somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টোরোন্টোর স্বামী নারায়ন মন্দির BAPS Shri Swaminarayan Mandir complex of Toronto.

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধর্ম কর্মে বিশ্বাস আমার নেই। কেউ যদি আমার মন্দির ভ্রমনের কাহিনী শুনে আমাকে ধার্মিক সাব্যস্ত করে নেন তার দায়িত্ব আমার নয়। কিন্তু উপসনালয় গুলোর প্রতি আমার অনেক আকর্ষন। কারন হল এই উপসনালয়গুলোর বিশালত্ব, সৌন্দর্য্য, এবং এর স্থাপত্য কলা। যে উপাসনালয় গুলো আমি দেখেছি সে গুলো হল দিল্লীর জামে মসজিদ, বিড়লা মন্দির, লন্ডনের সেন্টপল গির্জা, প্যারিসের নটরড্যাম গির্জা, মন্ট্রিয়ালের সেন্ট জোসেফ ওরেটরী ব্যাঙ্গককের মন্দির ইত্যাদি। উল্লেখিত উপসনালয় গুলো এক কথায় বলতে গেলে অপুর্ব। যে উপসনালয় গুলো দেখার ইচ্ছে এখনও আমার আছে সে গুলো হল জেরুজালেমের “টেম্পল মাউন্ট এবং মসজিদ আল আকসা, তুরস্কের ইস্তাম্বুলের নীল মসজিদ এবং দক্ষিন ভারতের ত্রিভান্তপুরমের পদ্মস্বামী মন্দির এবং ক্যাম্বোডিয়ার আঙ্গকর ভাট ম্নদির। । মক্কা মদিনার ধর্মীয় স্থান সমুহ দেখার ইচ্ছে আমার আছে কিন্তু আমি সে অনুমতি পাব না।
রবিবার ছুটির দিন। বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম । কোথায় যাই কোথায় যাই ভাবতে ভাবতে চলছিলাম পাতাল রেল দিয়ে। হঠাৎ মনে পড়ল ২০০৭ সালে যেবার কানাডার ইমিগ্রান্ট হলাম সে বছরে টোরোণ্টোতে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করেছিলেন এক মন্দির। সেল ফোনের ইন্টারনেট ব্যবহার করে নাম ঠিকানা যোগাড় করলাম। তখন আমি পাতাল রেল এর প্রায় উত্তর প্রান্তে। আবার সেল ফোনের গুগল ম্যাপ দিয়ে জেনে নিলাম কিভাবে পৌছান যায় টরোন্টোর স্বামী নারায়ন মন্দিরে।




অতঃপর মন্দির ভ্রমন। মন্দিরটার নাম হল BAPS Shri Swaminarayan Mandir complex । মন্দিরে ঢুকে এর স্থাপত্যকলার ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা তাক করতেই একজন স্বেচ্ছাসেবক সবিনয়ে এসে জানালেন মন্দিরের ভিতরে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। BAPS শব্দের অর্থ B= বোচা সন্যাসী A= অক্ষরানন্দ, P=পুরুষোত্তম,S= স্বামী নারায়ন সংস্থা। প্রতিষ্ঠাতা সন্যাসীর নাক বোচা ছিল কিনা তা আমি জানি না বা হয়ত গুজরাটি শব্দ “বোচা’র হয়ত পবিত্র কোন মানে থাকতে পারে। ভগবান স্বামী নারায়ন ১৭৮১ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে জন্ম গ্রহন করেন। অল্প বয়সে গৃহত্যাগ করে সারা ভারতের তীর্থস্থান সমুহ পরিভ্রমন শেষে গুজরাটে তার আশ্রম গড়ে তোলেন, গড়ে তোলেন স্বামীনারায়ন সম্প্রদায়। সেখানে তিনি ধর্মের আধ্যাত্মিক বানী প্রচার করতে থাকেন। ৪৯ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন স্বামী নারায়ন। ১৯০৭ সালে শ্বাস্ত্রীজি মহারাজ প্রতিষ্ঠা করেন স্বামীনারায়ন সংস্থা। তাদের মুল মন্ত্র হল পাচটি ১) মদ খাওয়া নিষিদ্ধ ২) নেশা পরিহার ৩) নিরামিষ আহার ৪) যৌন সংযম এবং ৫) মন ও শরীরের বিশুদ্ধতা।বর্তমানে এই সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রমুখ স্বামী মহারাজ তিনি হলেন ৫ম মহারাজ এবং তার বয়স এখন ৯৫ বছর। সারা পৃথিবী ব্যাপী এদের কার্য্যক্রম বিস্তৃত। আমেরিকা, লন্ডন, আফ্রিকা প্রভৃতি স্থানের পর ২০০৭ সালে স্থাপিত হয় টোরোন্টোর এই মন্দির।




