somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চীন ও সমাজতন্ত্র

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুনদের হাত থেকে চীনকে রা করার জন্য চীন সাম্রাজ্যের সম্রাট ৎসিনশি-হুয়ান্দি প্রাচীর নির্মানের আদেশ দেন। চীনের রণলিপ্সু হুন উপজাতীরা চীনের উত্তরদিকে যাযাবরের ন্যায় জীবনযাপন করতো। চীনের উত্তর সীমানা বরাবর চীনারা মিনারসহ এই প্রাচীর তৈরী করে। প্রাচীরটি প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রস্থে এত চওড়া যে, একসাথে পাশাপাশি ৫জন অশ্বারোহী এর ওপর দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে যেতে পারে। এটি চীনের মহাপ্রাচীর নামে খ্যাত। প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে ধীরে ধীরে প্রাচীরটির নির্মান কাজ শেষ হয়। হান রাজবংশের রাজারা চীনে রাজত্ব করেছেন দীর্ঘদিন। তারাই একাজটি সমাধা করেছেন।
খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে চীন কাগজ আবিষ্কার করে। ছেঁড়া কাপড় আর বাঁশ গাছের বাকল দিয়ে প্রথম তারা কাগজ বানায়। প্যাপিরাজ নামক একপ্রকার গাছ দিয়ে তারা কাগজ তৈরী করে। কাগজ তৈরী করে চীন জ্ঞান প্রসারের েেত্র বিরাট ভূমিকা পালন করে। বিখ্যাত পন্ডিত ও ঐতিহাসিক সিমাৎসিয়ান চীনে প্রথম শতকের দিকে জীবিত ছিলেন। তিনি বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করেন; এতে সম্রাটের কোপদৃষ্টিতে পড়েন। সিমাৎসিয়ান ঐতিহাসিক কড়চা থেকে চীনের অনেক তথ্য জানা যায়। তাঁর লেখা থেকে অখন্ড চীনের রাষ্ট্রীয় ইতিহাস, হোয়াংহো (চীনের দুঃখ) ও ইয়ায়সিকিয়াং (ভ্রাম্যমান নদী), চীনের জলবায়ু, প্রাকৃতিক বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। চীনে ‘লালভ্র“’র বিদ্রোহ অভুত্থানকে ‘হলুদ পট্টির বিদ্রোহ’ বলা হয়। চীন লিপি আবিষ্কার করে। চীন প্রাচীন সভ্যতার জনকভূমি। চীনের আদিম যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিকযুগের পত্তনের ইতিহাস বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসের অমর সম্পদ। চীনে রাজতন্ত্র, সীমান্ততন্ত্র, ধর্মতন্ত্রের পরে আসে মনোপলি ক্যাপিটালিজম। হেগেলিয়ানা যুগের পরে আসে ফিনান্স পূজি তারপরে জাতীয়তাবাদের যুগ। মার্কস এঙ্গেলস ও লেনিনের চিন্তার যুগ। মাওবাদের বিকাশ ধারা, মাওবাদের মূলতথ্য গেরিলা যুদ্ধ, এটা এক ধরণের কৃষক ভিত্তিক বিপ্লবী আন্দোলন।
১৯১১ সালে চীনে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব শুরু হয় ডা.সানইয়ান সেনের নেতৃত্বে। ১৯১২ সালের জানুয়ারী চীনের জনগণ সানইয়ান সেনেকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে। এটা চীনের প্রথম বিপ্লব।
এরপরে আসে দ্বিতীয় বিপ্লব। ‘ইয়ান’ চক্রবিরোধী দেশপ্রেমিক বাহীনি এতে নেতৃত্বদেন। রাষ্ট্রপতি ইয়ান ক্যন্টনে চলে যান। ডা. সানইয়ান সেন পুনরায় রাষ্ট্রপতি হন। তাঁর মৃত্যুরপরে মাওসেতুং চীনের রাষ্ট্রপতি হন। কবি লু-শন ও লি তা-চাও সাধারণ মানুষের বিজয়ের ওপর দু’টি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থ দু’টি চীনে চাঞ্চল্য আনে।
কমিংটান সাম্রাজ্যবাদের দালাল চিয়াংকাই শেখকে জনগণ যুদ্ধে পরাজিত করে তাইওয়ানে তাড়িয়ে দেয়। ১৯৪৯ সালে ১ অক্টেবর মহান গণপ্রজাতান্ত্রীক চীন সরকার গঠন করা হয়। কমরেড মাওসেতুংকে রিপাবলিকের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করা হয়। এটাকে চীনের তৃতীয় বিপ্লব বলা হয়। এই তৃতীয় বিপ্লব নয়া গণতন্ত্র মহাচীনের মহা বিপ্লব। শুরু হয় নয়া গণতান্ত্রিক কর্মসূচী ‘পিপলস ডেমোক্রেটিক লিডারশীপ’ এ আন্দোলন পরিচালিত হয় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে। এর বছর সাতেক পরে ১৯৫৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চীনের অষ্টম কংগ্রেস। শুরু হয় জনগণতান্ত্রিক একনায়কত্ববাদের যুগ।
