somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাড়ি এবং নারী

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার শাশুড়ি একদম বাঙালি বেশভূষায় অভ্যস্ত। ঘরোয়া পরিবেশে কাজের সুবিধার জন্যে সালোয়ার কামিজ পড়লেও বাইরে গেলে সবসময়ই তিনি শাড়ি পড়ে বের হন। যদিও এখন শাড়ি পড়া নারীর সংখ্যা কমতে কমতে উধাও হওয়ার পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।
সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে আগ্রহের কারণে একটু দেরিতে হলেও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথিকৃৎ সংগঠন ছায়ানটের সাথে যুক্ত হয়ে নজরুল সঙ্গীতে তালিম নেয়া শুরু করেন এবং নিজের যোগ্যতা ও মেধার বলে প্রমাণ করেন তিনি কোনো অংশেই তরুণ-তরুণীদের চেয়ে কম যান না। সংসার, ধর্ম, কর্ম, সমাজ, সংস্কার সব সামলিয়ে তিনি প্রথম মান নিয়ে ছায়ানট থেকে নজরুল সঙ্গীতে কোর্স সম্পন্ন করেন। কোর্স শেষ করেই তিনি জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, উত্তরা শাখায় খুব দক্ষতার সাথে ছাত্রছাত্রীদের নজরুল সঙ্গীতে শেখানো শুরু করেন। গানের প্রতি তার আগ্রহ দেখার মতো। আমি দীর্ঘদিন দেখেছি যখনই কোনো বিশেষ কাজে বাইরে যান নিজের আলমারি থেকে সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো শাড়িটি বের করে তা পড়ে বের হন। এতে করে শাড়ির প্রতি তার যে প্রেম, দরদ তা বোঝা যেত।
প্রতিদিনের মতো গত বুধবার বিকেলও আমার তিনি শাড়ি পড়ে সুন্দর পরিপাটিভাবে সাজগোজ করে ক্লাস নেয়ার জন্য বের হন। সন্ধ্যার সময় আমি আর আমার স্ত্রী বের হচ্ছিলাম একটা কাজে। এরমধ্যে হঠাৎই ফোন আসে। ফোনের ওপার থেকে জানা যায়, তিনি ভয়ানক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। আমি আর আমার স্ত্রী তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। যাওয়ার পথে অনেক কিছুই ভাবছি। কি হতে পারে? কোনো অসতর্কতার কারণে হল কিনা? নাকি কোনো বড় গাড়ি এসে ধাক্কা দিল? বিভিন্ন দুঃশ্চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
আমি ধারণা করেছিলাম রিকশাসংক্রান্ত কোনো কারণে উনি হয়তো ভয়ানক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে সোহাগ নামের একজনের সাথে কথাও হয়েছে যিনি আমার শাশুড়িকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেছেন। আমরাও দ্রুত পৌঁছে যায়। পৌঁছে দেখি ততক্ষণে তাকে জরুরী বিভাগে রেখে ছোটখাট একটা অপারেশন করা হচ্ছে। সোহাগ অপেক্ষমাণ চেয়ারে বসে আছে। আমরা এগিয়ে তার সাথে কথা বললাম। পুরো ঘটনাটা তার মুখেই শুনলাম।



ক্লাস শেষ করে বের হয়ে তিনি রিকশাতে উঠতে গিয়েছেন। শাড়ি পরনে ছিলেন তিনি। এক পা দিয়েছেন এমন সময় বোকা রিকশাওয়ালা রিকশা টান দেয়। যাত্রী উঠেছে কি উঠেনি তা না দেখেই। টান দেওয়ার সাথে সাথে আমার শাশুড়ি শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে মুখ থুবড়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে যান। এমনভাবে পড়েছেন যে চোখের আশেপাশে সবজায়গায়ই প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছেন, ঠোঁট কেটে গিয়েছে, রক্তপাত হয়েছে।
সবচে বিপদজনক হল, মুখ থুবড়ে পড়েই তার ক্রমাগত রক্তপাত হচ্ছিল। রিকশাওয়ালা দাঁড়িয়েই ছিল! একটু ধরল না পর্যন্ত। সোহাগ দৌঁড়ে এসে আমার শাশুড়িকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সবশুনে আমি হতবাক হয়ে যায়। ওই সময় খুব একা মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল শূণ্যে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। যে মানুষটা দিনরাত এক করে একটা সংসার টিকিয়ে রেখেছেন তিনি এখন ভয়ানক দুর্ঘটনার শিকার। এই বয়সে খুবই বাজেভাবে আঘাত পেয়েছেন যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বোকা রিকশাওয়ালার চরম বোকামির কারণে এই বয়সে এসে এইরকম আহত হয়েছেন।
ঘটনাটি আসলে শাড়ির কারণে ঘটেনি, রিকশাওয়ালার চরম বোকামি এবং উদাসীনতার কারণে এইরকম ঘটনার শিকার হতে হয় আমাদের সবারই। এই ক্ষত সারতে আমার শাশুড়ির বেশ ভালো বেগ পেতে হয়েছে। এই ঘটনার পর কেউ যদি শাড়ির উপর রাগ করে শাড়ি ছেড়ে দেন তবে তার বোকামি।


বিনয় দত্ত
কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:৫১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×