somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারিগরি শিক্ষার প্রসার

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারিগরি শিক্ষা নিয়ে ১৯ অক্টোবর ২০১৭ সালে কালের কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। বক্তার নাম উল্লেখ না করে শুধু গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলোই তুলে ধরছি। আলোচনায় চিন্তা এবং কাজ করার দিকনির্দেশনাও আছে...

আমাদের দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে কর্মরত। তাদের পাঠানো অর্থে আমাদের অর্থনীতি স্বনির্ভর হচ্ছে। কিন্তু যাদের আমরা বিদেশে পাঠাচ্ছি বা আমাদের দেশে যারা কলকারখানায় কাজ করছে, তারা কতটুকু দক্ষ এই বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়া উচিত ও দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। আমাদের এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কারিগরি শিক্ষায় কতটুকু দক্ষ করতে পারছি সেটা ভাবা উচিত। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা কারিগরি শিক্ষায় যাচ্ছে না। এতে বেকারত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য সবার মাঝেই সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ছে। আমাদের শিল্প-কারখানায় বিদেশের অনেক লোক কাজ করে। এখানে যদি আমাদের দেশের লোক কাজ করতে পারত তাহলে দেশের টাকা দেশেই রাখা সম্ভব হতো।

কাজের উপযোগী করে কারিকুলাম তৈরিতে আমাদের এখনো সমস্যা আছে। এই জায়গাটায় আমাদের ঘাটতি রয়েছে। গতানুগতিক শিক্ষা থেকে অনেক আগেই উন্নত দেশগুলো বেরিয়ে গেছে। তারা কারিগরি শিক্ষাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। একটি শিশু কী পড়বে, শিখবে তার ওপরই ছেড়ে দেয়। তাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটাকে ঢেলে সাজাতে হবে। এতে আমরা নিজেরাও উপকৃত হব, দেশ উপকৃত হবে।

২০০৯ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার হার ২০ শতাংশে ও ২০৩০-এর মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। আমরা এই বিষয়টা বুঝতে পেরেছি। তবে আমাদের দেশে একটা মানসিকতা আছে—সব সরকার করে দেবে। পলিটেকনিকে গেলে ছাত্র ভর্তি করবে সরকার, ল্যাব করে দেবে সরকার, পড়ালেখার দায়িত্ব নেবে সরকার। কিন্তু সরকার কোথা থেকে টাকা পাবে? এখন বেসরকারি উদ্যোক্তারা পারেন এগিয়ে আসতে। তাঁরা যদি নিজ এলাকায় সরকারি বা বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান থাকে, সেখানেই একটা ল্যাব করে দেন; মনে রাখবেন, এটা দান নয়, বিনিয়োগ।

বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা কিংবা এর প্রসার নিয়ে আলোচনা শুরু বেশিদিনের নয়। এমনকি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও কারিগরি শিক্ষার যাত্রা বেশিদিনের নয়। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা ও প্রসার নেই। বাংলাদেশে কারিগরি ক্ষেত্রে যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। এই শিক্ষার প্রসার নিয়ে নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে পাঁচটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই টাস্কফোর্সগুলো সরকারি-বেসরকারি অংশীজন এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে। তা হলো—পলিসি ও প্রজেক্ট ফর্মুলেশন টাস্কফোর্স, ইন্ডাস্ট্রি ও ইনস্টিটিউট লিংকেজ টাস্কফোর্স, টিভিইটি এনরোলমেন্ট টাস্কফোর্স, কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট টাস্কফোর্স এবং জব মার্কেট অ্যাসেসমেন্ট ও এমপ্লয়মেন্ট টাস্কফোর্স।

কারিগরি শিক্ষা হচ্ছে জীবনমুখী শিক্ষা। কিন্তু অনেকে এটাকে সেকেন্ড চয়েস শিক্ষা হিসেবে আখ্যা দেয়। তবে এটাকে এভাবে বললে হবে না, অনেকে নিরুৎসাহ হতে পারে। দেশে কোন ধরনের মানবসম্পদ প্রয়োজন সেই বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। সেই ধরনের পরামর্শও প্রয়োজন। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে র্যাংকিং করতে সফটওয়্যার সিস্টেম চালু করা হয়েছে। বর্তমানে আট হাজার ২০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান আছে। তবে বর্তমানে ডিপ্লোমা পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়নেও পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

কারিগরি শিক্ষা এখন সময়ের দাবি। দেশের চাহিদা মেটানো ও বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিতে কারিগরি শিক্ষার প্রসার প্রয়োজন। তবে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ খুবই কম। এর মধ্যে কারিগরিতে বরাদ্দ সামন্যই। বর্তমানে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু দেখা যায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী সাধারণ কলেজে ভর্তি হয়। বাকি এক লাখ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির জন্য আবেদন করে। এই শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য সাধারণ স্কুলে কারিগরি শাখা যুক্ত করা প্রয়োজন। যদি আপাতত সেটা সম্ভব নাও হয় তাহলে প্রতিটি স্কুলে অন্তত একটি করে ট্রেড চালু করে এ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। একদিকে এতে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরি হবে, অন্যদিকে কেউ যদি মাধ্যমিকের পর পড়ালেখা নাও করতে পারে তাহলেও তার দক্ষতা অনুযায়ী শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারবে। আমরা মনে করি কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে এই খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×