
প্রারম্ভিক কিছু কথাঃ ব্লগার করুণাধারার সর্বশেষ পোষ্টে একটা মন্তব্য করে ফেসে গিয়েছি। মন্তব্যে বলেছিলাম উনার বলা সমস্যাগুলোর সমাধান আমার কাছে আছে। আসলে পুরাই চাপাবাজি!! আমার কাছে কিছুই নাই। এখন আপা-মানুষ বলে কথা, একদিকে আমার চিন্তা করার সময় নাই, অন্যদিকে মাথায়ও কিছু নাই। অথচ জোশের চোটে লিখবো বলেছি, কিন্তু লিখবো টা কি? তখনই হঠাৎ বন্ধু গুলাটি বেগমের এই লেখাটা পড়লাম। ভাবলাম এটাই ঝেড়ে দেই, আমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এটা গোপালিয়া নামের একটা দেশের গল্প। গুলাটি কিছুদিন আগে ঘুরে এসেছে, আর মুগ্ধতা থেকে একটা আর্টিকেল লিখেছে। তো, দেখা যাক সে কি লিখেছে!!!
============================================================================
পড়ন্ত বিকাল বেলায় গোপালিয়ার খয়ের খা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে নামার পর থেকেই একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছি। এখানে প্রতিটা কাজেই টাকা দিতে হয়, নাহলে দাড়িয়ে থাকতে হয়। টাকা দিলে কাজ তাড়াতাড়ি, না দিলে অপেক্ষা। আবার প্রতিটা কাজ স্পীডে করার জন্য স্পীডমানি চার্ট টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। যাই হোক, আমার হোস্ট গাইড হিসাবে যাকে পাঠিয়েছে, তার নাম মোগাটিম। তবে নাম কোন সমস্যা না, সমস্যা তার ভাব সাবে। সব সময়ে বিনয়ে কুজো হয়ে থাকে। কথা বলার সময়ে চোখ দেখা যায় না। আমি আবার চোখে চোখ রেখে কথা না বলতে পারলে শান্তি পাই না।
একজন নামকরা ট্রাভেল ভ্লগার হিসাবে আমি এখানকার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আসলেও আসলে এসেছি এই দেশ সম্পর্কে একটা বিস্তারিত রাজনৈতিক রিপোর্ট তৈরী করার জন্য। আন্ডার কাভার রিপোর্টার বলতে পারেন। একটা নামকরা আন্তর্জাতিক মিডিয়া আমাকে হায়ার করেছে, কারন এই দেশে কোন বিদেশী সাংবাদিক স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারে না। তাকে বিভিন্ন রকমের ফিল্টারেশানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। একজন স্বাধীন ট্রাভেল ভ্লগার হিসাবে আমার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে না বলেই আমার নিয়োগদাতার বিশ্বাস। আমার বিশ্বাসও অনেকটা সে'রকমই। তারপরেও আমি সাবধানতার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি।
গোপালিয়া দেশটা ইথিওপিয়া আর সোমালিয়ার মধ্যে একটা ছোট্ট দেশ, ঠিক যেন একটা বার্গার-প্যাটি!! দেশটা অনেক আগে ছিল সোমালিয়ার অংশ। সোমালিয়ার উত্তরাংশের একটা বড় অংশ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে এই দেশটার জন্য। ফলে সোমালিয়া চায় গোপালিয়া আবার তাদের অংশ হয়ে যাক। আর প্রতিবেশী ইথিওপিয়া, যে কিনা সোমালিয়ার বৈরী দেশ, চায় গোপালিয়া তাদের কথামতো চলুক...........অন্ততঃ সোমালিয়ার প্রভাবমুক্ত থাকুক। আন্তর্জাতিক রাজনীতির আরো হিসাব-নিকাশ আছে, কিন্তু মোটা দাগে এই হলো গোপালিয়াকে ঘিরে আঞ্চলিক রাজনীতির অবস্থা। এখন বিশ্ব-রাজনীতির সবার আগ্রহ গোপালিয়া আসলে কি করতে চাচ্ছে; কারন গোপালিয়ার প্রশাসন আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কিনে ফেলা খুবই সহজ। সবাই জানতে চায় তারা কার কাছে নিজেদের বিক্রি করার মতো অবস্থায় আছে এবং কতো রেটে!! আর এটাই আমার মূল এসাইনমেন্ট!!!!
