দুই বছর আগে আজকের দিনটার কথা মনে পড়ছে খুব। আগের রাতে সারা রাত ঘুম হয় নি। এপাশ ওপাশ করেছি। রাতে শোয়ার আগে মায়ের বুকে মুখ গুঁজে পড়ে ছিলাম অনেক্ষণ। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় টেবিলের পাশে উঁচু করে রাখা 'পড়তে হবে' গল্পের আর অগল্পের বইগুলো একটু একটু করে পড়ে রেখে দিচ্ছিলাম। সারা রাতে ঘুম হল ছেঁড়া ছেঁড়া।
দু:স্বপ্নে ভাসতে ভাসতে ভয়াবহ একটা রাত পার করলাম। এই ম্যাথস ফোর ইউনিট পরীক্ষা দিচ্ছি, সমানে ঘামছি। মিস্টার নোর শীতল নীল চোখে চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে আছেন। মিস র্যামজির ঠোঁটের ঝুলন্ত হাসি। মিস ম্যাথুজের দৃষ্টির সামনে কুঁকড়ে যাচ্ছি। কারণ কি ছিল না? সারা বছর ভাসতে ভাসতে পার করেছি। এইচ এস সির 50% যায় স্কুল থেকে। বাকি 50% পরীক্ষার হলে পরীক্ষা। সারা স্কুলই তো করলাম ফাঁকিবাজি। সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে গিয়েছে, বই ছুঁয়ে দেখি নি। পরীক্ষার আগেও তো দুই সপ্তাহ ছুটি ছিল। তখন কি করতাম? বাসা থেকে সবাই যাওয়ার সাথে সাথে টিভি ছেড়ে বসতাম। মুজা তোষকের হাস্যকর বিজ্ঞাপনগুলোও আগ্রহ ভরে গিলতাম। দুই তিন বছরের বাচ্চাদের জন্য বড় বড় মানুষেরা নেচে কুঁদে অনুষ্ঠান করছে, সেগুলো থেকেও চোখ সরাতে পারতাম না। আর ফোনের আলাপ, সে কি শেষ হবার? প্রতিটা পরীক্ষার জন্য বড়জোর এক দিন পড়েছি, পরীক্ষার আগের দিন।
আমার মত ছাত্রীরা রেজালটের আগের দিন নির্ঘুম রাত কাটাবে না তো কে কাটাবে?
সকাল হতে একটু চোখ লেগে এসেছিল। কিন্তু স্টাডি রুমে আলো দেখে লাফ দিয়ে উঠলাম। ভাইয়া এইচ এস সির রেজালট চেক করছে অন লাইনে...
থর থর করে কাঁপছিলাম আমি সত্যিই। উফ, সে কি ভয়াবহ অনুভূতি! মাকে জড়িয়ে ধরলাম শুধু। আস্তে আস্তে লগইন নেইম আর পাসওয়ার্ড দিতেই ভাইয়ার চিৎকার, আরে, কনগ্র্যাটচুলেশনস! বাবা আবেগের অতিসয্যে দুইশ ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করে বসলেন। আদর্শ গল্পের মত একটা পরিসমাপ্তি।
তারপরে সারাদিন ফোন আসতে লাগল। সন্তান গরবে গরবিনী মা গদ গদ কণ্ঠে অন্তত: একশ ফোন রিসিভ করে রেজালট বলল। আর আমি? বিড় বিড় করে বলছিলাম, মিরাকল। স্রেফ মিরাকল! থ্যাঙ্ক য়ু ডিয়ার গড।
আজকে এইচ এস সির রেজালট বের হলো। পিচ্চি পিচ্চি সেদিনের ছেলে মেয়েগুলো এত্ত ভালো করলো! সেই মায়েদের গর্বিত কণ্ঠস্বর শুনতে ভালোই লাগছে সত্যি!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ সকাল ৭:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



