আমার এক সহজ সরল বন্ধু আছে। আম্রিকার ফ্লোরিডায় থাকে, ট্যাম্পা শহরে। অশিক্ষিত না মোটেও, একটা ব্যাঙ্কে মোটামুটি ভালো পদে চাকুরী করে। এয়ারলাইনগুলো ফ্লাইট চলাকালীন যেই খাবার দেয় সেসব ওর খুবই প্রিয়। কারন জিজ্ঞেস করাতে বললো, ওইগুলা খাইতে তো টাকা লাগে না, সেইজন্য প্রিয়। আমি বললাম, আরে বেকুব! ওইগুলার টাকা তো টিকেট কেনার সময়েই নিয়ে নেয়, ফ্রি হইলো কেমনে? ও বললো, খাবার সার্ভ করার সময় তো নেয় না! এইজন্য গায়েও লাগে না। ফ্রি ফ্রি লাগে; একই সাথে খুশী খুশীও লাগে। দ্যাখেন, কেমন বেকুব!!!
বন্ধুর কথা শুনে কেন জানি ব্লগের কিছু সহজ সরল ব্লগারের কথা মনে পড়ে গেল। সত্যি কথা বলতে, আমাদের সরকার কতো কিছু বানিয়ে দিচ্ছে জনগনের জন্য। জনগন সেগুলোতে চড়ে/ব্যবহার করে খুশীতে বগল বাজাচ্ছে আর সরকারের গুনগান গাচ্ছে। হাউ সুইট!! আসলে এমন জনগনই তো আমাদের সরকারের দরকার। ''মাছের তেলে মাছ ভেজে'' জনগনকে খাওয়াবে আর বলবে, এই লও…….তোমাগো ফ্রিতে ফিস ফ্রাই খাওয়াইলাম, অহন আমারে সেলাম করো। আর জনগনও হাততালি দিয়ে বলবে ক্যায়া বাত, ক্যায়া বাত! তবে যারা একটু গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে তারা ভাববে, এটাতো বড়ই আচানক কথা!! কি আফসোস!!!
বাদ দেন এইসব আজাইরা প্যাচাল। ধন-ধান্যে পুস্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা (বসুন্ধরা গ্রুপ না কিন্তু!!)। তাহার মাঝে আছে দেশ এক, সকল দেশের সেরা। দেশটার নাম বাংলাদেশ। আচ্ছা বলেন দেখি, বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে? সোজাসাপ্টা উত্তর হলো………..না, নাই। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের খুব কি দরকার আছে? না, তাও নাই। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র একটা দেশের জন্য যেটা সবচাইতে বেশী দরকার, সেটা হলো জনগনের মৌলিক চাহিদা পূরণ। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের সদিচ্ছা আছে, এমন একটা সরকার। একটা ক্ষমতাশ্রয়ী দেশপ্রেমিক সরকার। সেটা তথাকথিত গণতান্ত্রিকই যে হতে হবে, এমনটা না। একনায়িকাতান্ত্রিক হলেও ক্ষতি নাই কোন, কি বলেন? তবে দেশটা যারা চালাবে, তাদের সততার একটা মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড আর গ্রহনযোগ্যতা থাকা দরকার। বিষয়টা যেন এমন না হয়…………
এক ছিনতাইকারী সান্ধ্যকালীন হন্টনরত এক লোককে পিস্তল উচিয়ে বললো, তোমার সব ট্যাকা ভালোয় ভালোয় দিয়া দেও।
হন্টনরত ব্যক্তি বললো, তোমার সাহস তো কম না! জানো আমি কে?
লও ঠ্যালা, আমারে জিগায়! তুমি নিজে জানো না তুমি কে? পিস্তল দেইখা ভুইলা গেছো?
আমি এই এলাকার আম্লীগের একজন নেতা…….হন্টনরত ব্যক্তি ক্ষেপে গিয়ে বললো।
তাইলে……...ছিনতাইকারী বললো………..আমার সব ট্যাকা আমারে ফেরত দেও!!
ক'দিন আগেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল। তথাকথিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন!! এই আজব আর অদ্ভুতুড়ে নির্বাচনে সরকারী দল বোঝা যায়, কিন্তু বিরোধী দল কুয়াশাচ্ছন্ন, অস্পষ্ট! গণতন্ত্রের একেবারে মায়েরে বাপ করে দিয়েছে এইবারের নির্বাচন। আমরা জানি, নির্বাচনের ইংরেজি হলো ইলেকশান, তবে এটা আসলে হয়েছে মূলতঃ সিলেকশান। জনগনের কষ্টার্জিত টাকার হুদাই শ্রাদ্ধ করার এর চাইতে ভালো উপায় খুব কমই আছে। এর আসলে কি কোন দরকার ছিল? এতো নাটক না করে সরাসরি ঘোষণা দিলেই তো হতো। সে যাই হোক, নতুন মন্ত্রীসভা ঘোষিত হয়েছে। নতুন সরকার কাজও শুরু করেছে। আপাততঃ কয়েকটা ভালো দিক আমার নজরে এসেছে। যেমন……….মোটামুটি প্রতিবারই শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন যে, ''আমার চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। এটাই আমার শেষ টার্ম। এরপরে রিটায়ারমেন্টে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি।'' এইবার এমন কিছু তিনি বলেন নাই। বুঝে গিয়েছেন, জনগন এইসব স্ট্যান্টবাজিমার্কা কথাবার্তা আর বিশ্বাস করে না। উনার এই বোধোদয় অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। তাছাড়া মন্ত্রীসভার দুইটা বিয়োজন……..মোস্তফা জব্বার (বিজয় চোর) এবং এ কে আব্দুল মোমেন (স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ); আর সংযোজন……….ডা. সামন্ত লাল সেন এবং সাবের হোসেন চৌধুরী আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।
সরকার গঠনের পর গত বুধবার সকালে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রথম মিটিংয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনসাধারনের 'লাভ বিবেচনা'য় প্রকল্প গ্রহন করতে হবে। শুনে আমার হার্টের একটা বিট মিস করলাম তৎক্ষনাৎ। প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় আমি আসলেই মর্মাহত। তাহলে মন্ত্রী, এমপিদের কি হবে? দীর্ঘদিনের ইনভেস্টমেন্টের পর যারা এই পদ-পদবী পেয়েছেন, তারা যদি এর ফলাফল সূদাসলে ঘরে তুলতে না পারেন তাহলে? না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এতোটা কঠোর হবেন না। জানেন তো, কারো মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান কথা!! মন্ত্রী, এমপিদের 'লাভ বিবেচনা' প্রায়োরিটি পাওয়া উচিত। সত্য / মিথ্যা জানি না, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী নাকি উনার এক উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আচ্ছা, জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য আমার কি আরো অগ্নিগর্ভ বক্তব্য দেয়া উচিত? উপদেষ্টার পরামর্শ ছিল, না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বরং আপনার বেশীরভাগ বক্তব্যই অগ্নিগর্ভে ফেলা উচিত!!
তবে প্রধানমন্ত্রীর এবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হওয়া উচিত দেশের রপ্তানীখাতকে বহুমুখীকরণ। যথাযথভাবে এক্সপোর্ট ডাইভার্সিফিকেশান করা গেলে একই সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিস্ক ডাইভার্সিফিকেশানও হয়ে যায়। আমাদের অর্থনীতি মূলতঃ যেই দু‘টা খাতের উপর নির্ভরশীল, সেগুলোর উপর থেকে চাপ কমানো দরকার। শ্রীলংকার শুয়ে পড়া কিংবা আফগানিস্থানের উঠে দাড়ানো, দুই ধরনের উদাহরনই আমাদের সামনে আছে। অন্যদেশগুলোর অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া খুবই জরুরী। শুনতে কেমন কেমন লাগলেও উদাহরন হিসাবে বলি…….শুধুমাত্র নাড়িকেল-নির্ভর বিভিন্ন রকমের শিল্প-কারখানা দেশে গড়ে উঠতে পারে; আর পশ্চিমা বিশ্বে এর চাহিদাও অত্যাধিক। এই বাজারের অনেকটাই বর্তমানে ভারত, শ্রীলংকা আর ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোর দখলে। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশের সুযোগ এই খাতে অনেক বেশী। পরিকল্পনা কমিশন বা রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো আগ্রহী হলে এই বিষয়ে আমি একটা বিশদ পোষ্ট লিখতে পারি!!!
