somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেফাজতের ১৩ দফা বনাম আহলে সুন্নাতের ১২ দফা: একটি পর্যালোচনা (পর্ব: ০১)

২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐতিহাসিক ২০ এপ্রিল
হেফাজতের ১৩ দফা বনাম আহলে সুন্নাতের ১২ দফা: একটি পর্যালোচনা (পর্ব: ০১)
- আবছার তৈয়বী
এই বিষয়ে বিশদ আলোচনায় যাবার আগে আমি আমার সম্মানিত পাঠক/পাঠিকাদেরকে বাংলাদেশের মুসলমানদের ঈমান-আকিদা সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা দিতে চাই। সংক্ষেপে বলতে চাই- ঠিক কতো কিসিমের মুসলমান বাংলাদেশে বাস করে? হ্যাঁ, বাংলাদেশের মুসলামনরা আকিদার ক্ষেত্রে স্পষ্টতই প্রধানতঃ দু'ধারায় বিভক্ত। সুন্নী এবং ওহাবী। এছাড়াও আছে- মওদূদীবাদী, সালাফীবাদী ও শিয়াবাদী মুসলমান। সারা পৃথিবীতে কাদিয়ানীদের 'অমুসলিম' ডিক্লার করা হলেও বাংলাদেশে তারা এখনও মুসলমান! আরো আছে- কিছু নাস্তিক্যবাদী নামকাওয়াস্তে মুসলমান। এরা জন্ম, বিয়ে এবং মৃত্যু- জীবনের এই তিনটি পর্যায়েই শুধু মুসলমানিত্ব প্রকাশ করে। ওদের অন্তরে ঈমান নাই। কথায় ও কাজে ইসলাম নাই; বরং আছে বিরোধীতা। সুযোগ পেলে এরা মুসলমানকে একহাত দেখে নেয়। ওরা মুসলিম সংস্কৃতির চেয়ে 'হিন্দু সংস্কৃতি'কেই বেশি ভালোবাসে। ওরা মুসলমানের ইবাদাত, আখলাক, আদব, কৃষ্টি, সভ্যতা ও আচরণের মাঝে মৌলবাদের গন্ধ খুঁজে। সকল প্রকার মুসলমানের জন্য ওরা সবচেয়ে বেশি 'খতরনাক'। কারণ, ওরা স্পষ্টতই ইসলাম বিদ্বেষী। কখনো সরবে, কখনো নীরবে।

এসব বাদ-মতবাদী মুসলমানদের মধ্যে একমাত্র মৌদূদীবাদীরাই সবচেয়ে বড় বেশি 'শেয়ানা মাল'। খাসলতে তারা 'শেয়াল প্রকৃতির'। বাংলাদেশে 'রগকাটা রাজনীতি' ওরাই সর্বপ্রথম চালু করে। ওরা সন্ত্রাসী পুষে, কিন্তু স্বীকার করে না। ওদের আছে আলাদা 'কিলিং স্কোয়ার্ড'। ওরা পুরো হাঁড়ি দই খেয়ে হাঁড়িটা ছাগলের গলায় ঝুলিয়ে দেবে। যদি হাঁড়িটা ঝুলাতে নাও পারে- ছাগলের দাঁড়িতে সেই হাঁড়ি থেকে কিঞ্চিৎ দই লাগিয়ে দেবেই দেবে। ওরা সাধারণতঃ 'যখন যেমন তখন তেমন' রূপ ধারণ করতে পারঙ্গম। আপনি দেখবেন- ঠেকায় পড়ে ওরা এখন দলে দলে আওয়ামীলীগে যোগ দিচ্ছে। এক কালের শিবির এখন আওয়ামী মেশিনে ঢুকে- ছাত্রলীগ হয়ে বেরুচ্ছে আর সবখানে সমানে গিট্টু লাগাচ্ছে। সব থেকে দামি বাহারি মুজিব কোট গায়ে দিয়ে যুগ যুগ ধরে আওয়ামী লীগ করে আসা কর্মীটিকে বলছে- 'আরে ব্যাটা! তোমার চেয়ে আমি বেশি আওয়ামী লীগার!' আওয়ামী লীগ ফুলের তোড়া হাতে পেয়ে ওদেরকে জামাই আদরে ঘরে তুলছে। ওরা নানা কুবুদ্ধি দিয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করেছে। এখন করবে আওয়ামী লীগকে। তবে আশার কথা- খোদ আওয়ামী লীগে এ নিয়ে কথা ওঠেছে। তাদের নেতা পর্যায়ের লোকগুলো এখন 'কাউয়া' হিসেবে চিহৃিত। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে হাজার হাজার কর্মী কিলবিল করছে। কোন সরকারের আমলেই তাদের প্রশাসনে ঢোকার 'ক্যারিশমা' তাদের বন্ধ হয়নি। আপনি দেখবেন- ওরা কখনোই 'মওদূদীবাদ' নিয়ে কথা বলে না। ওরা জনমানুষের সামনে ইসলামকেই রিপ্রেজেন্ট করে। আর জনমানুষ মধু ভেবে 'চুকচুক' করে বিষ গিলছে এবং পুরো হৃদয়টা বিষে ভারাক্রান্ত করছে।

