আজ ৯ই জুলাই ২৫শে আষাঢ় মাসের ঠিক এই দিনটাতে বৃহস্পতিবার আমার জন্ম হয়। এখনো আষাঢ় মাস চলছে। কিন্তু ছোট ছেলেবেলার মধুময় স্মৃতি গুলো ছাড়া জীবনটাকে এখন কঠিন মনে হয়। জীবন থেকে আরও একটি বছর চলে গেল। কতদিন বাঁচবো জানিনা কিন্তু যতদিনই বাঁচি সৎ ভাবে বাঁচতে চাই। ছোটবেলা থেকে আমার জন্মদিন নিয়ে আমার বেশ কৌতুহল কাজ করে। এ কৌতূহলটা হয়তো সবারই কাজ করে। আমার কাছে যেন মনে হয় এই দিনটি বিশেষ। আমার জীবনে কিছু বিশেষ মানুষ রয়েছে যাদের কথা এক বাক্যে বা হাজার বাক্যে বলেও শেষ করা যাবে না, কারণ ওই যে তারা আমার কাছে বিশেষ কিন্তু তাদের কাছে হয়তো আমি তেমনটা নয়। ঠিক এমন ভাবে বললে অবশ্য ঠিক হবে না কারণ এই সমস্ত মানুষগুলোর মধ্যে কিছু মানুষের কাছে আমি অতুলনীয় এবং কিছু মানুষের কাছে হয়তো আমি কিছুই না। তারা যারা আমার গল্পের প্রধান চরিত্র তাদের গল্পে হয়তো আমি কোথাও নেই!! সেই জন্যই হয়তোবা আমার এই বিশেষ দিনটাকে তারা তেমন বিশেষ মনে করেন না।
সে যাই হোক এভাবে কোনদিনও নিজের জন্মদিনের কিছু লিখিনি কিন্তু আজ লিখছি এর বিশেষ কারণও আছে। কারণ আমার এই বিশেষ দিন টা কখনো বিশেষভাবে কাটে না। জীবনের দু একবার আমার এই দিনটা বিশেষভাবে কাটাতে পেরেছি কিন্তু এবারের সময়টা আমার জন্য বেশ কঠিন। আমি ভেবেছিলাম এই বছরের এই জন্মদিনটা আমার খুব খারাপ যাবে কিন্তু কিছু ঘটনা এমন ঘটেছে যেটাতে নিজেই অবাক!!
হাসি আনন্দ বা উচ্ছ্বাসে এখন আর দিন কাটে না. . নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য এবং জীবনের সব গ্লানি মোছার জন্য মানুষের মধ্যে থাকি , হইচই শোরগোল অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও এখন এসবের মধ্যে থাকতেই হচ্ছে আমাকে। স্তব্ধতা আর নীরবতা কাটানোর জন্য অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মায়ের মামাতো ভাই মানে আমার মামার বিয়েতে এসেছি। আমার নানুর বাড়ির মধ্যে শুধুমাত্র এই পরিবারটাকে আমার খুব ভালো লাগে। এখানকার পরিবেশটাই এমন যেখানে আসলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আমার নানীরা ছয় বোন এবং এক ভাই তারা প্রত্যেকটা বোন এতটা মিশুক এতটা অসাধারণ যেটা বলে বোঝানো যাবে না। আমি এখানে এসেছি প্রায় দুই থেকে চারবার। অনেক বছর পর পর আমার মামা এবং খালাদের বিয়েতে আমার আসা হয়েছে। যতবারই এসেছি প্রত্যেকটা মানুষের সাথে এমন ভাবে মিশেছি বা তারা আমাকে এমন ভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে যেন মনে হয়নি এটা কোন দূর আত্মীয়ের বাড়ি। আলহামদুলিল্লাহ্ যেখানেই যাই সকলের স্নেহ পাই। নিজের আপনজনদের কাছ থেকে যে ভালবাসাটুকু পাইনি এখানে এসে যেন মনে হয় সে ভালোবাসাটা পেয়ে যাই। কারণ এখানকার মানুষ গুলো এমন যারা অন্যকে এতটা আপন করে গ্রহণ করে নিতে পারে।
যাইহোক যে মূল কথাটা বলতে আজকের লেখা. আমার জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যেগুলোর জন্য মনে হচ্ছে এ বছরটার জন্মদিনটা আমার সবচেয়ে খারাপ যাবে এবং মানসিকভাবে আমি সেটা মেনেও নিয়েছিলাম ! কিন্তু সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য একটি উত্তম পরিকল্পনা করে রাখে। আমার সাথেও ঘটেছে সেটি। মামার বিয়েতে এসেছি প্রতিবারের মতো মামা খালাদের বিয়েতে যে মজাটা হয় এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু নয় কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ নিজের মনেই যেন কোথায় হারিয়ে যাই। