somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিবৃদ্ধির হাতছানি এবং তৃতীয় পক্ষের সেবা নিয়ে দুটো কথা

১৪ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কিছুদিন আগেই, আমার একজন সুহৃদ তার প্রতিষ্ঠিত একটি চাকরিস্থল হতে নতুন একটি চাকরিতে যোগ দেন। বলাই বাহুল্য, নতুন প্রতিষ্ঠানটি সবদিক হতেই তার কাছে প্রচন্ড আকর্ষনীয় মনে হয়েছিল। বা বলা চলে, ওনারা তাদের প্রতিষ্ঠান ও চাকরিকে তার কাছে অতি আকর্ষনীয়, লোভনীয় ও আরাধ্য হিসেবে উপস্থাপনে, প্রতিপন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যেই হাতছানি একজন উদীয়মান প্রফেশনালের পক্ষে উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব।

অসম্ভব, কারন, আমাদের নানামুখী বাস্তবতা থাকে। থাকে নানা লক্ষ্য পূরণ ও স্বপ্নপূরণের চাপ। থাকে স্ব-আরোপিত বা জোর করে চাপিয়ে দেয়া প্রতিযোগীতা। যার কারনে খুব দ্রূত একটি উঁচু পজিশন (ও অবশ্যই মোটা টাকার বেতন) অর্জনের অমানুষিক চাপ থাকে আমাদের ওপর।

তার ওপরে, আজকাল সব ইয়ং মানুষেরই একজন ‘বিশেষ’ মানুষ থাকবেই। সেই বিশেষ মানুষটি বিশেষভাবে যদি হন একজন তরুণী, তাহলে তার বাড়ি হতে বিয়ে হয়ে যাবার চাপ থাকে, কারন, জব মার্কেটে নামার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে গড়পড়তা বয়স ২৩-২৪ হয়ে পড়ে। কন্যার জন্য বিয়ের বয়স অলরেডি পার হয়ে যাবার যোগাড়। বাবা-মা তো ব্যস্ত হবেনই। হয়তো মেয়েটিও সামান্য দোলাচলে পড়ে। বহু বছরের প্রেমিকের প্রতিষ্ঠার জন্য অপেক্ষা করবেন? নাকি বাবা-মা’র কথায় নিশ্চিতের পথ ধরবেন? ফলে, ছেলেটির ওপর চাপ আসে-বিয়ে করো। বিয়ে করে নিলে, আবার, দ্রূত সংসারের আর্থিক ও সামাজিক দায়ীত্ব পালনের সক্ষমতাকে বেশ হৃষ্টপুষ্ট করো।
বান্ধবী, প্রেয়সী না থাকলেও আরও কত কত মানুষের মুখের চাহনি থাকে। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, তারা আর কতদিন ছেলেকে দেখবেন? বোনটার বিয়ে হওয়া দরকার। কারো ঘরে ১০ জন খাবার মুখ। সবাই চেয়ে থাকে ওই একজনই বিশ্ববিদ্যালয় পাশ সোনামনিটার একটা ভাল চাকরি আর প্রতিষ্ঠার পানে।

আমাদের ওপর তখন অদৃশ্য একটা চাপ তৈরী হয়, ভাল চাকরি, বড় চাকরি, দামী চাকরি, মোদ্দা কথা মোটা টাকার চাকরি পাবার। দ্রূত বড় হবার।

এই পরিবার, সমাজ, দেশ আমাদেরকে এক অসম, অসময় ও অন্যায্য প্রতিযোগীতায় নামতে বাধ্য করে।

ফলে, প্রতিটি তরুণ বা তরুণী, যে, আজই ক্যারিয়ার শুরু করল, তারা ভয়ানক একটা চাপ ও লক্ষ্য নিয়ে শুরু করে। ফলে, তাদের মধ্যে দ্রূতই ক্যারিয়ারের ওপরে যাবার চাপ মারাত্মক থাকে। তখন, তাদের কাছে নৈতিকতা, সাবধানতা, পেশাদারিত্ব কোনো অর্থ বহন করে না।

