খুউব ভোরে লঞ্চ থেকে সদরঘাটে এসে নামলো ফারুক। ঢাকায় প্রথমবার একা এসেছে সে। ঢোলাঢালা ট্রাউজার্স আর ততোধিক ঢোলা একটা হাফ হাতা শার্ট পরনে। পায়ে হাওয়াই চপ্পল। লাগেজ বলতে একটা ব্যাগ আর একটা তোবড়ানো স্যুটকেস। ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে স্যুটকেসটা বুকের সাথে চেপে ধরে এক কোনায় গিয়ে দাড়ালো। বাড়ি থেকে যখন বের হয়, তখন পর্যন্ত স্যুটকেসটাতে হাতল ছিল। রিক্সা ভ্যানে উঠতে গিয়ে হাতল ধরে টান দিতেই শুধু হাতলটা উঠে এসেছিল হাতে। দুর্বল হাতলটার ক্ষমতা ছিল না স্যুটকেসের ভার বইবার।
কোনায় দাড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকালো ফারুক। ওকে নেয়ার জন্য জালাল ভাইয়ের আসার কথা। জালাল ওর পাড়াতো বড়ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বাবা পই পই করে বলে দিয়েছেন, লঞ্চঘাট থেকে একা যেন বের না হয়। ঢাকার অলিতে গলিতে চোর-বাটপারের আস্তানা; জালাল না আসা পর্যন্ত লঞ্চঘাটেই যেন বসে থাকে। গতমাসে বাড়ি গিয়ে জালালও এটাই বলে এসেছে ফারুককে। বলেছে, আমার যদি আসতে একটু দেরীও হয়, ঘাটেই বইসা থাকবি। আমি আসবো নিশ্চিত! সেইমতে ও ঘাটেই বসে আছে। এরই মধ্যে কয়েকজন কুলি আহেন, কই যাইবেন, রিক্সায় তুইলা দেই…..বলে ওর বাক্স-প্যাটরা ধরে খানিকটা টানাটানিও করেছে। ফলে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ওর মুল্যবান অস্থাবর সম্পত্তি আরো আকড়ে ধরে বসে আছে ও।
ফারুক আহমেদ। বরিশালের কোন এক গ্রামের দরিদ্র স্কুল শিক্ষকের বড় ছেলে। এসএসসি আর এইচএসসিতে মেধা তালিকায় থাকার কারনে এই ছেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেতে কোন সমস্যা হয়নি। বাবা বড় আশা নিয়ে ওকে ঢাকা পাঠিয়েছে। ছেলে বড় হবে, পাশ করে বের হয়ে আরো বড় হবে। সংসারের হাল ধরবে। ছোট দুইভাই আর একমাত্র বোনের দায়িত্ব নিবে……..আরো কতো কি!! বুক চিড়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো ফারুকের। পুরো সংসার তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সামনে অনেক অনেক চ্যালেন্জ, পারবে তো! চোয়াল শক্ত হয়ে এলো ওর; পারতে ওকে হবেই। বাবা বলতে গেলে নিয়মিতভাবে তেমন কোন টাকাই দিতে পারবেন না। টিউশনী করে পড়ার খরচ চালাতে হবে। একা বসে বসে এসব আকাশ-পাতাল ভাবছিল ও। ভ্যানে ওঠার সময় যখন স্যুটকেসের হাতলটা ভেঙ্গে যায়, তখন বাবার যেই করুণ চেহারা হয়েছিল সেটা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছে না। বাবা কিছুই বলেন নাই, কিন্তু চেহারাতে পরিস্কার লেখা ছিল নিজেকে ব্যর্থ মনে করা এক পিতার বেদনাকাতর প্রতিচ্ছবি!
