সকাল ৭টা
প্রতিদিনের মত আজও কাধে সে আধ ছেঁড়া কালো ব্যাগ আর এক হাতে টিফিন ক্যারিয়ারটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।এইটা রয়িছ সাহেবের অফিসে যাওয়ার নিত্যদিনের প্রস্তুতি।
এই শুনছ,(রয়িছ সাহেবের স্ত্রী হৃদিতা) ।
-হ্যাঁ বল,-
-আসলে আজ ২ দিন হল বাবুর দুধ নেই।আজকে মনে করে বাবুর জন্য একটা দুধের কোয়টা নিয়ে এসো।
-আচ্ছা ।
-মনে করে এনো কিন্তু।
রয়িছ সাহেব এইবার বের হবার জন্য প্রস্তুত।হঠাত করেই নীল (রয়িছ সাহেবের মেয়ে) কেঁদে উঠল।রয়িছ সাহেব দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে কোলে নিলেন।মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালবাসেন রয়িছ সাহেব।মেয়েটা দেখতে অবিকল রয়িছ সাহেবের মায়ের মত হয়েছে।ভালবাসার পরিমানটা তাই কয়েকগুন বেশিই বৈকি।
-বাবা (রয়িছ সাহেবের ছেলে )
-বল বাবা
-বাবা আমার খাতা শেষ,আর স্যার কোচিং এর বেতন চেয়েছেন।মনে করে আজ অফিস থেকে ফেরার পথে দিয়ে এসো।
রয়িছ সাহেবের ছেলে সীমান্ত।খুব ভাল ছাত্র ষষ্ট শ্রেনীতে পড়ে।গতবছর টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।ঢাকা বিভাগে মেধা তালিকায় ৩য় স্থান পেয়েছে।
-রয়িছ বাবা একটু শুনে যা তো (রয়িছ সাহেবের বাবা)
-জি বাবা বলেন।
-রয়িছ আমার ব্যথার ওষুধটা না শেষ।মনে করে নিয়ে আসিস তো বাবা।
-জি আচ্ছা নিয়ে আসব বাবা।
আনিসুল হক রয়িছ সাহেবের বাবা।খুব ভাল মানুষ.৩য় শ্রেনীর সরকারী কর্মচারী ছিলেন,বর্তমানে অবসর জিবন-যাপন করছেন । সারাটা জীবন সৎ ভাবে থেকেছেন।অবশ্য তার সাথের সহকর্মীরা হাত বদলের উপায়ে বেশ আরামেই আছেন এখন।কিন্তু এই গুষ জিনিসটাকে মারাত্মক ঘৃণা করতেন আনিসুল সাহেব।তাই শেষ বয়সে তার আর সুখে থাকা হল না।
রয়িছ সাহেব এইবার বের হলেন খামারবাড়ি থেকে হেটে ফার্মগেট গেলেন।এটাও তার নিত্যদিনের একটা অভ্যেস,এই পথটুকু তিনি হেটেই যান।আজ রয়িছ সাহেবের মনটা ভাল নেই।ঘর থেকে আজ অনেকগুলো কাজের ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছে।আসলে সমস্যাটা ঐখানে না সমস্যাটা হল রয়িছ সাহেব গত তিনদিন হয় হৃদিতা আর বাবার কাছে একটা কথা লুকিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কিভাবে কথাটা বলবে তাও থিক বুঝতে পারছে না।রয়িছ সাহেবকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অফিস থেকে সাস্পেন্ড করা হয়েছে।কিন্তু, রয়িছ সাহেবের ঘরে এই কথাটা কেউ জানে না।রয়িছা সাহেবের ছাড়া তার ঘরে উপার্জনের আর কেউ নেই।রয়িছ সাহেব অফিসে ক্যাশিয়ারের পদে কাজ করেন।হঠাত একটা বড় অঙ্কের হিসেবে গড়মিল দেখা দেয়,রয়িছ সাহেব হাজার চেষ্টা করেও সেটা মেলাতে পারেন নি।
হঠাত করেই বড় স্যারের তলব
-স্যার আসব
-হ্যাঁ রয়িছ সাহেব আসুন।
-আসলে আমি জানি এইরকম কাজ আপনি করতে পারেন না আসলে আমারও কিছু করার নেই।উপরের নির্দেশ সঠিক ভাবে এই হিসাবের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত অফিস কতৃপক্ষ আপনাকে সাস্পেন্ড করেছে।আপনি চিন্তা করবেন না তদন্তে আমি যতটুকু জানি বোর্ড আপনাকে দোষী প্রমান করতে পারবে না।তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুদিন না বাসায় আরাম করুন,এমনিতে তো আপনি তেমন ছুটি নেন না এই উছিলায় না হয় কয়েকদিন ছুটি হয়ে যাবে।আর ভাববেন না আমি যতটুকু পারি আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।
হঠাত গাড়ির শব্দে সম্বি ফিরে পেল রয়িছ সাহেব নাহ আজ আর বাসে উঠলেন না।উঠে কি হবে শুধু টাকা নষ্ট হবে।তার চেয়ে বরং হাটাই ভাল।
রয়িছ সাহেব হেটে চলছেন আজ অফিসে যাওয়ার তারাহুরো নেই,বাসায় যাবার কোন চাপ নেই।মাথার উপরে সংসারের বোঝা।অপরাধ না করেও আজ তিনি অপরাধী।তিনি হেটেই চলেছেন উদ্দেশ্যহীনভাবে।আসলে কিছু করার নেই রয়িছ সাহেব নিরুপায়।
বাকি অংশ রয়িছ সাহেবের নিয়তি ।
আমাদের সমাজে এইরকম হাজারও সৎ রয়িছ সাহেব আছেন যারা সমাজে মূল্যহীনভাবে বেঁচে থাকে।হাজারো দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত থাকে রয়িছ সাহেবদের পরিবার।দুবেলা দু মুঠো ডাল-ভাতের জন্য করতে হয় আমৃত্যু হার ভাঙা পরিশ্রম।কখনও বা চাকরি ক্ষেত্রে পরতে হয় অফিস পলিটিক্স এর গ্যারাকলে।তারা জানে তাদের সততার কোন মুল্য নেই এই ইট-কাঠের পৃথিবীতে।তবুও রয়িছ সাহেবরা বেঁচে থাকে তাদের সততার মাঝে।
ভাল থাকুক রয়িছ সাহেবরা,জানি আপনাদের কেউ মনে রাখে না তবুও আপনারা আসছেন আপনাদের সততায় অবিচল।
স্যালুট আপনাদের।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