গত সরকার নিঃসন্দেহে বেশকিছু ভালো ভালো কাজ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই সরকারও করবে। কিন্তু লাভের গুড় বেশীরভাগই খেয়ে ফেলছে কতিপয় হারামী পিপড়া। এই হারামী পিপড়া কারা তা প্রধানমন্ত্রী খুব ভালো করেই জানেন, কিন্তু তিনি এদেরকে থামাচ্ছেন না। ফলে সাধারন মানুষ ভাবতে বাধ্য হচ্ছে এই গুড়ের ভাগ কি শেখ হাসিনাও পাচ্ছেন? ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিএফআইয়ের তথ্যানুযায়ী আন্তর্জাতিক বানিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরে গড়ে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়। এই বিপুল পরিমান টাকা কি প্রধানমন্ত্রীর অজ্ঞাতসারে পাচার হওয়া সম্ভব? না, সম্ভব না। এই পাচার বন্ধ করতে পারলে পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা আসবে, গতি আসবে আর যৌক্তিকতা আসবে। সাধারন মানুষ সত্যিকারভাবেই সরকারের কর্মসূচীর সাথে একাত্ম হতে পারবে।
ছড়াকার আবু সালেহ লিখেছিলেন,
ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা!
দুর্মুখেরা বলে, ইংরেজি Politics শব্দটা এসেছে দু‘টা শব্দ থেকে। Poly অর্থাৎ বহু/অনেক, Ticks অর্থাৎ রক্তচোষা প্যারাসাইট। দেশবাসীর আশা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এইবার এই ছড়া আর দুষ্টলোকদের ব্যাখ্যা করা ''পলিটিক্স'' এর অন্তনির্হিত বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমানীত করবেন। বিষয়টা কঠিন, তবে অসম্ভব না মোটেও। চেষ্টা করতে দোষ কি?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ছোটমুখে কিছু বড় কথা বলি। আপনি শোনেন আর না শোনেন, ঠিক করেছি এইবার আমি আপনাকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে কিছু কিছু আইডিয়া দিবো। তবে সবার আগে পুরানো একটা ছোট্ট গল্প শোনাই…...কোন এক রেস্টুরেন্টের টেবিলে এক পলিটিশিয়ান আর এক প্রস্টিটিউট একসাথে বসেছে। পলিটিশিয়ান তার পরিচয় দিয়ে বলছে, আমি অমুক, একজন সৎ পলিটিশিয়ান; শুনে প্রস্টিটিউট চোখ টিপে বললো, রিয়েলি! তাহলে, আমি একজন ভার্জিন প্রস্টিটিউট।
আপনাকে অন্ততঃ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে এমন ধারনা মুছে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
কে বলতে পারে……..এটাই হয়তো আপনার প্রধানমন্ত্রীত্বের শেষ টার্ম। কাজ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা অনূকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার এখনও যথেষ্ট সময় আপনার হাতে আছে। আপনার বাবা যেটা করে যেতে পারেন নাই, আপনি সেটাই করে দেখাতে পারেন। মহান সৃষ্টিকর্তার দেয়া এই সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক না। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারন আপনার কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করে।
আপনি কি জনগনের সেই প্রত্যাশা পূরণ করবেন? নাকি বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবেন। সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার।
শিরোনামের ছবিটা নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের, উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৮