somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দংশন (আগাথা ক্রিস্টির 'স্যাড সাইপ্রেস' উপন্যাসের অনুবাদ) - পার্ট ৩

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বালিশে ভর দিয়ে বসে আছেন মিসেস ওয়েলম্যান। ভাইঝির মত নীল চোখদুটো তার তাকিয়ে আছে ছাদের দিকে। চেহারায় গর্বের ছাপ।

‘মেরি...’
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেরি চমকে তাকালো।
‘উঠে পড়েছেন তাহলে।’
‘আমি অনেকক্ষণ থেকেই জেগে আছি।’

বিছানার পাশে এলো মেরি।

‘তুমি আমার এত যত্ন করেছো, মেরি...’
‘ওভাবে বলবেন না। বরং আপনিই আমার খেয়াল রেখেছেন। আপনি না থাকলে আমার কী যে হতো...’
‘আমার খুব চিন্তা হয়, মেরি। আমার একটা বড় দোষ আছে- অহংকার। এলেনরও সেটা পেয়েছে। আমার ভয় লাগে- কোনো ভুল করছি না তো?’ শুধু ডান হাতটা নড়ে মিসেস ওয়েলম্যানের। বাকি শরীর নিশ্চল।
‘মিস এলেনর আর মি. রডরিক আসছেন আজকে। ওনারা আসলেই দেখবেন ভালো লাগছে।’
‘ভালো তো লাগেই, ডাকলেই ওরা চলেও আসে। কিন্তু আনন্দের জীবন থেকে ওদেরকে এই রোগ-শোকের মাঝে আনতে ইচ্ছা করে না’, আপন মনে মিসেস ওয়েলম্যান বলে চললেন। ‘সারাজীবনই চেয়েছি ওরা দুজন বিয়ে করুক। কিছু অবশ্য বলিনি, আজকালকার ছেলেমেয়ে তো! এলেনর যে রডিকে পছন্দ করে, সেটা ছোটবেলা থেকেই মনে হয়েছিলো, কিন্তু রডির ব্যাপারটা বুঝিনি তখন। একদম হেনরির মত হয়েছে ছেলেটা- অন্তর্মুখী... আমাদের সংসার ছিলো মাত্র পাঁচ বছরের। তারবর ডাবল নিউমোনিয়ায় চলে গেলো হেনরি। সুখেই ছিলাম আমরা দুজন, কিন্তু সবকিছু কেমন যেন অবাস্তব লাগতো আমার...’
‘নিশ্চয়ই পরে অনেক একা হয়ে গিয়েছিলেন আপনি’, সমবেদনা মেরির কণ্ঠে।
‘পরে? হ্যাঁ। অনেক। আমার বয়স তখন ছাব্বিশ... আর এখন বয়স ষাট পেরিয়েছে। অনেকদিন তো হয়ে গেলো... আর এখন এই প্যারালাইসিস! বাচ্চাদের মত পরনির্ভরশীল হয়ে গেছি আমি। ও’ব্রায়েন ঠিক আছে, কিন্তু তুমিই আমার সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা।’

