১.
খাতায় পেন্সিলে খোচাখুচি করছে তুষার। হঠাৎ নতুন শখ জেগেছে, ছবি আঁকতে হবে। আর্টিস্ট না হতে পারলে মানবজন্ম বৃথা-এরকম একটা চিন্তা নিয়ে বছর খানেক ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে। জীবন এর লক্ষ্য তার একটাই- কবরের এপিটাফে লেখা থাকবে -
এই মানুষটি কয়েকটা ছবি এ্ঁকেছে, এরপর মরে গেছে।
শুধু শখ নয়, এটাকে রীতিমতো প্রফেশন হিসেবে নেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে যখন আঁকত, পাক্কা দু-তিন ঘন্টা কেটে যেতো মূহুর্তের মাঝে। এতে মনের মাঝে একটা অদ্ভুত দোলা দিয়ে যেতো, আনন্দের ঝর্ণা বইতো শিরায় শিরায়। আলাদা একটা উপহার হিসেবে পাওয়া যেত প্রশান্তির একটা ঘুম।
এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ক্যনভাস-রং-তুলির ওপর ভর করেছে অর্থ-বাণিজ্য-বাজারজাতকরণের ভূত। কঠিন বাস্তবতার সাথে পরিচয় হয়ে গেছে- ইচ্ছে মতো আঁকিবুঁকি করে গেলেই চিত্র হয়ে ওঠে না। একটা ক্যানভাস তখনই শিল্প হয়ে ওঠে, যখন ছবিটাকে কেনার জন্য কেউ টাকা দিতে চায়। এটাই হলো পেশাদারী চিত্রশিল্প- হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে সত্য কথাটা। অবশ্য পিকাসো-জয়নুল দের ব্যাপারই আলাদা। তারা তুলির দুচার খোঁচা দিলেও লোকজন দেখার জন্য হুমড়ি খাবে। অথচ পিকাসোর আঁকা ছবি, শুধু নামটা বদলে তুষার লিখে দিলে, কেউ টাকা দিয়ে কেনা দূরে থাক, ফিরে তাকাবে কিনা সন্দেহ।
শুধু শখ জেগেছে বলে ছবি এঁকে গেলে পেট চলবে না, মাথা-হাত তো দূরের কথা। অবস্থা অনেকটা পেশাদার ইমামের মতো- শুধু নামাজ পড়ালেই হয়না- হাদিয়াও আদায় করতে হয়। কঠিন বাস্তবতায় শিল্পের করুণ দশা।
২.
চার বছর পর। তুষার কোর্টে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে। চাকরিটা বেশ আরামের, শুধু উকিলদের তর্কাতর্কি শুনতে শুনতে মাথা ধরে যায়। নামের আগে একটি পদবী এখন তার-এসিস্টেন্ট জাজ্। এখন তার হাতে সরকারি ভাবে বিদেশে পড়ার সুযোগ - কিন্তু সেটা ফাইন আর্টস এর ওপর করতে পারবে কিনা, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। IELTS-GRE তে স্কোর এসেছে ভালোই - একেবারে দস্তুরমতো। এবারে শুধু প্যারিসে পড়তে যাবার সুযোগটা পেলেই হয়। তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই-ধীরে সুস্থে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আর তাছাড়া, ছবি না আঁকলে মানুষ মরে যায়না।
চার বছর আগে আঁকা হিজিবিজি ক্যানভাসগুলো হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:০০