somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সারাদিন চোখের সামনে ঘটে যাওয়া যত অনিয়ম

১৩ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গল মিসকাত রাসেলের ফোন পেয়ে। ঘুমের ঘোরে এতটাই মত্ত ছিলাম-প্রথম কলটা দেখতে দেখতে কেটেে গেল ধরার শক্তি হল না। ঘোর কাটিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলাম তারপর দ্বিতীয় কলটা ধরলাম-হ্যালো রাসেল-
_কিরে এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি?
_হুম,বল?
_জলদি করে তৈরী হয়ে আয় কেনাবাড়ী যাব।
_কেন রে?
_সাহিত্যিক একটা প্রোগ্রামের দাওয়াত আছে।
এই এক বন্ধু আমার সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে যার সারাদিন কাটে। কোথায় কবে সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান আছে কে কে উপস্থিত থাকবেন এসকল তথ্য দিয়ে তার পকেট ভরা। মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যায় সাহিত্য শিল্পকে ভালবাসি তাই আমিও যাই। বাসার আশপাশে ঘুরাঘুরি করা অার বইয়ের পাতায় চোখ বুলানো ইদানিং রুটিন হয়ে গেছে। বোরিং লাগছে তাই যাওয়ার নিয়ত করে-ঠিক আছে দোস্ত আসছি বলে ফোনটা কাটলাম।
আরামের বিছানা ছেড়ে এক ঘন্টার ভেতর সব কাজ শেষ করে রাসেলকে ফোন দিলামঃ
_কই তুই?
_বাজারে চলে আয় আমি টিকিট কেটে রাখতেছি।
ফোনটা কেটে অনতিবিলম্বে বাসা থেকে বের হলাম। মনকে হেটে যাওয়ার পক্ষে নিতে পারলাম না। তাই রিক্সা নেওয়ার চিন্তা করলাম-
_মামা যাবেন ?
_হুম উঠেন।
এখন রিক্সার ভার্সন আপডেট হইছে সেই সাথে চালকও। আগেকার রিক্সা চালাতে হত পায়ের জোরে প্যন্ডেল মেরে এখন তা ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এখনকার রিক্সা চলে হাতের ইশারায়। সেই সাথে গতিও অনেক বেশি। কিছুদুর যাওয়ার পর হঠাৎ অতি শব্দে ডি.জে গান বেজে উঠল ভাবলাম রিক্সা হয়ত গান ও গায়। পরক্ষনেই বুঝলাম তা না চালক মামার মোবাইলে কল আসছে যার রিংটোন এটা। কলটা রিসিভ করে কথা বলতেছে আর এক হাতে রিক্সার স্টেয়ারিং । বাজারে যাওয়ার রাস্তাটা পিচের তৈরী আট ফুট প্রস্থের। দুটি রিক্সা এক সাথে চলতে সমস্যা হয়ে যায়। অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা এড়াতে বললাম মামা কলটা কেটে রিক্সায় মনযোগ দেন। আমার কথাটা বোধকরি উনার কান পর্যন্ত পৌছায় নি। আমিও আর জোর দিয়ে কিছু বললাম না। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে এফবি তে মজে গেলাম।
হঠাৎ বড়সড় একটা ঝাকুনি অনুভব করলাম তাকিয়ে দেখি মামা তরিগরি করে মোবাইল পকেটে ডুকিয়ে রিক্সার গতি বাড়িয়ে দিল। ঘটনাটি বুঝতে বাকা হয়ে পিছনে তাকালাম। দেখলাম একজন বৃদ্ধ মহিলা রাস্তার পাশে পড়ে আছেন আর একপাশে অন্য একটি রিক্সা দাড়ানো। বুঝলাম চালক মামা অঘটন ঘটাইছে। বললাম মামা দাড়ান মহিলা বোধ হয় ব্যথা পাইছে সাহায্য করা দরকারঃ
_কতা কইয়েন না। শক্ত কইরা ধইরা বইন। তারতারি ভাগন লাগব।
_কেন দড়ালে কি হবে?
