somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লকের কবলে ভুয়া মফিজ!!!

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গত ২৭ শে আগস্ট, শুক্রবার; বিকাল ৭ ঘটিকা।

অফিস থেকে বাসায় এসে বসে বসে ভাবছি….কি করা যায়। মন টানছে ল্যাপটপের দিকে, অন্য কথায় ব্লগের দিকে। বার কয়েক লোভাতুর দৃষ্টিতে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েছি; তবে লজিক সাবধান করার সুরে বলছে, খবরদার, ল্যাপটপে হাত দিও না। কিছু জরুরী কেনাকাটার জন্য তোমার এখনই স্টোরে যাওয়া উচিত। বউ একটা লম্বা লিস্ট সকালেই ধরিয়ে দিয়েছিল। অলস মানুষদের যা হয়, তখন ভেবেছিলাম অফিস থেকে ফেরার সময়ে শপিং সেরে একেবারে ফিরবো। অফিস শেষে ভাবলাম, টায়ার্ড লাগছে; আগে বাসায় যাই, রেস্ট টেস্ট নিয়ে বের হবো। আর এখন ভাবছি, কিছুক্ষণ ব্লগর ব্লগর তো করি, তারপরে যাওয়া যাবেক্ষন!

তবে, এটাও বিলক্ষণ বুঝতে পারছি, এখন ল্যাপটপ নিয়ে বসলে বাসায় কুরুক্ষেত্র বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জল! বউ এখনো কিছু বলে নাই ঠিকই, তবে তাতে পুলকিত বোধ করার কিছু নাই। ইতোমধ্যে কয়েকবার আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। অগ্নিদৃষ্টি অগ্নিবৃষ্টিতে রুপান্তর সময়ের ব্যাপার মাত্র। কথায় আছে, বাঘে ছু'লে আঠারো ঘা আর পুলিশে ছু'লে ছত্রিশ ঘা। ইদানীং বলা হয়ে থাকে, র‍্যাবে ছু'লে নাকি বাহাত্তর ঘা! বউ ছু'লে কত ঘা, কোথাও বলা নাই….তবে সেটা যে বাহাত্তর ঘা এর চেয়ে অনেক বেশী হবে তা বলাই বাহুল্য! কতোটা বেশী হবে, সেটা ভুক্তভোগীরা ভালোই জানেন; আমার অনুমান কিংবা আয়োজন করে বলার কিছু নাই।

ঘটনা হলো, আগামীকাল আমার শ্যালক তার আম্মাকে, অর্থাৎ আমার মহামান্য শ্বাশুড়িকে নিয়ে বাসায় আসবে। তাদের বেড়ানোর প্ল্যান প্রায় মাসখানেকের। আমার বউয়ের 'মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল' অবস্থা। সে বাসার মধ্যে রীতিমতো ছুটাছুটি করছে। কেন ছুটাছুটি করছে বা কাজের কাজ কতোটুকু করছে জানিনা; তবে যে কেউ দেখলে বুঝবে, ওর দম ফেলারও সময় নাই। যে মানুষটাকে একটা কাজের কথা বললে সহজে নড়ে না; তাকেই এখন দেখছি এইখানে, পরমুহুর্তে ওইখানে, আর তার পরপরই দেখি ভোজবাজীর মতো সেখানেও নাই! যেন, যাদুর কোন মুভির চরিত্র।

হঠাৎ দেখি, দু'হাতে দু'কাপ চা নিয়ে সে রুমে ঢুকছে। এখানে বলে রাখা ভালো, চায়ের নেশা আমার প্রচন্ড। আমি যখন-তখন চা খাই, এমনকি সুযোগ পেলে ঘুমানোর আগে কিংবা ঘুমে ঢলে পরতে পরতেও খাই। তুলনায় ও প্রায় খায়-ই না বলতে গেলে। আর আমার সাথে বসে চা খাওয়ার মানেই বলা যেতে পারে, আমার জন্য একটা সতর্কবার্তা। অর্থাৎ এটা কোন বড় ধরনের পরিকল্পনার অংশ। এবং সেটা যে কোনভাবেই আমার জন্য ভালো কিছু না, তা আমি খুব ভালো করেই জানি। কাজে কাজেই, ওর হাতে দু‘কাপ চা দেখে আমি নড়েচড়ে বসলাম। এমন ধরনের ঘটনা ঘটে কদাচিৎ, এবং যখন ঘটে, আমি প্রানপনে চেহারায় একটা নিস্পৃহ ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি; কিন্তু ভিতরে ভিতরে সতর্ক হয়ে উঠি।

যাই হোক, ওকে ঢুকতে দেখে চোখ সরু করে বললাম, ঘটনা কি? তুমি আমার সাথে বসে চা খাবা নাকি?

