গতকাল ২১ নভেম্বর
দিবাগত অর্থাত্ ২২
নভেম্বর রাত ১২:৫৫
মিনিটে রাজাকার সাকা
ও মোজাহিদকে ফাঁসিতে
ঝুলানো হয় ।
তারা দুজন যে কুখ্যাত
রাজাকার এতে কোনো
সন্দেহ নেই ।
তাদের ফাঁসিতে আমার
কোনো দুঃখ নেই ।
চিহ্নিত এই দুই রাজাকারের
ফাঁসির ফলে অনেক
রাজনৈতিক দল খুশি
আবার কিছু দুঃখী কিন্তু
কেউ জানেনা এই ফাঁসিতে
শুধু একজনেরই জয়
হয়েছে সে হচ্ছে হতভাগিনী
বাংলাদেশ ।
যা-ই হোক,
মূল প্রসঙ্গে আসি ।
আচ্ছা আপনাকে যদি
বলা হয়-
মি......, আপনার আজ
রাত ১২:৫৫ মিনিটে
ফাঁসি ।
তখন আপনার অনুভূতি
কি হবে ?
সাকা,মোজাহিদ কুখ্যাত
রাজাকার এটা যেমন সত্য
তারা মানুষ এটাও সত্য ।
কেমন লাগে যখন কেউ
জানতে পারে যে আর
২০ মিনিট পর তার
ফাঁসি !
জীবনের এ পর্যায়ে তাদের
কি কিছু চাওয়ার থাকে !
তাদের মনে তখন কি
ছুটাছুটি করে ?
আমরা যতোই বলি না
কেন তিনি ভালো মানুষ,
উনি বেহেশতে যাবেন
তারপরো একটা খটকা
থেকে যায়,কারন উনি
মানুষ ।
ফাঁসির দঁড়ি টান দেওয়ার
কয়েক সেকেন্ড আগে সে
কি ভাবে !
সে কি শক্ত হয়ে থাকে নাকি
নুয়ে পড়ে ?
একটা তরতাজা প্রাণ
কয়েক সেকেন্ডেই ঝরে
পড়ে !!
পৃথিবীর অনেক দেশে এই
কথাগুলি চিন্তা করে ফাঁসিতে
ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ
করা হয়েছে ।
এর মধ্যে,সুইডেন গত বছর
এই আইন করেছে ।
কিন্তু আমাদের দেশের
প্রেক্ষাপট ভিন্ন ।
আমাদের দেশে ৫৫ হাজার
রাজাকার আছে ।
মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজলে
দেখা যাবে কত্ত রাজাকারের
গায়ে "মুক্তিযোদ্ধা "লেখা ।
যাক এ কথা,
হাঁড়ির খবর হাঁড়িতেই
থাক ।
আমি বামপন্থী নিরীহ
মানুষ,ভিড়ের ভেতর
যেতে চাই না ।
আমি যদি আওয়ামীলীগ,
বিএনপি অথবা শিবিরের
কেউ হতাম তাহলে হাঁটে
হাঁড়ি ভাংতাম ।
কিন্তু আমি তাদের কেউ
নই,আমি একজন খাঁটি
বামপন্থী বিপ্লবী মানসিকতার
কমিউনিস্ট আর কমিউনিস্ট
কখনো মাথা নুয়ায় না ।
আমার জন্য ঢাকা শহরে
পা দেওয়াটা হবে একটা
চূড়ান্ত মাইফলক,আমার
জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ।
আমি যে একটা বোম
সেটা ঐ ইট-পাথরের
শহরে গিয়েই
বিস্ফোরিত হবো ।
পারিবারিক বাঁধা,শৃঙ্খল
আর ডানপন্থী মানসিকতার
শিকল আমি ছিঁড়ে ফেলবো ।
পরিবর্তন প্রিয় কোনো
বামপন্থী দলে আমি নাম
লেখাবো ।
যদি খাঁটি বামপন্থী সংগঠন
না পাই তবে নিজে একটা
বানাবো ।