সকাল নয়টা বেজে গিয়েছে। গতকাল সেই সন্ধ্যারাতে বাড়ির থেকে খেয়ে বের হয়েছে, তারপরে পেটে দেয়া বলতে লঞ্চে অল্পকিছু বাদাম। ক্ষুধায় মনে হচ্ছে নাড়িভুড়ি সব হজম হয়ে যাবে। ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে যখন ভাবছে একা একাই রওয়ানা দিবে, তখন দেখতে পেল জালাল আসছে। চোখে সানগ্লাস, পোশাক-আশাক বাড়িতে যেমন দেখে তার থেকে একেবারেই ভিন্ন। ওকে দুর থেকে দেখেই হাত নাড়লো। কাছে এসে বললো,
দ্যাখ অবস্থা! কাইল বলতে গেলে সারা রাত কাম করছি। সকালে ঘুম থিকা উঠতে দেরী হইলো। চল চল…..তোর তো দেখি হালুয়া টাইট অবস্থা। মুখের দিকে চাওন যায় না। খাস নাই কিছু? তারপরে উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললো, চল আগে হোটেল থিকা নাস্তা কইরা লই। তারপরে যামু!
রিক্সায় উঠে ফারুক জিজ্ঞেস করলো, ভাই, সারা রাইত কিয়ের কাম করছেন?
জালাল চোখ নাচিয়ে বললো, জানবি, জানবি। সবই জানবি আস্তে আস্তে। আগে তোরে একটা খারাপ খবর দেই। তোর জন্য বেড ম্যানেজ করতে পারি নাই। ডাবলিংও না। আপাততঃ তুই আমার রুমে ফ্লোরিং করবি। কিচ্ছু করার নাই। তয়, বড়ভাই কইছে ছয় মাসের মইদ্দে তোর ব্যবস্থা করবো। তুই টেনশান করিস না।
রিক্সা এসে থামলো সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে। এটাই ওর হল। ঢাকায় আগামী ৫/৬ বছরের ঠিকানা।
পরদিন সকালে ফারুক গেল হল প্রভোষ্টের অফিসে। রেজাল্ট অনুযায়ী ওর হলে সীট পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রভোষ্ট অফিস থেকে ওকে কোনরকমের আশ্বাস না দিয়ে একরকম তাড়িয়েই দিল। বের হয়ে আসার সময় পিয়ন তাকে এক কোনায় নিয়ে চুপি চুপি বললো, মামু, নতুন ভর্তি হইছেন, কাহিনী তো কিছুই জানেন না। রেজাল্ট দিয়া হলে সীট পাওনের দিন শ্যাষ। তয় আমারে ট্যাকা দিলে আপনের লেইগা ধারেকাছেই একটা মেস জোগাড় কইরা দিতে পারি। পিওনকে কিছু না বলে চলে এলো ও।
ছোট্ট একটা রুমের দুই খাটের মাঝখানে এক চিলতে জায়গায় বিছানা পেতে রাতে ঘুমাতে হয় ওকে; সবাই শুয়ে না পড়লে বিছানা পাততে পারে না। আবার সকাল সকাল ক্লাশের কারনে উঠতে হয়। এভাবে কেটে গেল তিনটা মাস। এদিকে হলের ছাত্র সংসদের সভাপতি আর সাধারন সম্পাদক আলাদা দলের হওয়াতে ক'দিন পর পরই হলের মধ্যে ধর ধর রব ওঠে। ফলে রাতের ঘুম মাঝে-মধ্যেই হারাম হয়ে যায়। একদিন জালাল সন্ধ্যাবেলা বললো, এ্যাই রেডি হ। বড়ভাই তোরে দেখা করতে কইছে।
হলের কমন রুমে রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে রয়েছে হলের সাধারন সম্পাদক। চারিদিকে সাঙ্গ-পাঙ্গ। সিগারেটের ধোয়ায় ঘর যেন কুয়াশাচ্ছন্ন! আগেই জালাল ফারুককে বলেছে, গিয়েই বড়ভাইকে লম্বা করে সালাম দিতে। সেই অনুযায়ী সালাম দিতেই ভাই উঠে এসে ফারুকের হাত ধরে পাশে বসালো। বড়ভাইয়ের আন্তরিক ব্যবহারে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেল ফারুক। বড়ভাই ফারুককে দেখিয়ে জালালের দিকে তাকিয়ে কিছুটা ধমকের সুরে বললো,
কিরে…..অর চেহারা-সুরতের এই অবস্থা ক্যান? কাইল এলিফ্যান্ট রোডে নিয়া গিয়া অরে স্মার্ট বানায়া আনবি। তগো সব কথা কয়া দিতে হয়! আকাইম্মা কোনখানের!!!