কৃতজ্ঞতা জানালো মেরি।
‘ভবিষ্যৎ নিয়ে তোমার অনেক চিন্তা হয়, না? সব আমি দেখবো। তুমি আর কটা দিন একটু ধৈর্য ধরো’, গলা ধরে এলো লরা ওয়েলম্যানের। ‘তুমি-- তুমি তো আমার মেয়ের মত। আমার চোখের সামনে বড় হয়েছো। আশা করি তোমার কিছু উপকার আমি করতে পেরেছি।’
‘যদি আপনার মনে হয় আমার এত যত্ন নিয়েছেন, আমার সামাজিক অবস্থানের চেয়ে ভালো স্তরের পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছেন আর বাবার ভাষায়- আমার মাথায় ‘ভদ্রমহিলাগিরি’ ঢুকিয়েছেন বলে আমি অসন্তুষ্ট, সেটা মোটেও সত্যি না। আমি কাজ করতে চাই কারণ আমার মনে হয় এটাই উচিত হবে। আপনি আমার জন্য এমনিতেই অনেক করেছেন। আমি এবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’
কঠিন গলায় মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, ‘জেরার্ড তোমার মাথায় তাহলে এসব ঢোকাচ্ছে? ওসব একদম কানে তুলবে না, মেরি। আমি তোমাকে থাকতে বলছি আমার জন্যেই। আমার ইচ্ছা শুনলে তো ওরা ডাক্তার-নার্স না টেনে সব যন্ত্রণা এখনই শেষ করে দিতো।’
‘না, মিসেস ওয়েলম্যান! ডা. লর্ড বলেছেন আপনি আরো অনেকদিন বাঁচবেন।’
‘এভাবে বাঁচার কোনো ইচ্ছা নেই আমার। সেদিন আমি ওকে বলেছিলাম, সভ্য দেশ হলে আমি বললে ওষুধ দিয়ে আমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতো। বলেছিলাম, ব্যাটাছেলে হলে সেটাই ওর করা উচিত। ফাজিল ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে বলে ফাঁসিতে ঝোলার কোনো ইচ্ছা নেই তাই, অবশ্য সব সম্পত্তি ওর নামে লিখে দিলে অন্য কথা। ফাজিল হলেও ছেলেটা অবশ্য ভালো। ওর আসাটাই ওষুধের চেয়ে বেশি কাজে দেয়।’
‘উনি আসলেও ভালো। নার্স ও’ব্রায়েন আর হপকিন্স- দুজনেই ওনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।’
‘হপকিন্সের আর ওসবের বয়স নেই। আর ও’ব্রায়েনের কাজ তো হলো ডাক্তার ওর কাছে গেলেই সিনেমার নায়িকাগিরি করা। মেয়েটা খারাপ না অবশ্য। আসলে নার্সদেরই আমার সহ্য হয় না।’ একটু থামলেন তিনি। ‘গাড়ি এলো নাকি?’
বাইরে তাকালো মেরি। ‘জ্বি। মিস এলেনর আর মি. রডরিক চলে এসেছেন।’

‘তোমার আর রডির খবর শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে, এলেনর।’
‘জানতাম তুমি খুশি হবে, ফুপু’, মুচকি হেসে বললো এলেনর।
একটু ইতস্তত করে বললেন মিসেস ওয়েলম্যান, ‘তুমি ওকে- ভালোবাসো তো, না?’
ভুরু উঁচু করলো এলেনর। ‘অবশ্যই।’
‘এভাবে বলছি দেখে কিছু মনে কোরো না, এলেনর। তুমি তো আসলে অনেক চাপা স্বভাবের, তাই কিছু বোঝা যায় না। কয়েক বছর আগে আমার মনে হতো রডিকে বুঝি তুমি-- একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলেছো...’
আবারও ভুরু উঁচু করলো এলেনর, ‘একটু বেশিই?’
‘হ্যাঁ, সেটা করা উচিত না। অল্পবয়সী অনেক মেয়ে ঠিক সেটাই করে। তুমি জার্মানি যাচ্ছো শুনে আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম। ফিরে আসার পর রডির প্রতি তুমি আবেগ দেখোনি বললেই চলে- সেটাই আমার খারাপ লেগেছিলো। এভাবে বলছি বলে দুঃখিত, বয়স হয়েছে তো! আমার সবসময়ই মনে হয়েছিলো এই বংশের লোকেদের মত তুমিও বুঝি আবেগপ্রবণ হবে। আবেগপ্রবণতা পরে অনেক কষ্ট দেয়। যাহোক, রডিকে তুমি সত্যিই ভালোবাসো তো?’
‘হ্যাঁ, কিন্তু অতিরিক্ত না’, জবাব দিলো এলেনর।
‘তাহলে সুখী হবে তোমরা। রডির দরকার ভালোবাসা, মাত্রাতিরিক্ত আবেগ না। ও সেটা পছন্দ করে না।’
‘রডিকে ভালো করেই চেনো তুমি।’
‘রডিকে তুমি যত ভালোবাসো, ও তোমাকে আরেকটু ভালোবাসলেই সব ঠিক।’
‘পেপারে উপদেশ কলামে যেমন লেখে, ‘প্রেমিকের কাছে নিজের সব বিষয়ে খোলামেলা হয়ো না। ওকে নিজে থেকে বের করতে দাও।’
‘তোমার কি মন খারাপ, মামণি? কিছু হয়েছে?’ জিজ্ঞেস করলেন লরা ফুপু।
‘না, কিছু না।’
‘তোমার কাছে কথাগুলো হয়তো কেমন সস্তা মনে হচ্ছে। তোমার বয়স তো এখনও কম। জীবনটাই আসলে সস্তা, বুঝলে?’
জানালার কাছে গেলো এলেনর। ‘ফুপু, সত্যি করে বলো তো, ভালোবাসা কি কখনও সুখের হয়?’
‘যে অর্থে বলছো- মনে হয় না। কাউকে অনেক বেশি ভালোবাসলে সেটা কষ্টই দেয় বেশি। সেই অভিজ্ঞতা সবারই হয়। ভালোবাসা ছাড়া জীবন পূর্ণতা পায় না।’
মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো এলেনর। “তুমি তো জানোই ব্যাপারটা কেমন। আচ্ছা ফুপু...’

