উনার নাম সমর চৌধুরী। বয়স ৬৫। স্থায়ী আবাস চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ সারোয়াতলীতে হলেও চট্টগ্রামের নন্দনকাননের গোলাপ সিং লেইনে উনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। একই এলাকায় আমরাও বসবাস করতাম। আমাদের ছিল যৌথ পরিবার। যৌথপরিবার হওয়ার কারণে আমার ছোট কাকা পরমেশ চন্দ্র দত্তের সাথে সমর বাবু নিয়মিত আড্ডা দিতেন, সুখ-দুঃখের আলাপ করতেন। তখনই জেনেছিলাম সমর বাবুর ভাইয়ের সাথে তার জমিজমা নিয়ে ব্যক্তিগত বিরোধ আছে। এই বিরোধ আজকের নয়, দীর্ঘদিনের।
এলএলবি পাস করে সমর বাবু আগে একটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম জজকোর্টে আইনজীবীর কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম জজকোর্টে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। তার দুই সন্তান। অলকানন্দা চৌধুরী (মনি), তমালিকা চৌধুরী (তমা)।
নন্দনকাননে জলসিঁড়ি খেলাঘর আসর নামের একটি সংগঠন ছিল। সেই সংগঠন অনুষ্ঠানের আগে একেক সময় একেকজনের বাড়িতে নিয়মিত রিহার্সেল করতো। একবার রিহার্সেলের রুমের সংকট দেখা দিল প্রকট। তখন সংগঠনের অন্যতম প্রধান সংগঠক দেবাশীষ সেন দেবু সমর বাবুর সাথে কথা বলে তার বাসায় নিয়মিত রিহার্সেলের আয়োজন করে। সকল বাচ্চারা তার বাসায় চলে আসতো।
সমর বাবুর বড় সন্তান অলকানন্দা চৌধুরীকে আমরা মনি নামে ডাকতাম। মনি খুব ভালো গান গাইতো এবং হারমোনিয়াম বাজাতো। একটা সময় পরে মনি জলসিঁড়ি খেলাঘর আসরে লিড দিতো। আর মনির ছোট বোন তমা সমর বাবুর জ্ঞাতার্থে জলসিঁড়ি খেলাঘর আসরে গান করতো। কখনো কখনো এমনও হয়েছে সমর বাবুর স্ত্রী অসুস্থ কিন্তু জলসিঁড়ি খেলাঘর আসরের রিহার্সেল তো করতেই হবে। সামনে অনুষ্ঠান। কি করা, অগত্যা রিহার্সেল শুরু। পাশের রুমে সমর বাবুর স্ত্রী অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে আছেন আর এই রুমে রিহার্সেল করছি। তার মেয়ে মনি হারমোনিয়াম লিড দিয়ে সবার গান তুলে দিচ্ছে।
মাঝে মাঝে বাচ্চাদের চিৎকার-চেঁচামেচি তুমুল হয়ে উঠত। বাচ্চাদের সাথে তাদের অভিভাবকও আসতো। তারা সবাই সমর বাবুর বাসায় বসতেন। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে জলসিঁড়ি খেলাঘর আসরের সবাইকে নাস্তাও করিয়েছেন সমর বাবুর স্ত্রী। কম যন্ত্রণা সহ্য করেনি এই পরিবার। সংস্কৃতিমনা দেখেই এই পরিবারের কর্তা হিসেবে এইসব সহ্য করেছেন। শুধু তাই নয়, নন্দনকাননে যেকোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলন বা মানববন্ধনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। ধর্মীয় কোনো সভা-সমিতি বা অনুষ্ঠানে ভূমিকা রেখেছেন অন্যদশজনের চেয়ে আলাদাভাবে।
আজ এইসব স্মৃতি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে, যখন দেখি বোয়ালখালীর পুলিশ সমর বাবুকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে মামলার আসামী করেছে। আমি কখনো সমর বাবুকে ধূমপান করতে দেখিনি। আর কপালের ফেরে তিনি পুলিশের খাতায় ইয়াবা ব্যবসায়ী।
আমার প্রশ্ন হল, যে লোক সারাজীবন সংস্কৃতিমনা হয়ে পরোক্ষভাবে সাংস্কৃতিক সংগঠনের পিছনে কাজ করে গিয়েছেন, এলাকার সুযোগ-সুবিধা দেখেছেন, আইনজীবী হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করেছেন তিনি হঠাৎ করে পুলিশের খাতায় ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়ে যায়? ৬৫ বছর বয়সের সময় বাবু পুলিশের খাতায় কিভাবে ৫৩ বছর হয়?
ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে তিনি এখন পুলিশের ইয়াবা ব্যবসায়ী, পুলিশ তার সাথে অস্ত্রও পেয়েছে। আমি এই তথ্য বিশ্বাস করিনা। তাকে পরিকল্পিতভাবে জড়ানো হয়েছে এইটা আমার পূর্ণ বিশ্বাস। আমি তার প্রতিবেশী হিসেবে তার মুক্তি চাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৪৯