somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন রয়িছ সাহেব

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল ৭টা
প্রতিদিনের মত আজও কাধে সে আধ ছেঁড়া কালো ব্যাগ আর এক হাতে টিফিন ক্যারিয়ারটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।এইটা রয়িছ সাহেবের অফিসে যাওয়ার নিত্যদিনের প্রস্তুতি।

এই শুনছ,(রয়িছ সাহেবের স্ত্রী হৃদিতা) ।
-হ্যাঁ বল,-
-আসলে আজ ২ দিন হল বাবুর দুধ নেই।আজকে মনে করে বাবুর জন্য একটা দুধের কোয়টা নিয়ে এসো।
-আচ্ছা ।
-মনে করে এনো কিন্তু।
রয়িছ সাহেব এইবার বের হবার জন্য প্রস্তুত।হঠাত করেই নীল (রয়িছ সাহেবের মেয়ে) কেঁদে উঠল।রয়িছ সাহেব দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে কোলে নিলেন।মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালবাসেন রয়িছ সাহেব।মেয়েটা দেখতে অবিকল রয়িছ সাহেবের মায়ের মত হয়েছে।ভালবাসার পরিমানটা তাই কয়েকগুন বেশিই বৈকি।

-বাবা (রয়িছ সাহেবের ছেলে )
-বল বাবা
-বাবা আমার খাতা শেষ,আর স্যার কোচিং এর বেতন চেয়েছেন।মনে করে আজ অফিস থেকে ফেরার পথে দিয়ে এসো।
রয়িছ সাহেবের ছেলে সীমান্ত।খুব ভাল ছাত্র ষষ্ট শ্রেনীতে পড়ে।গতবছর টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।ঢাকা বিভাগে মেধা তালিকায় ৩য় স্থান পেয়েছে।

-রয়িছ বাবা একটু শুনে যা তো (রয়িছ সাহেবের বাবা)
-জি বাবা বলেন।
-রয়িছ আমার ব্যথার ওষুধটা না শেষ।মনে করে নিয়ে আসিস তো বাবা।
-জি আচ্ছা নিয়ে আসব বাবা।
আনিসুল হক রয়িছ সাহেবের বাবা।খুব ভাল মানুষ.৩য় শ্রেনীর সরকারী কর্মচারী ছিলেন,বর্তমানে অবসর জিবন-যাপন করছেন । সারাটা জীবন সৎ ভাবে থেকেছেন।অবশ্য তার সাথের সহকর্মীরা হাত বদলের উপায়ে বেশ আরামেই আছেন এখন।কিন্তু এই গুষ জিনিসটাকে মারাত্মক ঘৃণা করতেন আনিসুল সাহেব।তাই শেষ বয়সে তার আর সুখে থাকা হল না।
রয়িছ সাহেব এইবার বের হলেন খামারবাড়ি থেকে হেটে ফার্মগেট গেলেন।এটাও তার নিত্যদিনের একটা অভ্যেস,এই পথটুকু তিনি হেটেই যান।আজ রয়িছ সাহেবের মনটা ভাল নেই।ঘর থেকে আজ অনেকগুলো কাজের ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছে।আসলে সমস্যাটা ঐখানে না সমস্যাটা হল রয়িছ সাহেব গত তিনদিন হয় হৃদিতা আর বাবার কাছে একটা কথা লুকিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কিভাবে কথাটা বলবে তাও থিক বুঝতে পারছে না।রয়িছ সাহেবকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অফিস থেকে সাস্পেন্ড করা হয়েছে।কিন্তু, রয়িছ সাহেবের ঘরে এই কথাটা কেউ জানে না।রয়িছা সাহেবের ছাড়া তার ঘরে উপার্জনের আর কেউ নেই।রয়িছ সাহেব অফিসে ক্যাশিয়ারের পদে কাজ করেন।হঠাত একটা বড় অঙ্কের হিসেবে গড়মিল দেখা দেয়,রয়িছ সাহেব হাজার চেষ্টা করেও সেটা মেলাতে পারেন নি।

হঠাত করেই বড় স্যারের তলব
-স্যার আসব
-হ্যাঁ রয়িছ সাহেব আসুন।
-আসলে আমি জানি এইরকম কাজ আপনি করতে পারেন না আসলে আমারও কিছু করার নেই।উপরের নির্দেশ সঠিক ভাবে এই হিসাবের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত অফিস কতৃপক্ষ আপনাকে সাস্পেন্ড করেছে।আপনি চিন্তা করবেন না তদন্তে আমি যতটুকু জানি বোর্ড আপনাকে দোষী প্রমান করতে পারবে না।তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুদিন না বাসায় আরাম করুন,এমনিতে তো আপনি তেমন ছুটি নেন না এই উছিলায় না হয় কয়েকদিন ছুটি হয়ে যাবে।আর ভাববেন না আমি যতটুকু পারি আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।
হঠাত গাড়ির শব্দে সম্বি ফিরে পেল রয়িছ সাহেব নাহ আজ আর বাসে উঠলেন না।উঠে কি হবে শুধু টাকা নষ্ট হবে।তার চেয়ে বরং হাটাই ভাল।
রয়িছ সাহেব হেটে চলছেন আজ অফিসে যাওয়ার তারাহুরো নেই,বাসায় যাবার কোন চাপ নেই।মাথার উপরে সংসারের বোঝা।অপরাধ না করেও আজ তিনি অপরাধী।তিনি হেটেই চলেছেন উদ্দেশ্যহীনভাবে।আসলে কিছু করার নেই রয়িছ সাহেব নিরুপায়।
বাকি অংশ রয়িছ সাহেবের নিয়তি ।

আমাদের সমাজে এইরকম হাজারও সৎ রয়িছ সাহেব আছেন যারা সমাজে মূল্যহীনভাবে বেঁচে থাকে।হাজারো দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত থাকে রয়িছ সাহেবদের পরিবার।দুবেলা দু মুঠো ডাল-ভাতের জন্য করতে হয় আমৃত্যু হার ভাঙা পরিশ্রম।কখনও বা চাকরি ক্ষেত্রে পরতে হয় অফিস পলিটিক্স এর গ্যারাকলে।তারা জানে তাদের সততার কোন মুল্য নেই এই ইট-কাঠের পৃথিবীতে।তবুও রয়িছ সাহেবরা বেঁচে থাকে তাদের সততার মাঝে।
ভাল থাকুক রয়িছ সাহেবরা,জানি আপনাদের কেউ মনে রাখে না তবুও আপনারা আসছেন আপনাদের সততায় অবিচল।
স্যালুট আপনাদের।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×