somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শির্ক আসল কিভাবে?

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*** শির্ক আসল কিভাবে?

আল্লাহ তাআলা মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন।

তিনি বলেনঃ

"আমি জিন ও মানব জাতিকে আমার এবাদতের জন্য
সৃষ্টি করেছি।" (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬)

সুতরাং আল্লাহ তাআলা মানুষকে
তাওহীদসহ প্রেরণ করেছেন। তাওহীদ তাদের
সৃষ্টিগত স্বভাবের সাথে সামঞ্জস্যশীল। আর
শির্ক উহার ভিতরে নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করেছে মাত্র। রাসূল (সাঃ) বলেনঃ

"প্রতিটি শিশু ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে।
অতঃপর তার পিতা-মাতাকে তাকে ইহুদী বানায় বা
খৃষ্টান বানায় অথবা অগ্নি পূজক বানায়।' (বুখারী ও মুসলিম)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আদম ও
নূহ (আঃ)এর মধ্যে ১০টি শতাব্দির ব্যবধান
ছিল।

এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সকলেই তাওহীদের উপর
প্রতিষ্ঠিত ছিল। শির্ক স¤পর্কে তাদের কোন
ধারণা ছিল না। তারপর সৎ লোকদের নিয়ে বাড়াবিাড়ি করার কারণে তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম শিক প্রকাশ পায়। (ইবনে কাছীরঃ ৩/৪৩১)

সর্ব প্রথম নূহ (আঃ)এর জাতির মধ্যে শির্ক
বিস্তার লাভ করে। তাই আল্লাহ তাআলা নূহ
(আঃ)কে তাদের হেদায়াতের জন্য প্রেরণ করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
" আমি আপনার প্রতি ওহী পাঠিয়েছি, যেমন
করে ওহী পাঠিয়েছিলাম নূহের প্রতি এবং সে সমস্ত
নবী-রসূলের প্রতি যারা তার পরে প্রেরিত হয়েছেন।" (সূরা নিসাঃ ১৬৩)

নূহ (আঃ) যখন তাদেরকে শির্ক প্রত্যাখ্যান
করে এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করার প্রতি আহবান জানালেন,

তখন তাঁর জাতির লোকেরা বললঃ

" তোমরা তোমাদের উপাস্যগুলোকে পরিত্যাগ করো না। আর পরিত্যাগ করো না
ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নসরকে।" (সূরা নূহঃ ২৩)

বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইবনে আব্বাস (রাঃ)এর
বর্ণনায় এসেছে আয়াতে বর্ণিত লোকগুলো ছিলেন
নূহ (আঃ)এর জাতি পূণ্যবান ব্যক্তি।

তারা যখন মারা গেল তখন শয়তান তাদেরকে বললঃ

তোমরা তাদের মজলিসে তথা বসার স্থানে তাদের
মূর্তি খাড়া করো এবং তাদের নামানুসারে এগুলোর নামকরণ কর। তখন তারা তাই করলো। তবে তখন
সেগুলোর এবাদত হয় নি। দীর্ঘ দিন পর শয়তান
তাদের কাছে পুনরায় আগমণ করে তাদেরকে এগুলোর
এবাদত করতে আহবান জানালো। তারা শয়তানের
আহবানে সাড়া দিয়ে শির্কে লিপ্ত হলো ।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে সৎ ও পূণ্যবান ব্যক্তিদের
ছবি নির্মাণ ও তাদেরকে নিয়ে অতিরঞ্জন করার
কারণেই পৃথিবীতে শির্কের বিস্তার লাভ করেছে।

আরবের লোকেরাও ইবরাহীম (আঃ)এর ধর্মের
উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল ।
আমর বিন লহাই নামক
এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম ইবরাহীম (আঃ)এর দ্বীনের
মধ্যে পরিবর্তন করে। সেই সর্বপ্রথম আরব
উপদ্বীপে মূর্তি পূজা ও শির্কের আমদানী করে। অতঃপর এগুলোর এবাদত চালু হয়ে যায়।
পার্শবর্তী দেশগুলোতেও পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে।