টোরোন্টোর এটোবিকোক শিল্প এলাকার ৬১,ক্লেয়ারভিল ড্রাইভে অবস্থিত এই মন্দিরটি বেশ বড়, আমার ধারনা ১৫/২০ একর হবে এর আয়তন। মন্দিরের দুটো অংশ। ১) মন্দির ,২) মন্দির সংলগ্ন হাভেলী। হাভেলীতে আছে পাঠাগার,অডীটোরিয়াম বা সভাস্থান, রেস্টরুম, অভ্যর্থনা, স্যুভেনির শপ, ইত্যাদি। এই অংশটাই বড়। হাভেলীর ভিতরের অংশ প্রতিটা কক্ষ অপূর্ব করে সাজানো। কাঠের কারুকাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন পশুপাখি, প্রাচীন ভারতীয় জীবনযাত্রা ধর্মীয় কাহিনী। যেহেতু ভিতরে ছবি তোলার অনুমতি ছিল না তাই সে দৃশ্য উহ্য থাকল।




এবার মন্দিরটায় আসি। ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীর সাথে আধুনিকতার অপূর্ব সমন্বয় এখানে। সম্পূর্ন স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত মন্দিরটি। মন্দিরের দেওয়াল এবং মুর্তিগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রাচীন ভারতীয় কলা,ঐতিহ্য এবং দর্শন। ৪০০ সেচ্ছা সেবক ১৮ মাস পরিশ্রম করে গড়েছেন এটি। মন্দিরের ভিতরের এবং বাইরের দেওয়ালে বিভিন্ন দেব দেবীর মূর্তি। দেবতাদের মূর্তি ছিল মদির অভ্যন্তরে ছোট ছোট প্রকোষ্ঠে। সম্পূর্ন শ্বেতপাথরের তৈরী মনে হলেও এখানে ব্যবহার করা হয়েছে উৎকৃস্ট ২২৬০ টন ইতালীয় কারারা মার্বেল পাথর, ২৬৩৮ টন তুর্কী লাইমস্টোন এবং ১,৪৮৭টন ভারতীয় স্যান্ডস্টোন। এ মন্দিরে কোন লোহা ব্যবহার করা হয় নি। ২৪ হাজার খন্ডে এটাকে আলাদা ভাবে সম্পূর্ন হাতে তৈরী করা হয় ভারতে। ২০০৭ সালের ২২শে জুলাই এই মন্দির উদবোধন করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওন্টারিওর মুখ্যমন্ত্রী-ম্যাক কুইন্টি, টোরোন্টোর মেয়র ডেভিড মিলার , এবং ভারতীয় রাস্ট্রদুত রামনজী মহারাজ। সংস্থার প্রধান প্রমুখস্বামী মহারাজ মন্দিরকে উৎসর্গ করেন কানাডার জনগনের উদ্দেশ্যে। শ্রম এবং জায়াগার দাম বাদে মন্দির তৈরীতে খরচ হয়েছিল ৪০ মিলিয়ন ডলার।



উপাসনার পাশাপাশি মন্দিরের রয়েছে সেবা কার্য্যক্রম। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে আছে, হেলথ ক্যাম্প, ভাষা শিক্ষা কর্মসূচী ইত্যাদি। এখানকার রক্ষনাবেক্ষন এবং পরিচালনা সম্পূর্ন স্বেচ্ছাসেবীরাই করেন। অভ্যর্থনায় কাজ করছিলেন যে ভদ্রলোক তিনি একজন ডাক্তার। ছুটির দিন রবিবারে মন্দিরে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছিলেন। দূর দুরান্ত থেকে অনেকে আসেন মন্দির দেখতে। অনেক সিনেমার শ্যুটিংও হয় এখানে, একদিন ফরাসী এবং আরেকদিন জাপানী কোন এক ফিল্মের শ্যুটিং দেখেছিলাম। নব বিবাহিত বরবধুরা হানিমুন করতেও আসেন, স্কুল এবং সামাজিক সঙ্গঠন থেকেও ছেলে মেয়েরা আসেন ভারতীয় মন্দির দেখতে । অপূর্ব দেখতে এই মন্দিরটি। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই যেতে পারেন মন্দিরে।




৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"

এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমূদ্র-সৈকতে - ১৬

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯



ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁআআআচ্চুউউউ! :) :D ;)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৩৩



হাঁচতে নাকি জানে না কেউ,
কে বলেছে বোন
এই দেখোনা কত্ত হাঁচির
ওজন শত টন।

কিম হাঁচে বাড়া ভাতে,
বাইডেন হাঁচে তার সাথে সাথে,
লালচে চীনের জোরসে হাঁচি,
কাঁদে সবুজ ঘাস।
মাদার রুশের হাঁচি দেখে
হয় যে বনবাস!!

বনবিবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু

লিখেছেন নিবারণ, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪

বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×