ঘরে ঢুকলো ও’ব্রায়েন।
‘মিসেস ওয়েলম্যান, ডাক্তার এসেছেন।’

-

বত্রিশ বছর বয়সী ডা. লর্ডের চুল বালুরঙা, মুখ তিলে ভরা, চোয়াল অত্যন্ত স্পষ্ট এবং তার চোখও উজ্জ্বল নীল রঙের।

এলেনরের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিলেন মিসেস ওয়েলম্যান। ডাক্তারের চেহারায় মুগ্ধতার ছাপ পরিষ্কার হয়ে উঠলো।
‘এলেনর আর আমার ভাতিজা এসেছে আমার মন ভালো করতে।’
‘চমৎকার!’ বললো ডা. লর্ড। ঠিক এটাই আপনার দরকার ছিলো, মিসেস ওয়েলম্যান!’ এলেনরের দিকে এখনও মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে সে। বিদায় জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো এলেনর।

‘রোজকার সেই এক কাজই করবে নাকি, ডাক্তার? নাড়ি-শ্বাস-তাপমাত্রা মাপা? তোমরা ডাক্তাররা ধান্দাবাজও বটে!’ দুষ্টু হেসে বললেন মিসেস ওয়েলম্যান।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নার্স ও’ব্রায়েন বললো, ‘কী যে বলেন না ডাক্তার সাহেবকে!’
ডা. লর্ড হেসে বললো, ‘মিসেস ওয়েলম্যান আমার আসল ফন্দি ধরে ফেলেছেন দেখি! কিন্তু কী আর করা, এগুলো যে করতেই হবে!’

প্রতিদিনকার প্রশ্নগুলো সেরে চেয়ারে গা এলিয়ে বসলো ডাক্তার। ‘শরীর দেখি ভালোই আছে আপনার।’
‘তার মানে আমি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হাঁটাচলা করতে পারবো?’
‘অত শীঘ্রই না’
‘ভুয়া কোথাকার! এভাবে বিছানায় পড়ে বেঁচে থাকার মানে কী?’
‘বেঁচে থাকারই বা মানে কী, বলুন? সেটাই হচ্ছে আসল প্রশ্ন। মধ্যযুগের এক দাওয়াইয়ের নাম শুনেছেন- লিটল ইজ? খাঁচাটায় দাঁড়ানো, বসা বা শোয়া- কিছুই করা যেতো না। মনে হতে পারে, ওটায় কাউকে রাখলে কিছুদিনের মাঝেই সে মারা যাবে, কিন্তু এক লোক ষোল বছর ছিলো সেটায়। বের হওয়ার পর আরো অনেক বছর বেঁচে ছিলো সে।’
‘গল্পটা দিয়ে কী বোঝাতে চাচ্ছো তুমি?’
‘বলছি যে, বেঁচে থাকাটা হলো একটা প্রবৃত্তি। একটা তাড়না। মানুষ বাঁচতে পারবে বলেই বাঁচে না। যাদের মনে হয় তারা মরলেই বাঁচে, তারা আসলে মরতে চায় না। যাদের বেঁচে থাকার জন্য সব আছে, তারাই ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়, কারণ জীবনের জন্য লড়াই করার শক্তি তাদের নেই। মুখে যাই বলুন না কেন, আপনি আসলে বাঁচতে চান। শুধু শুধু নিজের সাথে তর্ক করে লাভ নেই।’

