ন শান্তিকামী মানুষদের একজন। কিন্তু যখন আমি আমার অধ্যায়ন ও জানাশোনার দিক থেকে পুরো ঘটনা বা সার্বিক পরিস্থিতিকে বিচার বিশ্লেষণ করবো, তখন আমাকে অবশ্যই সর্বাংশে নির্মোহ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। সঠিক তথ্য দিয়ে যৌক্তিক আলোচনা করতে হবে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে। নইলে যে জ্ঞানপাপীদের দলে নাম লেখাবো।

ইসরায়েল একটি সভ্য দায়িত্বশীল আধুনিক রাষ্ট্র। উন্নত চিন্তাভাবনার সুশিক্ষিত সভ্য মানুষ ইসরায়েলিরা। কাছাকাছি সময় ডিস্টেন্স রানার কেনিয়ান ইসরায়েলি লোনা সালপেটারের সাক্ষাৎকার পড়লাম। তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলের মানুষের। কাজের সন্ধানে কেনিয়া থেকে ইসরায়েলে এসেছিলেন। এসে নতুন জীবন পান তিনি। সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ইসরায়েলিরা খুব ভালো সহযোগিতা পরায়ন সজ্জন মানুষ। ইসরায়েলে এসে কখনও মনে হয়নি অন্য দেশে বাস করছেন। ইসরায়েলি এ্যাথলেটিক্স কোচ ডেভ সালপেটারকে বিয়ে করে সেখানে থিতু হয়েছেন লোনা। নাগরিকত্ব পেয়েছেন। স্বামী এক ছেলে নিয়ে এখন ইসরায়েলের সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন। বিভিন্ন সময় এরকম আরও লোনার গল্প জেনেছি। সবাই ইসরায়েল সম্পর্কে ভালো বলেছে। লোনা সালপেটারের মতো পৃথিবীজুড়ে হাজারো বিপন্ন প্রান্তিক মানুষের জীবনে আশার আলো হয়ে এসেছে ইসরায়েল নামক মহান রাষ্ট্রটি। ভ্রমণের জন্য আজ বিশ্বের ব্যয়বহুল রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম ইসরায়েল। ওখানকার অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী। বসবাসের জন্য রাজধানী তেল আবিব পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর। এছাড়াও বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা ব্যাবস্থা ইসরায়েলের। আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া ইউরোপেরও উন্নত বেশকিছু দেশের থেকে এগিয়ে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা। ফিলিস্তিনিরা স্বয়ং চিকিৎসার জন্য ইসরায়েলের ওপর পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ইসরায়েল থেকে অনুমতি নিয়ে তাদের সেখানে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। স্বাস্থ্য খাতে ইসরায়েলে প্রচুর বিদেশি কর্মরত। আমাদের পাশের দেশ ভারত থেকে চিকিৎসক ও নার্স হিসেবে ভালো পরিমাণে ভারতীয় কাজ করছে সেখানে। সবাই ভালো আছে। যেমন বলেছি, বিরাট শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ইসরায়েল। এর সুফল পাচ্ছে অভিবাসী ভারতীয় কর্মী শ্রমিকরাও। একইভাবে আফ্রিকা এশিয়ারও বেশকিছু দরিদ্র দেশের মানুষের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ইসরায়েল। বিভিন্ন সেক্টরে বিদেশিরা আত্মসম্মান ও গৌরবের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তারা সবাই আজ ইসরায়েলের শক্তিশালী সমৃদ্ধ অর্থনীতির সুবিধাভোগী। কোনওদিন শুনলাম না, কর্মক্ষেত্রে কোনও প্রবাসী শ্রমিক কর্মীকে কোনওরকমের সম্মানহানির স্বীকার হতে হয়েছে সেখানে। অথচ আশেপাশের আরব রাষ্ট্রগুলোতে ব্যাপারটা চিন্তারও অতীত। বিশেষ করে নারী গৃহকর্মীদের সঙ্গে আরবদের অমানবিক আচরণ সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশি ওয়াকিবহাল। ওগুলো বলতেও খারাপ লাগে। ইসরায়েলেও একইভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রচুর সংখ্যক নারী গৃহকর্মী কর্মরত। কিন্তু সেখানে এসব নির্যাতন তো দূরের ব্যাপার, দুর্ব্যবহারও করা হয় না কারও সাথে। এরকম কোনও অনিয়ম প্রমাণ হলে নিশ্চিতরূপে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে। সামাজিকভাবে হেয় হতে হবে। এগুলো আসলে হয় না