somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়াহাবীবাদ ও সৌদি রাজতন্ত্রের উত্থান এবং খেলাফতের পতন ইতিহাস

২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সৌদি আরবের বর্তমান রাজধানী রিয়াদের নিকটে কৃষিপ্রধান এক গ্রাম দিরিয়া। ১৮ শতাব্দীর শুরুতে সে গ্রামের প্রধান হলেন আল সৌদ পরিবারের মুহম্মদ বিন সৌদ। একই সময়ে আরবে একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতার আবির্ভাব হয়।যিনি তৎকালীন ইসলামকে শিরক বিদাতে পরিপূর্ন বলে ইসলামকে আবার পরিশুদ্ধ করার কট্টর মতবাদ প্রচার করতে থাকেন। তিনি হলেন ওয়াহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব। এই ওয়াহাবী মতবাদে প্রভাবিত হয়ে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব এর অনুসারী হয়ে যান মুহম্মদ বিন সৌদ। ওয়হাবী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে তাঁরা দুজন একতাবদ্ধ হয়ে ওয়াহাবী মতবাদ ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চুক্তিবদ্ধ হন।

তারা ১৭৪৪ সালে দিরিয়া কে ‘দিরিয়া আমিরাত’ নাম দিয়ে প্রথম ওয়াহাবী মতবাদ ভিত্তিক ও সৌদ পরিবার নিয়ন্ত্রিত রাজ্য গঠন করেন। তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে শিরক-বিদাত চর্চার অভিযোগ এনে তারা জনগনকে তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর আহবান জানান ও উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সেসময় আরবের অধিকাংশ জায়গা (মক্কা, মদিনা সহ) তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের শাসনাধীন ছিল। ঐক্যবদ্ধ মুসলিম উম্মাহর জন্য সবাই উসমানিয়া খলিফাকেই তাদের শাসনকর্তা হিসেবে মেনে নিত।


আদ দিরিয়া অঞ্চল, যেখানে থেকে সূচনা হয় বর্তমান সৌদি রাষ্ট্রের

পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে মুহাম্মদ বিন সৌদ তার পুত্র আবদুল আজিজের সাথে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মেয়ের বিয়ে দেন। ১৭৬৫ সালে মুহাম্মদ বিন সৌদ এর মৃত্যু হলে তার পুত্র আবদুল আজিজ বিন মুহম্মদ দিরিয়া আমিরাতের প্রধান হন। ক্ষমতায় এসে আব্দুল আজিজ তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা পেতে ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলান।

১৮০১ সালে আব্দুল আজিজ উসমানিয়া খিলাফতের কাছে থেকে ইরাক দখল করে নেন। দখল করেই শিরক বিদাতের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের কথা বলে হযরত আলী (রা) ও মহানবী (স) এর দৌহিত্র হযরত হুসাইন (রা) এর মাজার গুড়িয়ে দেন।

এতে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা চরম রুষ্ট হয়। ১৮০৩ সালে একজন শিয়া মুসলিম এর প্রতিশোধ নিতে আসরের নামযরত অবস্থায় আব্দুল আজিজ কে হত্যা করে। ক্ষমতায় আসেন আব্দুল আজিজের পুত্র সৌদ বিন আব্দুল আজিজ।

শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়ে যায়, তাই উসমানিয়া খিলাফতের শত্রু ব্রিটিশরা উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নতুন বাদশাহকে উৎসাহ দেয় এবং সহায়তার আশ্বাস দেয়। ক্ষমতার আসার ২ বছরের মধ্যে ব্রিটিশদের অস্ত্র ও অর্থের সহায়তায় সৌদ বিন আব্দুল আজিজ উসমানিয়া অনুগত শাসকের কাছ থেকে মক্কা ও মদিনা দখল করে নেন। তার বাহিনী শিরক-বিদাত উচ্ছেদের নামে মক্কা-মদিনার বহু মুসলিমকে হত্যা করে। এ কারনে তাকে কসাই নামেও ডাকা হত সেসময়। ওয়াহাবী মতবাদ অনুযায়ী ধর্মীয় শুদ্ধি অভিযানে বহু সাহাবীর কবরস্থান ধ্বংস করে। মহানবী (সা.)-এর কবরের মিম্বরগুলোও ভেঙে ফেলা হয়।