প্রসঙ্গ পাল্টে ফেললেন মিসেস ওয়েলম্যান,
‘জোয়ান ছেলে তুমি। গ্রামের ডাক্তারি একঘেয়ে লাগে না? শহরে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা নেই তোমার?’
‘না। আমি এখানেই ভালো আছি। জ্বর, বসন্ত, হাম- এসব ছোটখাটো রোগ সারাতেই আমার ভালো লাগে। আমার আসলে কোনো উচ্চাশা নেই। আমি এখানে থেকে থেকেই চুল পাকাবো। মানুষ তখন বলবে, ‘আমাদের ডা. লর্ড আছেন। ভালো ডাক্তার, কিন্তু একেবারে মান্ধাতার আমনের। মনে হয় জোয়ান ডাক্তার অমুককে ডাকলেই ভালো। উনি হালের সাথে তাল মিলিয়ে চলেন...’
‘সব দেখি একেবারে রেকর্ড করে রেখেছো!’

উঠে দাঁড়ালো পিটার লর্ড। ‘আমি তাহলে এখন আসি।’
‘আমার ভাইঝি মনে হয় তোমার সাথে একটু কথা বলবে। আচ্ছা, ওকে কেমন লাগলো তোমার, বলো তো? আগে তো দেখোনি কখনও।’
একেবারে লাল হয়ে গেলো ডা. লর্ডের মুখ। ‘আমার—ওহ! উনি দেখতে বেশ সুন্দরী, তাই না? আর—আর—মানে, বেশ বুদ্ধিমতিও বটে বোঝা যাচ্ছে।’
‘ছেলেটা একদম বাচ্চা...’ আপন মনে ভাবলেন মিসেস ওয়েলম্যান। মুখে বললেন,
‘তোমার উচিত বিয়ে করে ফেলা।’

-

এলেনরের সাথে হান্টারবেরিতে থাকতে কেমন লাগবে, সেই সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাগানে হাঁটছিলো রডি। এলেনরকে পাওয়ার সৌভাগ্যে এখনও কিছুটা বিস্মিত হয় সে। রডি খুঁতখুঁতে বটে, কিন্তু অহংকারী না। এলেনর যে তাকে হ্যাঁ বলেছে, সেটা সত্যিই অবাক করে তাকে।
আগামী দিনগুলো রঙিন হয়েই দেখা দিচ্ছে তার চোখে। এলেনর যদি চায়, বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলবে তারা। অবশ্য সে তাড়া দেবে না। সংসারের প্রথম দিকে একটু অর্থকষ্ট হতে পারে, কিন্তু চিন্তার কিছু নেই। টাকা আসবে। তবে চাচীর দীর্ঘজীবন মন থেকেই চায় রডি। চাচী তার অনেক কাছের মানুষ, বিপদের বন্ধু।
মৃত্যু নিয়ে ভাবতে চায় না রডি। যেকোনো দুঃখজনক বিষয়ই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে সে। হান্টারবেরি তাদের হলে সেখানে সংসার পাততে কেমন লাগবে, সেটা নিয়ে ভাবতে লাগলো সে। মন্দ হবে না। কে জানে চাচী সম্পত্তি কীভাবে বেঁটে গেছেন? কিছু আসে-যায় না অবশ্য। কিছু কিছু মেয়ে স্বামী না স্ত্রী- কে সম্পত্তি পেলো সেটা নিয়ে খুব ঝামেলা করে। এলেনর সেসব বিষয়ে মাথা ঘামায় না।
হাঁটতে হাঁটতে গেট ধরে বেরিয়ে পাশের জংলামত জায়গাটায় ঢুকলো রডি। বসন্তে সেখানে ড্যাফোডিল ফোটে চারদিকে। গাছের ফাঁক দিয়ে আলো সবুজ হয়ে ঢুকেছে ভেতরে। হঠাৎ শান্ত পরিবেশ কিছুটা অশান্ত হয়ে গেলো।
উল্টোদিক থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে আসছে। নরম রোদে ঝলসে উঠছে তার সোনালি চুল।
‘কী অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য!’ স্থানুর মত দাঁড়িয়ে গেলো রডি। দুনিয়াটা যেন বনবন করে ঘুরছে তার চারদিকে। মাছের মত হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলো সে। মেয়েটা তাকে দেখে দৌড় বন্ধ করে এগিয়ে এলো।

