ছবি : নিজের তোলা
যাত্রা শুরুর গল্প:
আজ এক ভিন্ন রকম এক ভ্রমণের গল্প নিয়ে এই লেখা। গত ১০ ই অক্টোবর আমাদের ফাইনাল ইয়ার এর ফার্স্ট টার্ম এক্সাম চলছিল ঠিক সেই সময়েই থার্ড ইয়ার এর রেজাল্ট দিল যেটার জন্য অনেক আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম। যাই হোক আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং সবার দোয়ায় যেমন আশা করেছিলাম তেমন ভালো রেজাল্ট হলো এমনকি আশার চেয়েও ভালো পেয়েছি! ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট আলহামদুলিল্লাহ! যার পেছনের গল্পটা এবং প্রাপ্তিটা ছিল ভাষায় প্রকাশ করার মতো না! প্রাপ্তির পেছনের নিরলস পরিশ্রম টা ছিল যেমন কষ্টকর তেমনি প্রাপ্তির আনন্দটা ছিল তেমনি তৃপ্তিময়! সে যাই হোক সেটা অন্য কথা ভেবেছিলাম এই নিয়ে একটা ব্লগ লিখব কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আর লেখা হয়ে ওঠেনি। রেজাল্ট পাওয়ার পর আমার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, টিচাররা এবং আমি নিজেও আনন্দিত হয়েছি কিন্তু তারপর আবার আমার সেই দৈনন্দিন বোরিং জীবন!!
এরমধ্যে হঠাৎ করে একদিন আমার ছোট চাচার বাসায় গিয়ে ভাই বোনদের নিয়ে বাবার সাথে গল্প করছি।(আমরা সবগুলো ভাইবোনই আমাদের চাচাদেরকে বাবা বলে ডাকি) হঠাৎ করেই ছোট বোন আর আমি বাবাকে বলে উঠি বাবা আমাদের দুইবোনকে নিয়ে চল নানু বাড়িতে একদিনের ট্যুরে যাই! বাবা বলে উঠলেন এখন না, তোমাদের দুজনকে একা নিয়ে যাওয়া যাবে না যেতে হলে সবাইকে নিয়ে একসাথে যেতে হবে, এই সময় আমার ছোট চাচার মামা শশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন (যিনি আমাদের সম্পর্কে নানা হলেও আমরা তাকে বাচ্চু ভাই বলেই ডাকি আর আমার নানুকে আমরা ভাবি বলে ডাকি। আমি এইরূপ সম্বোধনে আমি হতচকিত হয়ে গিয়েছিলাম যদিওবা কিন্তু এখন আমার কাছে এই ডাকটাই খুব ভালো লাগে)। বাচ্চু ভাই হঠাৎ করে বলে উঠলেন আমাদের সবাইকে নিয়ে তাদের বাড়িতে একটা ট্যুর যেন হয়ে যায় কিন্তু তখন আমি জানতাম সবার যাওয়া হলেও আমার কখনো যাওয়া হবে না। কারণ আমি কখনোই তেমন একটা ঘুরতে যেতে পারি না। এর আগেও প্রায় দশ বছর আগে ছোট চাচার শ্বশুরবাড়িতে আমার বড় বোন এবং আমি ছোট চাচার পরিবারের সাথে একটা ট্যুর হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাবা মা ছাড়া আমাদেরকে কোথাও যেতে দেওয়া হয় না বলে অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সেখানে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি ! যদিও আমার বড় বোনের সেই আফসোস এখনো আছে।
সে যাই হোক, আমি তো জানতাম বাবারা যদি কখনো সময় করে যায়ও তাহলে আমি তো আর যাচ্ছি না। আমার যখন মাঝেমধ্যে খুব খারাপ লাগে তখন আমি ছোট চাচাদের বাসায় আসি এবং আমার ছোট চাচা এবং আমার চাচির সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে মন ফ্রেশ করে বাসায় ফিরে আসি। সেদিনও বাবা-ছোটমা, ভাই-বোন, বাচ্চু ভাই আর ভাবির সাথে বসে গল্প করছিলাম। গল্পে গল্পে বাচ্চু ভাই হঠাৎ করে জানতে পারলেন আমি ঢাকা এবং সিলেট ছাড়াও অন্য কোথাও কখনো যাইনি। আর এই দুইটা জায়গায় যে আমি খুব বেশি ঘোরাফেরা করেছি তাও নয় খুব বেশি আমার ঘুরতে বেড়ানো হয় না। তাই বাচ্চু ভাই বাবাকে বললেন যখনই যাওয়া হবে যেন অবশ্যই আমাকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়া হয়। সেইদিন তো আমি গল্প করে বাসায় ফিরে আসি খুশিমনে কোন একদিন তাদের ওখানে বেড়াতে যাবার খুশিতে নয় বাচ্চু ভাই এবং ভাবি বেশ মজার মানুষ তাই তাদের সাথে গল্প করে আমার বেশ ভালো লাগছিল!
