somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

ছোটোদের বড়োগল্প: খামখেয়ালী রাজা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কুকুরের বড়ো উৎপাত। গ্রামের মানুষ গেল ক্ষেপে। যে-যা হাতের কাছে পেয়েছে তাই নিয়ে দিল তাড়া। কুকুরেরা ভয়ে এলামেলো ছোটাছুটি করছে। গ্রাম জুড়ে ধর ধর, হই চই কাণ্ড। কুকুরের ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেল।

একটা কুকুর আর একটা কুকুরী দৌড়ে এক বনের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। একটা গাছের ছায়ায় বসে তারা হ্যাঁস-ফ্যাঁস করে হাঁপাতে লাগল।

অনেক ক্ষুধা এদের পেটে। আর শরীরেও নেই তেমন শক্তি।
কুকুর বলল, পায়ের জোরে কোনোমতে জীবন বাঁচিয়ে এলাম, এখন ক্ষুধা থেকে বাঁচি কীভাবে।
কুকুরী বলল, ক্ষুধা যতই লাগুক গ্রামে আর যাওয়া যাবে না। মানুষ আমাদের ওপর খুব রেগে আছে। চলো যাই এই বনের দিকে। সেখানে যদি কিছু পাওয়া যায়।
কুকুর বলল, আমাদের এই অসহায় চেহারা নিয়ে বনের ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে না। বনের ভেতরে অনেক পশু-পাখি থাকতে পারে। বনে যাওয়ার আগে আমাদের রূপ বদলে ফেলা উচিৎ।
রূপ বদলে ফেলা কি সহজ কথা! বলল কুকুরী।
খুব সোজা, ওই যে গাছের তলে পড়ে আছে রসালো আর রঙ্গীন ফল। এ ফলের রস যেন একেবারে রঙের কৌটা। চলো আমরা এই ফলের উপর গড়াগড়ি খাই আর নিজেরা রঙ্গীন হয়ে ওঠি।
কুকুরী বলল, গড়াগড়িতে সারা গা রঙ্গীন হবে কিন্তু আমাদের মুখ, হাত, পা, কান, মাথা আর লেজ রঙ্গীন হবে কীভাবে?
তুমি রঙ মেখে দেবে আমাকে আর আমি দেব তোমাকে। ব্যস হয়ে গেল।
তারা তাই করল। রঙে তারা এমনই রঙ্গীন হয়ে উঠল যে, ওরা অবাক হয়ে দুজন দুজনের দিকে হা-করে তাকিয়ে রইল। কুকুর চেনে না কুকুরিকে আর কুকুরি চেনে না কুকুরকে। ওরা কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে-কেশে কুটি কুটি।

দুই.
তারা বনের পাশে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে, বনের ভেতরে পশু-পাখি আছে। কুকুর আর কুকুরি আরেকটু সামনে এগিয়ে গেল। দেখে কয়েকটা শেয়াল বসে কি যেন বলাবলি করছে।
এক শেয়াল কান খাঁড়া করে বলল, কে, কে তোমরা এখানে ইতিউতি করছ, কে?
কুকুরী খুব নরম সুরে বলল, ভাই শেয়াল তোমরা আমাদের চিনতে না পারলেও আমরা ঠিকই তোমাদের চিনতে পেরেছি।
আরেকটা বয়স্ক শেয়াল কাছে এসে বলল, আমরা তো তোমাদের চিনতে পারছি না। আগে নাম-পরিচয় বলো।
কুকুর বলল, আমার নাম আটুল আর ওর নাম বাটুল।
শেয়াল হা করে কিছু একটা বলতে চাইল কিন্তু কুকরী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আসলে আটুল বাটুল আমাদের আসল নাম না, মানুষ আমাদের আদর করে আটুল বাটুল বলে ডাকে।
শেয়াল কান খাড়া করে বলল, মানুষ তোমাদের আদর করে? আবার আদর করে আটুল বাটুল বলেও ডাকে? ভারি মজার কথা তো? আমরা তো মানুষের ভয়ে বনের বাইরে যেতে পারি না।
শুধু কি তাই? আমাদের প্রতি মানুষের ভালবাসার সীমা নেই। তারা বড়ো ভালবেসে আমাদের গোটা শরীর রঙ্গীন করে দিয়েছে। এখন যে রঙ তোমরা দেখছ এটা আমাদের আসল রঙ নয়। আসল রঙ দেখবে কদিন পরে।
তাই নাকি! আসল রঙ না হয় কদিন পরেই দেখব কিন্তু তোমাদের আসল পরিচয়টা এখন বলে ফেলো।
আমাদের আসল পরিচয় আমরা কথায় দেব না-আমাদের পরিচয় পাবে কাজে। বলল কুকুরী।
শেয়াল বলল, বাহ্, সুন্দর কথা শোনালে। তো তোমরা এই বনে কী চাও?