ভদ্রলোক খুব সিনিয়র নন। তবে খুবই সম্ভাবনাময় ও যোগ্য। কিন্তু, গোলটা প্রথম বাধে, যখন ওই অতি হাইপড, ওভার রেটেড ও তথাকথিত আরাধ্য প্রতিষ্ঠানটি তাকে মাত্র ১০ দিনের নোটিশে আগের কর্মস্থল ছেড়ে তাদের ওখানে যোগ দেবার শর্তারোপ করে। নতুন চাকরির বাধ্যবাধকতা ও ক্যারিয়ার বা জাগতিক স্বার্থের হাতছানিতে বাধ্য হয়ে তিনি সেখানে চলে যান। মূল গোলটা বাধে তার পরে।
ভদ্রলোক দুই দিনের মধ্যেই আবিষ্কার করেন, যে, তিনি আসলে স্বর্গের দুরাশায় ও মিথ্যা প্রলোভনে নরকে এসে পড়েছেন। সেই নরকের বিস্তারিত আজ নয়। কারন, আজকের কনটেক্সট ভিন্ন।

তবে এতটুকু বলি, কাজের পরিবেশ, বস, কালচার, গ্রো করবার সুযোগ, শেখার সম্ভাবনা, ব্র্যান্ডিং-সবখানেই তার মনে হতে থাকে, যে, ভুল যায়গায় পড়া হয়েছে।

যাহোক, খুব দ্রুতই ও সৌভাগ্যবশত তিনি তার ডিসকোর্স বদলে নিতে সক্ষম হন। সে গল্প আজ বলছি না।

আজকের কনটেক্সট হল, উদীয়মান ও সদ্যপ্রসূত-বিভিন্ন তথাকথিত আরাধ্য প্রতিষ্ঠানে চাকরির অফার পেয়ে সেখানে অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে যোগ দেবার একটি বিশেষ বিপদ নিয়ে। একটি ভুল প্রতিষ্ঠানে ল্যান্ড করবার যত রকম বিপদ হতে পারে, যেমন: -
টক্সিক এনভায়রনমেন্ট, অফিস পলিটিকস, মধ্যযুগীয় কালচার, কুপমন্ডূক কিংবা যমদূত বস, অসময়ে বেতন প্রাপ্তি, চাকরির প্রদর্শিত শর্ত বদল, বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল বদল-ইত্যকার অসংখ্য বিচিত্র বিপদের কথা আমি বিগত দিনে অনেকের কাছে জেনেছি।
কিন্তু, আজ, একটা বিশেষ বিপদ নিয়ে বলতে বসেছি।

সেটা হল, বিশেষ ধরনের উদীয়মান কিংবা সদ্য গজানো (এনাদের প্রকৃত টার্ম ব্যবহার করে কারো রোশানলে পড়তে চাই না।) প্রতিষ্ঠান, যারা হাইপ, ব্র্যান্ডিং কিংবা রেটিংয়ে খুবই গরম, তাদের ওখানে চাকরি করতে যাবার কিছু স্ট্র্যাটেজিক এ্যডভানটেজ যেমন আছে, তেমনি আছে ভয়ানক ট্রেড অফ, মানে একটা অত্যন্ত মারাত্মক নেগেটিভ দিকও।

সেটা হল, জিরো বা নেগেটিভ গ্রোথ। গ্রোথ অব আর্নিংয়ের ছলনাময় হাতছানির ট্রেড অফ হিসেবে, অপরচুনিটি কসট হিসেবে জিরো বা নেগেটিভ গ্রোথ অব লারনিং।