‘আমাকে চিনতে পেরেছেন, মি. রডরিক? আমি মেরি জেরার্ড, ওই লজটায় থাকি যে।’
‘ওহ—আচ্ছা—তুমিই মেরি জেরার্ড?’
‘অনেকদিন পর দেখে হয়তো চিনতে পারছেন না,’ লাজুক কণ্ঠে মেরি বললো।
‘হ্যাঁ, তুমি বেশ বদলে গেছো। এজন্যই হয়তো চিনতে পারিনি।’

একদৃষ্টে মেরির দিকে তাকিয়ে থাকা রডি বুঝতেই পারলো না এলেনর কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। মেরি তাকে দেখে শুভেচ্ছা জানালো।
‘হ্যালো, মেরি।’
‘কেমন আছেন, মিস এলেনর? খুব ভালো লাগছে আপনারা এসেছেন। মিসেস ওয়েলম্যান অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেছেন।’
‘অনেকদিন পরে এলাম। নার্স ও’ব্রায়েন তোমাকে খুঁজছে। মিসেস ওয়েলম্যানকে উঠিয়ে বসাতে হবে। তুমি নাকি সেই কাজে সাহায্য করো?’
‘আমি এখনই যাচ্ছি’, বলে চলে গেলো মেরি। তার দৌড়ের অপূর্ব ছন্দ থেকে চোখ সরাতে পারছে না রডি।

কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো এলেনর। তারপর বললো, ‘টেবিলে খাবার দিয়েছে। খেতে চলো।’

-

‘চলো না, মেরি। গ্রেটা গার্বোর ছবি এটা। প্যারিস নিয়ে। নামজাদা এক লেখকের গল্প থেকে করা। একটা অপেরাও আছে এটা নিয়ে।’
‘ধন্যবাদ, টেড, কিন্তু আমি যাবো না।’
রাগ ঝরে পড়লো টেড বিগল্যান্ডের কণ্ঠে, ‘তুমি আর আগের মত নেই। ওসব টিপটপ স্কুল আর জার্মানিতে পড়ে তুমি একদম অন্যরকম হয়ে গেছো। আমাদের আর নিজের স্তরের মনে করো না তুমি।’
‘না, টেড, আমি অমন না।’
রাগ সত্ত্বেও বিশালাকৃতির ছেলেটা প্রশংসার চোখে তাকালো মেরির দিকে। ‘প্রায় লেডিই হয়ে গেছো তুমি।’
‘তোমার চেয়ে তাহলে একটু বেশিই উঁচু স্তরের হয়ে গেছি, না?’ তিক্ত প্রশ্ন মেরির।
‘না, আমি ঠিক সেটা বলছি না’, সমঝদার গলায় দ্রুত বলে উঠলো টেড।
‘যাহোক, ওসব লেডি-ফেডি দিয়ে এখন আর কী মাথা ঘামায় মানুষ?’
‘তা ঠিক, কিন্তু তবুও কেমন যেন লাগে। তোমাকে কেমন যেন ডাচেস-কাউন্টেস গোছের কেউ লাগে।’