কুকুরী বলল, আমরা এই বনে তোমাদের সঙ্গে থাকতে চাই। কারণ গ্রামের মানুষকে শান্তি দেওয়ার কাজ শেষÑএখন বনে শান্তি বিতরণ করতে এসেছি আমরা।

শান্তি? শেয়ালেরা চোখ ছোট করে বলল, আমরা তো শান্তিতেই আছি। এখানে তো কোনো অশান্তি নেই। আমাদের এ শান্তির বনে তোমাদের কোনো দরকার নেই। যেখানে শান্তি নেই সেখানে গিয়ে শান্তি বিতরণ করোগে, যাও।

কুকুরী বলল, আরে ভাই তোমরা যেভাবে আছ, তাকেই বলছ শান্তিতে আছি। সুখ-শান্তির কি শেষ আছে। আমরা বনে সবার মাঝে এমন সুখ আর শান্তি বিলিয়ে দেবো যে, তোমরা আফসোস করে বলবে, হায়রে, আগে যদি তোমাদের দেখা পেতাম, তো জীবন কতো সুন্দর আর আনন্দময় হতো!

কুকুর আর কুকুরীর কথায় শেয়ালদের মনে লোভ জেগে উঠল। শেয়ালেরা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা বনে থেকে যাও। আমরা দেখতে চাই, এ বনে তোমরা কেমন সুখ আর শান্তি বিলিয়ে দিতে পার।

কুকুরেরা বনে থাকতে শুরু করল।

আটুল-বাটুলের কাণ্ড

দিন যায় রাত যায়। আটুল আর বাটুলের আচার ব্যবহারে বনের সবাই খুশি। তাদের এই খুশি বেশি দিন টিকল না। আটুল বাটুলের আসল রূপ ধীরে ধীরে বের হতে লাগল। চারদিক থেকে শেয়ালের কাছে নানান অভিযোগ আসতে শুরু করল।
খরগোস এসে কেঁদে-কেটে বলল, ভাই শেয়াল, মহা ঝামেলায় পড়ে গেলাম! আটুল আমার ছোট ভাইটিকে ধরে নিয়ে গেছে।
একটু পরেই গেল বেজি আর খট্টাস। তারা চোখের জলে বলল, একি শুরু হয়েছে বনে? আটুল বাটুলের ভয়ে আমরা বাড়িছাড়া। ওরা আমাদের যেখানে পায় সেখানেই খাবলে ধরে। আমরা তো আর টিকে থাকতে পারছিনে ভাই।
বনমোরগ এসে বলল, আমার ছেলেমেয়ে একটাও নেই। সব গেছে আটুল আর বাটুলের পেটে। এক বনবেড়াল এসে বলল, আমিও এতদিনে আটুল-বাটুলের পেটে চলে যেতাম যদি না আমার খামচি আর ফোঁশ না থাকত। আটুল বাটুল আমাকে যখন ধরতে এলো আমি ফোঁস করে খামচি দিয়ে গাছে উঠে গেলাম। এতেই রক্ষা। এসব কথা শুনে শেয়ালদের কান গরম হয়ে গেল।
আটুল আর বাটুল যতই খায় তাদের খিদে মেটে না। সারাদিন খাই খাই করে। তারা মস্ত বড়ো পেটুক।
এক শেয়াল গেল প্রতিবাদ করতে। শেয়াল কিছু বলার আগেই আটুল বাটুল তাকে খপ করে ধরে একচোট কামড়িয়ে দিল। সে কোনোমতে ছাড়া পেয়ে ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে ফিরে এলো গর্তে। আটূল-বাটুলের ভয়ে বন কম্পমান।
শেষে সকল পশু-পাখি গেল এক মুরব্বি শেয়ালের কাছে।
তারা বলল, এমন হিংস্র আটুল বাটুল দিয়ে আমরা কী করব? তোমরা কোন লোভে পড়ে এ ভয়ংকর আটুল বাটুলকে এ বনে থাকতে দিয়েছ? তাদের আচরণ তো মেনে নেয়া যায় না। যখন যা ইচ্ছে তাই করছে তারা। এখন তো এ বনে থাকা মোটেও নিরাপদ নয়। এখন এই আটুল বাটুলের পেটে চলে যাওয়ার আগে তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা করো, রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল তারা।