আমি বলছি শেষটা নিয়ে।

এরকম উদীয়মান কিংবা সদ্য গজানোদের সত্যি বলতে শুধু ঠাঁট ও বাঁট যতটা থাকে, শো অফ যতটা থাকে, জিকির যতটা থাকে, প্রচারনায় যেমনটা থাকে, বাস্তবে, তাদের কালচার, এনভায়রনমেন্ট ও বিশেষত HR ‍Structure থাকে খুবই নাজুক, বা প্রায় থাকে না। বিজনেসের শুরুর দিককার চ্যালেঞ্জ, বিজনেস দাড়ানো ও টিকানোর সংগ্রামই যার এখনো ফুরোয়নি, ফুরোলেও যার এখনো নেট প্রফিটের মুখ দেখা হয়নি, সেটা হলেও যার এখনো হাত-পা শক্ত হয়নি, তার ফুরসতই বা কখন হল ওইসব স্ট্রাকচার সৃষ্টির? শ্রদ্ধেয় জাকারিয়া স্বপন সাহেবের এক আর্টিকেলের বরাতে পড়েছিলাম, যে, উদীয়মান/সদ্যপ্রসূত (সঠিক টার্ম আবারও গায়েব রাখলাম) ভেঞ্চারের নেট প্রফিটের মুখ দেখবার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে সময়কাল **১২/১০ বছর।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো সেটা জানে। কিন্তু, মাথা তুলতে ও রাইজ করতে তাদেরকে যে বাজার হতে সেরা মাথাদের কিনতে হবে-সেটা তারা জানেন।

কিন্তু, বাজারের সেরা মাথারা তো তাদের ওরকম প্রতিষ্ঠানে সহজে ও সহসা আসতে চাইবেন না। কী দেখে আসবেন?
তখন তারা কী করেন, বাজারের ভাল, প্রতিষ্ঠিত অর্গানাইজেশনের, অর্থাৎ, ট্যালেন্ট মার্কেটের রেডি মেধাদেরকে তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে তুলে আনার চেষ্টা করেন (কার্যত ভাগিয়ে আনেন।)

সেটা করবার জন্য তারা তাদের সার্বিক এভাটারকে অতিশয় চমক, গমক ও মধু মাখিয়ে তুলে ধরেন। তাতে মাছিও আটকায়।
অন্য প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিভাবান, প্রতিশ্রুতিশীল, যোগ্য ও সম্ভাবনাময় ইয়ং ট্যালেন্টেড জুনিয়র অফিসারকে তারা রাতারাতি ম্যানেজার, ডিরেক্টর, হেড অব ডিপার্টমেন্ট (বিশেষত HoHR) করে নিয়ে আসেন। মধু গাঢ় করা হয় নানা চটকদার JD, KRA ও জারগন সহযোগে। তাকে বেতন দেয়া হয় বাজারের প্রচলিত রেটের তিনগুন। অন্যসব এক্সপোজার তো আছেই। প্রবীণ বা পাকনা প্রফেশনালরা অনেক ভেবে চিন্তে এগোনোর স্বভাবের কারনে ততটা না আটকালেও, তরুণ মাছি জালে আটকায়। আগুনে ঝাঁপ দেয়া পতঙ্গের মতো।

কিন্তু, ২ বছরের অফিসার যখন একটা প্রতিষ্ঠানের HoHR হয়ে বসেন, যেখানে তিনিই সর্বেসর্বা, তার আর বস নেই, সুপারভাইজার নেই, ম্যানেজার নেই।

এই লোক না পারেন তার স্বল্প অভিজ্ঞতা ভাঙিয়ে তাদেরকে সত্যিকারের কিছু দিতে। আর, বস না থাকায়, সুপেরিয়র না থাকায়, মেনটরের অভাবে তার লারনিং গ্রোথও হয় অতি অতি সামান্য, বা নেগেটিভ। কখনো কখনো তিনিও হয়তো বুঝতে পারেন। ক্ষতিটা আন্দাজ করতে পারেন। কিন্তু, মোটা বেতন, এক্সপোজারের লোভ, ওদিকে পরিবার ও বর্ধিত সমাজের প্রত্যাশার চাপ তাকে ঘর বদল করতেও ভয় দেখায়। এমনকি, ওরকম প্রতিষ্ঠানগুলো নাচবার কথা বলে বাঈজি হায়ার করে, তারপর একে একে তাকে গান করবার, রান্না করবার, বাগান করবার, বাচ্চা দেখাশোনা করবার যাবতীয় দায়ীত্ব চাপিয়ে দেবার ধান্দা করেন। মানে, একের ভেতর দশ। নাম দেয়া হয় কসট অপটিমাইজেশন ও স্কিল ডাইভারসিফিকেশন।

