somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দি প্যালেস্টাইন (পার্ট-৩)

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউরোপিয় দ্বারা ইহুদি নিধন ও ধারাবাহিক ভাবে তাদের ইউরোপ হতে প্যালেস্টাইনে নির্বাসন।

উসমানীয় তুর্কিরা স্বল্পসংখ্যক বাঁধা ব্যতীত ১৯১৮সাল পর্যন্ত প্যালেস্টাইন শাসন করেছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে দেশটাকে কয়েকটা জেলায় ভাগ করা হয়েছিল। যাকে মাঞ্জাক বলা হত। জেরুজালেম এ সমস্ত জেলার প্রশাসন আরব ফিলিস্তিনিদের দেয়া হয়েছিল। যারা কেনানীদের বংশধর ছিল। তবে খৃষ্টীয় ও ইহুদী সম্প্রদায়গুলোকে বেশ কিছু স্বায়ত্বশাসনসহ প্রদান করা হয়েছিল। যার ধারাবাহিকতায় ১৮৯০ সালে জায়োনিজম আন্দোলন আত্ম প্রকাশ করে। "Zionism" ইহুদী নেতা নাথান বির্নবাম দ্বারা উদ্ভাবিত একটি মতাদর্শ যার সাধারণ সংজ্ঞাঃ
"ইহুদি মানুষের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং ইসরায়েল ভূমি প্রতিষ্ঠায় ইহুদি সার্বভৌমত্বের পুনরাম্ভের জাতীয় আন্দোলন।"


১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে সর্বপ্রথম জায়োনিষ্ট কংগ্রেস সুইজারল্যান্ডের বাসল শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওরা প্যালেস্টাইনের উপনিবেশি করণের "বাসল" কর্মসূচী ঘোষণা করে।

১৯০৪ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ জায়োনিষ্ট কংগ্রেস সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল আর্জেন্টিনায় ইয়াহুদীদের একটা জাতীয় স্বদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।কিন্তু দু বছরের মাথায় তারা পুনরায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল ওদের স্বদেশ প্যালেস্টাইন হতে হবে।

১৯১৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আকস্মিক সূচনায়, বৃটেন উসমানীয় প্রশাসনের অধীনে প্যালেষ্টাইনসহ আরবদেশ সমূহের স্বাধীনতা প্রদানের অঙ্গীকার করেছিল যদি তারা বৃটেনকে সহায়তা করে তুর্কীর বিরুদ্ধে। কারণ অটোমান প্রশাসন জার্মানদের পক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল।

১৯১৮ খৃষ্টাব্দে আরবদের সহায়তায় বৃটিশরা উসমানীয় তুর্কীদের কাছ থেকে প্যালেস্টাইন দখল করে নেয়। আরবরা তুর্কীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল কারণ বৃটিশরা মক্কার "শরীফ হুসেইন ইবন আলী" কে কথা দিয়েছিল আরব দেশ সমূহকে স্বাধীনতা প্রদান করা হবে যুদ্ধের পরে।

বৃটেন গোপনে আরো দুটি সংঘাতময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেলো, ১৯১৬ খৃস্টাব্দ ফ্রান্সের সাথে সাইকেস-পিটক চুক্তি সই করেছিল। এতে সমগ্র আরবভূমিকে বিভিন্ন প্রকারের অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল যাতে, লেবানন ও সিরিয়া ফ্রান্সকে আর জর্ডান ও ইরাক বৃটেনকে দেয়া হয়েছিলো। প্যালেস্টাইনকে আন্তর্জাতিকায়ন করা হয়েছিলো।

এখানেই শেষ নয় ইয়াহুদীদেরকে প্যালেষ্টাইনে তাদের জাতীয় বাসস্থান গড়তে দেয়া হবে বলে তৃতীয় আরও একটা চুক্তি করেছিল।যার ফলাফলঃ - ১৯১৭ খৃষ্টাব্দ ২ নভেম্বর বৃটিশ সরকার বেলফর ঘোষণা করে। যা ছিল বৃটিশ ফরেন সেকরেটারী আর্থার জে বেলফোর এর কাছ থেকে বৃটিশ জায়োনিস্ট নেতার কাছে একটা চিঠি আকারে। এতে অঙ্গীকার করা হয়েছিল যে ইয়াহুদী জনগণকে প্যালেষ্টাইনে তাদের জন্য জাতীয় একটা অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে দেয়া হবে।


