২৪ জানুয়ারী '৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান দিবস
১৯৬৯ সালের এই দিনে পাক স্বৈর শাসক লৌহ মানব হিসেবে খ্যাত ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খানের পতন হয়।
১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারী স্বৈরাচারী আইয়ুব বিরোধী গণ আন্দোলনের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কিংবদন্তীতুল্য অকুতোভয় ছাত্রনেতা। ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আসাদের মৃত্যুর পর আয়ুবের পতন তরান্বিত হয়।
ছাত্রনেতা আসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাষ্টার্স করছিলেন। আসাদ ছাত্র রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা হল শাখা সভাপতি ছিলেন। আসাদ ছিলেন মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী ও সাবেক ছাত্রনেতা কমরেড রাশেদ খান মেননের ঘনিষ্ঠ সহচর।
পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি তাদের ১১ দফা আন্দোলন শুরু করে। ১৯৬৯ এ এই আন্দোলন চরম রূপ নেয়। ১৭ ই জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১১ দফা দাবীতে এবং পুলিশ ও ই. পি. আর. বাহিনী কর্তৃক ছাত্র-জনতার উপর বর্বর নির্যাতন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি পূর্ণ হরতাল পালনের আহবান জানায়। হরতালের অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের সকল স্কুল, কলেজে ধর্মঘট পালিত হয়। গভর্নর মোনায়েম খান ২০ জানুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। পাকিস্তান পুলিশ থেকে বলা হয় শহরের কোথাও চার জনের বেশি লোক একসাথে হলে তাদের গ্রেফতার করা হবে। ২০ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কলেজের ছাত্ররা মিছিল সহকারে জড়ো হয়। ১১ দফা দাবিতে শহরে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রের এক বিরাট মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ।
মিছিলটি তৎকালীন পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে সামনে এসে পোছলে সেখানে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন। পুলিশ এর সাথে সংঘর্ষ প্রায় এক ঘণ্টা পর আসাদ সহ কিছু ছাত্র মিছিল আবার সংঘটিত করে ঢাকা হলের পাশে দিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। তখন একজন পুলিশ অফিসার তাকে বেয়নেট দিয়ে আহত করে রাস্তায় ফেলে দেন এবং তাকে খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়। পুলিশের গুলিতে ঢাকা মেডিকেলের বর্তমান জরুরী বিভাগের সামনে আসাদ শহীদ হন।
ছাত্রনেতা আসাদের মৃত্যুর খবর সারা শহরে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার ছাত্র জনতা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছুটে আসেন। অসংখ্য শোক মিছিল বের হয়। শহিদ আসাদ হত্যা প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশাল মিছিল বের হয়। ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করার সময় সাধারণ মানুষ , নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই মিছিলে যোগ দেন। দুই মাইল লম্বা সেই মিছিল ছিল ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ মিছিল। শোক মিছিল শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল দেখে শামসুর রাহমান 'আসাদের শার্ট' অমর কবিতা লিখেন। হেলাল হাফিজ লিখেন কালজয়ি কবিতা 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়'। শহীদুল্লা কায়সার লিখেন 'সমুদ্রে যখন ঝড় উঠে'। আ ন ম গোলাম মোস্তফা লিখেন 'কবরের ঘুম ভাঙে'।
পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি শহীদ আসাদের হত্যার প্রতিবাদে তিন দিনের শোক পালন করে। ২৪ তারিখ হরতাল দেওয়া হয়। সেই দিন আবারও মিছিল লক্ষ্য করে পুলিস গুলি করে। পুরো পরিস্থিতি গভর্নর মোনায়েম খানের বাইরে চলে যায়। তুমুল গণ আন্দোলনে প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদী জনগণ বিভিন্ন স্থানে আয়ুব খানের নামের স্থাপনা ভেঙ্গে সেখানে শহীদ আসাদের নাম লাগিয়ে দেন। সংসদ ভবনের ডান পার্শ্বে অবস্থিত লালমাটিয়ায় একটি তোরণ আইয়ুব গেট থেকে নাম পরিবর্তন করে আসাদগেট রাখা হয়। আইয়ুব এভেনিউ এর নাম হয় আসাদ এভেনিউ।
তার ৪১ তম মৃত্যু বার্ষিকীকে সামনে রেখে শহীদ আসাদকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। শহীদ আসাদকে নিয়ে লেখা দুটি কবিতা
'আসাদের সার্ট'
- শামসুর রাহমান
গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সুর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের সার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।
... ..... ....... ...... ......
.... .... .... ..... .......
ডালিম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দূর শোভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে, এখন সে সার্ট,
শহরের প্রধান সড়কে,
কারখানার চিমনি-চুড়োয়,
গমগমে এভেন্যুর আনাচে-কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায়।
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা, কলুষ আর লজ্জা,
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখন্ড বস্ত্র মানবিক
আসাদের সার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।
নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়
- হেলাল হাফিজ
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কন্ঠ
পা এক নয় ।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।
যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।
১.২.৬৯
![](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/generic-ads-580x400.jpg)
আলোচিত ব্লগ
ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।
"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"
এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
সমূদ্র-সৈকতে - ১৬
ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।
বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাঁআআআচ্চুউউউ! :) :D ;)
হাঁচতে নাকি জানে না কেউ,
কে বলেছে বোন
এই দেখোনা কত্ত হাঁচির
ওজন শত টন।
কিম হাঁচে বাড়া ভাতে,
বাইডেন হাঁচে তার সাথে সাথে,
লালচে চীনের জোরসে হাঁচি,
কাঁদে সবুজ ঘাস।
মাদার রুশের হাঁচি দেখে
হয় যে বনবাস!!
বনবিবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু
বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন