মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে
কালেভদ্রে হাসপাতালে যেতে হয়। হরেক রকম রোগীর
আনাগোনা হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষে; একতলা
থেকে দোতলা হয়ে তিনতলা ও চারতলা। একদিন এক
বাচ্চাকে নিয়ে তার মা এসেছিলেন। বয়স কত আর হবে?
আট বা নয়!! বাচ্চা বলার ভুলটা একটু পরেই কেটে
গিয়েছিল যখন শুনলাম বাচ্চার বয়স ১৭ বছর! বাচ্চাটি
ছিল এক থ্যালাসেমিয়ার পেশেন্ট!
থ্যালাসেমিয়া! জন্মগত রক্তের রোগ। উত্তরবঙ্গে অহরহ
দেখা যায়। সংক্ষেপে:
★এই রোগে আক্রান্ত রোগীর রক্তশূন্যতা হবে।
★প্লীহা, যকৃত বড় হয়ে যাবে।
★স্বাভাবিক গ্রোথ হবে না।
★হৃৎপিন্ড, যকৃত, অগ্ন্যাশয় প্রভৃতি স্থানে লৌহ বেড়ে
যায় এবং কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়।
★উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে রোগী একসময় মারা যায়।
#চিকিৎসা কি?
অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হতে পারে একমাত্র স্থায়ী
চিকিৎসা। কিন্তু, অনেক ব্যয়বহুল যা বহন করা সকলের
পক্ষে সম্ভব না।
তবে ; রোগীকে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে
বাঁচিয়ে রাখা যেতে পারে। ৩/৪ সপ্তাহ অন্তর অন্তর
রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয় ওদের। উপরে যে
ছেলেটার কথা বললাম সম্ভবত প্রতিমাসে একব্যাগ
রক্তের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে তার জীবন।
(উল্লেখ্য- ফ্রিজড ব্লাড দিয়ে বাঁচবে না ওদের জীবন।
দরকার সদ্য নেয়া রক্ত)
শুধু কি থ্যালাসেমিয়া! না... হাসপাতালে এলে
বোঝা যায় রক্তের জন্য হাহাকার কি জিনিস! অনেক
সময় এমন অবস্থা আসে যখন যখন কোটি কোটি টাকাও
বাঁচাতে পারে না একটি জীবন; যা ৪৫০ মি.লি. এর
একটি রক্তভর্তি ব্যাগ করতে পারে!
শুধুমাত্র ২০১৩ সালে পৃথিবীব্যাপী সাড়ে তিন লক্ষ নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান যার ২৭% ছিল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ জনিত কারনে! সময়মত রক্তে অভাবে।
প্রতিবছর বিভিন্ন রক্তরোগের চিকিৎসায় প্রায় পাঁচ লক্ষ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন হয়।
★★আজ ছিল ১৪ জুন। বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। এবারের রক্তদান দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ''আমার জীবন বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ।"
নিজেরাও রক্ত
দিতে চেষ্টা করি, অন্যকেও সচেতন করি। আমাদের
রক্তে বেঁচে যেতে পারে অনেক জীবন। যারা কোনদিন
রক্ত দেননি, আজ ছিল উপযুক্ত দিন দিবসটি সফল হোক!
'রক্ত দিন, জীবন বাঁচান।'
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৫ রাত ৩:১২