এ ঘটনার দুইদিন পরে বাচ্চু ভাই গ্রামে ফিরে গেলেন এবং ঠিক এক সপ্তাহ পরে হঠাৎ একদিন বাবা আমাদের বাসায় আসলেন। আমি তখন বাসায় ছিলাম না, কোন একটা কাজে আমি বাইরে ছিলাম। তখন বাবা আব্বুর কাছে এসে বললেন আমরা সবাই শরীয়তপুর যাব বলে চিন্তা করেছি। আমি চাচ্ছি সুইটিকে ( আমার আপনজনেরা আমাকে ওই নামে ডাকেন) সাথে নিয়ে যেতে। আপনি কি বলেন ভাই? আমার আব্বা আমার ছোট চাচাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন! তখন আমার বাবা বললেন তোর মেয়েকে তুই নিয়ে যাবি। যা, কিন্তু দেখ ও যেতে চায় কিনা। আমি বাসায় আসতেই আব্বা আমাকে খুশি মনে বলতেছে তোর বাবা তোকে শরীয়তপুর নিয়ে যেতে চায়। যা বাবার সাথে ঘুরে আয়, মনটা বেশ ভালো লাগবে!! আব্বার বলার ধরনেই আমি বুঝতে পারি আমাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটাতে তারা দুজনেই অনেক আনন্দিত। আব্বার কাছে খবরটা পেয়ে আমারও বেশ খুশি লাগছিল। কারণ আমি জানি আমার ছোট বাবার সাথে যাওয়া মানে আব্বু আম্মু আমাকে বাধা দিবেন না বরং খুশি মনেই যেতে দিবেন। কিন্তু প্রশ্ন হল আমি আমার আব্বা আম্মা ছাড়া উনাদের সাথে যেতে পারব কিনা? কারণ আমি কখনোই আমার আব্বু আম্মুকে ছাড়া দুরে কোথাও যাই নি। তারপর অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম যে নাহ! এইভাবে যাওয়াটা ঠিক হবে না! যদিও আমি জানতাম খুব দারুন একটা ট্রিপ মিস করতে যাচ্ছি কিন্তু তারপরও আমি যাব না। কারণটা খুব সহজ। আমি এখন আর সেই ছোট্টটি নেই। যতই ভালোবাসুক বাবা মা ছাড়া এইভাবে হুট হাট অন্য কারো সাথে তাও আবার এতদিনের জন্য অসম্ভব!!আব্বু আম্মু যেতে বললেও না!
ওইদিকে আমার বাবা( আমার ছোট চাচা) আমাকে নিয়ে যাবে বলে আশা নিয়ে আছেন আর এইদিকে আমি ভাবছি কিভাবে বাবাকে না বলা যায়। এর মধ্যে আমার আব্বা আবার আল্লাদে গদোগদো হয়ে বলছেন, "তুমি না গেলে বাবার মনটা খারাপ হয়ে যেতে পারে। বাবা অনেক আদর করেই তোমাকে নিয়ে যেতে চাইছেন "( যদিও এতে সন্দেহ নেই। আমার এই চাচা সবাইকেই এমন ভালোবাসেন তাই সকলেই তার এক কথায় জান হাজির, আলহামদুলিল্লাহ্ ) পরে সব চিন্তা বাদ দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় ( যেদিন রাতে শরীয়তপুরের জন্য রওনা হব ) আমি আমার এক্সট্রা ক্লাসে জয়েন করলাম। কারণ আমি জানি আমি যাচ্ছি না, মানে যাচ্ছি না!!!
