somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা জানি না, আমরা বুঝি না

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীতে মানুষ চার রকম হতে পারে-
যে জানে, যে, সে জানে।
যে জানে, যে, সে জানে না।
যে জানে না, যে, সে জানে।
যে জানে না, যে, সে জানে না।
তুমি কোন দলে?
**বাণীসমূহ মি. রেজভির নিকট হতে শ্রুত।
মানুষের কথা বুঝতে এবং মানুষকে আমার কথা বোঝাতে খুব সমস্যায় পড়ি।
রিফ্লেক্স সীমাবদ্ধতা ও আরও কিছু কারণে অন্যের কথা বুঝতে সমস্যা হয়।-সেটা তো আমার জানাই আছে, আর সেজন্য যা করতে হবে, তা করতে পারি। সেটা হল, তাকে আমার মতো করে বলানো, বা আমি যেমন করে শুনতে চাই, সেভাবে তাকে বলানো। স্বল্পগতির রিফ্লেক্স এবং নিজস্ব ছকে কথা শুনলে সেটি না বোঝার কারণেই, আমি ক্লাসরুম, লেকচার সেশন, টেক্সট বুক হতে খুব বেশি শিখতে পারি না। একইভাবে দলগত ইভেন্ট বা লারনিং সেশন হতে বেশি উপকৃত হতে পারি না।
শিক্ষকরা, ট্রেনাররা তাদের মতো করে লেকচার দিয়ে যান, কিন্তু, আমি তা হতে ধরতে পারি কম। কারন সেটাই, আমাকে শিখতে বা বুঝতে হলে আমার মতো করে আমার ব্রেইনকে তথ্য দিতে হবে। আমার শিখবার পদ্ধতি অনুসরন করে ধাপে ধাপে প্রশ্ন করে বিষয়টি আত্মস্থ করতে হবে-যা ক্লাসরুমে, লেকচার সেশনে সম্ভব না। ক্লাসরুমে শিখতে পারতামনা ছোটবেলা হতেই। ফলে, আজীবন ক্লাস ছিল আমার বিতৃষ্ণার ও ভীতির স্থান। শুনে মজা পাবেন যে, আমি ক্লাস এইট শেষ করবার পরে পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করা তক প্রায় কখনোই ক্লাসে যাইনি। মানে, স্কুল পলাতক, কলেজ পলাতক, বিশ্ববিদ্যালয় পলাতক। ডিসকলেজিয়েট হবার ঝুঁকিতে যে কতবার পড়েছি-তার ঠিক নেই।
কিন্তু, সমস্যা আরও বড় হয়ে যায়, অন্যরা যখন আমার কথা বোঝে না। সমস্যার সবচেয়ে বড় কারন হল, তারা যে বোঝেনি, সেটাই তো বুঝি না। তারাও বুঝায় না। কেবল মাথা নাড়ে, যে, সব বুঝেছে। পরে গিয়ে দেখি, মূল কথার কিছুই বোঝেনি। বহুবার দেখেছি, জুনিয়রদের বা অন্য কাউকে সময় নিয়ে কিছু বলেছি, তারাও মাথা ওপর নিচ করে গেছেন। অতঃপর, সময় হলে দেখি, মূল আলোচ্য বা নির্দেশনার কিছুই আসলে বোঝেননি। চেয়েছি মূলা, নিয়ে এসেছেন চুলা। অনেকটা হাঁস ও বাঁশের মতো। প্রতিটি বছর শুরুর সময়ে আমি নিজের জন্য নিজের একটি উপদেশনামা লিখি। ২০২৩ সালের উপদেশমালায় এটাও আছে, ওয়ালিদ, মারফতি কথা ছাড়ো, সোজা ভাষায় কথা বলবার অভ্যাস করো।
আসলেই এই বিড়ম্বনায় পড়ি। একটা বিষয় নিয়ে শ্রোতার সাথে কথা বলি। জুনিয়রদের নির্দেশনা দিই। দিনশেষে দেখি, সে কিছুই বোঝেনি। এমন নয়, যে আমি সবসময় অতি উচ্চমার্গীয় ভাষায় অতি ইনটেলেকচুয়াল বিষয়ে কথা বলি। আমার কাছে লাগে, আমি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে অতি তুচ্ছ কথাই বলি। কিন্তু, তারপরও শ্রোতারা কেন যে বোঝেন না, জানি না।
একই জিনিস হয় লেখার ক্ষেত্রে। অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে ঝামেলাই হয়। পাঠকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লেখার থীম ও মেসেজ ধরতে পারেন না। ফলে অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা, প্রশ্ন, শ্লেষ সহ্য করতে হয়।
কথা না বোঝা আর কথা বিকৃত করতে বাঙালি সিদ্ধহস্ত ও বিখ্যাত। তারপরও এটার ধরন বোঝাতে এই গল্পটি পড়তে পারেন-
A King enrolled his donkey in a race & won.
Local newspaper read: 'KING's ASS WON'
The kingwas so upset with this kind of publicity that he gave the donkey to the queen.
The local paper then read: "QUEEN HAS THE BEST ASS IN TOWN."
The king fainted....
Queen sold the donkey to a farmer for 10$.
Next day paper read: "QUEEN SELLS HER ASS FOR $10."
The queen fainted...
The next day king ordered the queen to buy back the donkey and leave it in jungle.
The Next Headlines: "QUEEN ANNOUNCES HER ASS IS FREE & WILD."
The king died... !!
এমনিতে, বাংলাদেশে আপনি কাউকে ডেকে আনতে বললেন, দেখবেন, আপনি যদি হ্যাডোমিক কেউ হন, তাকে থাপড়াতে থাপড়াতে নিয়ে আসবে।
অনেকেই আমার কাছে কাউন্সেলিংয়ের জন্য এপ্রোচ করেন। তাদের সাথে যখন কথা শুরু করি, তারা আমার কাছে ঠিক কী চান, বা কী জানতে চান-দেখা যায়, তা স্পষ্ট করে নিজেও জানেন না; বা, জানলেও সেটি বোঝাতে পারেন না। আর, তখন আমিই বারংবার নিজস্ব ধরনে প্রশ্ন করে করে যখন সেটা বের করি, তখন তিনি হড়বড় করে দরকারী, অদরকারী সব কথা, তথ্য দিতে শুরু করেন। ফলাফল, তাকে বলবার কিছুই মাথায় আসে না।
তারপর তাকে থামিয়ে, আমার গোড়া হতে শুরু করতে হয়। এবং, ঠিক যা আমার জানা দরকার, সেটা জেনে তারপর তাকে কিছু দিতে হয়।
কারো কাছ হতে কিছু জানতে হলে, বা, কাউকে কিছু বলাতে হলে, সবার আগে আপনি নিজের জিজ্ঞাসা সুস্পষ্টভাবে ঠিক করে নিন আর তাকে সেভাবেই বলুন, যে, আপনি তার কাছে ঠিক কী চান। আর তারপর আপনি কিছু বলার আগে তাকেই ঠিক করতে দিন, আপনাকে ওটা বলার বা বোঝানোর জন্য তার ঠিক কী কী দরকার বা কোন কোন তথ্য জানা দরকার। উনি যা বা যতটা জানতে চান, তাকে ঠিক সেটা ও ততটাই জানান।
ওনার চাওয়া ছাড়া হড়বড় করে আপনার বলা অপ্রয়োজনীয় হাজারো কথা ও তথ্য দিয়ে তার মাথাটা ভরে দিয়ে আলটিমেটলি আপনি কিছুই পাবেন না তার কাছ হতে।
পৃথিবীতে ভাল বক্তা প্রচুর আছে। কিন্তু ভাল শ্রোতার সংখ্যা খুবই বিরল। আজকের দিনে কথা শোনার চেয়ে বলার দিকে মানুষের ঝোক বেশী। আমরা বলব কম, শুনব বেশী। আমার কথাটি যেকোনো মুল্যে শুনিয়ে দেবার মধ্যে কোনো ক্রেডিট নেই। অন্য একজন যখন কিছু বলছেন বা কোনো বিষয় নিয়ে বলছেন, তখন আমি চুপ করে শুনব। অনেকেই অন্যের কথার মধ্যে কথা বলে বসেন বা একটি বিষয়ের কথার মধ্যে অন্য বিষয়ের কথার অবতারনা করেন। এতে কোনো ইস্যুরই সমাধান ভালভাবে হয় না।
