somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের আঙ্গিনায় প্রথম ‘মকবুল ফিদা হুসেন’ প্রদর্শনী

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উপমহাদেশের প্রখ্যাত ও আলোচিত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন। তাঁর চিত্রকর্মের জন্য তিনি সারা পৃথিবীতে সম্মানিত হয়েছেন। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্ম ভূষণ, পদ্ম বিভূষণের মতো জাতীয় সম্মাননা। চল্লিশ দশকের শেষের দিকে এম. এফ. হুসেন বা মকবুল ফিদা হুসেন চিত্রশিল্পী হিসাবে প্রথম পরিচিতি লাভ করেন।



অল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সিনেমার পোস্টার আর ব্যানার আঁকা শুরু করলেও একটা সময় পরে তিনি নিজের অবস্থান বুঝতে পারেন। অনেকেই বলেন, সিনেমার ব্যানার আর পোস্টার আঁকতে আঁকতে তিনি হয়েছেন আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম প্রধান আইকন।



মাত্র দেড় বছর বয়সে এই শিল্পী তাঁর মা জয়নবকে হারান। মায়ের সাথে হুসেনের কোনো স্মৃতি তাঁর মনে নেই। মায়ের মুখটা যেহেতু তাঁর কাছে অস্পষ্ট তাই তিনি সারাজীবন মায়ের মুখ এবং স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করেছেন। তার প্রতিফলন পাওয়া যায় তাঁর চিত্রকর্মেও। মাদার তেরেসার সাথে শিশুর ভালোবাসার প্রগাঢ় বন্ধন ও স্নেহময়ী ছবি আঁকলেও তাতে মায়ের মুখের ছবি স্পষ্ট নয়।



এঁকেছেন ঘোড়া সিরিজ। হুসেনের এই ঘোড়াগুলোকে তিনি পুরুষ, নারীর মিলিত রূপ হিসেবে চিন্তা করেন। একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এইসব ঘোড়ার প্রথম দিকটা পুরুষ। ত্বেজী, দুরন্ত গতিতে ছুটে চলার প্রতীক আর পরের দিকটা নারী। শান্ত, সৌন্দর্য আর ভালোবাসার প্রতীক। হুসেনের ঘোড়া এতোই জনপ্রিয় যে, বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘লেডিস ভার্সেস রিকি বেহেল’-এ হুসেনের ঘোড়া চুরি করে নিয়ে যাওয়ার গল্প দেখানো হয়েছে।
আধুনিকতার পাশাপাশি হুসেন পৌরাণিক প্রেক্ষাপটেও চিত্রকর্ম এঁকেছেন। পৌরাণিক কাহিনী, রামায়ণ, মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে হুসেন নিজের কাল্পনিক ভাবনা দিয়ে আলাদা আলাদা চরিত্র রূপায়ণ করেছেন। অবশ্য হুসেন হিন্দু দেবীর নগ্ন রূপ এঁকে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছেন। এই বিতর্কের কারণে হুসেনকে নিজের জন্মস্থান ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়।



শুধু আঁকাআঁকিতেই তিনি থেমে থাকেননি। ১৯৬৭ সালে ‘থ্রু দ্য আইস অব আ পেইন্টার’ নামে ১৮ মিনিটের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রটি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বিয়ার পুরষ্কার পায়। নিজের চিত্রকর্ম মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে হুসেন নতুন এক রেকর্ডও গড়েন। মাত্র দশ রুপিতে ১৯৩৪ সালে তিনি নিজের চিত্রকর্ম বিক্রি করেন। আস্তে আস্তে নিজের মেধা দিয়ে তিনি নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যান যা সত্যিই মাইলফলক। আন্তর্জাতিক নিলামকারী সংস্থা ক্রিস্টির সহযোগিতায় হুসেনের চিত্রকর্ম ১.৬-২.০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। ভারতীয় শিল্পীর আঁকা ছবিও যে মিলিয়ন ডলার দামে বিক্রি হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন এম. এফ. হুসেন। সেই সময়ে তা ছিল সর্বোচ্চ দাম।
১৯৫০ সালে বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) হুসেনের প্রথম একক প্রদর্শনী হয়। তাঁর মৃত্যুর পরও বাংলাদেশের শিল্পমনা লোকজনকে হুসেনের শিল্পকর্ম দেখানোর উদ্দেশে গত জানুয়ারিতে উত্তরার গ্যালারি কায়ায় হুসেনের ৫৯টি চিত্রকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয়। ভারতের গণেশ প্রতাপ সিং ও বিনয় এম শেঠের সংগ্রহশালা থেকে কিংবদন্তি এই শিল্পীর চিত্রকর্মগুলো বাংলাদেশে প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে আসেন গ্যালারি কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী।



লেখাটির সংক্ষেপিত ও সংশোধিত রূপ প্রথম ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে আইস টুডে’এর এই লিংকে প্রকাশিত হয়।
এইখানে লেখাটির পূর্ণ রূপ প্রকাশ পেল।
http://icetoday.net/2018/01/বাংলাদেশের-আঙ্গিনায়-প্রথ/



বিনয় দত্ত
সাহিত্যিক, নাট্যকার ও গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৩৯
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×