যখনই নেটে ইউরোপের সুন্দরতম দেশগুলোর র্যাংক দেখি, তার মধ্যে স্কটল্যান্ড এর নাম থাকেই। অনেকদিন থেকেই ভাবি যাবো। কিন্তু সময় হয় না। আবার আমার যখন সময় হয়, তখন সংগী-সাথীদের সময় হয় না। একা একা যেতেও ইচ্ছা করে না। তো শেষ পর্যন্ত যাওয়া হলো।
গাড়ী ভাড়া করা, বিভিন্ন যায়গার হোটেল ভাড়া করা, দর্শণীয় জায়গাতে যেখানে যেখানে টিকেট লাগবে তা করা, রুট প্ল্যান - সবকিছুই করা হলো একে একে। ঠিক হলো প্রথমে আমরা স্কটল্যান্ড এর রাজধানী এডিনবরাতে যাবো, ঘোরাঘুরি এবং রাএিযাপন এডিনবরাতেই। রাত ৩টায় যাএা শুরু যাতে করে পুরা দিনটা কাজে লাগাতে পারি। সবাইকে বলে দেয়া হলো সকাল সকাল ঘুমিয়ে পরার জন্য, বিশেষ করে আমাকে এবং বিশ্বকে, কারন আমরা দু’জন হলাম এই ট্রিপের ড্রাইভার!
প্রায় ৪০০ মাইল রাস্তা, ৮ ঘন্টামতো ড্রাইভ। টেনশানে রাতে শান্তিমতো ঘুমাতে পারলাম না। টেনশানের কারন হচ্ছে বিশ্ব। জন্মের অলস, আর ঘুমাতে খুব পছন্দ করে। আমি নিশ্চিত যখন ওর চালানোর সময় হবে তখন কিছুক্ষন পরেই বলবে, ভাই আর পারি না, একটু রেস্ট নিতেই হবে। আর এমন কথা কেউ বললে তার উপর এ’কয়জন মানুষের জানের দায়িত্ব দেয়া যায় না।
যাই হোক, ভালোয় ভালোয় বেলা ১১:৩০ এর দিকে এডিনবরায় আমাদের হোটেলে এসে পৌছলাম। সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে গেলাম এডিনবরা ক্যাস্ ল দেখতে। লক্ষ লক্ষ বছর আগে শীতল হওয়া একটা আগ্নেয় পাহাড়ের উপর এই দূর্গটা তৈরি করা হয়। ১২ শতাব্দীতে তৈরি করা এই দূর্গকে ঘিরেই শহরটা গড়ে উঠেছে।
দূর্গে ঢোকার পথ
দূর্গে ১৮৬১ সাল থেকে প্রতিদিন দুপুর ১টার সময় তোপধ্বনি করা হয়। আগে জাহাজগুলো এই শব্দে তাদের সময় ঠিক করতো, এখন টুরিষ্টরা হাত তালি দেয়।
দূর্গের ভিতরে মিউজিয়াম: নমুনা রাজ-অভিষেক
দূর্গের ভিতরে ঘোড়সওয়ার
দূর্গ থেকে শহর দেখা
রয়্যাল প্যালেস আর গ্রেট হল ও দেখার মতো। দেখতে দেখতে কখন যে বেলা গড়িয়ে গেল টেরই পেলাম না। দূর্গ থেকে আমাদেরকে বের করলো ক্ষুধা। ভেতো বাংগালী, কাজেই ভাতের ক্ষুধা। খুঁজে খুঁজে ঠিকই ভাতের হোটেল বের করলাম। খেয়ে-দেয়ে দেখি আর নড়তে পারি না। সুতরাং বিশ্রাম।
বিকালে বের হলাম হলিরুড পার্কে ঘুরতে। বিশাল পার্ক, তবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য আর্থার’স সিট (Arthur's Seat) দেখা। এটাও একটা মৃত আগ্নেয়গিরি। কিং আর্থার এর নামে নাম কিন্তু ’সিট’ কেনো তা আতিপাতি করে খুজেও কোথাও পেলাম না। এটার পিকে উঠলে ৩৪১-৩৩৫ মিলিয়ন বছর আগের আগ্নেয়শিলা দেখা যায়। সবাইকে একে একে অনুরোধ করলাম আমার সাথে পিকে উঠার জন্য, কিন্তু কেউই রাজি হলো না। সবারই এক কথা, ”পাথ্থর দেখনের জন্য কষ্ট কইরা এত উপরে উঠুম না”। সবার আগ্রহ লেকের ধারে মিনি পিকনিক করার দিকে। শেষে রাগ করে আমি একাই রওয়ানা দিলাম। অনেকেই উঠছে। আসলে এটা একটা জনপ্রিয় হিল-ওয়াক স্পট। তবে কষ্ট করে উঠাতে জীবন সার্থক। গাধাগুলা জানলোও না কি মিস করলো।
হিল হাইকিং
চুড়া থেকে নেয়া। গাধাগুলা নিচের ওই লেকের ধারে। উপর থেকে ফোন করেছিলাম, কিন্তু আমাকে খুঁজে পায়নি।
নামার সময় এক ঝলক সেইন্ট এন্থনির চ্যাপেল এর ধ্বংসাবশেষ দেখে নিলাম।
স্কটল্যান্ডের রাজধানীতে আসলাম আর এদের অলিখিত জাতীয় খাবার ’ফিস এন্ড চিপ্স’ খাবো না তা কি করে হয়? অতঃপর ’ফিস এন্ড চিপ্স’ ডিনার। এরপর পোর্টোবেল্লো বীচে গিয়ে তুমুল আড্ডাবাজি করে হোটেলে ফিরলাম। তারপর সোজা বিছানায়। পরের দিনের জন্য শরীরটাকে তৈরি করতে হবে না?
(প্রথম ছবিটাই শুধু নেট থেকে নেয়া, বাকি সব আমার ক্যামেরার)
চলবে.................................
অপরুপ স্কটল্যান্ড - ২
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৯:০২