একটি একটি বিষয় নিয়ে কথা বললে অন্তত কিছু বিষয় সমাধান হয়। ভাবতে শেখা, ভাববার সক্ষমতা থাকা, ভাবনার মানসিকতা- গুরুত্বপূর্ণ একটি যোগ্যতা। ঠিক একইভাবে শুনতে শেখা, শুনবার মতো আগ্রহ থাকা এবং ভাল শ্রোতা হওয়াও একধরনের যোগ্যতার বিষয়। একটি বড় সংখ্যক মানুষের এই দুটি থাকে না।
১৭ ৯৯ সালে নেপোলিয়ান মধ্যপ্রাচ্যে একটা যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন। একদিন তিনি তার লোকদেরকে ১২০০ যুদ্ধবন্দী তুর্কীকে মুক্তি দেবার আদেশ দিতে চাইলেন। কিন্তু ঠিক আদেশটি দেবার মুহুর্তে তিনি প্রচন্ডভাবে কাশতে শুরু করলেন। তিনি খুব বিরক্ত হলেন এবং বিরক্তিভরে বলে উঠলেন “মা সাকরি তাকস” যার অর্থ হল কি বিরক্তিকর কাশি। কিন্তু নেপোলিয়ানের কাশির কারণে তার অনুচররা সেটাকে শুনলেন “মা সাকরি তাওস” যার অর্থ দাড়ায় ওদের সবাইকে হত্যা কর। সেই ১২০০ বন্দীকে সাথে সথে হত্যা করা হয়। (সংগৃহিত)
শান এ বয়ান: আদেশ দান আর তা শোনা ওা তামিল করার ক্ষেত্রে আামাদের সতর্ক হওয়া উচিত। আজকের দিনে কথা শোনার চেয়ে বলার দিকে মানুষের ঝোক বেশী। পৃথিবীতে বিখ্যাত বক্তা প্রচুর আছেন। তবে বিখ্যাত শ্রোতা এজন্য খুবই বিরল।
শেখার চেষ্টা আমাদের অনেকের মধ্যেই আছে। কিন্তু, জানা থাকা দরকার, শিখবার সঠিক পথটা আসলে কী? অনেকে বলে, ঠেকে শেখে। অনেকে বলে দেখে। আমার পাঠকদের জন্য আমার ভাবনাটা শেয়ার করলাম: ১. জটিল, গভীর, যথাযথ ও উপযুক্ত (Accurate, Appropriate, Perfect) প্রশ্ন করা (এটা আমার সবচেয়ে পছন্দের রাস্তা।) ২. সূক্ষ্ণভাবে দেখা ও ভাবা। ৩. মনোযোগ ও আগ্রহ নিয়ে শোনা। ৪. অভিজ্ঞতা বিনিময়। ৫. হাতে কলমে করা, ভুল করা ও শেখা। ৬. এক্সপিরিমেন্ট করা। ৭. কল্পনা ও সৃষ্টিশীল চিন্তা। ৮. সবরকম কিছু পড়া। ৯. হিউম্যান ইন্সটিংকট ও স্পনটেনিয়াস ইনহেরিটেন্স ১০. বয়স হওয়া। ১১. আগের শেখা জ্ঞান, তথ্য, অভিজ্ঞতার বিক্রিয়া ও ফিউশন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×