ও বললো, কেন? কোথাও লেখা আছে যে তোমার সাথে বসে চা খাওয়া যাবে না?

উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন শুনে আর কথা বাড়ালাম না। নিরীহ ভঙ্গিতে কাপটা হাতে নিলাম।

দু‘জন চুপচাপ বসে চা খাচ্ছি। আমি ওর মতলবটা বোঝার চেষ্টা করছি, আর ও সম্ভবতঃ আক্রমনটাকে কিভাবে ধারালো করা যায় সেটার কৌশলগত দিক ঠিক করছে।

হঠাৎ বললো, তোমার কিসে কিসে নেশা আছে বলতো?

আমি বললাম, এটা তো তোমার জানাই আছে। ঘটা করে জিজ্ঞেস করার কি হলো?

আহা বলোই না! তারপরে চোখ নাচিয়ে বললো, তোমার সব গোপন কথা কি আর তুমি আমাকে বলো! লোকমুখে কত কথাই তো শুনতে হয়।

ওর এই কথার উপরেই অন্য সময় হলে তুমুল তর্কযুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি, এটা তবলার টুকটাক। আসল ঢোলের বাড়ি এখনো পরে নাই। আর সেটা যে কি এখনও ধরতে পারছি না। তাই ধৈর্য ধরে বললাম, এই তো…..সিগারেটে নেশা আছে। ভাবলাম শ্বাশুড়ির আগমন উপলক্ষে সিগারেট নিয়েই সম্ভবতঃ কোন ওয়াজ-নসিহত করবে। গুরুজন কেউ বাসায় থাকলে যখন-তখন সিগারেট খাওয়া উচিত না জাতীয় কোন ইতং বিতং কথা আর কি!

কিন্তু না, আমাকে পুরাপুরি ভড়কে দিয়ে বললো, কেন? ব্লগে যখন-তখন বসে যাও। একবার বসলে আর উঠতে চাও না। খাওয়া-দাওয়া কিংবা জরুরী কাজ পর্যন্ত ভুলে যাও কিংবা জমিয়ে রাখো। এটা কিসের লক্ষণ?

এর সাথে নেশার সম্পর্ক কি?

মুচকি হাসি দিয়ে বললো, অবশ্যই সম্পর্ক আছে; সব নেশাখোর এমনটাই বলে। নেশার কথা প্রথম প্রথম স্বীকার করতে চায় না। আবজাব কথা বলে এড়িয়ে যেতে চায়। স্বীকার করো যে, ব্লগিং করা এখন তোমার অন্যতম নেশা!

আমি আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। বললাম, আচ্ছা যাও। ব্লগিং আমার নেশা। এখন ভং চং বাদ দিয়ে যা বলতে চাও, সরাসরি পরিস্কার ভাষায় বলো। আমাকে এখন তোমার লিস্টের কেনাকাটার জন্য বের হতে হবে।

ওকে, বলছি। ওর সিরিয়াস চেহারা দেখে আমিও সিরিয়াস হলাম। বললো, কাল মা আসছে। উনি তো তোমার এ'সব নেশার কথা জানে না, জানে যে তুমি একজন অত্যন্ত দায়িত্বশীল গৃহকর্তা!!! সুতরাং তোমার কাছে আমার চাওয়া হলো, মা যে কটা দিন থাকবে, তুমি ব্লগ থেকে দুরে থাকবা। উনাকে সময় দিবা। যেহেতু একবার বসলে তুমি সহজে উঠতে চাও না, তাই সবচেয়ে ভালো হবে ব্লগে লগ-ইন না করা। তাছাড়া, এটা যে তোমার নেশা না, সেটা প্রমান করার এটাই সবচেয়ে মোক্ষম সুযোগ। তোমার কোন একটা অনুরোধ রক্ষা করা যেমন আমার পবিত্র দায়িত্ব, তেমনি আমার অনুরোধ রক্ষা করাও তোমার পবিত্রতম দায়িত্ব। নাকি ভুল বললাম?