_আরে বাবা এন খারইলে আমারে আস্তা রাকতনা মাইনসে। বাজারে গিয়া আমনেরে নামাইয়া দিয়া পলান লাগব।
কথা বাড়ালাম না। আমাদের বিবেক আজ কোন দিকে যাচ্ছে তাই ভাবলাম। দিনকে দিন আমরা সবাই স্বার্থপর হচ্ছি। কিছুক্ষন পর চলে গেলাম বাজারে। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিলাম ১৫ টাকা।
_২০ টাকা দেন।
_কেন?
_সকাল সকাল আইছি আমনেরে লইয়া ৫ টাকা বেশি দিতাইন না।
বাহ্ কি সুন্দর কথা।
_কেন দেব। ভাড়াতো ১৫ টাকা ৫ টাকা বেশি সকাল বলে?
তর্কে না গিয়ে রিক্সা নিয়ে দ্রুত গা ডাকা দিল চালক।
এইদোস্ত এই দিকে আয়... তাকিয়ে দেখি রাসেল বাস কাউন্টার থেকে ডাকছে। কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করলাম। বাস আসতে লেট হচ্ছে তাই অপেক্ষা করতে থাকলাম। দশ মিনিট পর বাস আসল। উঠে পড়লাম। সিটে বসলাম। জানালাটা একটু খোলে দিয়ে দুজনে গল্প শুরু করলাম।
কিছুক্ষন পর টিকিট চেক করা শুরু হল। হঠাৎ খেয়াল করলাম কেউ কেউ টিকিট না দিয়ে টাকা দিচ্ছে। অল্প কিছুক্ষন পর দেখি বাস থামল ৩ জন যাত্রী তুলা হল। এদের মাঝে ২ জন কলেজের ছাত্র। ভাবলাম ছাত্রের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে হয়ত ড্রাইবার উনাদের তুলছেন। উনারা ৩ জন ৩ সিটে ধরে দাড়িয়ে থাকল। বাসের সব যাত্রী যে যার মত ঝিমুচ্ছে। রাসেলও সেই পথেই হাটল। তাকে বিরক্ত না করে বাহিরে তাকালাম প্রকৃতি দেখছি ধ্যান করে।
হঠাৎ কানে আবছা আবছা কথা ভেসে আসছে।
_ভাই ভাড়া দেন ?
_ধরেন।
_কত দিলেন ?
_ছাত্র ভাড়া দুজন ১০ টাকা।
_আমাদের বাসে ছাত্র ভাড়া নাই।৬০ টাকা দুজন, ভাড়া দেন।
_তাহলে কোন বাসে আছে ভাই।
_ছাত্র ভাড়া দিলে লোকাল বাসে যান।
_রীতিমত ক্ষেপে গিয়ে একজন বলল ১০ টাকা নিলে নেন না নিলে যান ভাড়াই দিব না।
তাকিয়ে দেখি ছোটখাট ঝগড়া বাধিয়ে দিছে উনারা।এবার কন্টাকদার তাদের কাছে স্টুডেন্ট কার্ড চাইল।
_কি বললেন, মাথা গরম করে একজন বলল,স্টুডেন্ট কার্ড দেখাতে হবে তোমাকে? কার্ড তুমি চিন মিয়া।বেশি কথা বইলা কপালে দুর্গতি টাইনা আইন না যাভাড়া দিছি নিয়া যাও। একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি ।কন্টাকদার ভাড়াটা নিয়া চুপ করে রইল। এখানে কার দোষ কতটুকু বুজিবার অবকাশ রইল না। আমি শুধু ভাবলাম কোন সমাজে বাস করছি আমরা। যেখানে সিটিং সার্ভিস আর লোকাল বাসের পার্থক্য খোজে পাওয়া যায় না, ভাড়া এবং টিকিট নিয়ে চলে অনিয়ম, সেখানে কেউ নাই প্রতিবাদ করার। বাঙ্গালি আজ শান্তিপ্রিয়, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সবাই দশের কথা ভাবার সময় কারো নাই।