সুন্দর কালো পোশাক পরা এক মহিলা এগিয়ে এলো তাদের দিকে। তার চাহনিতে ভয় পেরে একপাশে সরে দাঁড়ালো টেড, শুভেচ্ছা জানালো তাকে। জবাব দিয়ে চলে গেলো মিসেস বিশপ।
‘ওনাকে দেখলে ভয়ে রক্ত হিম হয়ে যায় আমার।’
‘উনি আমাকে একদম পছন্দ করেন না। সারাক্ষণ কড়া কড়া কথা শোনান’, বললো মেরি।
‘উনি আসলে তোমাকে হিংসা করেন, বুঝলে?’
‘তা হতে পারে...’
‘অনেক বছর হান্টারবেরি দেখাশোনা করেছেন উনি। সবাইকে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আর এখন মিসেস ওয়েলম্যান তোমাকে আদর করেন দেখে হিংসায় জ্বলছেন উনি।’
‘কথাটা শুনে হয়তো হাসবে, কিন্তু কেউ আমাকে অপছন্দ করুক, সেটা আমি সহ্য করতে পারি না।’

চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো মেরি।

‘কোথায় যাও?’
‘নার্স হপকিন্সের বাসায় চায়ের দাওয়াত আছে।’
মুখ কুঁচকালো টেড। ‘ওই মহিলা! তার মত গল্পবাজ আর একটাও পাওয়া যাবে না গ্রামে। সবকিছুতে তার নাক গলানো ফরজ।’
বিদায় জানিয়ে চলে গেলো মেরি। বিরস দৃষ্টিতে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো টেড।

-

গ্রামের শেষ মাথায় নার্স হপকিন্সের বাসা। মেরি যখন এসে ঢুকলো, তখন মাত্র টুপিটা খুলছে সে।
‘এসেছো তাহলে। আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো। মিসেস ক্যাল্ডেকটের ড্রেসিং নিয়ে একগাদা হাঙ্গামা সেরে আসলাম। তোমাকে দেখলাম রাস্তার ওখানে টেড বিগল্যান্ডের সাথে কথা বলছিলে...’
‘হুঁ...’
মেরির বলার ভঙ্গি শুনে চুলা জ্বালাতে থাকা নার্স হপকিন্স ফিরে তাকালো তার দিকে।
‘ও কিছু বলেছে তোমাকে?’
‘তেমন কিছু না, শুধু বলেছিলো ওর সাথে সিনেমা দেখতে যেতে।’
‘আচ্ছা...। হ্যাঁ, ছেলেটা মন্দ না, গ্যারেজে ভালো কাজও আছে তার, ক্ষেত থেকে তার বাবার কিছু পয়সাকড়িও আছে। কিন্তু তুমি শিক্ষিত মেয়ে। টেড বিগল্যান্ডের ঘরণী হিসেবে তোমাকে মানায় না। তুমি বরং ম্যাসাজের লাইনেই যাও। নতুন নতুন লোকের সাথে পরিচয়ও হবে, আবার নিজের জন্য সময়ও থাকবে হাতে।’
‘ভেবে দেখবো নে আমি। মিসেস ওয়েলম্যানকে আমি সব বলেছি। আপনার কথাগুলোই বলেছেন উনি। বলেছেন আমাকে সাহায্যও করবেন।’
‘সেটা তাহলে এখন কাগজে-কলমে লিখে দিলেই হয়। শরীর খারাপ হলে মানুষ অনেক কিছুই বলে।’
‘আচ্ছা, মিসেস বিশপ কি সত্যিই আমাকে অপছন্দ করেন? নাকি সেটা আমার কল্পনা?’
এক মুহূর্ত চিন্তা করলো নার্স হপকিন্স।
‘চেহারাটা তার কঠিন বটে। আসলে কী, কমবয়সী ছেলেমেয়েদের হাসিখুশি সে দেখতে পারে না। হয়তো তোমার প্রতি মিসেস ওয়েলম্যানের দরদ তার সহ্য হচ্ছে না। বাদ দাও, ওসব নিয়ে তুমি মাথাব্যথা কোরো না।’

(চলবে)


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×