মুসলমানদের মধ্যে সালাফীরাই সবচেয়ে বেশি 'ডেঞ্জারাস'। তারা নিজেদের মতবাদ প্রচারে রাখঢাক করে না। আপনি গবেষণা করলে জানতে পারবেন- তারা যে ইসলাম চর্চা করে, তা হুবহু ইসলামের প্রাথমিক যুগের 'বাতিল খারেজী মতবাদ'। ওদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মুসলমানই কাফির আর মুশরিক। এই সালাফীবাদের জন্ম ও বিকাশে ওহাবী ও মওদূদীদের রয়েছে ঐতিহাসিক অবদান। তারা সৌদি পেট্রোডলার পায় আর সরকারি প্রোটেকশনে ও ক্ষমতাসীন দলের কোন কোন নেতার আশির্বাদে বাংলাদেশে ওদের বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা! আপনি দেখবেন- মন্ত্রী এমপিরা ওদের জনসভায় অতিথি হয়ে শোভা বর্ধন করছেন। ওরা ওদের মতবাদ প্রচারে মরিয়া। ওরা বোমা মেরে বাংলাদেশের ইসলাম প্রচারকদের স্মৃতিসৌধ গুঁড়িয়ে দিতে চায়। ওরা লাথি মেরে তাঁদের মাজারসমূহ ভেঙে ফেলতে চায়। ওরা সহীহ হাদিসের নাম করে 'ঘড়ি মেকার' কুখ্যাত আলবানীর নিক্তিতে প্রিয়নবীর (দরুদ) সব হাদিসকে সাগরে নিক্ষেপ করতে চায়। ওরা শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এমনকি ঈদে মিলাদুন্নবী যারা করে তাদেরকে মুশরিক আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলতে চায়। ওরা ওদের বিরুদ্ধবাদীদের কার আগে কে জবাই করে বেহেশতে যাবে- তার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ওরা মাযহাব মানে না। মাযহাব মানাকে ওরা কুফরি মনে করে। বাংলাদেশে যতো জঙ্গী আছে- সবই সালাফী মতবাদে দীক্ষিত। সারা পৃথিবীতে এদের হাতেই মানবতা বিপর্যস্ত এবং এদের কারণেই মুসলমানরা বদনামের ভাগীদার হচ্ছে।

বাংলাদেশে শিয়ারা হলো সুযোগ সন্ধানী প্রাণী। তারা অসচেতন সুন্নীদের পিছু পিছু ঘুরে। কেদে কেটে আহলে বায়তের কথা বলে। বরফ গলতে দেরি হয়, কিন্তু সুন্নীদের মন গলতে দেরি হয় না। আহলে বায়তের প্রকৃত মুহাব্বত ধারণকারী সুন্নীরা এমনিতেই নরম প্রকৃতির সরলমনা মুসলমান। প্রতিটি সুন্নীর অন্তর আহলে বায়তের মুহাব্বতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এই সুযোগে শিয়ারা সুন্নীদের অন্তরে ডিম পাড়ে। এর মধ্যে খুপিয়া শিয়ারা সব থেকে মারাত্মক। তারা এখন বিভিন্ন সুন্নী দরবারে বাসা বেধে শুধু ডিমই পাড়েনি, বরং তারা ইতোমধ্যে ছা পোনা ফুটিয়ে ফেলেছে। ওই ছা-পোনাগুলো আসল খুফিয়া মা শিয়ার সাথে 'চিক্কুত চিক্কুত' ডাক পাড়ছে। সবাই মিলে সুযোগ বুঝে সাহাবী বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইরান দূতাবাস এতে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। এদের সম্পর্কে কেউ কিছু বললে সমানে গালাগালি করে এবং অবস্থা বুঝে হালকা/পাতলা হুমকি দিতেও কসুর করে না। ইতোমধ্যে সুন্নী নামধারী কেউ কেউ শিয়াদের পরীক্ষিত দালাল হয়ে গেছে।
[চলবে...ইনশাআল্লাহ, বিফাদ্বলি রাসূলিল্লাহ (দরুদ)]

তারিখ: ২০ এপ্রিল, ২০১৭ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×