আটুল বাটুল হলো রাজা আর রানী
এসব কথা শুনে শেয়ালেরা পরামর্শ করে পরের দিন আটুল বাটুলের কাছে গিয়ে বলল, এ বনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তোমাদের থাকতে দিয়ে কি আমরা অপরাধ করেছি? কই তোমাদের শান্তি? তোমরা বনে অশান্তি সৃষ্টি করছ। এভাবে চলতে পারে না। তোমরা কী চাও তাই বলো।
বাটুল শান্ত গলায় বলল, শান্তি যদি চাও তো আটুল মশাইকে বনের রাজা বানাতে হবে। রাজা না হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। শেয়ালেরা বলল, এতদিন তো আমরা বনের রাজা ছাড়াই মেলা সুখে শান্তিতে ছিলাম। এখন রাজা বানাতে হবে কেন?
বাটুল বলল, শান্তি চাও তো রাজা বানাও নইলে আমাদের খোরাক হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাক।

শেয়ালেরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে আটুলকে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, এ বনের রাজা মানলাম তোমাকে। এবার হলো তো?

বাটুল মুচকি হেসে বলে, তাহলে আমি হলাম তোমাদের রানী। কী, আমি রানী না?

শেয়ালেরা খুব কষ্ট করে জবাব দিল, হ্যা নিশ্চই তুমি আমাদের রানী।

আটুল বলল, তোমরা এবার রাজা-রানীকে কুর্ণিশ করে চলে যাও। আগামীকাল বিকেল বেলা ওই মাঠে সবাই উপস্থিত থাকবে।

পশু-পাখিরা নতুন রাজা আর রানীকে কুর্ণিশ করে চলে গেল।




শেয়ালে করবে রাজা-রানির খাবার জোগাড়

পরের দিন পশু পাখিরা একত্র হলো একটি খোলা মাঠে। রাজা বলল, আমি তোমাদের রাজা। আর এ বাটুল তোমাদের রানীমা। আগে তোমরা তোমাদের সম্মানিত রাজা রানীর প্রতিদিনের খাবারের সুবন্দোবস্ত করো তারপর হবে তোমাদের সুখ-শান্তির ব্যবস্থা।
সবাই বলল, খ্ওায়ার ব্যবস্থা? আমরা তো নিজেরা কামাই করে খাই। কেউ কাউকে খাইয়ে দেয় না। আমরা কীভাবে আপনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করব রাজা মশাই?

রাজা বললেন, রাজা রানীকে যদি কামাই করে খেতে হয় তো রাজ্য চালাবে কীভাবে? অসংখ্য প্রজার মধ্যে সুখ-শান্তি আর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে কীভাবে?
প্রতিদিন আমাদের পশুপাখির টাটকা গোসত এনে খাওয়াতে হবে। মনে রেখো, রাজা-রানীকে ক্ষুধার্ত রেখে বনে শান্তি আনা যাবে না। বুঝতে পেরেছ ব্যাপারটা?

