আপনি যতই বিশ্বাসী হন না কেন অথবা ঈমানদার হোন না কেন এটা একদমই অস্বাভাবিক নয় যে হুট করে কিছু সময়ের জন্য আপনি অবিশ্বাসী দের মত চিন্তা করা শুরু করলেন । তখন আপনার মনে একটি ভয় কাজ করা শুরু করলো। ভাবতে লাগলেন এ আমি কি ভাবছি? আমি কেন নাস্তিকদের মতো ভাবা শুরু করেছি । হঠাৎ করে আপনার মনে হতে পারে যে, বিজ্ঞানই ধ্রুব সত্য। ধর্ম শুধু একটা শৃংখলে আমাদেরকে বেঁধে রাখছে। মনে আসতে পারে, ধর্ম হয়তো শুধু মানব সৃষ্ট! হয়তো সারা জীবন যে ধর্মের পিছনে এত এত সময় ব্যয় করছি তা মনে হয় ভ্রান্ত! হয়তো সত্যিই পরকাল বলে কিছু নেই! হয়তো আমার কিছু জিনিস ভুল হচ্ছে! আমি হয়তো ঠিক ভাবে চিন্তা করছিনা। হয়তো আপনি আপনার উত্তর মনের মত খুঁজে পাচ্ছেন না আপনার মনে খুব অশান্তি কাজ করা শুরু করেছে। ভাবছেন হয়তো এভাবেই একজন আগাগোড়া আস্তিক মানুষ অবিশ্বাসী মানুষের মত আচরন করা শুরু করে । যখনই আপনার এরকম একটি স্বাভাবিক চিন্তা আসবে তখনই আপনি একটা জিনিস নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার মনের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা নষ্ট হয়ে যায় নি।
একজন মানুষ আস্তিক-নাস্তিক যাই হোক না কেন তাকে অবশ্যই কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে । আমি কেন আস্তিক কেন নাস্তিক নই এই ব্যাপারে একটা সুন্দর কিন্তু সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে পারলে হয়তো কখনো কখনো কিছু অবান্তর মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
একটা শব্দ আছে 'বিশ্বাস' । বিশ্বাস শব্দটার মানেটা উপলব্ধি করতে হবে। আস্তিক আর নাস্তিক এর 'বিশ্বাস' এর অর্থটা অন্যরকম । আপনি যখন কাউকে বলেন যে "আমি একটা মানুষকে বিশ্বাস করি" বা আপনি তার আচার-আচরণ কথাবার্তা কে বিশ্বাস করেন - সে বিশ্বাসটা কিন্তু একদিনে গড়ে ওঠে নাই। অবশ্যই আপনি একটা অপরিচিত মানুষকে হুট করে বিশ্বাস করবেন না, এটা একটা সহজাত প্রবৃত্তি। এমন মানুষকেই সাধারণত অন্য মানুষ বিশ্বাস করে যারা তার সাথে মেলামেশা করে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সেই মানুষটাকে বিশ্বাস করা যায়। আপনার চোখের সামনে যে জিনিসটা ঘটছে বা যা আপনার ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য হয়েছে সেখানে বিশ্বাস করার প্রসঙ্গ না আসাই উচিত । আপনি তখনই কোন জিনিস বিশ্বাস করতে যাবেন যে জিনিসটার মধ্যে অবিশ্বাস করার কারন থাকতে পারে। অবিশ্বাস করার যৌক্তিকতা যত বেশি হবে আপনার বিশ্বাসটা তত উঁচু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । কথাটা হাস্যকর শোনালেও বিশ্বাস শব্দ টা এভাবেই কাজ করে । একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এর এটা জোর করে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করতে হবে না যে তার হাত অথবা পা দুটি করেই আছে । সে যদি কাউকে এই কথা বলে যে "আমি বিশ্বাস করি, আমার দুটি হাত এবং দুটি পা আছে" - তার এই বিশ্বাসটা হাস্যকর ।
বরং কেউ যদি এরকম কথা বলে যে, সে বিশ্বাস করে যে, তার মৃত বাবার আত্মা তার সাথে কথা বলে - তার সেই বিশ্বাসটা যতই অযৌক্তিক হোক না কেন বিশ্বাস তো বিশ্বাসই।
বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে, শুধু বিশ্বাস করে তা না তারা যে বিশ্বাস করে সেটা ঘোষণা দিয়ে বিশ্বাস করে, একটা মৌখিক বিবৃতি প্রদান করার মাধ্যমে । এই মৌখিক বিবৃতি ততোই জোরালো হবে যতই সে কাজে কর্মে সেই মৌখিক বিবৃতির প্রতিফলন ঘটাবে । কার বিশ্বাস কত শক্ত কার ঈমান কত দৃঢ় - এভাবেই প্রকাশ পায় । বিশ্বাস কে কখনো যুক্তি দিয়ে মাপতে নেই । যুক্তি দিয়ে প্রমাণিত বিষয়কে 'বিশ্বাস' করার কিছু নেই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:২৩