মহান মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের অনেক বছর পরে আমার জন্ম।তাই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে কোন কিছু বলা বা লিখার নেই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মৌলিক লেখা, চলচিচত্র, ডকুমেন্টারি যথেষ্ট পরিমাণে না থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিকৃত লেখালেখি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এখন মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে পরের প্রজন্ম হয়ত উপলব্ধিই করতে পারবে না যে আসলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল কিনা! অনেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বেশ কিছু লেখা লিখেছেন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাই তাদের লেখা যে সঠিক ইতিহাস তুলে আনবে তা অনেকের মনে সন্দিহান। যাই হোক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার জানার অদম্য ইচ্ছা ছিল এবং আছে। কিন্তু বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে যারা দাবি করে আসছে তাদের ভূমিকা আমাকে ভীষণ আশাহত করে। তারা মুখে যাই বলুক কাজে কর্মে রীতিমত ভয়ঙ্কর চিত্র প্রকাশ পায়, মনে হয় যেন মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজ্জল ইতিহাস তাদের হাতেই ধ্বংস হতে যাচ্ছে। আর যাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বলে বলা হচ্ছে আমরা তো কখনও তাদের কাছে ভাল কিছু আশাই করিনা। আমার মামা আমাদের এলাকায় পক্ষ বিপক্ষ শক্তি যাই বলি না কেন সবার কাছে এক মহান বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচিত আমার বড় ফুফাত ভাই তাঁর সাথেই যুদ্ধ করে ছিলেন। এমন কোন লোক নেই যে তাঁদের বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে চেনে না। স্কুলে পড়ার সময় দেখেছি বিশেষ বিশেষ দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁদের মধ্যমণি করে স্কুলের বিশেষ অনুষ্ঠান হত। তাঁরা তাঁদের বক্তব্যে সেই গৌরব গাঁথা দুঃসাহসিক ও অনেক করুণ ঘটনা বলতেন। তাঁদের জ্বালাময়ী বক্তব্য ও গৌরব গাঁথা দুঃসাহসিক ঘটনা আমাদেরকে উজ্জীবিত করত আবার করুণ ঘটনা গুলো আমাদেরকে কান্নায় জর্জরিত করত। এরকম আরও অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন দেশের আনাচে-কানাচে যাঁদের কথা আশেপাশে দলমত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই জানে। তাঁদের জন্য কোন সার্টিফিকেট লাগে না। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে পরিচিত ও তাঁর সুবিধা গ্রহণের জন্যে মুক্তিযুদ্ধের সনদ নেওয়ার জন্যে বহু মানুষ মরিয়া। একে তো সনদ প্রদান প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন আছে তাঁর পর ভুয়া সনদ প্রদান করে নিজের দল ভারী করার পাঁয়তারা চলছে। কি এত দরকার ভুয়া সনদ দিয়ে দলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাড়ান, দেশের মানুষ কি জানে না যে কোন দল নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আমার মনে হয় দেশের মানুষ বিষয়টি ভাল ভাবে গ্রহন করছে না। কোন বিচারেই প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর প্রদত্ত মুক্তিযুদ্ধ সনদ গ্রহন যোগ্য নয়। বাংলাদেশে অনেকই রাষ্ট্র প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী হয়েছে যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের না বিপক্ষের তা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এই পদের সিল যুক্ত প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে গ্রহন যোগ্য ব্যাক্তি বা মুক্তিযুদ্ধের সেনা প্রধানের পক্ষে উপ-সেনা প্রধানের সিল স্বাক্ষর সর্ব সাধারণ গ্রহন যোগ্য হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে যদি কেউ ঔদ্ধতপূর্ণ কথা ও আচরণ প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োগ করা হউক। দেশে কিছু আগাছার পাশাপাশি পরগাছাও জন্মেছে যারা অন্যের খেয়ে অন্যের ঘাড়ে বসে থেকে তারই ক্ষতি করতে চাই। কত বড় আস্পর্ধা হলে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদ এর সংখ্যা নিয়ে ধম্রজাল সৃষ্টি করার সাহস পায়। তিন মিলিয়ন না হলেও তিন লক্ষ এর অবশ্যই বেশি হবে। যারা এই প্রতিষ্ঠিত এবং সর্বজন স্বীকৃত মহান শহীদ এর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বঙ্গবন্ধুর বলা তথ্যটি মিথ্যা প্রমাণে ষড়যন্ত্র করে আর যাই হোক তার বা তাদের বাংলাদেশে থাকার কোন অধিকার নাই। অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার এই সমস্ত পরগাছা বেড়ে ওঠা ও ওদের স্পর্ধা দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছে। বেশ কিছু দিন হল অনেক সরকার দলীয় সংসদ ও কিছু নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি সাহেব কে রাজাকার বলে বকাবকি করছে। কিন্তু কে না জানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকির বীরত্ব গাঁথা মুক্তিযুদ্ধের কথা। সে দলে নেই বলে যা ইচ্ছা তাই বলেই বকাবকি করতে হবে। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান কে অস্বীকার করে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কে অস্বীকার করে। আর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কে অস্বীকার করা যুদ্ধাপরাধীর সামিল। নিঃসচয় জাতি এদেরকেউ একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাবে। সরকার তথা আওয়ামীলীগ এর কোন বিচার করেনি বরঞ্চ এই সমস্ত কুলাঙ্গারদের উৎসাহ দিয়েছে। তাই আজ পরগাছা গুলো বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস কে কালিমা লিপ্ত করতে চাইছে।
তাই আসুন আমরা বিপ্লবী সচেতন জনগণ, কৃষক যেমন নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা উপড়ে ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলে ঠিক তেমনি করে সমাজে বা দেশে গজিয়ে ওঠা দেশি বিদেশী- আগাছা ও পরগাছা সমূলে উপড়ে ফেলি এবং চিরতরে ধ্বংস করে দিই।