যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।
কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!
ঠান্ডার দেশগুলো গোলাপী বা সাদা চেরীই বসন্তের রঙ নির্ধারণ করে। একেক দেশের বসন্ত একেক রং-এ সাজে!
এই চেরী, এই কৃষচূড়া – এক ভীষণ মন রাঙানো উপভোগ্য ব্যাপার হয়ে ওঠে প্রতিবছর! গাছে গাছে যেন আগুন লেগেছে! বাসে করে রাস্তায় চলার সময়, পাশেই যদি এইরকম একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ চোখে পড়ে, চেয়েই থাকতে ভাল লাগে! আজকাল শিমুল ফুল দেখতেও যায় লোকে! এই লাল রঙটা আমাদের সাথে খুব যায়!
বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে, ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে…
আমাদের আরো ঋতু রঙ ফুল বিলাসিতা আছে! এই যেমন, বর্ষায় হলুদ, সাদা কদম! শরতের সাদা কাঁশফুল! অনেকেই এই কাঁশবনগুলোতে ছবি তুলতে ভালোবাসেন!
আরো আছে শিশির ভেজা ভোরের শিউলি তলায় ফুল কুড়োনোর ধুম! এরপর মালা গাঁথা! হল জীবনে এটা রীতিমত সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল!
এরই আগে পরে ফোটে বেলী!, রজনীগন্ধা! রাস্তার পাশে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বেলী ফুলের মালা হাতে নিয়ে এমনি বেড়াতে থাকে যে আপনি আমি কিছুতেই এই বেলী ফুলের আকর্ষণ এড়াতে পারি না। সুযোগ পেলেই বেলী ফুলের মালা কিনে হাতে জড়ানো আজো অভ্যেস!
মাঝে মাঝে বেলী ফুল গাছ কিনে এনে বাসার বারান্দায় রাখি, বেশিদিন টিকাতে পারি না। নার্সারী থেকে আনা ফুলগুলোই ফোটে, নতুন আর ফোটা না!
বেলী ফুলের মালা পরে, এক প্রেমিক প্রিয়াকে ঘরে তুলেছে! যৌতুক, টাকা কড়ি পায়ে দলেছে…
ছোটবেলায় হাস্নাহেনা, গন্ধরাজ ফুল, বকুল ফুল – এসবও কুড়োনো বা সংগ্রহের তালিকায় ছিল।বকুল ফুলের মালা দেখলে এখনো নস্টালজিক হই। আমাদের পাড়ায় যে হুজুরের কাছে আমার আরবী বা কুরআনের হাতে খড়ি, তার উঠোনেই ছিল বিশাল ছড়ানো বকুল ফুলের গাছ! সেই ছোটবেলায় সকালে বা বিকেলে বান্ধবীরা সহ বকুল ফুল কুড়োতাম। ফুল কুড়োতে কুড়োতে নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ অনুভব করা, সেই স্নিগ্ধ কোমল অনুভূতি আজো শিহরণ জাগায়।
বেলী ফুল, হাসনাহেনা, প্রতিটি ফুলের ভিন্ন রকম কোমল ঘ্রাণ!
সুযোগ পেলেই কিনি লাল মেরিন্ডা গোলাপ বা হলুদ গোলাপ! বাসায় এনে ডাইনিং টেবিলে গ্লাসে পানি রেখে কয়েকদিন সাজিয়ে রাখি। এটাই আজকাল আমার রোমান্টিকতা!
এরকম ঘ্রাণ বিলাসিতা হয় আমের কুড়ি দিয়েও, বা ছোট ছোট গাছ থেকে ঝরে পড়া আম কুড়াবার কালে।
এইবার গ্রামে গিয়েও সেই একই অনুভূতি দেখলাম ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের! গাছ থেকে করা (ছোট) আম পড়ে টুপ করে, আর দল বেঁধে তাদের আম কুড়োনোর ধুম!
ডেওয়া ফলের ছোট করাও এভাবে গাছ থেকে পড়ে। সারা উঠোন সবুজ – হলুদ – কমলা রং-এর মেলা! ছোট ডেওয়া ফল পায়ে মাড়াতেও আরেক রকম মজা! পট করে শব্দ হয়!
ছোটবেলার আরো ফুল বা রঙ বিলাসিতা আছে!
এই যে শিউলি ফুল বললাম, তার বোঁটার কমলা রঙ দিয়ে আঁকানো কিছু রঙ করা, পুঁই শাকের বেগুনি ফুল দিয়ে গা-হাত-পা মাখিয়ে ফেলা!
আরো তো রইলো ফুলের মধু খাওয়া!
সরিষা ক্ষেতে দু চোখ যতদূর যায়, কেবলি তাকিয়ে থাকা! কি চমৎকার চোখ জুড়ানো হলদে রঙ!
কাঁঠালিচাঁপার সাদা- হলুদও মাঝে মাঝে ভীষণ ভাল লাগে! নীলকন্ঠের নীল রঙ!
ঘ্রাণের দিক থেকে কাঁঠালও কম যায় না! কাঁঠাল খাবার পর হাত অনেকক্ষণ নাকের কাছে নিয়ে শুঁকতে থাকা একটা বিলাসিতা বা ভাল লাগার ব্যাপার! জামের বেগুনি কষ থেকে অনেক সাবধান থাকার চেষ্টা করেও লাভ হয় না!
মাঝে মাঝে আজকাল জিরার গুঁড়ো শুঁকতেও ভাল লাগে! বড় হয়ে গেছি! এটা এরই লক্ষণ!
ইলিশ মাছ ভাজা তেলের ঘ্রাণ? কেমন লাগে বলুন তো! সেই তেলে মুড়ি মাখিয়ে খাওয়া! আহা!
আচার-গোশতের ঘ্রাণ? সরিষার ঝাঁঝালো ঘ্রাণ!
আজকাল আমার সরিষার তেল দিয়ে বারবিকিউ চানাচুর মাখা খেতে খুব ভাল লাগে!
কিছু কিছু গরম মসলার ঘ্রাণ খুবই ভাল লাগে! রাঁধতে গেলে পরিবেশটা উপভোগ্য হয়ে ওঠে যদি ভাল ঘ্রাণ পাওয়া যায়!
বলে ঘ্রাণেই অর্ধেক ভোজন!
আর যদি পোড়া ঘ্রাণ নাকে লাগে! অ্যা মা! সব গেল রসাতলে!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