somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেরা

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সমুদ্রের মা মারা যাবার পরে রাহিন সাহেবকে সবাই কতো করে বুঝালো আরেকটা বিয়ে করতে। তার কি বা এমন বয়স আর সমুদ্রকেও তো দেখবার একজন চাই। রাহিন সাহেব সবাইকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সমুদ্র যখন আছে তখন তার কাউকে প্রয়োজন নেই, আর তিনি যখন আছেন তখন সুমুদ্রেরও কাউকে প্রয়োজন নেই। আজ থেকে তিনি সমুদ্রের বাবা, তিনিও ওর মা।



ত্রিশ বছর পর। আজকাল বাবা-মায়ের সাথে থাকা, তাদের ভালোবাসার কচকচানি শোনা, উঠতে বসতে তাদের উপদেশ শোনা একদম অসহ্য, যাকে বলে ব্যাকডেটেট হয়ে গেছে। এই বৃদ্ধ মানুষগুলো এতো কিছু বোঝে কিন্তু এটা কেন বোঝে না যে তাদের ছেলেমেয়েদের স্বাধীনতা চাই, প্রাইভেসি চাই। তাদের যুগ আর এইযুগ এক নয়। গাড়ি চালাতে চালাতে সমুদ্র এটা কথাগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভাবছিলো। কারণ পাশে রাহিন সাহেব বসে সমুদ্রকে বার বার একটা কথা বলে যাচ্ছিলেন। কথাটা তেমন কিছু না। কথা হলো, সময় পেলে একট আসিস বাবা, অন্তত মাসে একটাবার আসিস। সমুদ্র বার বার ভ্রু কুচকে বিরক্তির সাথে বলেছে, বললাম তো বাবা আসবো। এক কথা বার বার বলার অভ্যাস কখনোই তোমার গেল না। একটু পর গাড়িটা একটা পুরনো দালানের গেট দিয়ে ভেতরে চলে গেলো। গেটে বিশাল সাইন বোর্ডে লেখা “উদয়পুর বৃদ্ধাশ্রম”।


রাহিন সাহেবের কি যেন একটা হয়েছে। সবাই বৃদ্ধাশ্রমে এলে ভেঙ্গে পরে, ঘরের কোণায় চুপ চাপ বসে থাকে হয়তো বোকার মত ভেবে যায় আমাকে ছাড়া আমার সন্তান কিভাবে থাকবে? ও তো কখনো আমাকে ছাড়া থাকেনি। ঠিক মতো খাবে তো? ওর জ্বর হলে কে মাথায় জল দিয়ে দেবে, মরে করে ঔষধ খাওয়াবো ? এমন কত শত চিন্তা যে মনে উঁকি দেয় সেকথা তো শুধু বাবা-মায়েরাই জানেন, সন্তানেরা তার খোজও রাখে না। এত্ত আদর, এতো উদ্বেগ সন্তানদের কাছে এক যন্ত্রনার নাম। কিন্তু এসব থেকে রাহিন সাহেব যেন যোজন মাইল দূরে অবস্থান করছেন। বৃদ্ধাশ্রম এসেই নিয়ে নিজের শরীরের প্রতি যত্নবান হয়ে উঠেছেন। সময়মত এবং পরিমিত খাওয়া-দাওয়া করছেন আর করছেন প্রচুর ব্যায়াম। উনার এই নিয়মের বহর থেকে বৃদ্ধাশ্রমের অনেকেই বলাবলি করলো, ছেলের শোকে বুড়োটার মাথা একদম গেছে। রুহান সাহেব এসবের গায়ে মাখেন না। তিনি তার পথে অবিচল।




সাতাশ বছর পর। এখন রাহিন সাহেবের বয়স প্রায় নব্বই এর কোঠায়। কিন্তু তাঁকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই । নিজেকে এতো ভালো মেইনটেইন করেছেন অন্তত ১৫ বছর বয়স কম মনে হয়। শুধু নিয়ম-কানুন মেনে এতো বয়সে নিজেকে এতো সুস্থ রাখা যায় না, এর জন্য চাই মনের জোর। এখন আর বৃদ্ধাশ্রমে তেমন কেউ তার মাথা গেছে বলে টিপ্পনি কাটেনা । কারণ যারা প্রথম আসার পর এগুলো বলতো তারা বেশিরভাগ আর বেচেও নেই। হঠাৎ একদিন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। রাহিন সাহেব বৃদ্ধাশ্রমের বারান্দায় বসে অন্যেদের সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা বোঝাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় একটা গাড়ি এসে থামলো গেটের সামনে। একজন ছেলে তার বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে এসেছেন ঘাড়ের বোঝা নামাতে। গত সাতাশ বছরে রাহিন সাহেব এই দৃশ্য কয়েক শতবার দেখেছেন। কখনো তাদের কষ্টে কেঁদেছেন আবার কখনো বা স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখেছেন। কিন্তু ছেলে যখন বৃদ্ধকে বিদায় জানিয়ে গেট দিয়ে ভেতর দিকে আসছেন, রাহিন সাহেব আজ একটুও খারাপ লাগছে না। বরং খুশীতে চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে। হৃদপিণ্ডটাকে চিঁড়ে সবাইকে দেখাতে পারতো, প্রতিটি স্পন্দনে, রক্তের সিঞ্চনে আজ যেখানে শুধু সুখ কারণ আজ তার সাতাশ বছরে প্রতীক্ষা শেষ হয়েছে, আজ তার ছেলে ফিরে এসেছে তার কাছে। ঠিক একদিন যেমন তিনি এসেছিলেন সমুদ্রের সাথে আজ সমুদ্র এসেছে তার ছেলের সাথে। সাতাশ বছরের আদর, কত গল্প, স্নেহ জমিয়ে রেখেছেন ছেলেটার জন্য। এখন আর হয়তো বাবার ভালোবাসা দমবন্ধ লাগবে না। কারণ সমুদ্রও তো আজ বাবা। উনি জানতেন, বিশ্বাস করতেন তার ছেলে তার কাছে একদন ফিরে আসবে। সবাইকেই কখনো না কখনো কোন না রূপে ফিরতে হয় তার নির্মাণের কাছে, প্রায়শ্চিত্তের কাছে।


বৃদ্ধাশ্রমে আসার পর কিছুদিন হলো সমুদ্রের অনেক জ্বর হয়েছে। তাই রাহিন সাহেব এখন এসে সমুদ্রের ঘরটাতে থাকছেন। রোজ পালা করে মাথায় জল দিচ্ছেন, ঔষধ খাইয়ে দিচ্ছেন। ঠিক সেই ছোট বেলার মত। কত বছর হয়ে গেলো। মনে হয় এইতো সেদিন ছোট্ট সমুদ্র রাহিনে সাহেবের গলা জড়িরে শুয়ে আছে। কোল থেকে নামবেনা কিছুতেই। রাহিন সাহেবের সেই পুরনো উদ্বেগ, দুঃচিন্তা, আদর সবকিছু যেন মনের মাঝে আগের মত সাজানো রয়ে গেছে। সমুদ্রের চোখের কোণা দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো। খুব কষ্টে সমুদ্র বলল রাহিন সাহেব হাতটা ধরে বললো, বাবা, খুব কষ্ট হচ্ছে, তোমার কোলে আমার মাথাটা একটু রাখতে দেবে??
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×