তখন আল্লাহ তাআলা মুহম্মাদ (সাঃ)কে শেষ
নবী হিসেবে তাদের কাছে পাঠান। তিনি তাদেরকে
ইবরাহীম (আঃ)এর দ্বীনে ফেরত আসার ও
এককভাবে আল্লাহর এবাদত করার আহবান
জানান।

তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিলো। আরবদেশ সমূহ
থেকে শির্কের অবসান হল। মুসলমানেরা দীর্ঘ
দিন তাওহীদের বাণী বিশ্বময় প্রচার করলেন।
পৃথিবী তাওহীদের আলোয় আলোকিত হলো।
আল্লাহর দিন পূর্ণতা লাভ করলো।


পরবর্তীতে আবার মুসলিম জাতির মাঝে মুর্খতার
প্রসার হল। মুসলমানেরা ধর্মের নামে অন্যান্য
ধর্মের আচরণাদীর অনুসরণ করতে লাগল।
সুতরাং পুনরায় তাদের অধিকাংশের মাঝে শির্কের
অনুপ্রবেশ ঘটলো।

এ পর্যায়েও দেখা যায় যেই কারণে নূহ
(আঃ)এর জাতির মধ্যে শির্ক প্রবেশ করেছিল,
সেই একই কারণে এই উম্মতের মধ্যে তা প্রবেশ করেছে।
পথভ্রষ্ট ও ভ্রান্ত আলেমদের
কারণে এবং কবরসমূহ পাকা করার কারণে। উহা মূলতঃ ঘটেছিল অলী- আওলীয় এবং সৎ লোকদেরকে অতিরিক্ত সম্মান দেখাতে গিয়ে।

এমন কি তাদের কবরের উপর
গম্বুজ ও প্রাসাদ তৈরী করা হয়েছে। শুরু
হয়েছে তাদের কাছে দুআ করা, মদদ প্রার্থনা করা এবং তাদের জন্য পশু যবাইসহ বিভিন্ন প্রকার শির্ক।

এই শির্ককে তারা উসীলা নামে নামকরণ
করেছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী এটি শির্ক নয় বা
অলী-আওলীয়াদের এবাদত নয়।
তারা ভুলে গেছে মক্কার মুশরিকদের কথা।
কারণ মক্কার মুশরিকরাও বলত আমরা লাত-মানাতসহ ইত্যাদির এবাদত করি না।
এরা আমাদের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে।

আল্লাহ তাদের কথা কুরআনে উল্লেখ করেছেন:
" এরা হচ্ছে আমাদের জন্য আল্লাহর
দরবারে সুপারিশকারী।" (সূরা ইউনুসঃ ১৮)

সুতরাং মক্কার মুশরিকদের মধ্যে যেই শির্ক
ছিল বর্তমানে মাজার পূজারী নামধারী মুসলমানদের মধ্যে সেই একই শির্ক বিদ্যমান। তাদেরকে যখন
লাত-মানাতসহ অন্যান্য মূর্তির উপাসনা ত্যাগ
করে এককভাবে আল্লাহর এবাদত করতে বলা হত
তখন তারা বলতঃ আমরা এদের এবাদত এজন্য
করি যে তারা আমাদেরকে আল্লাহর
দরবারে পৌঁছিয়ে দিবে। সরাসরি আমরা তাদের
উপসনা করি না।

কুরআনে তাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :

" আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি,
যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দেয়।" (সূরা যুমারঃ ৩)

আপনি যদি বর্তমানে মাজারপন্থী ও
পীরপন্থীদের প্রতিবাদ করেন তাহলে তারাও
বলছে, আমরা অলী-আওলীয়াদের এবাদত করি না;
বরং তারা উসীলা মাত্র। তাদের উসীলায়
আমরা আল্লাহর উপাসনা করি এবং আমরা তাদের সুপারিশ কামনা করি মাত্র।

প্রিয় পাঠকগণ লক্ষ্য করুন!
নূহ (আঃ)এর জাতি এবং মক্কাবাসীরাও সৎ লোকদের সরাসরি এবাদত করত না, তারা বলতঃ এরা আমাদের উসীলা মাত্র। বর্তমান যামানার অলী-আওলীয়ার পূজাকারীগণ একই কথা বলছে।

>> সংগ্রহেঃ আব্দুল্লাহ শাহেদ আলমাদানী
--- "সরলপথ" থেকে ॥
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×