somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোর্ড পরীক্ষা ও কিছু বোলচাল

০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জুলমত আম বাগানে এসে হোস পাইপটা হাতে নিয়ে গাছের দিকে ক্ষাণিকক্ষণ তাকায়ে থাকলো।ফলন এইবার একদম ভালো হয় নাই।ব্যবসা যে এইবার কী হবে!কুঁড়ি যাও কিছু ধরছিল তাও সব অকালের বৃষ্টিতে ঝরে পড়ে একাকার।যা আছে গাছে এইগুলির উপরেই ভরসা।এইগুলিকে টিকায়ে রাখতে হবে যে কোনও মূল্যে।এত এত টাকার সার,ওষুধ এইসব তো আর বৃথা যেতে দেয়া যায় না...
"ঐ ময়না,ঐ!তর এইহানে কী?" কাছেই নিজের মেয়েকে দেখতে পেয়ে ডাক দেয় জুলমত।
"আব্বা দেইখবার দাও না!"
"উঁহ!আবদার দেহো...কী দেইখবার চাস?হ্যাঁ?কী দেইখবার চাস?"
"তোমারে কাম করতে দেহুম।"
মেয়ের সাথে আর কথা বাড়ায় না জুলমত।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সাথে থাকা কন্টেইনারটার ভালভ খুলে দেয়,ঝটকা দিয়ে তরল গুলি কন্টেইনারটার ভিতর থেকে বের হয়ে গাছের পাতা,ফলের গায়ে পড়তে থাকলো।কাজে মনোযোগ দেয় জুলমত।
"আব্বা ও আব্বা!ঐগুলি কী?"
"কোন গুলি?"
"ঐ যে ছিডাইতাসো যে..."
"ওষুধ।"
"ওষুধ তো মাখে আর নাইলে খায়,তুমি ছিডায়া দিতাসো ক্যা?"
জুলমত ক্ষাণিকক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।কী উত্তর দিবে?কোন উত্তর কী হয় আসলেই?যে আম গাছে থেকে পাকে তাকে পাকানোর জন্য ওষুধ ছিটাচ্ছে এটা বলবে?এর পরের প্রশ্ন কী হবে?সেটার উত্তর দিতে পারবে তো?
গল্প বলার দক্ষতা আমার তেমন নাই।গল্পটা শুধু প্রসংগের অবতারনা।
প্রসংগ:বোর্ড পরীক্ষা ও তার ফলাফল।


এইচ.এস.সি. এর রেজাল্টের খুব দেরী নেই।যারা এবার এ প্লাস নামক অতি আকাংখিত বস্তুটি অর্জন করে বের হবে তারা কী আসলেই তার যোগ্য?ওষুধ ছিটানোর মত করে প্রশ্নপত্র ছিটিয়ে তাদের যে পরীক্ষার জন্য পাকানো হয়েছে তা তো ওপেন সিক্রেট।এরা যোগ্য না।এটা এদের অপরাধও না।তাহলে অপরাধটা কার/কাদের?
প্রথমেই আসি সরকারের কথায়।
গাছ থেকে ঝরে পড়া আমের কুঁড়ির মত বহু ছেলে মেয়ে মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরুতেই ঝরে যায়।আর এই সংখ্যাটা নেহায়েত কম না।
বিশ্বব্যাংকের ২০০৯ সালের রিপোর্ট মতে প্রাইমারিতে ভর্তি হয়ে সফলভাবে প্রাইমারি শেষ করে ৬০%।২০১০ এ আরেক গবেষনায় সাইয়েদ গিয়াসুদ্দিন আহমেদ,মো: মাফিজুর রহমান এবং মতিলাল পাল দেখতে পান যে প্রাইমারি শেষ করা ঐ ৬০ শতাংশের থেকে ৬০% থেকে ৭০% ঝরে যায় মাধ্যমিকের গন্ডি পেরুনোর পরেই।
অর্থাৎ নিদেনপক্ষে ৩৬% শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা জীবন ত্যাগ করে।এই অবস্থায় বাকী ৬৪% এর ফলাফল যদি সরকার ভালো না দেখাতে পারে তাহলে তো শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আংগুল উঠবে,তা কী আর সরকার হতে দিতে পারে?