এসব ঘটনায় চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ১৮০৮ সালে তুরস্কের খলিফা ২য় মাহমুদ সৌদদের দমন করতে ইব্রাহিম পাশার নেতৃত্বে শক্তিশালী সেনা বাহিনী পাঠান। কিন্তু এবার পরাজয় হয় সৌদিদের। দীর্ঘ যুদ্ধ সমাপ্তের আগেই ১৮১৪ সালে মৃত্যু ঘটে সৌদ বিন আব্দুল আজিজের। ১৮১৮ সালে সৌদের পুত্র আবদুল্লাহ বিন সৌদ তুর্কিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। উসমানিয়া খলিফার নির্দেশে প্রকাশ্যে আব্দুল্লাহ বিন সৌদ ও তার দুই পুত্রের শিরোশ্ছেদ করা হয়। শিরোশ্ছেদ এর আগে তাদের বেহালার সঙ্গীত শুনতে বাধ্য করা হয় কারন তারা সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং সঙ্গীত শোনা ও চর্চার অভিযোগে অনেককে হত্যা করেছিলেন।

শেষ হয় সৌদ পরিবার শাসিত প্রথম সৌদি রাজ্যের!

তবে শেষ হয়েও হল না শেষ এর মত ভবিষ্যত এর জন্য রয়ে গেল চমক।

উসমানিয়া বাহিনীর হাতে সৌদ পরিবারের গ্রেফতারের সময় সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন আব্দুল্লাহ বিন সৌদ এর এক পুত্র। যার নাম ছিল তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ। গোপনে তিনি ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসী ও সৌদ পরিবারের প্রতি অনুগতদের সংগঠিত করতে থাকেন। ১৮২১ সালে সে প্রকাশ্যে তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১৮২৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহ দিরিয়া ও রিয়াদ দখল করে নেন। দিরিয়া ও রিয়াদ নিয়ে গঠন করা হয় নতুন ও দ্বিতীয় সৌদি রাজ্য ‘নজদ আমিরাত’। যার রাজধানী করা হয় রিয়াদকে।


সবুজ অংশ নিয়ে গঠিত হয় ২য় সৌদি রাজ্য ‘নজদ আমিরাত’

কিন্তু এবার শুরু হয় সৌদি পরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। ক্ষমতার লোভে ১৮৩৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহ কে হত্যা করে সৌদি পরিবারেরই একজন, মুশারি বিন আবদুর রহমান।কিন্তু ক্ষমতার স্বাদ পায়নি মুশারি। সিংহাসন পেয়ে যান তুর্কি বিন আব্দুল্লাহর ছেলে ফয়সাল বিন তুর্কি। এরপর ছোটখাটো অন্তর্দ্বন্দ, একজনকে হটিয়ে আরেকজনের সিংহাসনের বসার মাধ্যমে বারবার ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও কোনরকম হত্যাকাণ্ড ছাড়াই মোটামুটি চলতে থাকে ২য় সৌদি রাজ্য নজদ আমিরাত। দীর্ঘদিন পর ১৮৯১ সালে উসমানিয়াদের অনুগত বাহিনীর কাছে পরাজয় হয় সৌদি বাহিনীর। তখনকার সৌদি পরিবারের প্রধান ও নজদ আমিরাতের শাসনকর্তা আব্দুল রহমান বিন ফয়সাল (ফয়সাল বিন তুর্কির পুত্র) পরিবারসহ পালিয়ে যান। আব্দুল রহমান ও তার পুত্র আব্দুল আজিজ বাহরাইনের বাদশাহের কাছে আশ্রয় নেন। সেখানে কিছুদিন থেকে চলে যান কুয়েতের আল সাবাহ রাজপরিবারে। আল সাবাহ রাজ পরিবার ছিল ব্রিটিশদের অনুগত। প্রকৃতপক্ষে বৃটিশদের কথামতোই চলতো তারা। ১৮৯৯ সালে ব্রিটিশদের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে কুয়েতের আমির শেখ মুবারক আল সাবাহ। ফলে পুরোপুরি বৃটিশ নিয়ন্ত্রিত রাজ্যে পরিণত হয় কুয়েত।

