somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূনিত যে জীবন

২২ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ূন আহমেদ, এই মুহুর্তে যে নামটির সাথে সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা, শোক আর ভালোবাসা মিশে আছে।

হুমায়ূনিত যে জীবন বলতে হুমায়ূন আহমেদ দ্বারা প্রভাবিত যে জীবন আমার। একজন লেখক যে তাঁর পাঠকের জীবনে কি গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, তার এক জলজ্যান্ত সাক্ষী আমি নিজে।আমার জীবনে তাঁর নাটক বা সিনেমার চেয়ে বইগুলোর প্রভাব বেশী।

পাঠ্যবইয়ের বাইরে আমার পড়া প্রথম বই হুমায়ূন আহমেদের শিশুকিশোর উপন্যাস "নীল হাতি"। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় আমার জন্মদিনে মামুনি আমাকে উপহার দিয়েছিলো। ঐ বইয়ের সবগুলি গল্প আমার মুখস্থ ছিলো। কত শতবার যে ঐ বই আমি পড়েছি, তার কোনো ইয়ত্তা নেই! সেই থেকে শুরু হলো বাংলাদেশের এক অসামান্য মেধাবী লেখকের আঙ্গুল ধরে চলা!

হাইস্কুলে পড়ার সময়গুলোতে হুমায়ূন আহমেদের একটা বই ছিলো আমার কাছে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশী আকর্ষনীয়। সোমা আপু বলত, হুমায়ূন আহমেদের বই নাকি মাদকের মত! না পড়া পর্যন্ত তীব্র এক আকর্ষনে চুম্বকের মত লেগে থাকতে হতো, আর বইগুলো শেষও হয়ে যেত নিমেষেই!এক একটা বই শেষ হবার পর তার আবেশটাও পুরো অনুভুতি জুড়ে থাকত অনেকটা সময় ধরে!

আমার ছোটবেলা জুড়ে রয়েছে আমার কাজিনরা , বন্ধুরা আর আমার পুতুল বোনটা। আমার সব কাজিনরা হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত ছিলো। নতুন কোনো বই পেলে আমরা কাড়াকাড়ি করে পড়তাম। আমার এই বইয়ের সাপ্লায়ার তখন আমার কাজিনরাই ছিলো। আমার এই বই পড়ার আগ্রহ দেখে শ্যামল ভাইয়া আমাকে বই বেছে বেছে দিত, ইরিনা, মন্দ্রসপ্তক, আয়নাঘর, দেবী, আরও কত কত বই! শ্যামল ভাইয়াকে দেখতাম ওর সব বইপত্রে বিভিন্ন কোট লিখে রাখত। আমি মনে মনে ভাবতাম কত জ্ঞানী আমার এই ভাইটা! পরে হুমায়ূন আহমেদের বই পরতে গিয়ে বুঝতাম কোত্থেকে এসেছে এই কোট! ওদের বাসায় যাবার পিছনে আমার মূল আগ্রহ ছিলো, ওদের বইয়ের আলমারি।

হু. আ. এর যেকোনো বই একবার পড়লে আমার দাড়িকমাসহ মনে থাকত। স্কুলে ক্লাসে টিচার না আসলে প্রায়ই আমাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত গল্প বলার জন্য। আমি শুরু করতাম হু. আ. এর পুতুল ..................

ছোটবেলায় আমি আর আমার বোন একই ঘরে পাশাপাশি দুটি খাটে ঘুমাতাম। ও প্রায়ই চমকে উঠে দেখত, আমি বই পড়তে পড়তে খিল খিল করে হেসে উঠছি, কখনও বা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি! ও অবাক হয়ে জিগ্গেস করত, কি এমন লেখা আছে ঐ বইটিতে , যে আমি একবার হাসছি, একবার কাঁদছি!

আমার বান্ধবীরাও এক একজন হু. আ. এর খুব ভক্ত ছিলো। বিশেষ করে ইমন আর জিনিয়া। ইমনের ভাই ওকে প্রায়ই এই বলে খেপাত, যে ও নাকি হু. আ. এর গল্পের নায়িকাদের অনুকরণ করে! হাহা! আমার মনে হয় প্রতিটি কিশোরী মেয়ের মনেই এই ব্যাপারটা কাজ করত। আমি নিজেও আমার মনের এক ছোট্ট কোনে কখনও কখনও নবনী হতে চাইতাম, কিংবা অহনা!

হু. আ. এর বেশীরভাগ লেখায় দেখা যেত নায়িকারা খুব মেধাবী হত। আমি সেরকম মেধাবী চিত্রলেখা হতে চাইতাম। রেবেকার মত পিএইচ ডি করতে চাইতাম! এই বইগুলি আমাকে অনুপ্রানিত করত। আমার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস "কৃষ্ণপক্ষের" নায়িকার মত সারা রাত প্রেমিকের মাথার কাছে জেগে বসে থাকতে চাইতাম!

সেই সময় খুব মনে হত, একবার যদি ওনার সাথে দেখা হত!উনাকে একবার সালাম করতে পারতাম! বইমেলায় উনাকে দেখেছি। উনার অটোগ্রাফসহ বই ও কিনেছি।কিন্তু এতো ভীড়ে কথা বলতে পারিনি।

শেষ যেবার বইমেলায় গিয়েছি, প্রথমে লিস্টে দেখেছি হুমায়ূন আহমেদ এবং জাফর ইকবালের কি কি বই এসেছ। উনাদের বই কেনার পর অন্য বই!

শাওনের সাথে উনার বিয়েটা মেনে নিতে পারিনি। মানুষ হিসেবে হয়ত তাঁর অধিকার আছে, তাঁর নিজের মত জীবন যাপন করা। কিন্তু তিনিতো সাধারণ মানুষ নন! তিনি একজন পিতা, বাংলাদেশের অগণিত তরুনের পথপ্রদর্শক। নিজের নফসকে বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগ করতে পারলেই তাকে ভাল মানাত। যাক সে কথা। তাঁর মত বড় মাপের একজন মানুষের সমালোচনা করা আমার মত ক্ষুদ্র একজনকে মানায় না।

আজ তিনি সশরীরে আমাদের মাঝে নেই। তাঁর বিদায় সংবাদে পৃথিবীর আনাচে কানাচে কোটি বাঙ্গালীর হৃদয়ে যে অপরিমেয় শোকের সৃস্টি হয়েছে , তা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। ফেসবুক, ব্লগ, পত্রিকাসহ সকল গন মাধ্যমে শুধু শোক আর শোক। এতো শোকের মাঝে আমি নিজে আলাদা করে কিছু বলতে পারছিলাম না! কিন্তু দুচোখে ঝরে পরা আবেগকে কিছুতেই বশ মানাতে পারছিলাম না। নিজের আবেগকে দুচোখে না ঝরিয়ে তাই আজ কিবোর্ডকেই বেছে নিলাম! জানি অন্যদের মত সুন্দর করে আমার আবেগকে কথার পংতিমালায় গাঁথতে পারবো না। তাই শুধু নিজের মত করে পরম করুনাময়ের কাছে প্রার্থনা করছি, " প্রিয় লেখক যেখানেই থাকুন, তাকে ভাল রেখো, তোমার রহমতের বর্ষনে তাকে সিক্ত রেখো।"
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:২৭
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×