যাহোক, ৩০মিনিট পর গাজীপুর চৌরাস্তা এসে নামলাম। এখান থেকে অন্য বাসে গাজীপুর টু টাঙ্গাইল রোডে যেতে হবে কোনাবাড়ী। রোড পার হয়ে চলে এলাম এখানকার বাস স্টেন্ড এ।
এখানে এসে শুনতে পেলাম আরেক মছিবতের কথা। কোনো বাস কোনাবাড়ী যায় না। কালিয়াকৈর আর উত্তরবঙ্গের গাড়ি সব অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। কারন হিসেবে জানা গেল কোনাবাড়ী নাকি সকাল থেকে যানযট লেগে আছে। কোনা গাড়ি যেতে পারছে না। ব্যস শতশত যাত্রী ভোগান্তিতে।
দীর্ঘ সময় পর রাসেল বলল চল ছোট সি এন জি গুলো যায় কি না দেখি। একটু সামনে এগিয়ে গেলাম এখানে খেয়াল করলাম আরেক অনিয়ম। যানযট এর সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে ছোট সি.এন.জি ড্রাইভারদের একটি অসাধু চক্র। তারা যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে বিনিময়ে নিচ্ছে ৮ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা। প্রয়োজনের কাছে টাকার মুল্য নেই। তাই যাদের যাওয়াটা জরুরি তারা ১০০ টাকা দিয়েই যাচ্ছে। আর যাদের পকেটে টাকা কম তারা হা করে তাকিয়ে আছে। আমার মনে খটকা লাগল যেখানে অন্য গাড়ি যেতে ব্যর্থ সেখানে তারা যাবে কি করে। তবুও আশা ভরসা যেহেতু সি.এন.জি ই চেষ্টা করে তো দেখতেই হয় একটা সি.এন.জি তে দুটো সিট আছে-
_মামা যাবেন।
_কোথায়?
_কোনাবাড়ী।
_১০০ টাকা করে লাগব।
_কিছু কম হবে না।
_না না ।
_হুম চলেন ।
_উঠেন।
উঠে বসলাম। সি.এন.জি এগুতে থাকল। যেহেতু সাইজ এ ছোট বড় বড় গাড়ীর চিপা চাপা দিয়ে অনায়াসে যেতে পারে। ছোট গাড়ীগুলোর কারনেই বড় বড় ট্রাক আর বাস আরও এগুতে পারছে না।
যাহোক,১৫ মিনিটের রাস্তা যেতে ৫০ মিনিট লাগল। তবুও তো আসা হল। কোনাবড়ী এসে আমার খুব জানতে ইচ্ছে হল যানযটের নেপথ্যে কি কারন। রাসেল কে নিয়ে একটু সামনে এগুলাম বিষয়টা বোঝার জন্য। এখানে এসে যা জানতে পারলাম তাতে আমি হতভাগ না হয়ে পারলাম না।
স্থানীয় এক নেতার গাড়িতে একটি ট্রাকের ঘর্ষন লাগে। যার দরুন নেতা ট্রাক জব্দ করে এবং লোকজন নিয়ে রাস্তার একপাশ দখলে নিয়ে নেয়। ট্রাকের মালিকের বাসা বগুরা সেখান থেকে উনি আসবেন বড় অঙ্কের জরিমানা দিবেন তারপর ট্রাক সরানো হবে ততক্ষন রাস্তার বেহাল অবস্থা কাটবে না। সাধারন মানুষের ভোগান্তিও কমবেনা................................।
আমাদের সমাজ আজ কোনদিকে যাচ্ছে। জোর যার মুল্লুক তার। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার আগেও আমরা শক্তিশালী একটি শাসকগোষাঠী দ্বারা শোষিত হইছি আজও দেশের শক্তিবানদের দ্বারা হচ্ছি। পার্থক্য শুধু সেদিন প্রতিবাদ করতে পেরেছিলাম আজ প্রতিবাদের শক্তি আমাদের নাই।





সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×