সকালের ঘুম ভাঙতে ভাঙতে কখন যে সকাল,বেলাতে রূপান্তরিত হলো টেরই পেলাম না।ঘুম থেকে উঠেই মাথা গুজে দিলাম সাওয়ারের নিচে।টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলাম।ড্রয়ার খুলে আমি বেনসনের প্যাকেট হাতে নিলাম,অতঃপর একটা বেনসনের উপর আমার মনের উষ্ণতা কমানোর দায়িত্ব দিয়ে বারান্দায় এসে দাড়ালাম।ফোনে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম,সাকিব ৬ বার ফোন দিয়েছিলো।আমি তাড়াতাড়ি সাকিবকে ফোন ব্যাক করলাম।ফোন ধরেই,
সাকিব-"ভার্সিটিতে এলি না যে??!"
আমি-ঘুমাচ্ছিলাম রে,তা কোন বিশেষ দরকার?"
সাকিব-"না,তোর নোট যে আমার কাছে রয়ে গেছে তা কি মনে নায়,তোর!"
আমি-"ও,হ্যা!আমি কি এখন তোর বাসায় আসবো?"
সাকিব-না,তোর মনে নায়!কাল ৭ তারিখ?"
আমি-"৭ তারিখ তো হইসে কি!"
সাকিব-"আরে কাল থেকে ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ শুরু।এখনো নিশ্চয়ই তুই সব ব্যাবস্থা করোস নায়!"
আমি-নারে দোস্ত।ভুলেই গিয়েছিলাম,তাড়াতাড়ি ফোন রাখ,আমি দেখি কি করা যায়।
"সাকিব-"ওকে বাই।"
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কাল থেকে যে ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ শুরু আহা রে!!আমি যে কেন এত বোকা!এখন কে জানে আর কোন রূপসী পাওয়া যাবে নাকি!এসব ভাবতে ভাবতে আমি "ভালোবাসার রঙ" এ ফোন দিলাম।
-হ্যালো,আমি নবনিতা বলছিলাম স্যার,বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
-আমি আসলে কালকে থেকে শুরু যে ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ তার জন্য একটা গার্লফ্রেন্ড চাচ্ছিলাম।
-তা স্যার আপনার পছন্দের বিস্তারিত বলুন,আমরা আপনার জন্য যথাযথ সহায়তা করবো।
-মেয়ের হাইট মাঝারী উচ্চতার হলেই হবে,খুব যে ফর্সা হতে হবে তা নয়,তবে চেহারায় মিষ্টতা থাকতে হবে,চুল এলানো গোছেড়,চোখ দুটো টান টান হতে হবে,স্বাস্থ্য মাঝারী।
-ওকে স্যার অপেক্ষা করুন আমি দেখছি,হ্যা স্যার এরকম একজন আছে নাম নীলা,আমি তার ফোন নম্বর দিয়ে দিচ্ছি আপনাকে।
-তা আপনাদের পেমেন্ট কেমন?
-স্যার আমাদের এই প্যকেজ ৭ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।আমাদের কোম্পানি চার্জ ৮ হাজার স্যার আর বাকি তার পিছে যা খরচ তা আপনার ব্যক্তিগত।
-আচ্ছা আপনি আমার বাসার এড্রেস নেন,তার ফোন নম্বর দেন,লোক পাঠিয়ে তার ছবি দিয়ে আর পেমেন্ট নিয়ে যেয়েন।
-অবশ্যই স্যার,আজ বিকেলের মধ্যে আমরা আপনার সাথে ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহের চুক্তিটা সেরে ফেলবো!"ভালোবাসার রঙ" এর পক্ষ থেকে স্যার ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা রইলো।
বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো না আমায়,এক ঘন্টা পরই আমার বাসায় লোক হাজির।মেয়ের ছবি বেশ পছন্দ হয়েছে আমার।আমি রুম থেকে গত মাসের পাওয়া টিউশনির ৫ হাজার টাকা আর মায়ের পাঠানো ৩ হাজার টাকা নিয়ে দিয়ে দিলাম।লোক যাওয়ার আগে বলে গেলো স্যার আমাদের কার্যক্রম কাল সকাল ৮ টা থেকেই শুরু।নীলা কাল সকালেই আপনার বাসায় চলে আসবে।কাল রোজ ডে থেকে শুরু করে ১৫-১৬ তারিখ স্ল্যাপ ডে ও ব্রেকআপ ডে দিয়ে কার্যক্রম শেষ।এর মধ্যে ১৪ তারিখ রাত শুধু সে আপনার বাসায় থাকবে।আমি হ্যাসূচক মাথা নাড়লাম ও লোকটিকে হাসি মুখে বিদায় দিলাম।
৭ তারিখ সকাল,দরজার ঐ পাশে এক অদ্ভুত অপরূপা দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাচ্ছে।
সেই থেকে শুরু আমার ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ।এই সপ্তাহে হয়তো আমার অনেক খরচ হচ্ছে তবে তাতে কি!আধুনিকতার জোয়ারে তো আমি ভাসতে পারছি।আর টাকার তো অভাব নেই।মা আমাকে ৬ হাজার পাঠিয়েছে।তবে সেই টাকা যে ছিলো মায়ের চিকিৎসার টাকা আর তা যে মা গোপন রেখেছে সে গোপন কথা আর কখনই প্রকাশ পাবে না।এই কয়েকদিনের কৃত্রিম ভালোবাসার জন্য আমরা যে আমাদের প্রকৃিত ভালোবাসা উপেক্ষা করছি তাও যে আজ আধুনিকতা।
আর আজকাল ভালোবাসার যে আধুনিকতা!!!উক্ত ঘটনাটা হয়তো কাল্পনিক,তবে উক্ত ঘটনার বাস্তবে রূপ নেয়া আজ শুধুই মাত্র সময়ের ব্যাপার।এভাবেই হয়তো এক সময় আমরা ভালোবাসা ভাড়া করে চলবো।ভালোবাসার শুভেচ্ছা রইলো সে পর্যন্ত সকলকে,তবে এই ভালোবাসা আজকালকার এই আধুনিক ভালোবাসা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১২