সরকারের আরেক দোষ হচ্ছে ঘন ঘন শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গবেষনা।যেখানে পুরো বিশ্বে শিক্ষা পদ্ধতি হিসেবে কোনও না কোনও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় তারপর তা নিয়ে গবেষনা হয় আমরা সেই রাস্তায় না হেঁটে আগেই ঐ শিক্ষা পদ্ধতি নামক বেচারাকে নিয়ে গবেষনা করে তার অবস্থা যাচ্ছেতাই বানিয়ে দিয়েছি।
আর সর্বশেষ দোষ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান নিশ্চিত না করা।আমাদের দেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শক দল নেই,তারা গিয়ে হঠাৎ হঠাৎ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুঁ মেরে দেখে না যে কেমন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে বা আদৌ কোন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে কিনা,যে ব্যাপারটা উন্নত দেশগুলোতে অহরহই দেখা যায়।
এরপর আসে বড় বড় স্কুল কলেজগুলোর গভর্নিং বডিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বসানো।এতে একটা ব্যাপার ঘটে যে তারা "ডোনেশন" নামক উৎকোচ নিয়ে যারা সুযোগ পাবার না তাদেরও ভর্তি করান এবং পরের বার যাতে আরও বেশি উৎকোচ গ্রহণ করতে পারেন তার জন্য যে কোনও মূল্যে ফলাফল ভালো দেখতে চান।এর জেরে তাঁরা বহু কিছু করেন।সাম্প্রতিক সময়ের প্রশ্ন ফাঁসের আগে থেকেই কতিপয় স্কুলের নামে রটনা ছিল যে তাদের শিক্ষকেরা নাকি বোর্ড পরীক্ষা চলাকালীন রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে বোর্ডে উত্তরগুলো লিখে দিয়ে আসতেন।
এত কিছুর পরেও যখন এইসব শিক্ষার্থীর জন্য প্রশ্নপত্রও আবার হাতে দিয়ে দিতে হয় (তাও আবার উত্তরসহ।আফটার অল খুব ফাস্ট জেনারেশন-ফ্ল্যাশকেও হার মানায়-খুব দ্রুত পাতা উল্টাতে গিয়ে উত্তর খুঁজে পাবে না আর নয়তো দ্রুত উত্তর খুঁজে না পেয়ে তাদের ওপর অস্থিরতা ভর করবে এবং এতে তারা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললে তাতে আশ্চর্য হবারও কিছুই থাকবে না!) তখন তাদের মেধা যাচাইয়ের কিছু আছে এমনটা আর মনে হয় না।
সরকারের এতসব ব্যর্থতা শুনার পর সেইসব এ প্লাস প্রাপ্তদের অভিভাবকদের কোন অপরাধ আপাত দৃষ্টিতে নেই বলেই মনে হয়,কিন্তু দোষ তাদেরও আছে।সন্তান বিপথে যাচ্ছে বুঝেও তাকে প্রশ্ন কিনে দেয়া সবচেয়ে বড় অপরাধ।এমন যাঁরা তাদের জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে,"আপনাদের নিজেদের শিক্ষা কী আপনারা এভাবে প্রশ্ন পেয়েই নিয়েছেন?সব স্টেজে?" তাহলে আমি বলবো আপনাদের পেট চালানোর মত শিক্ষা আপনারা অর্জন করেছেন কিন্তু মনটাকে শিক্ষিত করার মত শিক্ষা আপনারা প্রাপ্ত হন নি।তাই আপনাদের উচিৎ আবারো প্রাথমিকে গিয়ে ভর্তি হওয়া।কারণ,মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদানের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র প্রাথমিক স্তর আর
ভয় পাবেন না!কোন অর্থ ব্যয় নেই।আফটার অল,প্রাথমিক ফ্রী।তাই অর্থ হারের ভয় নেই।শুধু একটু সময় দিতে হবে...তা-ই নাহয় দিলেন!
সমাজের মানুষ হিসেবে আমাদের নিজেদেরও দোষ আছে।এমন অভিভাবকদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিৎ,যা আমরা করতে চাই না।
আমরা দেখি,দেখে হয় চুপ মেরে যাই নয়তো ফেইসবুকে স্ট্যাটাস বানিয়ে দেই সেইসব ছেলেমেয়েগুলোকে,কিন্তু এদের মস্তিষ্ক বিবর্জিত পিতা-মাতারা আমাদের নজরে আসে না।সন্তানের ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় দায়ভার তাদের।এখন তারা যে কারণই দেখাক না কেন সেটা যে খুব গ্রাহ্যকর কিছু না তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।তাদের কারণগুলি কী কী হতে পারে?আত্মিয় স্বজনের টিটকারির ভয়?সমাজে তাদের মুখ ছোট হয়ে যাবার ভয়?নাকি এই পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো না করলে তাদের সন্তানের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে এই ভয়?
আত্মিয় স্বজন লক্ষ কথা বলতে পারে কিন্তু ঐ ছেলে বা মেয়েটিকে তৈরি হতে হবে নিজেকে,নিজের জীবন গুছাতে আর এভাবে সে কট্টুক কী গুছাতে পারবে তা ভয়াবহভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
তাদের একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে।প্রশ্নটা হল:যে প্রশ্নপত্র উত্তরসহ পেয়েই পরীক্ষা দিচ্ছে তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তার আদৌ কি কিছু আছে?
তার ভবিষ্যত নিয়ে যদি এতই চিন্তিত থাকতো তাদের অভিভাবক তাহলে হয়তো তাদের এই পর্যায়ে রেখে দিতো আরও কিছুদিনের জন্য...অন্তত তারা মজবুত হয়ে প্রস্তুত হতো।
উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ফসলের মত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও এ+ ফলাচ্ছে কিন্তু এই ফলনে কিছুই নেই।না আছে নির্যাস,না আছে পুষ্টি।
এবারও যে ১২লাখ পরীক্ষা দিয়েছে তার মধ্য থেকে এ+ পাওয়ার উচ্চহার বজায় থাকবে এমন ব্যাপক প্রশ্নসম্ভারের পর তার ব্যাপারে আমি ব্যাপক আশাবাদী।
আমরা বুঝছি সবই,কিন্তু দেখছি নিশ্চুপ!
আর আমাদের দেশ হয়ে উঠছে স্পয়েলেজের গোডাউন।ঠিক পোকা খাওয়া,ফাটা,নষ্ট আমের মত।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৪৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×