তারপরে ফারুককে বললো, তোর মতোন মেধাবী একজন ছাত্র আমার হলে কষ্টের মধ্যে আছে; এইটা কোন ভালো কথা না। আর দুইটা দিন অপেক্ষা কর। তোর ব্যবস্থা করতাছি।
এরই মধ্যে বাইরে থেকে দুইজন এসে বড়ভাইকে সালাম দিয়ে বললো, ভাই, জিনিসপাতি সব রেডি। এখন আপনে খালি কইলেই কাম শুরু করুম।
তারপরে সবাই মিলে কি একটা অপারেশান নিয়ে কথা বলা শুরু করলো, যার কিছুই ফারুকের মাথায় ঢুকলো না। ফারুক ওঠার জন্য উশখুশ করতেই জালালের চোখের কড়া ইশারায় ঠান্ডা মেরে গেল। একটা সময়ে জালাল ওকে নিয়ে বাইরে চলে এলো। বললো, বড়ভাইয়ের সামনে কিছু আদব-কায়দা আছে। উনি নিজের থিকা না বললে উইঠা আসা যাবে না। আস্তে আস্তে তোরে এইসব শিখতে হইবো। আর শোন, পরশু রাইতে আমরা হলের সভাপতিরে হল থিকা খেদামু। তারপরে তুই সীট পাবি। কি…....অখন খুশী তো!!
সভাপতিকে খেদানোর সাথে ওর সীট পাওয়ার সম্পর্ক না বুঝলেও, সীট পাবে…..এই খুশীতেই আনন্দে আটখানা হয়ে গেল ফারুক।
পরদিন জালালসহ হলের আরো দুই সিনিয়রের সাথে এলিফ্যান্ট রোডে গেল ফারুক। সবাই মিলে পছন্দ করে ওর জন্য কয়েক জোড়া জিন্সের ট্রাউজার্স, স্নিকার্স, জিন্সের শার্ট এসব কিনলো। ফারুকের প্রতিবাদে কোন কাজ হলো না। জালাল ওকে জানালো, এটা বড়ভাইয়ের আদেশ। তবে সবচেয়ে যেটা ফারুককে আশ্চর্য করলো, সেটা হলো…...এসব দামি দামি জিনিসপত্রের কোন দামই পরিশোধ করলো না কেউ! ততোধিক আশ্চর্যের বিষয়, কোন দোকানদার ওদের কাছ থেকে কোন দামও চাইলো না। এসব নতুন দামী আউটফিট আর দু'দিন পরে নতুন রুম নিয়ে এক নতুন জীবন শুরু হলো ফারুকের।
মাস ছয়েক পরের কথা। কাপড়-চোপড় পরিবর্তনের সাথে সাথে ফারুকের জীবন যাত্রায়ও বেশ পরিবর্তন এসেছে। বড়ভাইয়ের আদেশে মাঝে-মধ্যে মিটিং-মিছিলেও যেতে হয়। একদিন সন্ধ্যাবেলা রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনের মাঠ দিয়ে একা একা হেটে হলে ফিরছিল ফারুক। ও যেই রুমে এখন থাকে, সেইরুমের বিতারিত এক সিনিয়র ভাইসহ চারজন ওকে ঘিরে ধরলো। তাদের মধ্যে একজন বললো, কিরে, জিএসের চামচা! গেরাইম্যা খ্যাত……..ভালোই তো স্মার্ট হইছস দেখি!