তবু চামচামি করা কোনো
ভন্ড বামপন্থী সংগঠনে
আবিদ যাবেনা ।
১৬ কোটির এই বাংলাদেশে
১ লাখ টকবগে বিপ্লবী
তরুণ পেতে আমার খুব
বেগ পেতে হবেনা ।
অসহায় হতদরিদ্রের ঘরে
সদ্য জন্মানো ছেঁড়া কাথায়
প্যাঁচানো বাঁচ্চাটার জন্য,
ডাস্টবিনে দুই হাতে
খুঁচিয়ে খাদ্য খুঁজতে থাকা
৭ বছরের শিশুটির জন্য,
দুধের অভাবে অপুষ্টিতে
ভোগা বস্তির ঐ শিশুটির
জন্য,রেললাইন আর ফুটপাথে
খিঁদের জ্বালা কমাতে ঘুমিয়ে
থাকা অসংখ্য মানুষদের
জন্য,ভিক্ষুক মুক্তিযোদ্ধার
জন্য,৫৫ হাজার রাজাকারকে
প্রকাশ্যে রাজপথে গুলি করে
হত্যা ও তা টিভিতে লাইভ
দেখানোর জন্য,
৫০ বছর ধরে বাঙ্গালী
রক্ত চুষে খাওয়া প্রত্যেকটা
রাজনীতিজীবীকে ফাঁসিতে
ঝুলানোর জন্য আর একটা
বিশুদ্ধ লাল টকটকে রক্তিম
সূর্যের জন্য আমি আর
আমার সংগঠন আমৃত্যু
লড়ে যাবে কারন আমি
চে,আমি লেনিন,আমি
মাও সে তুং,আমি নেলসন
ম্যান্ডেলা,আমি কর্নেল
তাহের,আমি সিরাজ
শিকদার,আমি নূর হোসেন
আর আমিই একজন খাঁটি
কমিউনিস্ট ।
আমি জানি,
আমার এই চিন্তা ও
কর্মকান্ডের জন্য আমাকে
ফাঁসির মঞ্চে যেতে হতে
পারে ।
আমাকে অন্যায়ভাবে
দোষী সাব্যস্ত করা হবে ।
তারপর একদিন
সন্ধ্যা রাতে আমাকে
বলা হবে-
"মি.আবিদ আজ রাতে
আপনার ফাঁসি "
আমার পরিবার দেখা
করতে আসবে,আমার
৯ টা ভাই-বোন,
আমার আব্বা,
আমার ছোট ছোট সব
ভাগনে-ভাগনী,
ভাতিজা-ভাতিজী আর
আমার প্রিয়তমা স্ত্রী
আর ভবিষ্যত বাংলাদেশের
শ্রেষ্ঠ সন্তান হিমান্ত ।
আমি তাদের একটা
কথাই বলে যাবো-
"ক্ষুদার্তকে খাবার দিও,
অন্যায়,অত্যাচার আর
নিপিড়নে জর্জরিত মানুষের
পাশে দাঁড়িও আর একটা
শিশুও যেনো ঈদের
নতুন জামা থেকে বঞ্চিত
না হয় ।"
জীবনের শেষ ঘন্টায়
আমি হয়তো জীবনের
হিসাব মেলাবো ।
ছোট্ট প্রাইমারীর আবিদ
যে ছিল সবার আদরের,
দূরন্ত স্কুল বালক আবিদ,
শান্ত,লজ্জাবতী কলেজ
ছাত্র আবিদ,বিপ্লবী আবিদ,
রূপা,হিমান্ত-চোখের
সামনে ভাসবে ।
জীবনের শেষ মূহুর্তের
দিকে আমাকে নেওয়া
হবে,আমাকে ঝুঁলানো
হবে ফাঁসিতে ।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা
করবে ফাঁসিতে ঝুলার
আগে যে সেই স্কুল,কলেজ,
ভার্সিটি,ঢাকার রাজপথ
ওরা কি ভাবছে,ওরা
কি জানবে ওদের আবিদ
চলে যাচ্ছে,
ওদের কি কেউ জানাবে ?
তারপর আমি মিশে
যাবো ঐ অনন্ত
নক্ষত্রবিথীতে ।
জীবন সুন্দর,পৃথিবী
মায়াময়,বিপ্লব চির
অমৃত ।।