১৯১৯ খৃষ্টাব্দে ফিলিস্তিনিরা ওদের সর্বপ্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত করল এবং তাতে তারা বেলফোর ডিকারেশন কে অতি পরিষ্কার ভাষায় বিরোধিতা করল।

১৯২০ খৃষ্টাব্দ সান রিমো সম্মেলনে প্যালেষ্টাইনের ওপর বৃটেনকে ম্যান্ডেট প্রদান করল। এর দু বছর পর প্যালেষ্টাইনে বৃটিশ শাসন জারী হল। স্যার হারবার্ট সামুয়েল নামী এক চিহ্নিত ও স্বঘোষিত জায়োনিষ্ট কে ব্রিটেনের সর্বপ্রথম হাই কমিশনার হিসেবে প্রেরণ করা হল।


১৯২২ সালে প্যালেষ্টাইনকে লীগ অব ন্যাশন এর অনুমতিক্রমে ব্রিটিশদের অধীনে ম্যান্ডেট হিসেবে প্রদান করায় পরিস্হিতি সম্পুর্ণ রুপে ইয়াহুদীদের ওনুকুলে চলে যায় এবং তারা দলে দলে প্যালেষ্টাইনে দেশান্তরিত হয়া শুরু করে:

আঠারো শতকের শেষের দিকের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় ফিলিস্তিন মোটামুটি সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে বিরাজ করছিল এবং সেখানে মুসলিম ও খ্রিস্টানরা বেশ শান্তিতে বাস করছিল। সামান্য ইহুদীও ছিল। ১৮৭৮ সালে ফিলিস্তিনে জনসংখ্যার পরিসংখ্যান এরকম:


মোট জনসংখ্যা – ৪৬২,৪৬৫
আরব মুসলিম এবং খ্রিস্টান – ৯৬.৮%
ইহুদী – ৩.২%

যা, ১৯২২ সালের দাড়ায়
মোট জনসংখ্যা – ৭৫৭,১৮২
আরব মুসলিম এবং খ্রিস্টান – ৮৭.৬%
ইহুদী – ১১%

পরবর্তী পরিস্থিতির সাথে তুলনা করলে এই উপনিবেশ হারকেও কম বলতে হয়। আসলে ১৯৩৩ সালে হিটলারের ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত মাথা ঠাণ্ডা রেখেই ইহুদী উপনিবেশের কাজ চলছিল। ১৯৩১ সালের পরিসংখ্যান:
মোট জনসংখ্যা – ১,০৩৫,১৫৪
আরব মুসলিম এবং খ্রিস্টান – ৮১.৬%
ইহুদী – ১৬.৯%

হিটলারের অমানবিক ও সাইকটিক এন্টি-সেমিটিজম সব ইহুদীদেরকে ইউরোপ ত্যাগে বাধ্য করে।বাঁচতে চাইলে ইউরোপ ত্যাগ নয়তো হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাশবিক মৃত্যুবরণ। এই সুযোগে জায়নিস্টরা ফিলিস্তিনে ইহুদী উপনিবেশ দ্রুত বাড়াতে শুরু করে।

বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনে আসা ইহুদী অভিবাসী তথা উপনিবেশ স্থাপনকারীদের পরিসংখ্যান এরকম:

১৮৮২-১৯১৪ সালের মধ্যে ৬৫,০০০
১৯২০-১৯৩১ সালের মধ্যে ১০৮,৮২৫
১৯৩২-১৯৩৬ সালের মধ্যে ১৭৪,০০০
১৯৩৭-১৯৪৫ সালের মধ্যে ১১৯,৮০০

অর্থাৎ ১৯৩২ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে উপনিবেশ স্থাপনের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এসময় পুরো বিশ্বের সহানুভূতি ছিল ইহুদীদের প্রতি। যখন পুর ইউরোপে হিটলারের ঈহুদী নিধন “হলোকস্ট চলছিল ।

[চলবে...]
দি প্যালেস্টাইন (পার্ট-১)
দি প্যালেস্টাইন (পার্ট-২)
দি প্যালেস্টাইন (পার্ট-৪)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:১৩
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×