তখন মাওসেতুং এর সর্বশেষ স্ত্রীর চীনা রাজনীতির অগমন ঘটে। মাও-এর এক স্ত্রীর লংমার্চের সময় মৃত্যু ঘটে। আর এক স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে প্রতিবিপ্লবীদের হাতে। শেষে তিনি সাংহাই’র-এক খ্যাতনাম্নি চিত্রতারকাকে বিয়ে করেন। এ যেন শেক্স্রপিয়রের লেডিম্যাকবেথ- বৃদ্ধ তরুণী ভার্যা।
চীনের প্রথম পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় সাংহাইতে ১৯২১সালের ১লা জুলাই। দ্বিতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ১৯২২ সালের মে মাসে, তৃতীয় পর্টির কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালের জুন মাসে, ৪র্থ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৫ সালের জানুয়ারী মাসে। ১৯২৭ সালের ২১ এপ্রিল হাংকাউ শহরে পঞ্চম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২৮ সালের জুলাই মাসে ষষ্ঠ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তম কংগ্রেসে নয়াগণতান্ত্রিক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। সাত বছর পরে অষ্টম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। ১১ বছর পরের এই কংগ্রেস ১৯৫৬ সালে ১৫ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।
চীনের মহান নেতা, মহান শিক, মহান সর্বাধিনায়ক, মহান কর্নধার, মহান চিন্তানায়ক, মার্কসবাদী, লেনিনবাদী দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ নতুন ব্যাখ্যাকারী মহান চেয়ারম্যান মাওসেতুং যে চিন্তাধারা সৃষ্টি করেন সেই ‘মাওবাদ’ আমাদের কালের পৃথিবীর সর্বহারা মানুষের পতাকা, রক্তলাল। মাও এর বিপ্লবী শিা থেকে সর্বহারা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে গ্রামের কৃষক সাধারণকে সংঘটিত করার পর তাদের নিয়োজিত করা হবে গ্রামে গ্রামে গেরিলা যুদ্ধে। গেরিলা যুদ্ধে জয়ের পর সেখানে কৃষিবিপ্লব ঘটিয়ে স্থাপন করতে হবে সুদৃৃঢ় ঘাটি। তারপরে গেরিলা বাহিনীর সহায়তায় শহর দখল করা হবে। এভাবে শত্র“কে পরাজিত করে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের চুড়ান্তরূপ মাওবাদী শাসন। এটাই হলো মাওসেতুং-এর মহানধারা চিন্তাধারা- ‘মাওদর্শন’ তাঁর বাণীঃ যেহেতু শহরগুলো শোষক ও প্রতিক্রিয়াশীলদের দূর্গ, কাজেই গ্রাম থেকে ঘিরে ফেলতে হবে তাদের এমনি ভাবে শহরের পতন ঘটাতে হবে এবং সেখানে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সর্বহারা রাজ। এটার অপর নাম “গ্রাম বিপ্লব” মাও-এর বাণী: - “জনগণের কাছে যাও-তাদের কাছ থেকে শিা গ্রহণ কর।” মাওবাদের মন্ত্রে দিতি হয়ে কৃষক গেরিলা বাহীনীর বন্দুকের নল দিয়ে বিপ্লব তরাহ্নি^ত কর। বন্দুকের নল তোমাদের পথ দেখিয়ে দেবে, ল্য স্থলে নিয়ে যাবে। কারণ বন্দুকের নল হল মতার উৎস। এমনি ভাবে পৃথিবীতে সর্বহারা রাজ কায়েম হবে। এটাই “মাস লাইন” বা “গণশক্তির কার্যক্রম।” এই নয়া গণতান্ত্রিক লাইনই আজ দুনিয়ার সর্বহারা রাজ কায়েমের একমাত্র পথ, মুক্তিরপথ, এ পথে অগ্রসর হও দেখবে সত্তর মুক্তি আসবে। সক্রেটিস, প্লেটো, ব্র“না, কোপার্নিকাস, গ্যালিওি, অ্যারিস্ততল, হেগেল, লুডউইক, ফয়েরাবাখ যীশুখৃষ্টের জন্মের কয়েকশত বছর পূর্ব থেকে অযুত কন্ঠে ঘোষণা করেছে- ‘মানুষের মুক্তি চাই’। কিন্তু মুক্তি আসেনি। মানুষের মুক্তির জন্য মুনিষী কাল মার্কস - ফেডারিল এঙ্গেলস তথ্য দিলেন। লেনিন তা সোভিয়েত রাশিয়ায় বাস্তবে রূপ দিলেন। সৃষ্টি হলো মানুষের মুক্তির জোয়ার, চীনে সে নীতিকে মন্থন করে নয়া নির্জাস সৃষ্টি করলেন কমরেড মাওসেতুং; ‘নয়া গণতন্ত্র’ সৃষ্টি করলো নয়াচীনে। মাকর্স-এ্যাঙ্গেলসের মতবাদ, লেনিনের মতবাদ ও মাওসেতুং এর চিন্তাধারায় প্রতিষ্ঠিত এই নয়া জনগণতান্ত্রিক চিন্তাধারা শুধুচীনেই নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লো এ নয়া মতবাদ- মাও চিন্তাধারা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×