somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

::বাহের দেশের আদ্যপান্ত:: - রংপুরে যত শত দেখবেন ঘুরবেন. . .

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘোরাঘুরির এই মৌসুমে ঘুরে ঘুরে ঘুরা ঘুরি করতে করতে যদি রংপুর চলে আসতে চান তবে আপনার জন্যই বলে রাখি রংপুর এর নিক নেম-ই গ্রীনসিটি।
সো প্রায় সব জায়গাতেই কিছু না কিছু ন্যাচারাল বিউটি খুজে পাবেন সেই সাথে পাবেন সমৃদ্ধ অতীত এর খোজ শুরু করতে পারেন সিটি থেকেই, পাবেন শত বছরের পুরনো টাউন হল ও জিলা পরিষদ যেটি-ও একটি পুরানো প্রাসাদ যা বর্তমানে পাখির অভয়ারন্য। শেষ বিকেলে পাখি দেখতে আর তাদের কিচির মিছির শুনতে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে। তারপর দেওয়ান বাড়ি নামের আরেকটা রাজবাড়ি পাবেন একদম সিটির মাঝেই।
শহর এর ২কিলো এর মাঝেই আছে চিকলির বিল। আছে কুকরুল বিল। আছে শত বছরের পুরানো কারমাইকেল কলেজ এর ক্যাম্পাস। প্রাসাদময় বিশাল ক্যাম্পাস ঘুরতে ঘুরতে যেখানে দেখতে পাবেন কাইজেলিয়া গাছ। যে গাছ পুরো এশিয়াতে আছে মাত্র ৫টা তার মাঝে কারমাইকেলে আছে ২টা।
শহর থেকে কিছু দুরে বেগম রোকেয়ার বাড়ি সেই সাথে তার স্মৃতি কমপ্লেক্স ঘুরে দেখে শহর এর সাথেই গড়ে উঠা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্যাম্পাসে কাটাতে পারেন শেষ বিকেল। সেখানেও ন্যাচারাল বিউটি খুজে পাবেন।

যেতে পারেন শহর থেকে ৩.৫কিলো দুরে ঘাঘট নদীর তীরে। যেখানে রংপুর ক্‌যান্টনমেন্টের শেষ সীমানায় গড়ে উঠা নতুন বিনোদন স্থান যেখানে আছে সেই বিখ্যাত স্থান যেখানে পৃথিবীর বিরল এক ঘটনা ঘটেছিলো। তীর-ধনুক নিয়ে ক্‌যান্টনমেন্ট আক্রমনের বীরত্ত পুর্ণ স্থান আছে সেখানে আছে হাজার শহীদের স্মৃতির সৌদ্ধ পাশেই ঘাঘট নদীর ব্যাপক ন্যাচারাল বিউটি।

একটু কাছেই খুজে পাবেন বিখ্যাত শতরঞ্জি পল্লী। শহর এর জিরো পয়েন্ট এর কাছেই আছে হযরত কেরামতিয়ার এর মাজার ও মসজিদ। যিনি ছিলেন হযরত শাহজালাল এর সমকক্ষের একজন ধর্ম প্রচারক বাট ব্রান্ডিং এর অভাবের জন্য আজ শাহজালাল অনেক এগিয়ে গেছেন।
শহর এর মাঝেই আছে রংপুর চিড়িয়াখানা ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। সময় থাকলে ট্রেনে করে ১৫মিনিটেই চলে যেতে পারেন শ্যামপুর। বিখ্যাত শ্যামপুর সুগার মিল দেখার সাথে সাথে নারিন্দের দিঘি। জমিদার খিতিশ বাবুর বাড়ি সহ, শ্যামপুর থেকে ৩কিলো দক্ষিনে গোপালপুর ফরেস্ট দেখে আসতে পারেন।
শাল গাছের বনে হারিয়ে যাওয়া, বনের মাঝের মেঠো পথ ধরে হেটে যাওয়ার অনুভুতি কি তা না গেলে বুঝবেন না। আম এর সিজেনে রংপুর আসলে খেতে পারবেন, বর্তমান বাংলাদেশের সব থেকে বিখ্যাত, দামি ও কদর ওয়ালা হাড়িভাংগা আম। যার সুনামের ধারের কাছেও রাজশাহীর আম নেই। কিংবা শেষ বিকেলে শহর ছেড়ে ২৪কিলো দুরে তিস্তা নদীতে চলে যেতে পারেন সুর্যাস্ত দেখতে। শত শত বছরের পুরানো রেল ব্রীজে বসে নদীতে সুর্যাস্ত দেখতে পারেন তারপর সন্ধ্যার আলোতে পাশের তিস্তা সড়ক সেতুর আলোতে ছবি তুলে ফিরতে পারেন শহরে কিংবা যেতে পারেন তাজহাট জমিদার বাড়ি। যা বাংলাদেশের এককালের সুপ্রিম কোটের ব্রাঞ্চ যা এখন রংপুর জাদুঘর। বিখ্যাত এই রাজবাড়ির সাথে মিল পাওয়া যায় জাস্ট ঢাকার আহসান মঞ্জিল এর বাট এই তাজহাট জমিদার বাড়ি আহসান মঞ্জিল থেকেও এক ধাপ এগিয়ে কারন এর সিড়ি গুলো পুরোটাই মার্বেল পাথরের তৈরী।