রাজা আর রানীর খাবার জোগাড় করার প্রধান দায়িত্ব পড়ল শেয়ালের ওপর।

আটুল বাটুল রাজা রানী হওয়ার আনন্দে বনের ভেতরে এক ডোবার জলে গোসল করে বাসায় ফিরে গেল। ডোবার পানি রঙ্গীন হয়ে গেল। গোসলের পর তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ল।
বনের পশুপাখিরা রাজা রানিকে দেখে অবাক হয়ে বলল, হায় হায় আমরা যাদের রাজা আর রানী বানিয়েছি, এরাতো ভয়ংকর কুকুর ছাড়া আর কিছুই না! কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই।



জাদুর কৌটা
শেয়ালেরা পালা করে একেক দিন একেক প্রাণির গোসত এনে খাওয়ায়। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে খাবার এনে দেয় সামনে। হড় হড় গড় গড় আওয়াজ করে মুহূর্তে ওরা সব খাবার সাবাড় করে ফেলে। শেয়ালেরা ফিসফাস করে বলে, এই পেটুক রাজার পেট শান্ত রাখা কি সম্ভব! যেদিন শেয়াল কোন গোসতের ব্যবস্থা করতে পারে না সেদিন শেয়ালেরা ছেলেমেয়ে নিয়ে লুকিয়ে থাকে। টাটকা গোসত না পেলে রাজা রানী পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে। তারা সামনে যাকে পায় তার উপরই ঝাপিয়ে পড়ে। খামখেয়ালী রাজার কারণে বনে নেমে এলো অশান্তি।

রাজা ক্লান্ত ও বিমর্ষ শেয়ালদের বলল, তোমরা টাটকা খাবারের সন্ধানে রাতেরবেলা চলে যাবে পাশের গ্রামে। ওই গ্রামের ঘরে ঘরে হাঁস মুরগি আছে। তোমরা নিয়ে আসবে ওসব। যাও।

শেয়ালেরা রাতের অন্ধকারে চলে যায় গ্রামে। তারা গৃহস্থবাড়ি হতে চুপি চুপি নিয়ে আসে হাঁস আর মুরগি। রাজা আর রানী মজা করে খায়।

এদিকে রাজা রানিকে ঠিকমতো খাবার না দিতে পারলে, ক্ষুধার্ত রাজা রানি যে আচরণ করে তা প্রজাদের সহ্যের বাইরে।
রাতে শেয়ালেরা গ্রামে ঢুকে আঁতিপাঁতি করে খুঁজছে হাঁস আর মুরগি। এমন সময় ওরা শুনতে পেলো, এক বুড়ি আফসোস করে বলছে, ‘কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না। আরামে ছিল, ভাল লাগেনি। সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। এখন বুঝুক গে মজা।’
এ কথাটা শেয়ালের কানে বারবার বাজতে লাগল। ‘কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না।’ ব্যাপারটা কি তাহলে?
শেয়ালেরা বসে বুদ্ধি করল, আমরা আসলে আস্ত বোকা। যে-ঘি কুকুরের পেটে হজম হয় না সেই ঘি খাওয়াচ্ছি না কেন? খাইয়ে দেখি অবস্থাটা কি দাঁড়ায়।

এক শেয়াল বলল, চল আমরা হাঁস-মুরগির পরিবর্তে নিয়ে যাই ঘি। ঘি খাওয়াবো রাজা-রাণীকে।

গৃহস্থের রান্না ঘরে কৌটা ভর্তি ঘি। শেয়ালেরা ঝটপট ঘি-এর কৌটা নিয়ে বনে ফিরে গেল।

কৌটা নিয়ে সামনে ধরতেই রাজা-রানি সবটুকু ঘি খেয়ে ফেলল। তারা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলল বাহ, এই মহামজাদার খাবার অনেক দিন পরে খেলাম। এটা এতই মজাদার আর শক্তিশালী খাবার যে, যত খাওয়া যাবে ততই শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকবে আর গায়ে প্রচণ্ড শক্তির সৃষ্টি হবে।
শেয়ালেরা দেখল, রাজা রানি ঘি-এর পাগল। কিন্তু এভাবে ঘি কয়দিন খাওয়ানো যাবে। ফুরিয়ে গেলে পরের ব্যবস্থা কী!