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ তারপরও যে পরিবেশের মধ্যে এসেছি মন-মানসিকতা একদম পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার চেয়েও বড় কথা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম একটি মুহূর্ত যেটি কাল আমার সাথে ঘটেছে!! শুক্রবারে মামার রিসিপশন শেষ হয়েছে এক কথায় মামার হলুদ বিয়ে রিসিপশন সবকিছু কমপ্লিট। গতকাল অর্থাৎ শনিবারে আমরা সবাই মিলে মামার বিয়ে উপলক্ষে একত্রে পার্টি করি। পার্টি বলতে আসলে তেমন কিছু না একসাথে বসে টাইম স্পেন্ড করা, ছোট বড় সকলে মিলে একজন আরেকজনকে সময় দেয়া এসব নিয়ে চলছিল। হঠাৎ করে প্ল্যান হলো গতকাল সবাই একত্রে রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে আর বিলটা পে করবেন আমার দুই খালু। যারা সবচেয়ে হাসিখুশি এবং উৎফুল্ল প্রকৃতির দুজন মানুষ।
মামা খালা নানা নানু সকলে মলে প্রায় ৪৫ জন শুধু আমরাই! রেস্টুরেন্টে পৌঁছে যখন আমরা সবাই যে যার মত বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি, ছবি তুলছি, গল্প গুজব করছি ঠিক সেই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে প্রিয় খালামণি আমার পাশে বসে আমাকে বলতেছেন সুইটু ( আমার খুব কাছের মানুষেরা আমাকে ওই নামে ডাকেন এবং খালামণিও তাদের মধ্যে একজন ) আসো আমরা দুজনে একটা সেলফি তুলি। সেলফিটা তোলা হয়নি কারণ হঠাৎ করে আমাদেরকে বসার জায়গাটা পরিবর্তন করতে হয়েছিল। আর ঠিক সেই মুহূর্তে আমি সেলফিটা তুলেছি কিনা সেটা চেক করতে গিয়ে আমার খালামণি একটা ছবি সামনে বের করে ফেলেন ভুলক্রমে। ছবিতে লেখা হ্যাপি বার্থডে সুইটু! আমি কিন্তু সেই ছবিটা দেখিও নি খেয়ালও করিনি। কারণ অনুমতি ছাড়া কারো সেলফোন লক্ষ্য করাটা আমার কাছে অপছন্দের। আমার খালামনি মনে করেছেন আমি সবকিছু বুঝে গেছি। তাই বোকার মত গরগড় করে উনার সব সারপ্রাইজ বলে ফেলেছেন আমাকে। সুইটি আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিলাম আর সেই জন্য আমি বার্থডে কেকও কিনে নিয়ে এসেছি। সবাই লাঞ্চ করার পর আমি তোমাকে ভেবেছিলাম সারপ্রাইজটা দিব। সবাইকে নিয়ে একসাথে কেক কাটবো কিন্তু এখন তো আর তোমার সারপ্রাইজটা রইল না!! আমি কিছু বুঝবো কি বোকার মত হয়ে শুধুমাত্র খালামণির দিকে তাকিয়ে ছিলাম অবাক হয়ে!! কারণ আমার মামার বিয়েতে পুরো বাড়িতে যদি কেউ সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সবচেয়ে বেশি চাপের মধ্যে দিয়ে থাকেন তাহলে শুধুমাত্র এই আমার ছোট খালামণিটাই! উনি দশ দিক সামলে যে আমার জন্মদিনের কথা মনে রেখেছেন এবং এইভাবে আমাকে সারপ্রাইজ দিবেন ব্যাপারটা সত্যি অতুলনীয়! নিজের আপনজনেরাও এমনটা আমার জন্য ভাবে না বা করে না। সত্যি বলতে আমি আমার জীবনে এতটা আনন্দ খুব কমই অনুভব করতে পারি। বিশেষত এই সময়টাতে, যে সময়টাতে জীবনের সবচেয়ে উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যেখানে আমার জন্মদিনে সাধারণভাবে মানুষের উইশ করা পর্যন্ত আমার ভাগ্যে জোটে না সেখানে এত বড় একটা সারপ্রাইজ পেয়েছি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি এটা আমি কোনদিনও ভুলতে পারবো না!! যদিও আমার কিছুটা লজ্জা লাগছিল কিন্তু এতটা হ্যাপিনেস আমি আমার জন্মদিনে ঠিক আগের দিন পাব এটা ধারণার বাইরে ছিল!