HR বিভাগের প্রফেশনাল হলে তার বিপদ সবচেয়ে বেশি হয়। নিজেই যে এখনো শিখবার স্টেজে, সে যখন শিক্ষকের, বিচারকের পজিশনে পড়ে যায়, তার অবস্থা দেখার মতো হয়। বিশেষ করে হাজারো বৈচিত্রে ঠাসা ‘মানুষ’কে নিয়ে ডিল করা বাচ্চা ওঁঝার কাজ না। ওদিকে সেরের ওপর সোয়া সের, তাকে দুই মাস পরে এ্যডমিনও দেখতে দেয়া হয়। (যদিও শুরু হতে তিনি যা HR হিসেবে পান, সেটা এ্যডমিনই ছিল।) তার সামনে অপারেশনস শেখার ও দেখার মূলা ঝোলানো হয়। তিনিও ভবিষ্যতে CEO হবার মঞ্জিলটা দেখতে শুরু করেন। কিন্তু লবডঙ্কা। এই ’এইছাড়েডমিন’কে ভবিষ্যতে CEO/COO বানাবে-এমন বোদ্ধা কতজন আছেন বাজারে?
সে আটকে যায়। ঝুলে যায়।
ফলাফল, আমি বেশ কিছু নামকরা অমন প্রতিষ্ঠানের এমন মানুষদের পেশাগত সংস্পর্শে আসার কারনে জানতে পেরেছি। ভদ্রলোকেরা লার্নিংয়ের দিক দিয়ে নেগেটিভলি গ্রো করছেন। ম্যানেজার হয়ে বসেছেন। মাথা হয়েছেন, অথচ, হাত-পা এখনো অফিসারের। খাবি খাচ্ছেন রোজ। আবার বেরও হতে পারছেন না।

কয়েকজনের ইন্টারভিউ করেছিলাম। বিশাল পোস্ট, বিশাল বেতন পান। অথচ, নিজেই স্বীকার করেছেন, ভাইয়া, স্যরি, শেখা হয়নি ওগুলোর কিছুই (আমি মৌলিক ও বুনিয়াদি পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার কথা বলছি।) আবার, ওসব প্রতিষ্ঠানের অস্বাভাবিক ও অসময়ের মোটা টাকা ও ব্র্যান্ডিং এরই মধ্যে তার লেভেলটা, প্রত্যাশাটা, সামাজিক অবস্থান আকাশে তুলে দিয়েছে। তিনি যে শেখার জন্য আবার নতুন করে কোথাও কম বেতনে যাবেন, সেটা সম্ভব না। আবার, অন্যরা তার মতো নবীণকে অত বেতন দেবেন না।
ফলত, তাদের ক্যারিয়ার ঝুলে যায়। তারা না পারেন ওখানে শাইন করতে। কারন, তারা নিজেরাও জানেন, তার বয়সই হয় নাই ওই পজিশনের মূল্য চুকাবার। আবার, ভাগতেও পারছেন না, মাথাটা ভারী হয়ে যাওয়ায়। তাই তারা একটা লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েন।
তাই বলি, স্বর্গের হাতছানিতে মজে পা বাড়াবার আগে একটু হলিস্টিক ভিউ নিয়ে চিন্তা করুন। নগদে লাভ ও ক্ষতির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে কী পাবেন ও হারাবেন, কী ঘটতে পারে-তা একটু বিশ্লেষণ করুন। লাগলে বড়দের একটু গাইডলাইন নিন। একটু কনসাল্ট করে নিন সিনিয়রদের সাথে। লাসভেগাসের চাকচিক্যময় ক্যাসিনোতে কোটি ডলার জিতবার নিশ্চিত হাতছানিতে কেবল ঢুকে পড়লেই হবে, কেবল ডলার জিতলেই হবে? সেই ডলার নিয়ে প্রাণ হাতে ধরে বেরোবার রাস্তা আদৌ খোলা থাকল কিনা-তা ভাবতে হবে না?
একই সাথে আপনাদেরকে ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশানের আরেকটি দিক ‍নিয়েও আজকে বলি।

