somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনগুলি মোর সোনার খাচায়…….!!!

১৩ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত দুই তারিখের কথা। আমার সর্বশেষ পোষ্টের বেশ কয়েকটা মন্তব্যের উত্তর দিতে হবে। লগ ইন করলাম। উত্তর দেয়া শুরু করার আগে ভাবলাম অন্যান্য পোষ্টে একটু চোখ বুলাই। তো এক সন্মানীত কথা সাহিত্যিকের একটা পোষ্টে মন্তব্য করলাম। পরিতাপের বিষয়, কথা সাহিত্যিক মহোদয় আমার মন্তব্যের স্যাটিরিক টোনটা ধরতে পারলেন বলে মনে হলো না। আমাকে প্রত্যুত্তর না দিয়ে স্কীপ করে পরের মন্তব্যের উত্তর দিলেন। দেখে মনে কেমন একটা কু-ডাক দিলো। মনের অজান্তে কি উনার মনে দুঃখ দিয়ে ফেললাম? কবি-সাহিত্যিকদের কোমল মন! সেই মনে দুঃখ দিলে অভিশাপ লাগতে বাধ্য! বিভিন্ন লেখা পড়ছি, হঠাৎ পৃথিবীটা কেমন যেন ‍দুলে উঠলো। ভাবলাম, যাক গে উত্তর পরে দিলেও হবে; বরং একটু রেস্ট নেয়া যাক। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙ্গলো প্রচন্ড কাশির দমকে। কাশতে কাশতে মনে হলো ফুসফুস তো ফুসফুস, পাকস্থলি শুদ্ধো বের হয়ে আসবে। গত দু'দিন ধরেই শরীরটা কেমন জানি ম্যাজ ম্যাজ করছিলো; সাথে হাল্কা জ্বর। এবার জ্বর আসলো একেবারে শরীর-মন সব কাপিয়ে। দু'দিন ধরে কাশতে কাশতে বুক-পিঠে ব্যথা ধরে গেল। শুনেছি শিয়াল নাকি প্রহরে প্রহরে ডাকে, আমার কাশির কোন প্রহর থাকলো না। যখন-তখন খুকুর-খুক!! সেই সাথে সারা শরীরও ব্যথা, সিগারেটে কোন স্বাদ পাই না। মাথার ওজন মনখানেক বেড়ে গেল খাড়ার উপরে। ঘরের টোটকাতে আর কাজ হচ্ছিল না। একজন বিড়িখোর হিসাবে ''স্মোকার'স কফ'' আমার নিত্য দিনের সাথী, কিন্তু বেশ বুঝতে পারছিলাম, এটা সেই জিনিস না; আরো খতরনাক কিছু। আর না পেরে আমার জিপি'কে (ডাক্তার) ফোন দিলাম।

- ডাক্তার সাহেব, আমার তো হালুয়া টাইট অবস্থা। কাশতে কাশতে জীবন শেষ। দম আসে আর যায়। কিছু একটা তো করা লাগে!

- করোনা ধরে নাই তো! সব শুনে ডাক্তারের মন্তব্য।

- কস কি মোমিন! আমি আতকে উঠে বললাম।

- কি বললা? বুঝি নাই।

- থাক, তোমার বুঝনের কাম নাই। এতোদিন ধরলো না। টিকার দুইটা ডোজ নিলাম, আর এখন ধরলো?

- ধরতে কতোক্ষণ? মনে হয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ধরছে। বড়ই খতরনাক জিনিস!

- ডর দেখাও ক্যান?

শুনে খ্যাক খ্যাক করে শয়তানের হাসি দিলো বুড়া ডাক্তার। বললো, তোমারে কতোদিন ধইরা বলি, বিড়িটা এখন ছাড়ো। তুমি তো কথায় সিধা হইবা না, এখন কাশিতে যদি সিধা হও!! তবে, আমার মত হইলো, তোমার চেষ্ট ইনফেকশান হইছে। এন্টিবায়োটিক দিলাম। আর পাচদিন পরে করোনার একটা টেস্ট করায়া ফালাও। বলা তো যায় না, সাবধানের মাইর নাই!!

ফোন রেখে দিয়ে ব্যাটাকে কয়টা গালি দিলাম। হালায় নিজেই এই বুইড়া বয়সে বিড়ি খায়, আর আমাকে বলে বিড়ি ছাড়তে!!

তিনদিন পরের কথা। এর মধ্যে কাশি আমাকে পুরাই কাবু করে ফেলেছে। অবস্থা এমন যে, হাচি দিলেও বুক ব্যথা করে। বুক চেপে ধরে হ্যাচ্চো দেই। হাচি দেয়ার সাথে সাথে মুখ থেকে অটোম্যাটিক ''ও মাগো, মইরা গেলাম'' বের হয়ে আসে। তবে সুখের কথা হলো, কফের রং আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। বউ যাচ্ছিল বাজার করতে, আমার জন্য এক প্যাকেট বিড়ি আনতে বললাম। কথা মাটিতে পড়ার আগেই উনার লেকচার শুরু হয়ে গেল। শেষ করলো, তোমার মতো একটা নেশাখোরের সাথে আমার সংসার করতে হচ্ছে, এটা ভাবলেই আমার শরীর গুলায়!! এমন অসন্মানজনক মন্তব্যে তীব্র অপমানবোধ হওয়ার কথা! তবে আমি গা করলাম না। কথা তো মন্দ বলে নাই আসলে। তাছাড়া নেশাখোরদের সবার সব কথা সব সময়ে ধরতে নাই।

বের হওয়ার আগে আরেকবার এসে হুমকি দিয়ে গেল, তোমারে যদি আবার বিড়ি খাইতে দেখি, তাইলে এইবার আর কোন কথা নাই। আমিও বিড়ি খাওয়া শুরু করবো!!

কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে গেল!!!

বসে বসে ভাবছিলাম, কি করা যায়! বিড়ি খাওয়া জরুরী না, খেলে মুখ তিতা হয়ে যায়। তবে হাতের কাছে বিড়ি না থাকলে মনে হয়, কি যেন একটা অবলম্বন মিসিং। বুকটা কেমন খালি খালি লাগে!! পূর্ব ফ্রন্ট থেকে সাহায্যের যেহেতু কোন আশা নাই, ভাবলাম, পশ্চিম ফ্রন্টটা একটু ট্রাই করে দেখি। দিলাম ক্রিসকে ফোন। ব্যাটা ফোন ধরেই উল্লসিত গলায় বললো,

- কি খবর ওস্তাদ! তোমার উপরে বলে করোনায় হামলা করছে?

- তোরে এই খবর দিলো কে? করোনা মরোনা কিছু না, সব মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা। বিড়ি খাইলে এমন হয়-ই। পাল্টা আক্রমনের সুরে বললাম, তোর মনে হয় সর্দি-কাশি হয় না! যাউকগ্যা, তুই কি অফিস থিকা ফেরার পথে আমারে এক প্যাকেট বিড়ি দিয়া যাবি?

- আগে করোনার টেস্ট করাও। নেগেটিভ রিপোর্টের আগে আমি তোমার ধারে-কাছেও আইতাছি না।

- আরে ব্যাটা, আমার ধারে-কাছে আসার দরকার নাই। তোর ভাবীর কাছে দিবি! মেজাজ খারাপ করে বললাম।

- আমি তোমার বাড়ির ধারে-কাছেই আসুম না!!

- আচ্ছা যা! ফাজিল কুনখানকার!! বিপদে মানুষ চিনোন যায়। মনে রাখবি, হিন্দিতে একটা কথা আছে…..হার কুত্তে কা দিন আতা হ্যায়! রাগে ফোন কেটে দিলাম। মনে মনে বললাম, হালার পো হালা, আসিস আবার বিরানী খাইতে!!!

৯ তারিখে করোনা টেস্ট করলাম। রেজাল্ট নেগেটিভ। বাইরে যাওয়ার কোন কায়দা নাই। শেষমেষ দিশা না পেয়ে আবার ফোন দিলাম ক্রিসকে। সুখবরটা দিয়ে মোলায়েম সুরে বললাম, আজকে সন্ধ্যায় বাসায় আয়। তোর জন্য বিরিয়ানী রান্না হচ্ছে। আর রোগী দেখতে আসবি, খালি হাতে আসা ঠিক না। আমার জন্য এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আসিস!

সন্ধ্যাবেলা ক্রিস সিগারেট আর এক ব্যাগ কমলা নিয়ে হাজির। চওড়া একটা হাসি দিয়ে বললো, তোমার এই সময়ে ভিটামিন-সি খুবই জরুরী। সকাল-বিকাল বিড়ি খাওয়ার পর পরই একটা কইরা কমলা খাবা।

পরেরদিন রাতে আয়েশ করে বিড়ি টানছি। ভয়াল চেহারা বানিয়ে বউয়ের আগমন ঘটলো। বিস্ফোরণ ঘটার আগেই বললাম, চেতাচেতি করার দরকার নাই। তুমি তো আবার এক কথার মানুষ! প্যাকেট, লাইটার সামনেই আছে। ধরায়া ফালাও…...দুইজনে একসাথে টানি। ধুপধাপ করে বাড়িঘর কাপিয়ে দিয়ে বউয়ের প্রস্থান ঘটলো। একটা সুখটান দিতেই বহু বছর আগের সময়গুলি ছায়াছবির মতো চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

এই মহিলা যখন আমার প্রেমিকা ছিল, আমাকে প্রায়শঃই সিগারেট গিফট করতো। বলতো, সিগারেট খাওয়ার সময়ে নাকি আমাকে খুব স্মার্ট আর সুন্দর লাগে। শুনে আমি দিলীপকুমারের মতো ভাব নিয়ে বিড়ি টানতাম, আর আমার সায়রাবানু চোখে মুখে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো। যতোদিন প্রেম করেছি, সিগারেট নিয়ে একটা কথাও বলে নাই। এই একই মানুষ বিয়ের জাস্ট পরদিন থেকেই ঘ্যান ঘ্যান শুরু করলো, বিড়ি খাওয়া ছাড়ো…..বিড়ি খাওয়া ছাড়ো। কোন কথা হলো এটা? এমন শার্প ইউটার্ন সম্ভবতঃ ঢাকার কোন ট্রাফিক পুলিশও কোনদিন দেখে নাই।

বুকটা দু'ভাগ করে একটা সকরুণ দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। সময়ের সাথে সাথে মানুষ কিভাবে বদলে যায়!! সখেদে ভাবলাম, বউ বিড়ি ধরলে অবশ্য মন্দ হয় না। রাত-বিরাতে দু‘জন একসাথে বিড়ি টানবো, আর গুটুর গুটুর করে সুখ-দুঃখের আলাপ করবো। পরিবেশটা কতোই না মনোরম হবে!

ভাবতে ভাবতে আনন্দে চোখে পানি চলে এলো!!! :-B


ফটো ক্রেডিটঃ view this link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:০০
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×