থিম পার্কের মজা নিতে চলে যেতে পারেন শহর ছেরে ১৫কিলো দুরের ভিন্নজগতে যার সৌন্দর্য্য, ন্যাচারাল বিউটি এবং বিনোদন এর ব্যাবস্থা আপনাকে মুগদ্ধ করবে। এই ভিন্নজগতেই আছে বাংলাদেশ এর ১ম প্লানেটরিয়াম। এটার পরেই দ্বীতিয় প্লানেটরিয়াম হলো ঢাকার ভাসানি প্লানেটরিয়াম।

যেতে পারেন রংপুর শহর এর ফায়ার সার্ভিস এর অফিসে যার পিছনেই আছে, বিখ্যাত রানী দেবি চৌধুরানীর বাসা। কিংবা যেতে পারেন শহর ছেড়ে কিছু দুরে সদ্যপুস্কনি ইউনিয়নে। যেখানে আছে আছে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির ভারত বর্ষ জয় এর সময় তাবু ফেলার স্থান। যেখানে তিনি তার লাখো সৈনিক দিয়া এক রাতেই খুড়ে ছিলেন বিশাল এক দিঘি যা সদ্যপুস্কনি নামে পরিচিত।

শহরের মাঝেই সেন-পাড়া তে পাবেন স্কাইভিউ নামের বাসা যা এরশাদ এর বাবার বাড়ি। কিংবা দর্শনার পল্লীনিবাস দেখতে পারেন যা এরশাদ এর নিজের বাড়ি। রংপুর সার্কিট হাউজ ও বাংলাদেশ এর কিছু ব্যাতিক্রম ঘটনার সাক্ষী। হাসিনা, খালেদা একি সাথে একি দিন দুজনি এই সার্কিট হাউজে ছিলো। খালেদা জিয়া দোতলাতে শেখ হাসিনা নীচতলাতে। তা ছারাও বাংলাদেশ এর ইতিহাস এর ১ম মন্ত্রী সভার বৈঠক ঢাকার বাহিরে ১ম এই রংপুর সার্কিট হাউজেই হয়।

ঘুরে আসতে পারেন শহর এর ভিতরের জমিদার বাড়ি বাকালি হাউজ থেকে যে বাড়ির পুত্রবধু প্রয়াত নজরুল সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম। শহর এর ভিতরেই ধাপে আছে মুক্তি-যুদ্ধ জাদুঘর ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। যদি চান নদীর চরে রাত কাটাতে তবে শীতকালে চলে যেতে পারেন শহর থেকে ১২কিলো উত্তরে মহিপুরে। বাংলাদেশ এর বিখ্যাত বিড়ি, সিগারেট ও তামাক জাত শিল্প নগরি দেখতে যেতে পারেন হারাগাছ।
শুধু তাই নয় আছে মিঠাপুকুরের তারকা মসজিদ সহ আরো অনেক মোঘল আমলের মসজিদ মন্দির, পীরগঞ্জের আনন্দ নগর, বদরগঞ্জের মায়ার ভুবন, পীরগঞ্জের রাবার বাগান সহ আর হাজার দেখার জিনিষ।

এবার বলি রংপুর আসবেন কিভাবে থাকবেন কোথায়।
রংপুরে বাস, ট্রেন প্লেন যে কোন ভাবেই আসতে পারেন। আগমনী, এস-আর, টি-আর, হানিফ, নাবিল সহ নানান পরিবহনের এসি, নন এসি বাস দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই ছাড়ে ঢাকা, সিলেট, চিটাগং, খুলনা থেকে।
আসতে পারেন ট্রেনেও রংপুর এক্সপ্রেস ৯টায় ছাড়ে কমলাপুর থেকে। কিংবা ইউনাইটেড এয়ার্‌ওয়েজ, বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস বাংলা এয়ারওয়েজ এ সৈয়দপুর এয়ারপোট হয়ে আসতে পারেন রংপুরে।

রংপুরে থাকার জন্য আছে ফোর স্টার হোটেল নর্থ ভিউ, পর্যটন মোটেল, আরডিআরএস এর মোটেল, বিজয় হোটেল, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার সহ আর অনেক।
আর খাবার ? তা সারা শহরময় খুজে পাবেন সুস্বাদু সব খাবারের রেস্তুরা, ফাস্ট-ফুড ও চাইনিজ ও থাই রেস্টুরেন্ট।
শহরের চার পাশে ঘোরার জন্য পাবেন, রিক্সা, অটো রিক্সা, বাস, রেন্টে কার।

তবে আর দেরি কেন ? ঘুরে আসুন বাহের দেশ থেকে।
-
কারন রংপুর হামার রঙ্গে ভরারে, আরে ওকি বন্ধু আইসেন হামার বাড়ি। আয়ুস ধানের ভাত খেনামো, থাইকেন জনম ভরি, বিদেশি বন্ধুরে. . . . . . . . .
-
ইশতিয়াক আহমেদ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×