somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

নীল বালক

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন অদ্ভুত একটি ঘটনা ঘটে গেল তুর্যের ঘরে। সে দেখল টিনের চালের গোলাকার ছিদ্র দিয়ে নীল আলো এসে পড়েছে মেঝেতে। সে লক্ষ করল, আলোর ভেতরে অসংখ্য প্রাণ ওড়াউড়ি করছে। সে একটি আঙুল ঢুকিয়ে দিল আলোর মধ্যে। আঙুলটি নীল রঙে রঙিন হয়ে গেল। ভারি আনন্দ পেল সে।
তারপর সে ভাবল, আচ্ছা আমি নিজেই রঙ্গীন হচ্ছি না কেন? এই বলেই সে আলোকরশ্মির মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালো এবং দেখতে দেখতে সে নীল বালক হয়ে গেল। তার পায়ের তলা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত ঘন নীল। মনে হচ্ছে তার শরীরে নীল আলোরা খেলা করছে। তার আনন্দ আর ধরে না।

তুমি কেমন আছ তুর্য? ঘরের উপর থেকে কে যেন বলল।
কে কথা বলে? কে! বলে উঠল তুর্য।
আমি ম্যাল্টন ভোঁ।
ভোঁ? সেটা আবার কী? আমি তো জীবনেও এমন নাম শুনিনি।
না শোনারই কথা। কারণ তোমার সাথে আমার কখনো দেখা হয় নাই। তাই তুমি আমার বিষয়ে কিছুই জান না।
তুমি কোত্থেকে এসেছ ভোঁ? উপরের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল তুর্য।
আমি এসেছি অনেক দূরের এক গ্রহ থেকে। আমি ও আমার বন্ধুরা কিছুদিন যাবৎ আসা যাওয়া করছি তোমাদের এই গ্রহে। তোমাদের আকাশটা অনেক সুন্দর। তোমাদের গ্রহের নাম পৃথিবী আর আমাদের গ্রহের নাম পিকুলাই ডিডি।
পিকুলাই ডিডি। এটা কোথায়? আমাদের শহরে নাকি?
কোকল কোকল শব্দ করে হেসে উঠল ভোঁ। বলল, সেটা এই পৃথিবী থেকে এত্ত দূরে যে সেটা তুমি ভাবতেই পারবে না এখন। আমি তিন আলোকবর্ষ দূর থেকে এখানে এসেছি। তুমি বড় হলে জানতে পারবে আমাদের গ্রহটি তোমার এখান থেকে কত দূরে। আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম, তুমি খুব একা। কিছুতেই মন বসছে না তোমার। আমি আমার চোখ থেকে এক ফালি আলোর রশ্মি ফেললাম তোমার ঘরে। দেখতে চাইলাম এই আলোর রশ্মি দিয়ে তুমি কী কর। তুমি কৌতূহলী হয়ে খেলায় মেতে উঠেছ।
আমাদের পিকুলাই ডিডি গ্রহের শিশুরা অনেকটা যন্ত্রের মতো। নতুন কিছু পেলেই ওরা চটপট বসে পড়ে গবেষণার কাজে। এর আদ্যোপান্ত না জানা পর্যন্ত ওরা খাবারের কথা পর্যন্ত ভুলে যায়।
আচ্ছা এই রঙ্গীন আলো যদি চলে যায়, তখন? জানতে চাইল তুর্য।
না যাবে না। আমি তোমাকে একটি জিনিস দিয়ে যাচ্ছি। এ নিয়ে তুমি থাকবে সৃষ্টির আনন্দে।
সেটা কী?
একটি পেনসিল। পেনসিল দিয়ে তুমি অদ্ভুত সব কাণ্ড করে ফেলতে পারবে। ভাল থেকো তুর্য, আমি গেলাম। একথা বলেই ভোঁ উধাও হয়ে গেল। আর আলোটি মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে খেতে একটি পেনসিল হয়ে গেল। নীল আলোর ঝলমলে রঙ্গীন পেনসিল। যা সুন্দর!


দুই.

তুর্যের মন চঞ্চল হয়ে উঠল।
সে ঝটপট একটা খাতা নিয়ে বসে পড়ল খাটের ওপর। কী আঁকবে প্রথম! ভাবতে ভাবতে সে একটা ফুল আঁকল। কালো কালির দাগ দেখে সে বলল ওহুঁ এখানে যদি লাল হতো! আরেকটা আঁক দিতেই লাল রঙ বেরিয়ে এলো। আশ্চর্য তো! তারপর সে আঁকল একটা প্রজাপতি। পাখাগুলো যদি লাল নীল আর সবুজ হতো বলতেই তার মনের মতো রঙ বেরিয়ে আসতে লাগল। তুর্য আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল পেয়ে গেছি আমার মনের মতো পেনসিল পেয়ে গেছি।
একি! প্রজাপতিটা আঁকা শেষ করতেই নড়ে উঠল যে। তারপর পাখা মেলে ঘর জুড়ে ওড়াউড়ি করতে লাগল। তুর্য পেনসিল সামলাবে নাকি প্রজাপতির পেছনে ছোটাছুটি করবে এখন?
তারপর সে আঁকল একটা বিড়ালছানা। ছানাটির লেজে পেন্সিলের শেষ টানটা দিতেই মিয়াঁও করে এক লাফে চলে গেল খাটের তলে। সে চুপি দিয়ে বলল, তুমি আমার মতোই একা। রাখ, তোমার সঙ্গী বানিয়ে দিচ্ছি। এঁকে ফেলল একটি নেংটি ইঁদুর। ইঁদুরটি নড়ে উঠতেই বিড়ালছানাটি কান খাড়া করে ওৎ পেতে বসে পড়ল। ইঁদুরটি দিল ভোঁ দৌড়। তার পিছু নিল ছানাটি। টম এ্যাণ্ড জেরি মতো কাণ্ড ঘটতে লাগল ঘরের ভেতর।
তুর্য ভাবল ওদেরকে শাসন করতে হবে। সে অনেক ভেবে একটি পুতুল আঁকল। পুতুলটি লাঠি নিয়ে ইঁদুর, বিড়াল আর প্রজাপতির পেছনে ছোটে। ওদের ছোটাছুটিতে ঘরের জিনিসপাতি ভেঙেচুরে শেষ। হাঁড়ি-পাতিল, বাসন কোশন, গ্লাস প্লেট বই খাতা কোনোটাই ঠিক নেই। মাঝে মধ্যে তুর্যের পিঠের উপর দিয়ে ছোটে ওরা। সমস্যা আরও বেড়ে গেল।
তুর্য আর পুতুল আঁকবে না, সে অন্য কিছুু আঁকার কথা ভাবছে এখন।
একটি পেনসিল তুর্যের কল্পজগতের অসংখ্য ডানা মেলে দিয়েছে। সেই ডানায় চড়ে বেড়ায় তুর্য।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×