আপনার প্রতিষ্ঠানের হেড হান্টিংয়ের দায়িত্ব হয়তো আপনি থার্ড পার্টির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমি থার্ড পার্টি হেড হান্টিংয়ের বিরোধী নই। এবং, আমি স্বীকার করি, যে, এই পদ্ধতির অনেক এ্যডভানটেজও রয়েছে। সেই সাথে, প্রতিষ্ঠানগুলোর এই সেবা এভেইল করবার অনেক বাস্তব কারনও রয়েছে।
কিন্তু, স্ট্র্যাটেজিক্যালী এই পন্থার কিছু অসুবিধা বা সমস্যাও রয়েছে। আজ সেটি দেখিয়ে দিতে চাই।
প্রথমেই ভাবুন, বিকল্প কখনো মূল বস্তুর সমান সমান হয় কিনা? বায়োনিক হাত, বায়োনিক হার্ট, পাথরের চোখ, পাশের বাসার ভাবী, সৎ মা, মামাতো বোন, সিলিকন ডল-কেউ ই কি আপনার আপন কারো মতো সত্যিই কখনো হওয়া সম্ভব? আপনার দরকারী ম্যানপাওয়ার বা হিউম্যান রিসোর্স সংস্থান করবার যাবতীয় দায়ীত্ব সামলাতে আপনিতো আপনার HR টিমকে নিযুক্ত করেছেনই। তাহলে সেই কাজটি আরেকটি বাইরের প্রতিষ্ঠানকে করতে দেয়াটা ঠিক কেমন হয়ে যায়? তাহলে তারা কি সক্ষম নন?

তাছাড়া, ভাবুন তো, আপনার একটা অঙ্গের গুরুত্ব আপনার চেয়ে আপনার মাসীর কাছে কি বেশি হওয়া সম্ভব? আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, স্ট্র্যাটেজি, পলিসি ও ভিশনের সাথে হুবহু লীন হয়ে, কপিড/এলাইনড হয়ে আপনার থার্ড পার্টি কর্তৃক আপনার হেড সোর্সিং হওয়া কি তাত্বিকভাবে সম্ভব? ভিশন কি কখনো কপি হয়? আপনার প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বৈচিত্রপূর্ণ, জটিলতাপূর্ণ ক্যাপিটাল এ্যসেট বা রিসোর্স, তথা ম্যানপাওয়ার হায়ার/পারচেজ করবার দায়ীত্ব যদি আপনি সম্পূর্ণরূপে তৃতীয় একটি পক্ষকে এসাইন/ডেলিগেট করে দেন, তাহলে তারা আপনার প্রতিষ্ঠানের ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজি, পলিসি, কালচার, গোল ও কমপিটেন্সি বেঞ্চমার্ক পারফেক্টলি মিট করে/এনশিওর করে আপনার জন্য হেড সোর্স করতে কতটুকু সত্যি সত্যিই সক্ষম-তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যাচাই করে নিন। স্টার, হাইপড, ভাইরাল, ওভাররেটেড রিভিউ বা বিজ্ঞাপনে মজবেন না।

আপনাকে একটা শয়তানি টিপস বলি। আপনার প্রতিষ্ঠান ২০ টি বিভাগ। বিশটার জন্য ২০ জন হেড আছেন। তারা কম-বেশি যার যার সাবজেক্টে দক্ষ, জ্ঞানী, অভিজ্ঞ।
কিন্তু, একটি থার্ড পার্টির কি ২০টি আলাদা বিভাগ থাকবে? থাকলেও আপনার ওই ২০টিই কি তাদের থাকবে? (সেটা কি তাত্বিকভাবে সম্ভব?) আর আপনার ২০টিই যদি তার থাকে, তাহলে ভিন্ন সেক্টরের, বিজনেসের, ইন্ডাস্ট্রির অন্যদের সব বিভাগও কি তাদের থাকে? না থাকলে তারা কীভাবে তাদের যোগ্যতা এ্যসেস করেন-একটু ভাববেন। (#সবাই১ না) আমাকে ভুল ভাববেন না। এখানে আরও আলোচনা রয়েছে। কীভাবে তারা কাজটি করে থাকেন, কীভাবে ম্যানেজ করেন-তার বিস্তারিত না শুনে, না জেনে একতরফা তাদের খাটো ভাবলে আবার ভুল করবেন।