যার কাছে পড়তে গেলাম তিনি আমাদের ই একজন বড় ভাই। মানে আমাদের পারিবারিক লোক। সেই ছোট থেকেই ভাইয়ের সামনেই বড় হয়েছি, ভাইয়ের কাছে পড়েছি। আত্মীয়স্বজন সকলেরই উনি চেনা। আমাদের সব ভাইবোনেরাই কমবেশি উনার কাছেই পড়েছি। এখনো পড়ছি। ভাই আমাকে দেখে বলতেসেন কিরে পাঙ্গাস!! তুই এমন ডাউন কেন আজ? ( এখানে বলে রাখা ভালো ভাই আমাকে এই জাতীয় নামে ডাকেন। এমনকি এই নিয়ে উনি গল্পও বানিয়েছেন! উনার সব স্টুডেন্টরাই অনার্স-মার্স্টারসের। আমার মনে হয় না এমন কেউ নাই যারা আমার এই নাম আর এই নামের ঘটনাটা জানে না। এমনকি কয়েকজন তো আমার ফোন নাম্বার পাঙ্গাস নামে সেভ করেছেন!! কেউ হুট করে আমাকে দেখে না চিনলে এই নাম বললেই তাশ করে চিনে ফেলে!! কি অদ্ভুত!! সেই ঘটনাটা বেশ মজাদার। একদিন এই নিয়ে একটা লেখা পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ ) ভাইকে বললাম ভাই আজ মজার একটা ট্রিপ মিস করে ফেলবো।
- কিসের?
- আজ ছোট বাবারা শরীয়তপুর জাবেন এক সপ্তাহের জন্য। আমাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন যদিও আমার অনেক ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু এতদিন থাকাটা আমার জন্য অসম্ভব। যদি ২-৪ দিন হতো তাহলে না হয় আমি যেতাম। কিন্তু এইভাবে এতদিন তো আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না, তাই আর যাবো না। ভাই বলতেসেন গেলে কি সমস্যা? যাও, চাচাতো ছোট ভাইবোনেরা তো সাথেই থাকবে ভালো লাগবে।
- কিন্তু ভাই ওরা তো আর আমার সমবয়সী না। আমি একটা অচেনা জায়গায় গিয়ে তো আর ওদের মতো ঝাপাঝাপি করতে পারব না ( আমার এই স্বভাব গুলার কারণেই বড়রা আমাকে আদর করেন আর ছোট গুলা তেক্ত হয়ে যায়। বলে, "তোমার জন্য আমরা লিমিট ক্রস করতে পারি না। করলেই বকা খাই যদিও আমি কিন্তু কারো কোন বিষয়েই কথা বলি না। কিন্তু আমার জন্য ওদের ভদ্র হয়ে থাকতে হয়। অবশ্য আমিও অনেক এঞ্জয় করি কিন্তু পরিবারের সাথেই আমার ভালো লাগে। ) পড়ে ভাই বলেন বুঝেছি তোর চাচাতো বোনটা তোর বা তোর বড় আপার স্বভাব পায়নি। ভাই যদিও এটা বোঝেন, আমিও কিন্তু কি আর করা....
(পারিবারিক ভ্রমণের একটি বিস্তারিত অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হবে। আশা করি পাঠকদের ভালো লাগবে! সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তী পর্বগুলো শীঘ্রই পোস্ট করা হবে। সাথেই থাকুন)
জানিনা পোস্টটি নির্বহনের মারদাঙ্গা মার্কা হচ্ছে কিনা কিন্তু আমার জন্য এটি মারদাঙ্গা অভিজ্ঞতা ছিল! মিনিটে মিনিটে টুইস্ট পরবর্তী পোস্টের টুইস্টের অপেক্ষায় থাকুন
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪২