somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাকসবজি ও ফলমূল থেকে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূরীকরণের পদ্ধতি

২৭ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফসলের রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে ফসলকে রক্ষা করার জন্য এবং কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদনকে ধরে রাখার জন্য কৃষকরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করে থাকে। এ সমস্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশে এবং জনস্বাস্থ্যে নানারূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। ফসলে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের পর বালাইনাশকের অপেক্ষমান সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তার পূর্বেই ফসল সংগ্রহ করলে ফসলে বিষাক্ত রাসায়নিক বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ থেকে যেতে পারে। কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বালাইনাশক বিশ্লেষণ গবেষণাগারের প্রাপ্ত ফলাফল নিম্নোক্ত বাস্তবতা প্রতীয়মান হয়-

(MRL- Maximum Residue Limit বা খাদ্যদ্রব্যে বালাইনাশক উপস্থিতির সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা)
সবজিতে
MRL এর নিচে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ- ৩০-৪০%
MRL এর উপরে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ- - ১০-১২%
ফলমূলে
MRL এর নিচে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ- ৮-১০
MRL এর উপরে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ- - ৩-৪%

যদিও উপর্যুক্ত গবেষণায় সংগৃহীত নমুনার সংখ্যা তুলনামুলকভাবে কম, তবুও এ সম্ভাবনা থেকেই যায় যে, আমরা যে সমস্ত ফল-মূল বা শাকসবজি বাজার থেকে ক্রয় করে খাচ্ছি, হতে পারে সে সমস্ত ফল-মূল ও শাকসবজিতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার (MRL) উপরে। কাজেই আমাদের জন্য প্রয়োজন বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ কিভাবে ফল-মূল এবং শাকসবজি হতে হ্রাস করা যায় তা অনুসরণ করা ।

যে সমস্ত পদ্ধতির মাধ্যমে ফল-মূল ও শাকসবজি হতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায় (৬০-৮০%) সেগুলো হলো:

১.ধৌতকরণ
গবেষণায় দেখা যায় যে, গরম পানিতে ধৌত করলে ফল-মূল ও শাকসবজি হতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ ঠান্ডা পানির দ্বারা ধৌত করার চেয়ে বেশী দূর করা যায় । ধৌত করার সময় যদি ১ মিনিট হাত দ্বারা ভালভাবে ফল-মূল, শাকসবজি পরিষ্কার করা হয় (gentle rubbing) তবে এ পদ্ধতির কার্যকারীতা আরো বৃদ্ধি পায় । এখানে উল্লেখ্য যে, ধৌতকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে অন্ত:র্বাহী বালাইনাশকের (systemic pesticide) অবশিষ্টাংশ উল্লেখযোগ্যভাবে দূর করা যায় না, তবে স্পর্শ ও পাকস্থলী (contact & stomach) বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পায়।

২. ফল-মূল ও সবজির খোসা ছাড়ানো
সাধারণত: সবজির বাহিরের পাতা এবং ফল-মূল ইত্যাদির বাহিরের আবরনে তুলনামূলকভাবে বেশী বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ উপস্থিত থাকে। এক গবেষণা প্রতিবেদন হতে দেখা যায় যে, খোসা ছাড়ানোর মাধ্যমে ৫০% বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায়। এ পদ্ধতিটি বেশী কার্যকর যে সমস্ত ফল ও সবজি খোসা ছাড়া ভক্ষণ করা হয় যেমন: শসা, কলা, পেঁপে, আম এবং লেবু জাতীয় ফল ইত্যাদি।

৩. শাকসবজি রান্না করা
এ পদ্ধতির কার্যকারীতা নির্ভর করে রান্নার সময়কাল, তাপমাত্রার পরিমাণ, খাদ্য দ্রব্যে পানি সংযোজনের পরিমাণ এবং রান্নার ধরণ (খোলা বা বন্ধ) ইত্যাদির উপর । সাধারণত: খোলা পদ্ধতিতে বাষ্পীভবন (Volatilization) এবং বন্ধ পদ্ধতিতে পানির সাথে রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে বিয়োজনের (Hydrolysis) মাধ্যমে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ হ্রাস পায়।

৪. ফল-মূল ও শাকসবজি বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রবনে ডুবিয়ে রাখা
i) লবণ পানির মিশ্রণে ডুবিয়ে রাখা:
কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বালাইনাশক বিশ্লেষণ গবেষণাগারে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন হতে প্রতিয়মান হয় যে, ১ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম বা ২ চা চামচ খাবার লবণ (২% লবণ-পানির দ্রবন) মিশিয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত ফল-মূল, শাকসবজি ডুবিয়ে রাখলে বালাইনাশকের ক্রিয়ার ধরনের উপর ভিত্তি করে শতকরা ৩০-৮০ ভাগ পর্যন্ত বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায়।
ii) ভিনেগার পানির মিশ্রণে ডুবিয়ে রাখা:
এ ক্ষেত্রে প্রথমে ৫% ভিনেগার দ্রবন তৈরী করতে হবে। এ জন্য ১ লিটার পানিতে ৫০মিলিলিটার সাদা ভিনেগার ঢেলে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর কাংখিত ফল-মূল ও শাকসবজি ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবেঅত:পর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিলে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ ৪০-৮০ ভাগ হ্রাস পায়।

ফল-মূল ও শাকসবজি হতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূরীকরণের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী পদ্ধতি
উপর্যুক্ত পদ্ধতি সমূহের মধ্যে সহজে এবং নিরাপদভাবে সকলের জন্যই ব্যবহারযোগ্য, সাশ্রয়ী ও অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বালাইনাশক বিশ্লেষণ গবেষণাগার হতে উদ্ভাবন করা হয়েছে যা । এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল-মূল এবং শাকসবজি হতে শতকরা ৬০-৮০ ভাগ বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায় । নিচে ছবির মাধ্যমে পদ্ধতিটি দেখানো হল:


তথ্যের উৎস : কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:২৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×