এমনকি, আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে এমন সার্ভিস এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান হতে নিতে অভ্যস্তও হয়ে থাকেন, এবং সন্তুষ্টও থাকেন, তার পরও মাঝে মধ্যেই র‌্যান্ডম চেক করুন। ঠিক যেমন করে আপনি সাপ্লাই চেইনের জন্য সাপ্লায়ার এনলিস্ট করবার জন্য সূক্ষ্ণতম যাচাই পদ্ধতি অবলম্বন করেন, সেভাবেই ফার্ম চুজ করুন। চুজ ও প্রভেন হয়ে থাকলে মাঝে মাঝেই ক্যালিব্রেশন চেক করুন।
এতক্ষণ বলেছি, থার্ড পার্টির একান্ত নিজস্ব এ্যসেসমেন্ট, এবং তারই মধ্য দিয়ে ফাইনাল ক্যানডিডেট/প্রডাক্ট অনবোর্ড করে দেয়া, মানে রিক্রূটমেন্টের পুরোটা আউটসোর্স করে দেবার দিকটি নিয়ে।

এর বাইরে, কেবলমাত্র প্রোফাইল সোর্সিং বা শর্টলিস্টিং করে দেবার সেবাও যদি নিয়ে থাকেন (এই সেবাটিই মেজরিটি), যেখানে তাদের দেয়া শর্ট রিসোর্স হতে আপনারা চুজ করে ডাকেন ও নিজেরা ইভ্যালুয়েট করেন, সেখানেও সতর্ক হোন। কারন, তারা আপনাকে ১০ টি দিচ্ছে, আপনি ৩টি ডাকছেন, ১ টিকে নিচ্ছেন। এতে আপনার সময়, এফোর্ট, এনার্জি তথা ফাইনালি টাকা সেভ হলেও, গতি বাড়লেও, ঝামেলা কমলেও এতে করে আপনার বাজারটা,তথা হরাইজনটা ছোট হয়ে যাচ্ছে। থার্ড পার্টির আই আপনার আই হয়ে যাচ্ছে। তারা যে ১০ টা দিচ্ছেন, তারাই যে বাজারের সেরা-সেটা আর হবার চান্স থাকছে না।

আপনি ‍উন্মুক্ত বাজার হতে উন্মুক্ত বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজে যাচাই করে নিলে পুরো ট্যালেন্ট মার্কেটের নজরে তা আসবে (১০০% না হলেও সংখ্যায় অন্তত বড়।) ৫০০ জন আগ্রহ দেখাবেন, আপনি ১০০ কে ফিল্টার করবেন, ১০০ জন হতে ১ টা ফাইনাল প্রোডাক্ট পাবেন। অনেক পিওরিফাইড। আর থার্ড পার্টিকে দিলে আপনার দিগন্তটা ১০ জনে সীমিত হয়ে যাচ্ছে। আপনি হয়তো দারুন একটা লোক পাচ্ছেন। কিন্তু, একই সাথে, আপনি বাজারের সবচেয়ে প্রতিযোগীতামূলক ও সেরাটাকে না পাবার ঝুঁঁকিতেও পড়ছেন। আপনাকে যে ট্রেন্ডে তারা ডিরেক্ট করবে, আপনার ম্যানপাওয়ার সেভাবে শেপ নেবে। তারা যদি সবসময় বগুড়ার আলু বিক্রেতাদের হতে ১০ রকম আলু সোর্স করে আপনাকে দেখায় আর আপনি সেখান হতে সেরাটা নেন, তাতে বলা যায়, আপনি ভাল আলু পেলেন, বগুড়ার ভাল আলু পেলেন, বগুড়ার সেরা আলুও হয়তো পেলেন, কিন্তু, দেশের সেরা আলু পেলেন না।

আমার একটি ব্যক্তিগত HR ফিলোসফি বলি। সেটা হল, আমি রিভার্স অসমোসিস ব্যবহার করলে পানির যাবতীয় দূষিত বস্তু হয়তো ফিলটার হয়ে যায়, নিশ্চিতভাবেই আমি জীবাণুমুক্ত পানি পাব, কিন্তু, একই সাথে আমি পানির দরকারী মিনারেলকেও হারাবো। ময়লা ছাঁকবার অতি সিলেকটিভ মেথড ও ঝোঁক বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমি দরকারী জিনিসও হারাবো। আমি বিশ্বাস করি এই কবিতায়-

দ্বার রুদ্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি,
সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?

