ইসলামী আইনশাস্ত্রে মুসাফিরের রোযা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। আমি তার সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
ফিক্বহবিদ বা মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকরা এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর মৌল নীতিমালার ভেতরেই ইজতিহাদ করেছেন, ফলে এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত তৈরি হয়েছে:
এক. ইমাম হাসান বসরী ও আহলি যাহিরের মতে সফরের সময় রমযানের রোযা রাখা জায়িয হবে না। যদি কেউ রাখে, তবে পরে কাযা করতে হবে।
দুই. ইবনু মুবারাক, সুফিয়ান সাওরী, সুলাইমান আ'মাশ, লাইস ইবনু সা'দ প্রমুখের মতে রোযা রাখা জায়িয এবং কাযা করতে হবে না।
তিন. ইমাম আহমদ, আওযায়ী, শা'বী, ক্বাতাদা, মুজাহিদ, সাঈদ ইবনু যুবাইর, সাঈদ ইবনু মুসায়্যিব, ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ, উমর ইবনু আবদিল আযীয প্রমুখের মতে রোযা না রাখাই উত্তম।
চার. ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম শাফিয়ী, ইমাম মালিক প্রমুখের মতে রোযা রাখা উত্তম। পরবর্তীকালের ধর্মতাত্ত্বিকদের মত এটাই এবং ইমাম তাহাভী এই মতই গ্রহণ করেছেন।
ইমাম তাহাভীর যুক্তি
১. অন্তসত্ত্বা অথবা দুগ্ধদানকারিণী মহিলাদের ব্যাপারে সবাই একমত যে, তারা রোযা রাখলে রোযা হয়ে যাবে। কাযা করতে হবে না। তাহলে মুসাফিরের রোযা কেনো হবে না? বস্তুত গর্ভবতী কিংবা দুগ্ধদানকারিণীদের কষ্টের পরিমাণ মুসাফির থেকে কোনো অংশে কম নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের কষ্ট আরো বেশি। সুতরাং রোযা হবে এবং কাযাও করতে হবে না।
২. রমযান মাস আসার সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর রোযা ফরয হয়ে যায়। আর ইসলামী ফিক্বহে ফরয আদায়ের ব্যাপারে অগ্রবর্তীদের মর্যাদা অনেক বেশি দেয়া হয়েছে। আর রোযাও একটি ফরয। কাজেই মুসাফিরের জন্যে রোযা রাখর সুযোগ রয়েছে বরং না রাখার চেয়ে রাখাই উত্তম। এর ওপরই বর্তমান হানাফীদের ঐকমত্য।
বিস্তারিত জানার জন্যে দেখুন:
আওজাযুল মাসালিক, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬
শারহে ইমাম নববী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৫৫
নুখাবুল আফকার, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৫১-২৫৩
ইযাহুত তাহাভী, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২১৯-২৩০।
প্রিয় ব্লগারবৃন্দ, ইসলামের প্রয়োজনীয় বিবিধ মাসআলা সম্পর্কে আপনারা জানতে আগ্রহী হলে নিয়মিত লেখা যেতে পারে। আপনাদের মতামত চাচ্ছি। সবাইকে শুভেচ্ছা!