আমি গোপালিয়াতে চার সপ্তাহ ছিলাম। মোগাটিম আমার সাথে আঠার মতো লেগেছিল। এক পর্যায়ে বুঝতে পেরেছিলাম, সে আসলে সাহায্য করার নামে আমার উপর নজর রাখছে। তবে সেটা কোন সমস্যা ছিল না। তাকে আমি উপযুক্ত দামে কিনে নিয়েছিলাম। দেশটা সম্পর্কে যা জেনেছি, তা এই রকম..........
বেশ আগে দেশে একবার সরকারী চাকুরীর কোটা নিয়ে বিরাট আন্দোলন হয়। তারপরেই সরকার আইন করে চাকুরীর জন্য সব ধরনের পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে। সে দেশে নিয়োগ পদ্ধতি শতভাগ কোটা ভিত্তিক। বাবে গোপাল নামে একটা প্রদেশ আছে গোপালিয়াতে। দেশটার নামকরন এই প্রদেশের নামেই। এই প্রদেশের প্রার্থীদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষিত। বাকীটা বিভিন্ন ধরনের ভাগে বিভক্ত যেমন, ইথিওপিয়ার সমর্থক, সোমালিয়ার সমর্থক, প্রধান বিরোধীদলের সমর্থক, সেনাবাহিনীর নাতি-পুতি ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতি বৎসরের জানুয়ারী মাসে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর কোটা অনুযায়ী চাকুরীর নিলাম হয়। যে যতো বেশী দর হাকে, চাকুরী তার। পদ্ধতিটা বিরাট সাফল্য লাভ করে।
এই সাফল্যের পর সেই দেশ থেকে পরীক্ষা নামক জিনিসটাই নাই হয়ে গিয়েছে। আপনি বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাবেন? কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন? কোটা ভিত্তিক নিলাম। আপনি সন্তানকে ডাক্তার-এন্জিনীয়ার বানাবেন? কোটা ভিত্তিক নিলাম। দারুন না? পরীক্ষা নেয়ার বা দেয়ার ঝামেলা নাই, পরীক্ষা আয়োজনেরও কোন খরচ নাই। প্রশ্নফাস, খাতা দেখা, তদবির করা কিছুই নাই। সব কিছুতেই টাকার খেলা। এই দেশে প্রধানমন্ত্রীর বাসার একজন ঝাড়ুদারও কোটিপতি। ফলে টাকা কোন সমস্যাই না......শুধু আপনাকে ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে বা তার আশেপাশে থাকতে হবে।
আরেকটা বিষয়। সেই দেশে দূর্ণীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়া হয়েছে; রীতিমতো সংসদে আইন পাশ করে। ফলে দূর্ণীতি শব্দটাই দেশে বা সমাজে অর্থহীন। সরকারী-বেসরকারী অফিস, আদালত, ব্যাঙ্ক, হাসপাতাল সব জায়গাতে স্পীডমানি চার্ট টাঙ্গানো আছে। কাজ তাড়াতাড়ি করাতে চাইলে বা সেবা তাড়াতাড়ি নিতে চাইলে যতো তাড়াতাড়ি, ততো বেশী রেট। যার টাকা নাই, তাকে অনির্দিষ্ট কাল অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারো দয়া হলে কাজ হবে, না হলে নাই!! সোজা হিসাব!!! সাধারন নাগরিকরা এসবের কোন প্রতিবাদ করতে পারবে না। সরকার এই বিষয়ে অত্যন্ত কড়া। বেশী ত্যাড়া নাগরিকদের ধরে নিয়ে একটা গোপন দাওয়াই এর ইন্জেকশান দিয়ে দেয়া হয়। ত্যাড়া মানুষ বাকী জীবন সোজা থাকে। এই কারনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইন্জেকশান সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যেই তথ্যটা আমার সামনে এসেছে, সেটা হলো গোপালিয়ার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পার্টি ''সাংঘাতিক দেশ-প্রেমিক মোর্চা'' গোপনে সোমালিয়ার