ইসরায়েলে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত অগ্রসরমান দেশগুলোর সামনের সারিতে অবস্থান ইসরায়েলের। অপরাধের পরিমাণ শূন্যের কোঠায়। হত্যা ধর্ষণের মতো জঘণ্য অপরাধ একেবারেই নেই। বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন। অপরাধ করে পার পাওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। সামান্য অনিয়ম করেও বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। আইনের প্রয়োগ, বিচারিক প্রকৃয়া শতভাগ নিরপেক্ষ ও পূর্ণরূপে কার্যকর। ঘুষ দূর্নীতি অনিয়ম এসবের সঙ্গে মোটেও পরিচিত নয় ইসরায়েলিরা। আসলে তারা এতোটাই সভ্য দায়িত্বশীল মানুষ যে, আমাদের দেশের মানুষদের দৃষ্টিকোণ থেকে যা আসলে চিন্তারও বাইরে। চলমান যুদ্ধেই দেখলাম, ইসরায়েলের একজন ডানপন্থী মন্ত্রী গাজায় এটম বোমা মেরে গাজাবাসীকে হত্যার হুমকি দেয়ার সাথেসাথে চাকরি হারিয়েছেন। এ ভুল মন্তব্যের জন্যে তৎক্ষনাৎ শাস্তি পেতে হয়েছে। এরকম চিন্তাভাবনার উন্মুক্ত প্রকাশ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয় সেখানকার সভ্য সমাজে। যেমন বলেছি, একটি দায়িত্বশীল সভ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইসরায়েল। সবরকম আন্তর্জাতিক আইনগত সনদে স্বাক্ষর করেছে।

লেখা অনেক বড়ো হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আসলে সেভাবে কিছুই লিখিনি। আরও বহু লেখার ছিলো। বিভিন্ন বিষয় মাথায় ছন্নছাড়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেগুলো আসা উচিত ছিলো। যা হোক উপসংহারে ইসরায়েল সম্পর্কে আরও কিছু বলে শেষ করবো। ১৯৪৮ সালে গঠিত হয় ইসরায়েল রাষ্ট্রটি। ইসরায়েলের মূল নাগরিক হলো ইউরোপীয়ান ইহুদিরা। আরও স্পেসিফিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, সাদা চামরার ককেশীয় ইহুদিরা। তারাই আজকের আধুনিক গণতান্ত্রিক ইসরায়েল গড়ে তুলেছে। পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যান্য জায়গা থেকে ইহুদিরা এসে বসবাস করতে থাকে। পৃথিবীর যেখানেই ইহুদিদের ধর্মের জন্য বসবাসের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়, তারা ইসরায়েলে বসবাস করতে পারবে। এটারও দীর্ঘ প্রকৃয়া আছে। ঢালাওভাবে সব ইহুদিদের জন্য ইসরায়েলের দরজা খোলা নয়। তবে এখন সে সুযোগ একেবারেই কমে এসেছে। ইসরায়েলের নাগরিকত্ব পাওয়া আজ প্রায় অসম্ভব। কর্মক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে বসবাসের অনুমতি পর্যন্ত নেই। নাগরিকত্বের তো প্রশ্নই আসে না। কাজ করে চুক্তি শেষে সবাইকে দেশে ফিরে যেতে হয়। ইসরায়েলে প্রায় বিশ শতাংশ মুসলিম বাস করে। সবাই আরব। ফিলিস্তিনিরা যেমন। সেখানে কোনও সমস্যা নেই মুসলমানদের। দিব্যি ইহুদিদের সাথে মিলেমিশে সুখেশান্তিতে বাস করছে। মুসলমানদের বিশেষ একটি জামাত ইসমাইলিয়া সম্প্রদায় ইসরায়েল ভিত্তিক। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এদের বিরাট বিল্ডিং দেখেছি আমি। আচ্ছা, অনেক লেখা হলো। লেখাটা বড়ো ও এলোমেলো। আরও বহু কিছু আসতে পারতো। আসা উচিতও ছিলো। যা হোক এ পর্যন্ত যা লিখেছি, শতভাগ সঠিক তথ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েই লিখেছি। আমার নির্দিষ্ট কোনও সোর্স নেই লেখার। এগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে পড়েছি, দেখেছি, জেনেছি। পরবর্তীতে নিরপেক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছি। আমি শতভাগ শিওর না হয়ে কিছু লিখি না। খুব পবিত্র বিশুদ্ধ মন নিয়ে লিখি। সবার জন্য শুভকামনা থাকলো। পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু করতে না পারলেও পৃথিবীর কোনও ক্ষতির কারণ যেন না হই। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩
১৮টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×