ফারুকের কাছে ওদের মতিগতি সুবিধার মনে হলো না। বললো, আমি তো ভাই কারো চামচা না। একই হলে থাকি, নেতাদের মন জোগায় চলা লাগে।
একজন এগিয়ে এসে ঠাস করে ওর গালে একটা চড় কষিয়ে দিল। বললো, চামচার আবার মুখে মুখে কথা! এক্কেরে চোখ উঠায়া ফালামু। চামচা না হইলে রুম পাইলি কেমনে?
ফারুক প্রতিবাদের সূরে বললো, রুম তো আমার এমনেই পাওয়ার কথা। আপনে থাপ্পড় দিলেন ক্যান?
খানকীর পোলার তো দেখি বড় বাড় বাড়ছে………...বলে একজন আরেকটা চড় দিতেই চারজনই একসাথে ওর উপর ঝাপিয়ে পড়লো। সমানে উপুর্যপুরি চড়, লাথি আর ঘুষির মুখে টিকতে না পেরে একসময়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ফারুক। ওই অবস্থাতেই আরো কিছুক্ষণ স্টীমরোলার চললো ওর উপর। তারপরে একসময়ে ওকে ফেলে চলে গেল ওরা। এক রিক্সাওয়ালার সাহায্যে কোন রকমে হলে আসতে পারলো ফারুক। তারপরে আর কিছুই মনে নাই ওর।
ওই ঘটনার পরে জীবন পুরাটাই পাল্টে গেল ফারুকের। বড়ভাইয়ের কড়া নির্দেশে সন্ধ্যার পর আর একা একা চলাফেরা করে না ও। এর মধ্যে একদিন রাতে জালাল ওকেসহ আরো দু'জনকে হলের ছাদে নিয়ে গেল। একটা কাটা রাইফেল বের করে বললো, এইটা দেখছস? চালানো শিখতে কইছে বড়ভাই। সামনে কামে লাগবো।
রাইফেলটা হাতে নিল ফারুক। এই জিনিস ও আগে দেখেছে, কিন্তু চালায় নাই কখনও। জালাল ইন্সট্রাক্টরের সুরে বলা শুরু করলো, এইটার আসল নাম লী এনফিল্ড রাইফেল। প্রচলিত নাম থ্রি নট থ্রি রাইফেল। নল কাইটা ছোট করা হইছে, তাই এইটারে কাটা রাইফেল কয়। নল কাটার কারনে এইটা শব্দ করে ভয়াবহ রকমের, তবে কাউরে টার্গেট কইরা গুলি ছুড়লে লাগার সম্ভাবনা কম। গুলি এলোপাতাড়ি কোনদিকে যে যাইবো, তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। তাছাড়া, এইটার স্টক কাইটা ছোট করার কারনে লুকায়া ক্যারী করতে সুবিধা কিন্তু যে চালায়, সে এইটার ধাক্কা ঠিকমতোন সামলাইতে পারে না, তাই টার্গেট শুটিংয়ের চান্সও কম। সোজা কথা, এইটা মারার চাইতে ভয় দেখায় বেশী। বুঝাইতে পারছি? তিন শিক্ষানবীশ সবেগে মাথা নাড়ায়…….বুঝেছে!!!
ভার্সিটিতে দুই বছর হতে চললো ফারুকের। লেখাপড়া মাথায় উঠেছে। পরীক্ষা দেয় কি দেয় না, কিন্তু পাশ ঠিকই করে যায়। পুরো সময় কাটে পার্টির কাজে। ক্যাম্পাসের উঠতি ক্যাডার এখন ও। নাম-ডাক হয়েছে মোটামুটি। ক্যাম্পাসে একটা চক্কর দিলে সালাম খুব একটা কম পায় না! এমন অবস্থায় একদিন রাতে দুই চামচাসহ বৃটিশ কাউন্সিলের সামনে দিয়ে সলিমুল্লাহ হলে যাচ্ছিল, হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো ওকে প্যাদানী দেয়া সেই বিতারিত সিনিয়র ভাইয়ের সাথে। মনে মনে একে অনেকদিন ধরেই কায়দামতো পাওয়ার চেষ্টা করছিল; কি সৌভাগ্য! আজ একেবারে খাপে খাপে মিলে গেল। ব্যাটার কাকুতি মিনতির ধারে কাছে দিয়ে গেল না; মাটিতে পেড়ে ফেলেই সময় নষ্ট না করে ধারালো ছুরিটা দিয়ে দ্রুত কয়েকটা পোচ দিল বুকে-পিঠে। এক চামচা বললো, ভাই এতো ভেজালের দরকার কি? দেই মাদারচোদের মাথায় একটা বিচি ঢুকায়া! কড়া একটা ধমক দিল ও। ভিসির বাংলোর আশেপাশে সবসময়ে পুলিশের টহল দল থাকে। গুলির শব্দে এখানে আসা মিনিটের ব্যাপার মাত্র!!!