সাথে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। মূলতঃ দীর্ঘদিন ধরে সোমালিয়ার মদত-পুষ্ট জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার আর আলাদা থাকতে চাচ্ছে না, কারন তাদের কাছে খবর আছে যে, সরকার বিরোধীরা সংগঠিত হচ্ছে। যে কোনও সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই এখন বিভিন্ন রকমের দর কষাকষি আর ইথিওপিয়া কি কি ধরনের ঝামেলা করতে পারে, তার বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। তবে এই একীভূতকরণ রাতারাতি হবে না। সব ঠিক হয়ে গেলে দশ বছরের একটা মাষ্টার-প্ল্যান করা হবে। ধাপে ধাপে, খুবই আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে কাজ চলবে যাতে করে জনগন একেবারেই বুঝতে না পারে আর রিয়্যাক্ট করার কোন সুযোগ না পায়। যেমন, সোমালিয়ার লোকজন আস্তে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী দখল করবে, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে পুরাপুরি সোমালিয়া-নির্ভর করে ফেলা হবে, আকাশ-নৌ-বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাকে একীভূত করে ফেলা হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরাপুরি ধ্বংস করে ফেলা হবে; উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিগণের প্রধান কাজ হবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে চা-সিঙ্গারা-সমুচা বিক্রি। আর সেই সাথে মোর্চার বিরাট ফ্যান-ফলোয়ারদের ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের সামাজিক মিডিয়াতে ক্রমাগত প্রোপাগান্ডা চলতে থাকবে যে, যারা সরকারের বিরোধীতা করবে তারা সবাই রাজাকার...........ইত্যাদি ইত্যাদি। বিরাট পরিকল্পনা। সবটা এখনও তৈরী হয়নি, তবে কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই ফেজ-বাই-ফেজ পরিকল্পনা চুড়ান্ত হয়ে যাবে।
এই ''অত্যন্ত সিরিয়াস ধরনের কিন্তু বোরিং'' আর্টিকেলটা পড়ে একেকজনের একেক জায়গায় ব্যথা লাগতে পারে, একেক ধরনের অনুভূতি হতে পারে। তাই সবশেষে একটা কৌতুক বলি, শোনেন। খানিকটা ঔষধের কাজ করবে। এটা আমি গোপালিয়ায় শুনেছি। সেখানকার খুবই জনপ্রিয় একটা কৌতুক।
কোন এক কর্মী তার বসকে বলছে.............
কর্মী: স্যার, কয়েক দিনের ছুটি দরকার!
বস: যদি একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারো, তাইলে আমি বিবেচনা করতে পারি।
কর্মী: জ্বি স্যার, বলেন!!
বস: কাটাপ্পা বাহুবলীকে কেন খুন করেছিলো?
কর্মী: আমি সঠিক জানি না স্যার। তবে সম্ভবতঃ বাহুবলী কাটাপ্পাকে ছুটি দেয়নি, সেজন্যে।
বস: তোমার কতোদিনের ছুটি লাগবে??
পুনশ্চঃ শুরুর কথায় আসি। আমার মনে হয়, গোপালিয়াকে অনুসরনের মধ্যেই আমাদের দেশের সকল সমস্যার সমাধান নিহিত। গুলাটি বেগম ভ্লগের মানুষ, ব্লগ এবং ব্লগার তার পছন্দ না। তাই তার সাথে আপনাদের যোগাযোগের কোন উপায় নাই। গোপালিয়া সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে আমাকেই জিজ্ঞেস করতে হবে। আফসোস!!!!
ছবিসূত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