আমি এইচআরে কাজের জন্য ভাল ও খারাপ-উভয়কেই চেখে দেখার পক্ষপাতি। আমি কেবল গোলাপ বাগানে ঘুরব না, আমি ডাস্টবিনেও ঢুঁ মারব। আমি শুধুমাত্র হারভার্ড বা অক্সফোর্ডের ছাত্রদেরই সবসময় জবের জন্য ইন্টারভিউ করব না, বরং হরগঙ্গা কলেজ বা ভুরুঙ্গামারী কলেজেরও কাউকে আমি ট্রাই করব। সবরকম এক্সপোজার HR এর জন্য জরুরী। আমার হয়তো সময় বেশি যাবে, হয়তো পরিশ্রম বেশি হবে। হয়তো Yield ratio গ্যাপ বাড়বে। হয়তো আমি প্রচলিত ট্রেন্ডের ও বিজনেস এপ্রোচের বিপরীত স্রোতে হাঁটছি, তবু ঝুঁকিটা আমি নেব। কারন, রেফারেলের হাত ধরে বায়াস, কোরাম, ফোরাম এর খপ্পরে পড়বার ঝুঁকিও কম মারাত্মক না।

তাই বলে কি আপনি তাদের সেবা নেয়াকে হারাম ভাববেন? না, এই সেবা একটি বহুল প্রচলিত সেবা, এবং এর সুবিধা অনেক প্রতিষ্ঠানই নেন। তবে আপনি যেটা বেস্ট হিসেবে আরও চালু করতে পারেন তা হল আপনি মিশ্র চর্চা করতে পারেন। যেখানে আপনার নিজস্ব ওপেন সোর্সিংও থাকল, থার্ড পার্টিও থাকল, তারপর মার্জ/কমপেয়ার হল, তারপর কমবাইন্ড। ওখান হতে আপনারা নিজেরা ইভ্যালুয়েট করে নেবেন। এতে করে আপনার ট্যালেন্ট অনবোর্ডিং বায়াসনেসের শিকার কম হবে। ভ্যারাইটি ও ডাইভারসিটি বাড়বে। আপনার সিলেকশনের এক্সেলেন্স বাড়বে। কোরাম ও ফোরামের অপছায়া আপনার প্রতিষ্ঠানে কমে যাবে। আপনি রেফারেলের সুবিধাও এনজয় করলেন, আবার মুক্ত আকাশ হতে সোর্সিং চালু রেখে প্রতিযোগিতা ও স্বচ্ছতার ক্যাপিটালাইজেশনও করলেন।

আবারও বলি। আমি থার্ড পার্টি হেড হান্টিং সার্ভিস, বা রেফারেল এর একদমই বিরোধী নই। আগেই বলেছি, ওই পন্থার অবশ্যই বাস্তবতা ও এ্যডভানটেজ রয়েছে। লাভ না থাকলে কেন একটি প্রতিষ্ঠান বাড়তি পয়সা খরচ করে তার HR এর কাজ বাইরের কাউকে দিয়ে করাবে? লাভ অবশ্যই হয়।

কিন্তু, আমি বলছি সেই লাভের ট্রেড অফের কথা। বলছি, সেই ট্রেড অফ জানা এবং জেনে এই বিকল্প পছন্দটিকে আরও কার্যকর, নৈতিক, সুদক্ষভাবে কাজে লাগাবার সুযোগ ও পন্থা নিয়ে।

আপনার হেড সোর্সিংকে আপনি এ্যবসলুটলি রেফারেল বা থার্ড পার্টি বেজড করে না ফেলে আপনি এটিকে মিশ্র রাখুন। তাতে আপনার লাভ বেশি বলে আমি মনে করি। কর্মসংস্থান সবসময় উন্মুক্ত থাকার সমর্থক আমি। ক্লোজ ডোর হেড হান্টিং বা হায়ারিং অনেক অনেক আঁধার নিয়ে আসে। তাকে ঘরে ঢুকতে দিলে আপনারই লস।

দ্বার উন্মুক্ত রাখুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:২৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×