স্বাধীনতা' শব্দটা যেকোনো জাতির জন্যেই গৌরবের। বড়ই মূল্যবান শব্দ এই 'স্বাধীনতা'। বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা আর রক্তাক্ত ইতিহাস আছে অনেক জাতির স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে। কিন্তু সেই স্বাধীনতা যদি এমন হয় যেটা না চাইতেই পাওয়া যায়? তখন সেটার অনুভূতি কেমন হবে? প্রশ্নটা করুন সিঙ্গাপুরবাসীদের। তারা এর জবাবটা জানে।
....
দীর্ঘকাল পরে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়ে সিঙ্গাপুর ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়ার সাথে যুক্ত হয়। সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক নেতারা চেয়েছিলেন মালয়েশিয়ার অংশ হিসেবে থাকতে। কিন্তু কেন জানি দুই অঞ্চলের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ঠিক ব্যাটে-বলে মিলেনি। সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার অংশ হিসেবে যোগদানের সাথে সাথেই দুই অঞ্চলের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে।
....
১৯৬৪ সালে জাতিগত দাঙ্গা বেঁধে যায় মালয়দের সাথে সিঙ্গাপুরের চাইনীজদের। এই দাঙ্গা বাঁধার মূল কারণ ছিলো 'সিঙ্গাপুর পিপলস অ্যাকশন পার্টি' এর মালয়েশিয়া ফেডারেল ইলেকশনের ফলাফলকে বর্জন করা। যদিও পরে মালয়েশিয়া সরকার ঘোষণা করে- এই দাঙ্গার পেছনে ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্টদের ইন্ধন আছে। আর এদিকে সিঙ্গাপুর দাবী করে এটা আসলে মালয়েশিয়া সরকারেরই চক্রান্ত।
....
পরে ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী 'টুঙ্কু আব্দুল রহমান' প্রস্তাব করেন সিঙ্গাপুরকে ঘাড় ধরে মালয়েশিয়া থেকে বের করে দেবার জন্যে। সেই বছরেই সিঙ্গাপুরকে মালয়েশিয়ান ফেডারেল ইউনিয়ন থেকে বের করে দেয়া হয়। ১৯৬৫ সালের ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুরের নেতা 'লী কুয়ান ইউ' অশ্রুসিক্ত নয়নে বিশ্ব মিডিয়ায় সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যদিও সেটা আনন্দাশ্রু ছিলো নাকি বিষাদের- তা নিয়ে প্রশ্ন আছে!
....
স্বাধীন হয়েই সিঙ্গাপুর পড়ে বেকায়দায়। কারণ এই স্বাধীনতার জন্যে তারা প্রস্তুত ছিলো না। অতি ক্ষুদ্র জায়গায় বিশাল সংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠীর আবাসন এবং কর্মসংস্থানের যোগান দিতে পুরো হিমশিম খেতে হয়। ফলে সিঙ্গাপুর সরকার সদূরপ্রসারী কিছু পরিকল্পনা নেয়। তাদের শক্তিশালী দিক হচ্ছে সমুদ্র যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেটাকেই পুঁজি করে ব্যবসায় খাতকে পুরো উন্মুক্ত করে দেয় বিশ্বের কাছে।
....
সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে মাত্র এক প্রজন্মেই দাঁড় করিয়ে ফেলে তাদের অর্থনৈতিক ভারসাম্যতা। তারা বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে এমনই শক্তিশালী যে ২০০৮ হতে শুরু হওয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় খুব সামান্য আঁচড়ই পড়ছে তাদের গায়ে। অর্থাৎ সিঙ্গাপুর হচ্ছে বাংলা সিনেমার সেই নায়কের মত- যাকে বখে যাবার ফলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরে সে কঠোর পরিশ্রম করে স্বাবলম্বী হয়ে গেছে!
....
প্রশ্ন,,, আমাদের চোর সাম্রাজ্যের প্রতিনিধিদের উচিৎ ওদের কাছে প্রাইভেট পড়া। যাতে আমরাও একদিন আলোর মুখ দেখতে পারি। (সূত্র : ইতিহাস কথা বলে)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