এই পাওয়াটা আমার সকল গ্লানি ভুলিয়ে দেয়! আমি ঠিক সেই মুহূর্তে রেস্টুরেন্টে আন্টির কাছে থেকে কথাগুলো শুনে আমার বড় বোনকে নক করলাম সুমাইয়া আন্টি আমার জন্য বার্থডে প্ল্যান করেছেন। আমাকে সারপ্রাইজ দিবেন বলে এই এই প্লানগুলো ঠিক করেছিলেন তখন আমার বড় বোন আমার কথাগুলো শুনে প্রায় কান্না করে দিচ্ছিল খুশিতে!! আমি শুধু অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে আমার বোন খুশি না হয় এভাবে কাঁদছে কেন? তখন শুধু আমার বোন একটা কথা আমাকে বলেছিল দেখ আমি দূরে থাকি অথচ তোর খুশিটার থেকে আমার কাছে বড় কিছু নেই। আমি শুধু ছোট খালামণিকে বলেছিলাম যে আগামী কাল তোর বার্থডে তোকে যেন অন্তত একটু উইশ করে দেয় কিন্তু উনি যে তোকে নিয়ে এত কিছু ভেবে রেখেছিলেন এটা আমার এটা ধারণার বাইরে ছিল!! আসলে আমার জন্মদিনে এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া সারপ্রাইজ! আল্লাহ একটা মানুষের প্রতি কতটা খুশি হলে তার চারপাশে এতটা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার মত মানুষ তাকে দিয়ে দেয়!! আমার জন্মদিন উপলক্ষে দেয়া আমার খালামণির পক্ষ থেকে এতটা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং আমার বোনের এতটা আন্তরিকতা কোনদিন ভুলবো না। মানুষ যে বলে একজন মানুষ খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যতই যাক না কেন আল্লাহ তার জন্য একটা উত্তম পরিকল্পনা করে রাখেন যাতে করে তার মনটা সম্পূর্ণ বদলে যায়। আজকে তা নিজের জীবনে অনুভব করতে পেরেছি!
এই লেখাটা লিখছি যখন রাত চারটা বাজে তখন থেকে। রাত সাড়ে বারটার পর থেকে নিয়ে রাত সাড়ে তিনটা অবধি আমি, ছোট খালামনি, সমবয়সী দুই আত্মীয়ের সাথে গল্প করছিলাম। জন্মদিনের দিনেই বাড়ি ফিরে যাবো বলে তাই একসাথে বসে সকল ব্যস্ততার মাঝে এই একটু ফ্রি সময়ে মন খুলে একটু কথা বলতে পেরেছি তাই সময়ের কোন খেয়াল ছিল না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! কারণ সারাটা দিন কেমন যাবে জানি না কিন্তু এই দিনের শুরুটা হওয়ার আগের মুহূর্তগুলো আমার কাছে সারা জীবনের জন্য সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে। এখন আর মনে কোন আফসোস নেই কারণ আল্লাহ আমার জন্য এমন পরিকল্পনা করে রেখে দিয়েছিলেন যাতে আমার মনটাই ভালো হয়ে যায়। হয়তো জীবনে এমন কোন ইবাদত করেছিলাম যার ফলস্বরূপ আল্লাহ আমার প্রতি এতটা দয়াশীল এবং আমাকে প্রতিমুহূর্ত রক্ষা করেন। আলহামদুলিল্লাহ!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৩৫