শেষের দিকের কথাগুলো যে ভবিষ্যতের জন্য পরিস্কার হুমকি, সেটা বুঝতে আমার কোন অসুবিধাই হলো না। বললাম, ওকে। লেট মি থিঙ্ক। আমি এখন বাজার করতে যাচ্ছি। এসে তোমাকে আমার সিদ্ধান্ত জানাবো।

বললো, ঠিক আছে। তাড়াহুড়ার কিছু নাই, টেইক ইওর টাইম। তবে, আমি চাই আমার হাজব্যান্ড যেন এই চ্যালেন্জটা জিতে যায়। আমি জানি, তুমি আমাকে কখনও নিরাশ করবা না।

ওর তেলমার্কা কথায় কান না দিয়ে চিন্তিত ভাবে ঘর থেকে বের হলাম। টানা প্রায় একমাস ব্লগিং না করা বর্তমানে আসলেই আমার জন্য কঠিন একটা ব্যাপার। শপিং করতে করতে বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং চেক আউটে পেমেন্ট করতে গিয়ে স্মরণকালের মধ্যে প্রথম ভুল পিন নাম্বার প্রেস করলাম। চেক আউটের মেয়েটা বললো, তুমি কি কোন কারনে ডিস্টার্বড? আমি বললাম, হ্যা, আমার বউ একটা ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। তুমি তো জানোই বউ'রা কেমন হয়, জানো না? মেয়েটা বললো, আমি কিন্তু বিবাহিত! আমি ওকে একটা মধুর হাসি দিয়ে বললাম, জানি, সেজন্যেই তো তুমি ব্যাপারটা আরো ভালো জানবে!

যাই হোক, বাসায় আসতে আসতে এমন পরিস্থিতিতে আমার জায়গায় ওকে, আর ওর জায়গায় আমাকে বসিয়ে ভাবলাম; তাছাড়া, ওর হুমকিটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমার এই এক জীবনে অনেক বাঘকে দেখেছি বউয়ের সামনে একেবারে বিড়াল হয়ে হুঙ্কার টুঙ্কার ভুলে মিউ মিউ করতে। সেখানে আমি তো একজন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হরিপদ পাল! তবে নিজের ভালো নাকি পাগলেও বোঝে। কাজেই সিদ্ধান্ত নিলাম, কষ্ট করে হলেও এ‘কটা দিন ব্লগ থেকে দুরেই থাকবো।

বগা যখন ফান্দে…...তখন কান্দা ছাড়া উপায় কি??
( চাইলে বগা'র স্থানে ভুয়া মফিজ পড়তে পারেন ) :(


ফটোক্রেডিট: গুগল।


পুনশ্চঃ - আমার পোষ্টে কেউ মন্তব্য করলে আমার চেষ্টা থাকে যতোদ্রুত সম্ভব তার প্রতিমন্তব্য করার। এটা না করলে শান্তি পাই না; কারন, এই না করাটা আমার কাছে প্রোপার ম্যানারের অভাব বলে মনে হয়। আর আমি ''ম্যানারহীন ব্লগার'' হিসাবে পরিচিত হতে চাই না। কিন্তু এই আপদকালীন সময়ে লগ-ইন না করার ফলে ব্লগার পদাতিক চৌধুরি, নীল আকাশ, মুক্তানীল, শায়মা, আমি তুমি আমরা এবং সোহানী; এ'কজনের ক্ষেত্রে করতে পারি নাই। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আশা করছি, আমার ব্লগে অনুপস্থিতির কারনটা আপনারা ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছেন।
মেনি মেনি থ্যাঙ্কস ফর ইয়োর কন্টিনিউয়াস সাপোর্ট!!! :)

আর সবার প্রতি একটা বিশেষ অনুরোধ। আমি গত একমাস ধরে একটা গান খুজছি, পাচ্ছি না। এলবামের নাম সম্ভবতঃ 'নেশা' কিংবা এমন কিছু একটা ছিল। গানের কথাগুলো এমন (অনেক আগের স্মৃতি থেকে যতোটা মনে করতে পারছি, ভুল থাকতে পারে),

তিলে তিলে কেন ক্ষয়ে যাবে তুমি
কেন কালনাগিনীর বিষের পেয়ালা চুমি।
এই বিষের জ্বালা তুমি জ্বেলেছো যে রক্তের মাঝে
সেই রক্তের কাছে জেনো, রয়েছো চির ঋণী।


কারো জানা থাকলে, জানাবেন; কিংবা লিঙ্ক দিতে পারলে, দিবেন...প্লিজ!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২১
৪২টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×