-এই রিক্সা থামাও!
ইঞ্জিন চালিত রিক্সাওয়ালা পুলিশ অফিসারের নির্দেশে কুন্ঠিত চোখে রিক্সা থামালে দুজন আরোহীরর একজন সাথে সাথে নেমে সম্মান নামের ভীতি প্রদর্শন করলো। কিন্তু অন্য আরোহীর এ জাতীয় কতর্ব্য পালনের কোন স্বদিচ্ছা দেখা গেল না। এই উদ্যত ব্যবহারে অফিসারটি নিজের ক্রোধ সামলে বলা শুরু করলেন।
-ইঞ্জিন চালিত রিক্সা চালানো এবং উঠা দুটোই সমান অপরাধ। এর জন্য তোমাদের জরিমানা করা হবে, জরিমানা না দিলে জেলও হতে পারে।
এসমস্ত ভীতিজনক কথা শুনে রিক্সায় আরোহিত ব্যক্তির ভাবে কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলো না, শুধু একবার অলস ভঙ্গিতে বলল,
- ও !
এই তাচ্ছিল্য দেখে অফিসার আর নিজেকে সামলাতে না পেরে জোর গলায় বলে উঠলো,
-ও মানে ??? এর জন্য তোমাদের ১০০০০ টাকা জরিমানা করা হলো। এক্ষুনি টাকা বের করো।
এ কথা শুনে রিক্সা থেকে সম্ভ্রম দেখিয়ে নানা যাত্রীর মুখে ভীতি দেখা গেলেও আরোহিত দ্বিতীয় যাত্রীর চেহারায় কোন উদ্বেগ দেখা গেল না। সে নিরুত্তাপ গলায় উত্তর দিলো, ১০০০০ কেন, ১০০ টাকাও নেই কাছে।
এই বেয়াদপ ছেলের কথা অফিসারর রাগ ক্রমে বিস্ময়ে রূপ নিলো। অফিসারের পাশ থেকে এক সার্জেন্ট বললেন,
-তাহলে তো তোমাদের থানা ছাড়া গতি নেই।
এই কথা শোনামাত্র সাথে সাথে রিক্সার আরোহিত ব্যক্তির মধ্যে প্রথমবার ক্রিয়াশীলতা দেখা গেল। রিক্সা থেকে ছোট একটা লাফ দিয়ে নিচে নামলো তারপর কানে হেডফোন ঢুকিয়ে শান্ত গতিতে পুলিশের ভ্যানে গিয়ে বসল। এই দৃশ্য দেখে তার সাথে সহযাত্রী সহ যাবতীয় উপস্থিত পুলিশ বাহি নী বিস্ময়ে হা হয়ে গেলো।
অবশেষে অফিসার ভ্যানে উঠে ছেলেটির কানের হেডফোন খুলে বললেন,
-এটা কি হলো?
-কি আবার হবে? টাকা না দিতে পারলে জেল তাই আপনাদের কো অপারেট করছি। তাছাড়া
-তাছাড়া?
-আপনাদের থানার অফিসার ইন চার্জ হামিম সাহেব বড় ভাল মানুষ, অনেক দিন দেখা হয়নি, আজ দেখা হয়ে যাবে।
এতক্ষনে অফিসারটির কপালে চিন্তার ভাজ পরলো, সেই ভাজ হতে চুইয়ে ঘামও বের হতে লাগল। আগের সপ্তাহে এভাবে টাকা উশুল করতে গিয়ে এক বান্দা প্রতিমন্ত্রীর অফিসে ফোন দিয়েছিলো। তারপর হামিম সাহেবের কি তোড়। একটুর সাসপেন্ড হয়নি। এইবার আবার পরিচিত মানুষের এমন অবস্থা দেখলে আর রক্ষা নেই।
অফিসার এবার কৃত্রিম গাম্ভীর্য এনে বললেন,
-আচ্ছা, তোমরা ছেলে মানুষ। একবার ভুল হয়ে গেছে। ছেড়ে দিচ্ছি।
-না, আপনি সরকারী লোক এমন কথা কিভাবে বলছেন?
-মানে?
-আইন যখম অমান্য হয়েছে তখন অবশ্যই আমি জেলে যাব।
মহা ফ্যাসাদে পড়লেন অফিসার। কোন ভাবেই ছেলেটাকে ভ্যান থেকে নামানো যাচ্ছে না। একবার ভয় দেখানো হচ্ছে, একবার আদর করে বোঝানো যাচ্ছে। কিন্তু তার একই কথা,
-আইন যখন ভেঙেছি আমি জেলে যাব। তাছাড়া হামিম সাহেব বড় মানুষ, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সব অনুনয় বিনয় ব্যর্থ হলো। অবস্থা বেগতিক দেখে পাশের হোটেল থেকে এক কনস্টেবলকে দিয়ে বিরিয়ানি আর এক প্যাকেট সিগারেট আনানো হলো। এবার ছেলেটা একবার বিরিয়ানির প্যাকেটের দিক তাকিয়ে বললো,
-হামিম সাহেবের ঐখানে গেলে কত কি খাওয়াতো
অফিসার বিগলিত হয়ে বলল,
-যেও বাবা যেও, তবে আজ থাক, রাত হয়ে গেছে। অন্য একদিন। কেমন?
শুনে ছেলেটি উদাসস ভঙ্গিতে বললো,
-আচ্ছা! কি আর করার?
অফিসার সহ যাবতীয় পুলিশ বাহিনী যেন হাফ ছেড়ে বাচল।
দুইঘন্টা পর
বিরিয়ানি শেষ করে ঐ দুই যাত্রী সিগারেট ধরিয়েছে।
প্রথম ভীতসন্ত্রস্ত যাত্রী বললো,
-আচ্ছা দোস্ত, এ বড় পুলিশের সাথে তো চেনা জানা, কোন দিন টের পেলাম কেন?
-কার কথা বলছিস?
-ঐ যে হামিম না কি নাম?
-কোন পেপারে যেন নাম টা পরেছিলাম। তাই কাজে লাগিয়ে দিলাম চিনি না।
-তার মানে???
এই প্রশ্ন করে প্রথম যাত্রীর মুখে একখানি মশা ঢুকা অবধি হা হয়ে রইল।