কাজ শেষ করে হাত দিয়ে ঘামে চটচট করা মুখটা মুছলো ফারুক। মুখে কেমন একটা নোনতা স্বাদ পেল। অন্ধকারে খেয়ালই করে নাই, হাতে লেগে থাকা হারামজাদাটার রক্ত ঘামের সাথে মিশে মুখে চলে এসেছে! স্বাদটা খুব একটা খারাপ লাগলো না ফারুকের। এর সাথে দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হওয়ার একটা আত্মতৃপ্তির ব্যাপার মিশে আছে যে! আসলে রক্তের নেশা খুব খারাপ জিনিস। মানুষকে জানোয়ারে পরিনত করতে সময় নেয় না খুব একটা।
কয়েক মাস পরের কথা। ছেলের পরিবর্তনটা দরিদ্র স্কুল মাস্টার বাবার নজর এড়ায়নি। তাছাড়া কানে কানে ভেসে অনেক উরাধুরা কথাই কানে আসে। সবকিছু নিজের চোখে দেখার জন্য কোন এক কাকডাকা ভোরে হলে এসে হাজির হলেন তিনি। ছেলেকে ঘুম থেকে উঠালেন। ছেলে বাবাকে বিছানায় বসতে বলে বাথরুমে গেল ফ্রেশ হতে। রুমে ফিরে এসে দেখে বাবা ওর সব সময়ের সঙ্গী বালিশের নীচে রাখা সিক্স শুটারটা কোলে নিয়ে বসে আছেন। উদভ্রান্ত দৃষ্টি। সেই দৃষ্টি তুলে বাবা যখন ছেলের দিকে চাইলেন, ছেলে বাবার সেই সেদিনের চেহারাটা দেখতে পেলো; যেদিন স্যুটকেসের ভাঙ্গা হাতলটা হাতে উঠে এসেছিল!!
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৩০৩ নম্বর কামরায় সময় সেদিন থমকে গিয়েছিল। ছেলে বাবার দিকে, আর বাবা ছেলের দিকে তাকিয়ে….হয়তো কয়েক মূহুর্ত কিংবা কয়েক ঘন্টা! তাদের দু'জনের মনের আকাশে সেদিন কি ঝড় উঠেছিল, তা কেউ জানেনা। হয়তো এক বাবা তার সামনে দাড়িয়ে থাকা চেনা কিন্তু অচেনা এক ছেলের মাঝে তারই হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে খুজছিলেন! আর ছেলে? ডুবে যাওয়ার যে একমুখী রাস্তা সে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বেছে নিয়েছে, হয়তো বা তার পরিণতি নিয়ে চিন্তামগ্ন ছিল।
তবে সেদিনের আসল দৃশ্যপট কারো জানা নাই। কেউ জানার চেষ্টাও করে না। কারন, সবরকমের ভাগ্যের নিয়ন্তা সমাজের কিছু অমিত শক্তিধর, অদৃশ্য বাশীওয়ালা…...যাদের বাশীর মাদকীয় সুরে নিয়ন্ত্রিত হয়, ডুবে যায় মেধাবী কিছু তরুনের ভবিষ্যত; আর সেই সাথে সলিল সমাধি ঘটে কিছু পরিবারের দীর্ঘদিন লালিত সুখস্বপ্নের।
ফটো ক্রেডিটঃ view this link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:২১