কিছু দূর যাওয়ার পর আমি আর রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। আশেপাশে কেউই নেই যে, যাকে জিজ্ঞেস করবো ফিরে যাওয়ার রাস্তাটা কোনদিকে। সামান্য ভয় ভয় লাগছিল। তারপরও সাহস করে সামনে এগিয়ে গেলাম।
সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরই দেখি তনু দাঁড়িয়ে কান্না করছে। আমি কাছে যেতেই,
‘তোমরা আমার ধর্ষণের বিচার করলে না......’
তার গলায় কোনো খেদ নেই, শুধু আবেগ জড়ানো গলায় আমাকে জিজ্ঞেস করেছে।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। তাকে কি সান্তনা দেয়া উচিত হবে। আচ্ছা, কি বলে সান্তনা দিবো? যে তোমার বিচার হয়ে যাবে। তোমার ধর্ষণ ও হত্যাকারীরা শাস্তি পাবে। এতো বড় প্রহসন আমি কিভাবে করবো তার সাথে?
ভাবতে ভাবতেই তনু আমার সামনে থেকে চলে গেল।
দিনাজপুরের ইয়াসমিন আমার সামনে এসে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
‘পুলিশ আমাকে চিঁড়ে চিঁড়ে খেয়েছে। একা না, সাথে আরও দুইজন ছিল।’
ইয়াসমিনের কথা শুনে আমি হতবিহবল হয়ে পড়ি।
‘এরপর আমার লাশটা দিনাজপুর শহর থেকে দূরে রাস্তায় ফেলে এসেছে। অচ্ছুত ছিলো তো আমার শরীর!’
‘বিচার! থু। তোমাদের সবার চেহারা আমার চেনা আছে।’
আমার প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছিল ইয়াসমিনের কথা শুনে। কষ্টে কান চেপে ধরে বসে পড়ি।
একটু পরেই আমার কাঁধে আলতো হাতের স্পর্শ পায়। আমি মাথা তুলে দেখি রূপা দাঁড়িয়ে। হঠাৎ রূপাকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যায়।
‘ভয় পেয়ো না, আমি তোমাকে হত্যা করবো না।’
আমি স্বস্তি খুঁজে পায়।
‘আমার কি দোষ ছিল। আমি তো গরীব ঘরের মেয়ে। ছোট পোশাকও পড়ি না। আমার সাথে কেন এমন করলে? আমি তো তোমাদের কিছু করিনি। শুধু নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম।’
‘আমার বিচার হবে না। নাহ্?’
কোমল গলায় রূপা আমাকে এই কথাটা জিজ্ঞেস করে। ওর গলায় কোনো দুঃখ, কষ্ট নেই। কোনো ক্ষোভ পর্যন্ত নেই। শুধু আছে করুণা।
পুরুষ জাতির প্রতি করুণা। ধর্ষকের প্রতি করুণা।
আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। আমি নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারলাম না।
বিনয় দত্ত
লেখক, নাট্যকার ও গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]