"We want capital punishment" এই স্লোগানে সমগ্র মহাসড়ক কাপিয়ে কয়েক শত মেয়ে মুখে কালো কাপড় বেধে মুখরিত করে তুলেছে আশপাশের গোটা আবহাওয়া। দুইদিন আগে তাদের বিশ্ববিদ্যালের এক সিনিয়র তাদের সহপাঠিনীকে জোড় করে শ্রীলতাহানি করে। তার প্রতি অন্যায়ের বিচার চেয়ে এই প্রতিবাদ সমাবেশ।
প্রতিবাদের এই স্থানের অদূরে একটা চায়ের দোকানে দুইজন বন্ধু ভদ্রলোক বসে আছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রুপম সাহেব এবং আরেক জন ট্রেজারার শাহেদ খন্দকার। আলোচনার বিষয় স্বাভাবিকভাবে সামনের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে।
-এটা একটু বাড়াবাড়ি ।
-কোনটা?
-এই যে ক্যাপিটাল পানিসমেন্ট।
-আমারও তাই মনে হয়।
-এদের ব্যবহার উদ্বেগজনক। মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে। এদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে।
-একদম। নারী স্বাধীনতার নামে উশৃঙ্গলা একদিন চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছাবে।
-আচ্ছা আপনি বলুন? ধর্ষণ করেছে বলে মৃত্যুদন্ড চাচ্ছে আবার ধর্ষণ করে মেরে ফেললেও মৃত্যুদন্ড চাইতো। দুইটা কি কখনো এক হলো?
-আপনি আমার মনের কথাটা বলেছে। তাছাড়া মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমরা নিজেরা মানুষ হয়ে যদি অন্যকে সংশোধনের একটা সুযোগ না দেই তাহলে এই সভ্য ব্যবস্থার কি মানে?
-এই দেশে কি আর সভ্যতা আছে নাকি। যারা আজ আন্দোলন করছে তারা কি জানে ক্যাপিটাল পাসিনমেন্ট কি?
-হুজুগে বাঙ্গালী। এই আমেরিকা ইউরোপে এসব কত সাধারণ ব্যাপার। কখনো ওদের এসব নিয়ে মাতামাতি করতে দেখা যায় না। এইজন্য এদেশটার কিছু হবে না।
হঠাৎ শাহেদ সাহেবের ফোন বেজে উঠলো। ফোন টা উনার স্ত্রীর।
-হ্যালো, হ্যা বলো।
-তুমি কি এখন একটু বাসায় আসতে পারবে?
-এই অসময়ে বাসায় কেন?
-আসো, বলছি।
-এভাবে কাজ ফেলে আসতে পারব না।
-একটু আগে তোমার চাচার বোনের ছেলে আরিফ এসেছিলো।আমি বাসায় ছিলাম না। অথৈ একা ছিলো বাসায়।
-তো কি হয়েছে?
-আমি বাসায় ঢোকার সময়ে দেখি আরিফ আমাকে দেখে ভয়ে হুড়মুড়িয়ে ছুটে পালাল। আর মেয়েটা তখন থেকেই শুধু কেদে যাচ্ছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও কি হয়েছে বের করতে পারলাম না। আমার খুব ভয় করছে, তুমি একটু আসবে?
-আসছি !
শাহেদ সাহেবের পাগলের মতো বাসায় দিকে ছুটে গেলেন। উনার শান্ত, চুপচাপ মেয়েটা কাদছে। ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছেন না শাহেদ সাহেব । যাবার পথটুকুকে উনার জীবনের সব থেকে দীর্ঘ পথ মনে হচ্ছিলো। কিমতু অদ্ভুত অন্য মেয়ের সাথে ঘটা ঘটনায় অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি, সংশোধন কিংবা সভ্য নামক সমাজের দুরবস্থা এবং ভবিষ্যত নিয়ে কোন আশংকা তার মাথায় আসলেও নিজের মেয়ের ক্ষেত্রে এসব কিছুই আসছিলো না। শুধু একটু আগে শোনা একটা কথাই ঘুরে ফিরে মনের অজান্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলো,
"We want capital punishment."