তুরস্কের উসমানিয়া শাসকদের সাথে ব্রিটিশদের ছিল দ্বন্দ্ব। ফলে ব্রিটিশদের নির্দেশে কুয়েতের রাজপরিবার আল সৌদদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে থাকে উসমানিয়াদের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে। সম্মুখ যুদ্ধে যাওয়ার মত শক্তি তখন না থাকায় চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে আল সৌদ বাহিনী। কিন্তু এতে রাজ্য ফিরে পাওয়ার মত বড় সাফল্য আসছিল না। ফলে সম্মুখ যুদ্ধে যাওয়ার আগ্রহ দেখান আবদুর রহমান বিন ফয়সাল। ১৯০১ সালে উসমানিয়াদের সাথে যুদ্ধ হয় আল সৌদদের। যা ইতিহাসে সারিফের যুদ্ধ নামে পরিচত। যুদ্ধে পরাজয় ঘটে আল সৌদদের। হতাশ আবদুর রহমান তার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের আশা হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু তার পুত্র আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ আবারও কুয়েতের আমির মুবারকের কাছে রিয়াদ আক্রমণের জন্য সহায়তা চায়। তখন রিয়াদ শাসন করতো উসমানিয়াদের অনুগত আল রশিদি পরিবার। আবদুল আজিজ ইবনে সৌদকে উট, ঘোড়া ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে কুয়েত। ১৯০২ সালের ১৩ জানুয়ারি আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ সৈন্য নিয়ে রিয়াদ আক্রমণ করে। রিয়াদের মাসমাক দুর্গে যুদ্ধে জয়লাভ করে ইবনে সৌদ। রাশিদী প্রশাসক ইবনে আজলানকে হত্যা করে ছিন্নমস্তকটি নিয়ে রিয়াদবাসীর দিকে দিকে ছুঁড়ে মেরে নিজেকে রিয়াদের শাসনকর্তা হিসেবে ঘোষণা করে ইবনে সৌদ।

রাজ্যের নাম দেয়া হয় রিয়াদ আমিরাত। ইতিহাসে তৃতীয় সৌদি রাজ্যের সূচনা হয়। এবং এই ৩য় সৌদি রাজ্যের এখনও পতন হয়নি।

এর পর আল সৌদরা একে একে নজদের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করতে থাকে। ১৯০৭ সালের মধ্যে বিশাল সাম্রজ্যের অধিকারী হয় সৌদরা। ১৯০৯ সালে ইবনে সৌদ ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হেনরী শেক্সপিয়ারকে (নামে মিল দেখে কবি শেক্সপিয়ার ভেবে ভুল করবেন না) তার সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। ফলে আরো শক্তিশালী হয় আল সৌদ রাজপরিবার। ১৯১৩ সালে সৌদিরা পূর্ব আরবের গুরুত্বপূর্ণ মরুদ্যান হাসা ও কাতিফ শহর দখল করে নেয়।

এর এক বছর পরেই ১৯১৪ সালে শুরু হয় ১ম বিশ্বযুদ্ধ। যে যুদ্ধে তুরস্কের উসমানিয়ারা পক্ষ নেয় জার্মানির। যাদের বিপক্ষে ছিল ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফ্রান্স।

বিশ্বযুদ্ধের ‘প্রক্সি ওয়ার’ হিসেবে উসমানিয়াদের দুর্বল করতে ব্রিটিশরা শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে সৌদদের দিয়ে আরবের উসমানিয়া সমর্থক রশিদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করায়। কিন্তু যুদ্ধে হেরে যায় সৌদরা। শিরোশ্ছেদ করা হয় শেক্সপিয়ারের। শেক্সপিয়ারের মৃত্যুতে ব্রিটিশদের সাথে সৌদদের সম্পর্কে দুরুত্ব বাড়তে থাকলে ইবনে সৌদ চিন্তিত হয়ে পড়েন। চিন্তিত ইবনে সৌদ ব্রিটিশদের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেন। যা দারিন চুক্তি নামে পরিচত। চুক্তি মোতাবেক রিয়াদ মূলত ব্রিটিশদের করদরাজ্যে পরিণত হয়। ব্রিটিশরা রিয়াদের নিরাপত্তা দেয়ার অঙ্গীকার করে ও ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত কুয়েত, কাতার ও ওমান এর নিরাপত্তায় সৌদরা সহায়তা করার আশ্বাস দেয়। এ চুক্তির মাধ্যমে সৌদি রাজ্য প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়।

