somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরুপ স্কটল্যান্ড - ২

২৩ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপরুপ স্কটল্যান্ড - ১

সকাল সকাল দরজায় হঠাৎ ধমাধম বাড়ি, লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। হতভম্ব হয়ে চারদিকে তাকিয়ে প্রথমেই মাথায় এলো, এ আমি কোথায়? দ্বিতীয়বারের দরজা পিটানোতে মনে এলো আমিতো স্কটল্যান্ডে, হোটেলে। নেমে দরজা খুললাম, মিজান চোখ গোল গোল করে দাড়িয়ে। বললো, ভাই, অরিফকে এক কাউলা...বলে একটু থেমে ভয়ে ভয়ে চারদিকে তাকিয়ে বললো, কালো মেয়ে থাপ্পড় মেরেছে। ও খুব আপসেট, এখুনি চলে যেতে চাচ্ছে। আমি বললাম, যেতে চাইলে যাবে, তবে সবাই নামি, নাস্তা-টাস্তা করি। ততক্ষন পর্যন্ত ওকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে থাকতে বল।

ঘটনা হলো, সকালে ওরা দু’জন হাটতে বেড়িয়েছিল। উদ্দেশ্য, একটু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ধুমপান উপভোগ করা। ফেরার পথে পাশ দিয়ে দু’টা কালো মেয়ে যাচ্ছিল, দেখে অরিফ দাঁত বের করে ওদের দিকে তাকিয়ে বলেছে, দ্যাখ, কাউলায় দুনিয়াটা ভরে যাচ্ছে। ওরা ক্রস করে যাওয়ার পর এক্সকিউজ মি শুনে দাড়িয়েছিল। তো দুজনের মধ্যে মোটা মেয়েটা হোয়াট ডিড য়্যু সে? বলেই থাপ্পড় মেরেছে।

আসলে বৃটিশ-বর্ন অনেক কালো ছেলে-মেয়েই মানে জানুক আর না জানুক শব্দটা যে তুচ্ছার্থে ব্যবহার করা হয়, এটা জানে। অরিফ ছেলেটা নতুন এসেছে, এসব জানে না। ওকে বোঝালাম এসব বর্ণবাদী মন্তব্য না করতে। বিশ্ব বএিশ পাটি দাঁত বের করে বললো, অরিফের তো নাস্তা করা লাগবে না, পেট ভরা। চোখের ইশারায় ওকে ধমক দিলাম এসব মশকরা না করার জন্য। বেচারার এমনিতেই মন খারাপ!

আজ আমরা যাবো ইনভার্নেসের ড্রামনাদ্রোচিট নামের একটা গ্রামে। মূল উদ্দেশ্য ’লক্ নেস’ দেখা। এটি স্কটল্যান্ডের প্রায় বএিশ হাজার লেকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত। স্কটিশ ভাষায় লেক হচ্ছে ’লক্’। আর ’নেস’ হচ্ছে একটা বিশাল কাল্পনিক সরিসৃপ জাতীয় প্রাণী, এই লেক হলো যার আবাসস্থল। এই নেস বা নেসি ’লকনেস মনস্টার’ নামে বিখ্যাত। এটা নিয়ে বিতর্ক অনেকটা ভিনগ্রহের মানুষ নিয়ে বিতর্কের মতো। অতীতে অনেকেই এই দৈত্যকে দেখার দাবি করেছে, ছবিও তুলেছে। সরকারী এবং বেসরকারী ভাবে অনেক অনুসন্ধান এবং গবেষণাও হয়েছে কিন্তু ফলাফল শুন্য। মিথ মিথই রয়ে গিয়েছে, মাঝখানে পুরোটাই স্কটিশ পর্যটনশিল্পের লাভ।

বিখ্যাত লক্ নেস



লক নেস মনস্টার 'নেসি' এর ভাষ্কর্য



বেলা ১১টার দিকে ড্রামনাদ্রোচিটে আমাদের হোটেলে চেক-ইন করলাম। এটা আসলে একটা বাড়ী। সামারে ৪টা রুম পর্যটকদেরকে ভাড়া দেয়, ব্রেকফাস্টসহ। এখানে বলে ’বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট’। ভালোই ইনকাম।