এক বৃদ্ধ শেয়াল পরামর্শ দিয়ে বলল, রাজা-রানি যেভাবে ঘি খায় তাতে আর সমস্যা নেই। পেটুক রাজা রানির খাবার জোগাড়ের জন্য আর চিন্তা করতে হবে না। তারা শুকনো গোবর-ল্যাদা ঘিতে মেখে দিলে খেয়ে সাবাড় করে ফেলবে। জাদুর মতো কাজ করবে ঘি। এখন হাঁস মোরগের পরিবর্তে নিয়ে আসতে হবে জাদুর কৌটা।

শেয়ালেরা ঘি এনে গাধা, খট্টাস আর নিজেদের শুকনো লেদা ঘিতে মেখে নেয়। তারপর রাজা-রানির সামনে নিয়ে ধরে। ওমনি পেটুক রাজা আর রানি হড় হড় গড় গড় করে খেয়ে সাফ করে ফেলে।

বাহ, ভারি মজা তো। শেয়ালেরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। ঘিতে মেখে যা দেয় তাই খেয়ে ফেলে রাজা রানি। তো চিন্তা কীসের।
শেয়ালেরা শুকনো গোবর আর ল্যাদা কুড়িয়ে আনে। জাদুর কৌটা থেকে একটু জাদু ঢেলে মেশায় তারপর দেয় খেতে। রাজা-রানি সব খেয়ে চেটে পুটে সাবাড় করে ফেলে।

এভাবে বনের পশু-পাখীর ল্যাদা খাওয়াতে লাগল রাজা আর রানিকে।

রাজা-রানি দিনে দিনে মোটাতাজা হয়ে উঠল।
আনন্দে রাজা-রানির দিন কাটতে লাগল।


রাজা রানির এ আনন্দ টিকল না বেশি দিন
প্রচুর পরিমাণে ঘি খাওয়ার ফলে রাজা-রানির শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে গেল। শরীরে এক ধরনের পোকার আক্রমণে অস্থির রাজা-রানী। সারাদিন গা চুলকায়।
এদিকে শেয়ালেরা রাজা-রানির এ লক্ষণ দেখে খাবারে জাদুর পরিমান আরো দিল বাড়িয়ে।

দিনে দিনে অবস্থা এমন হলো যে, রাজা-রানীর গা চুলকানি আর থামে না। লোম পড়ে যাচ্ছে। নখের আঁচড়ে শরীর থেকে মাংস খুলে পড়ে যায়। পোড়া বেগুনের মতো দেখা যায় রাজা আর রানীর শরীর। তারা রোদে যেতে পারে না। চুলকানি ব্যারামে অস্থির। রাজা রানী দিনে দিনে নিস্তেজ হয়ে পড়ল। আগের মতো দাপট নেই। রোদে-তাপে যেতে পারে না। ওরা ছায়ায় বসে সারাদিন চুলকায় আর জিহ্বা বের করে হাঁপায়।

পরেরদিন শেয়ালেরা খাবার দিতে এসে দেখে রাজারানি চুলকাতে চুলকাতে গায়ের মাংস তুলে ফেলেছে। মাঝে মধ্যে হাড় দেখা যায়। এদের অবস্থা খুব খারাপ।

পশুপাখিরা পরের দিন গিয়ে দেখে রাজারানি আর নেই। গাছের তলে পড়ে আছে তাদের কংকাল।

শেয়ালেরা বনের সকল পশু-পাখিকে বলল, দেখো আমাদের রাজারানি আর নেই। তাদের কঙ্কাল আছে আমাদের সামনে।

বনের পশু আর পাখিরা গেয়ে উঠল-
আহা রাজা এলেন বনে...
নকল রাজা সুখ দিয়েছে, সুখ পাইনি মনে।
ঘিয়ের সাথে গোবর ল্যাদা খাইল কুকুর রাজা
খ্ওায়ার পাগল রাজা-রানির হলো দারুন সাজা
আমরা সবাই ব্যস্ত ছিলাম খাওয়ার আয়োজনে
আহা, রাজা গেল রানি গেলো শান্তি এলো বনে।
আহা রাজা এলেন বনে।

ছবি নেট থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৫
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×