সৌদদের সাথে ব্রিটিশদের এ চুক্তিতে ভীত হয়ে ওঠেন মক্কার শাসক উসমানিয়া অনুগত হুসেন বিন আলী। এদিকে বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক-জার্মানি পক্ষের কোনঠাসা অবস্থা দেখে ভীত হুসেন বিন আলী মিশরে অবস্থানরত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার হেনরি ম্যাকম্যাহনের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। ম্যাকমোহন হুসেন কে নানা প্রলোভন দিয়ে উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বলে। বাংলার মীর জাফরের মত ভুমিকা নেন হুসেন বিন আলী। ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্সের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় বিশ্বাসঘাতক হুসাইন মিডল-ইস্টার্ন ফ্রন্টে উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শুরু করলে

ব্রিটিশ সামরিক অফিসার কর্নেল টি.ই. লরেন্স ছিলেন বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশদের প্রধান। তার নেতৃত্বে যুদ্ধে হুসেন বিন আলী উসমানিয়াদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে অসংখ্যা উসমানিয়া সৈন্য বন্দী হয় এবং উসমানিয়ারা ১ম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়। ১৩০০ বছর পর মুসলিম বিশ্বে খিলাফতের পতন ঘটে! এই টি.ই. লরেন্সকে নিয়ে হলিউডে “Lawrence of Arabia” (১৯৬২) নামে মুভি নির্মিত হয়।

বিশ্বাসঘাতকার পুরস্কার হিসেবে ব্রিটিশরা হুসেন বিন আলীর এক পুত্র আব্দুল্লাহকে জর্ডানের রাজত্ব ও আরেক পুত্র ফয়সালকে ইরাকের রাজত্ব দেয়। হুসেন বিন আলীকে রাখা হয় মক্কা, মদিনা ও তাবুক এর শাসক হিসেবে।

এতে হতভম্ব হয়ে যায় আল-সৌদ রাজ পরিবার। তাদের চেয়েও কেউ ব্রিটিশদের পক্ষে দালালীতে এগিয়ে যাবে সেটা তারা কল্পনা করতে পারেনি।


হুসেন বিন আলী (বামে) ও আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদ (ডানে)

যদিও দারিন চুক্তির আওতায় রিয়াদ এর শাসক আল-সৌদরাই থেকে যায়। এবং নিয়মিত অস্ত্র পেতে থাকে ও প্রতিমাসে ৫ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড ভাতা পেতে থাকে। সেই সাথে বিশ্বযুদ্ধের উদ্বৃত্ত গোলাবারুদের বড় একটা অংশ পায় সৌদরা। এইসব অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে পর্যায়ক্রমে পরাজিত উসমানিয়াদের অনুগত শাসক রশিদীদের আক্রমণ করতে থাকে ও বিভিন্ন এলাকা দখল করতে থাকে। ১৯২২ সালের মধ্যে মক্কা মদিনা ও তাবুক ব্যাতীত আরবের প্রায় সকল অঞ্চল আল-সৌদদের অধীনে চলে আসে। মক্কা মদীনা ও তাবুকে ব্রিটিশ সমর্থিত হুসেন বিন আলী শাসক থাকায় সেখানে আক্রমণ করে নি তারা।

এদিকে খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটিয়ে তুরস্কের শাসন ক্ষমতায় আসে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক। এবার যেন টনক নড়ে হুসেন বিন আলীর। মহানবী (সা.) আমল থেকে ১৩০০ বছর পর্যন্ত চলমান খিলাফতের এই পতন সারা বিশ্বের মুসলিমদের মত তিনিও সহজে মেনে নিতে পারছিলেন না। পৃথিবী থেকে খিলাফত মুছে যাবে এটা মেনে নিতে তার ধর্মীয় অনুভূতি প্রবল আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তাই ব্রিটিশরা চরম ক্ষিপ্ত হবে জেনেও বড় অসময়ে তাদের বিপক্ষে গিয়ে হুসেন বিন আলী নিজেকে মুসলিমদের খলিফা ঘোষণা করেন।