আমাদের নৌ-বিহারের বুকিং করাই ছিল, বুকিংয়ের কাগজ দেখিয়ে টিকেট নিলাম। মিজান যাএার ২/৩ দিন আগেই আমাকে বলেছিল, ভাই, আমি সব জায়গায় যাবো শুধু নৌবিহার বাদে। আমি বললাম, কেনো? ও বললো, বুঝেনইতো, বাবা-মায়ের একমাএ ছেলে, এত শখ কইরা ইংল্যান্ডে পাঠাইছে পড়তে। বিয়া-শাদীও করি নাই। এখন যদি মইরা-টইরা যাই....। আমি বললাম মরবি কেনো? ও বললো, পানিতে নাকি দৈত্য-ফৈত্য আছে। প্লিজ আপনে একটু সবাইরে ম্যানেজ কইরেন। আমি হাসি চেপে বললাম, আচছা ঠিকাছে। সবাইকে বলা ছিল নৌবিহারের আগে যেন ওকে কিছু বলা না হয়, ভয়ে যাওয়া ক্যানসেলও করে দিতে পারে। তো এবার সবাই ওকে চেপে ধরলো, আমরা সবাই মারা যাবো আর তুই একা বেচে থাকবি এটা হতে পারে না। তোকেও আমাদের সাথে মরতে হবে। মিজান করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি না দেখার ভান করে একটা সিগারেট ধরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। প্রথমদিকে একটু ভয়ে ভয়ে থাকলেও এই পুরা নৌ-বিহারে ওই সবচেয়ে বেশী মজা করলো। বোট থেকে নামার সময় বললো, থ্যাংক্যু ভাই, না গেলে বিরাট মিস করতাম।

লেকের অনাবিল সৌন্দর্যের আরও ছবি





লেক থেকে উরকুহার্ট দূর্গের ভগ্নাবশেষের ছবি



দুপুরে জোড়াতালির লান্চ হলো। একটু বিশ্রাম নিয়ে আধাঘন্টা ড্রাইভ দুরত্বে চার হাজার বছরের পুরানো একটা সমাধিক্ষেএ দেখতে গেলাম। একেবারেই নির্জন জংগুলে রাস্তা। এতটাই নির্জন যে একবার মনে হলো ঠিক রাস্তায় যাচ্ছি তো! কিন্তু স্যাটন্যাভ দেখাচ্ছে আমরা ঠিক রাস্তায়ই যাচ্ছি। স্যাটন্যাভ এক জায়গাতে এসে জানালো যে, তোমরা জায়গামতো পৌছে গিয়েছ, কিন্তু কিছুই দেখছি না। কয়েকটা ভেড়া ছাড়া আশে পাশে একটা মানুষ নাই যে জিগ্গেস করবো। যাই হোক, একটু ঝামেলা হলেও শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেয়েছিলাম।




তৈরীর সময় এখানে ছাদ ছিল



সমাধিক্ষেএতে ঢোকার পথ



দুপুরে হাবিজাবি খেয়ে কারোরই ঠিকমতো ক্ষুধা মিটে নাই। সবার মত হলো রাতে দেশি স্টাইলে ভাত না খেলে চলবে না। কিন্তু এই অজ-পাড়াগায়ে কি সেটা সম্ভব? হোটেল কাম বাড়ীর মালিকও পরিস্কার কিছু বলতে পারলো না। শেষ ভরসা ইন্টারনেট। সবচেয়ে কাছের বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টটাও ৪০ মিনিটের ড্রাইভ। তাই সই, ভাত বলে কথা। ভরপেটে ফিরতে ফিরতে রাত ৯:৩০। বলা ছিলো রাত ৯ টার মধ্যে ফিরতে হবে। ব্যাটাকে একটু অসন্তুষ্ট মনে হলো। কি আর করা, স্যরি টরি বলে যার যার রুমে ঢুকে গেলাম।

রেষ্টুরেন্টে যাওয়ার পথের পুরোটাই এমন সুন্দর



২য় দিনের এখানেই সমাপ্তি। ৩য় অর্থাৎ শেষদিনের বর্ননা নিয়ে ফিরবো যত দ্রুত পারি। ততদিন পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। অগ্রিম ঈদ মোবারক সবাইকে।

অপরুপ স্কটল্যান্ড - ৩
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৯:০৮
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×