স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘদিন ধরে খিলাফতের শত্রু ব্রিটিশরা চরম রুষ্ট হয়। হুসেন বিন আলীর উপর থেকে সকল সমর্থক প্রত্যাহার করে আবদুল আজিজ ইবনে সৌদকে মক্কা মদিনা ও তাবুক দখল করে নিতে বলে। আল সৌদ বাহিনী হেজাজ (মক্কা ও মদিনা) আক্রমণ করে এবং হেজাজ দখলে নিয়ে নেয়। ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ নিজেকে হেজাজের শাসক ঘোষণা করেন। ১৯২৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ইবনে সৌদ আগের রিয়াদ (নজদ) ও বর্তমান মক্কা-মদিনা (হেজাজ) নিয়ে Kingdom of Nejd and Hejaz ঘোষণা করে। মুসলমানদের পবিত্র ভূমিতে এভাবেই শাসন শুরু করে ব্রিটিশ আমেরিকার দালাল আল-সৌদ পরিবার। কায়েম হয় ইসলাম পরিপন্থী রাজতন্ত্র।


৩য় সৌদি রাজ্য, সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে সৌদ ও তার বংশধররা। ইবনে সৌদ এর মোট সন্তান সংখ্যা ৪৫!

১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আল সৌদ বংশের নাম অনুসারে দেশের নতুন নাম রাখা হয় “Kingdom of Saudi Arabia” (কিংডম অব সৌদি এরাবিয়া)।

লেখকঃ আসিফ আল রাজীব

মূল লেখা এখান থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে আগুন, মন্দীরে হামলা, মাজার ভাঙ্গা, পিটিয়ে মানুষ মারা এমন মেধাবী এদেশে দরকার নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৩২



২০০১ সালে দেলাম ঘরে আগুন দেওয়া ও মন্দীরে হামলার জঘণ্য কাজ। ২০০৪ আবার দেখলাম ঘরে আগুন, মন্দীরে হামলা, মাজার ভাঙ্গা, পিটিয়ে মানুষ মারার জঘণ্যতম ঘটনা।জাতি এদেরকে মেধাবী মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষাঙ্গনে অপ্রীতিকর ঘটনার মুল দায় কুৎসিত দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতির

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৫

সোস্যাল মিডিয়ার এই যুগে সবাই কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবি সাজতে চায়। কিন্ত কেউ কোন দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে রাজী নয়। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটা মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে । এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোমলমতিদের নিয়ে আমি কি বলেছিলাম?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



আমি বলেছিলাম যে, এরা ভয়ংকর, এরা জাতিকে ধ্বংস করে দেবে।

ড: ইউনুসের সরকারকে, বিশেষ করে ড: ইউনুসকে এখন খুবই দরকার; উনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, কোমলমতিদের থামাতে হবে; কিভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিটিয়ে মানুষ মারার জাস্টিফিকেশন!

লিখেছেন সন্ধ্যা প্রদীপ, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

এদেশে অনেক কিছুই সম্ভব।বর্তমান এলোমেলো সয়য়ে যা সম্ভব না বলে মনে করতাম তাও সম্ভব হতে দেখেছি।তবে মানুষকে কয়েক ঘন্টা ধরে পিটিয়ে মারাকে ইনিয়েবিনিয়ে জাস্টিফাই করা যায় এটা ভাবিনি।তাও মেরেছে কারা?
একদল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আহা তোফাজ্জল

লিখেছেন সামিয়া, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৪




মৃত্যু এখন এমনি সহজ
ভিডিও করতে করতে;
কথা বলতে বলতে
ভাত খেতে দিতে দিতে;
কনফিউজড করতে করতে
মেরে ফেলা যায়।

যার এই দুনিয়ায় কেউ অবশিষ্ট নাই
এমন একজনরে!
যে মানসিক ভারসাম্যহীন
এমন একজনরে!
যে ভবঘুরে দিক শূণ্য
এমন একজনরে!
যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×