somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জংগিবাদীদের ভন্ডামি (খন্ড-১)

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান সময়টা পুরো বিশ্বের জন্যই অস্থির।চারিদিকে ব্যাপক অর্থনৈতিক দৈন্যদশা,হানাহানি,অযথা যুদ্ধ আর এর মধ্যে "গোদের ওপর বিষফোঁড়া" হয়ে দেখা দিয়েছে জংগী সমস্যা।এই জংগী ব্যাপারটা আগের দিনের সন্ত্রাসীর সাথে কিছু ভন্ডামি আদর্শের এক জঘন্য মিক্স।আমাদের দেশে এই ঝামেলা একেবারেই নতুন।অনেকেই বলতে পারে যে এই সমস্যা একেবারেই নতুন না,আগেও হয়েছে...হ্যাঁ!বক্তব্য সঠিক।কিন্তু এই সমস্যার এত নৃশংস রূপ,এইসব নরপিশাচের এত খোলামেলা আত্মপ্রকাশ এর আগে আর কখনও দেখা যায় নি।


এদের প্রধান সমস্যা কী তা বুঝার জন্য আপনাকে বেশি দূর যেতে হবে না।বহু ব্লগ পোস্ট পাবেন।এদের দাবী কী তা এরা বহুদিন ধরেই জারি করার চেষ্টা করছে (আহাম্মকের বৃথা আস্ফালন আর কি!)।এদের দাবী শরীয়াহ আইন এবং খিলাফত (যেখানে মুক্ত স্বাধীন সমাজে গনতন্ত্র বিকশিত হচ্ছে সেখানে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন নেই এমন কিছুর দাবী সম্পূর্ণ বর্বরতা।কারণ এতে তারা ধর্মের নামে যা-তা বলে নিরীহ মানুষদের স্রেফ বিশ্বাসের বলি করে...যার উদাহরণ আমরা সাম্প্রতিক সময়েই দেখেছি)।এরা বুঝে না কিছুই,কিন্তু মানুষ মারতে এদের হাত কাঁপে না।এদের মস্তিষ্কে 'ঘিলু' নামক পদার্থ কিছু নাই,অতি অবশ্যই নাই।থাকলে তাদের মধ্যে এইসব সংস্কার বাসা বাঁধতে পারতো না।খুব হালকা আলোচনা করে ফেলেছি এই পর্যন্ত,এখন একটু একটু করে গভীরে যাই।এখন বলি কেন এদের চিন্তা-ভাবনা,ধ্যান-ধারণা সব ভন্ডামি আর কেন 'ঘিলু' নামক পদার্থ থাকলে এরা এমন সংস্কারের বশবর্তী হতে পারতো না।আর এটা অন্য অনেকের জন্যও জরুরী যারা মনে মনে হলেও শরীয়াহ আইন চায় (আশ্চর্য হবেন না।আপনার আশেপাশে এমন মানুষ হয়তো আছে যারা মনে মনে এমন আশা পোষন করে)।এদের জন্য কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তরে তাদের যেসব মতামতগুলো আপনি শুনতে পারেন এবং সেসব উত্তরের বিপক্ষে অকাট্য যুক্তিগুলো তুলে ধরছি।

১.ইকোনমি সম্পর্কে বিশ্লেষণ কী?ইকোনমিক মডেল আছে কোন?গ্রোথ মডেল কী?সাস্টেইনেবিলিটি আসবে কীভাবে?

এই প্রশ্নের জবাব দেবার আগে কিছু ব্যাপার বলে নেই।

ইসলামী ইকোনমির কিছু মডেল আপনি দেখতে পাবেন ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্য দিয়ে।তাদের প্রধাণ উদ্দেশ্য হচ্ছে সুদবিহীন ব্যবসা করা।যেহেতু ইসলামে সুদ হারাম তাই তারা সুদবিহীন ব্যবসাই বেছে নেয়।যদিও তারা কতটা সুদবিহীন তা নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক আছে,তারপরেও তারা সুদের প্রভাবকে হ্রাস করার চেষ্টা করে বলেই প্রচলিত।ব্যাংকের সাথে 'ইসলামি' তকমাটা লাগানোর সুবিধাও কম না।বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যে রিজার্ভ অন্যান্য ব্যাংকের দেখাতে হয় ১৯% সেখানে ইসলামি ব্যাংকের দেখাতে হয় মাত্র ১১.৫০%।একটি ইসলামি ব্যাংক একটি ঋণ দেবার ক্ষেত্রে সাধারণত কোন "ফিজিক্যাল গুডস" না থাকলে তার বিপরীতে ঋণ দেয় না যা তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতিকে নিম্ন পর্যায়ে রাখে।অন্যান্য ব্যাংক অনেক সময় বিনা জামানতেও ঋণ দেয় যার কারণে তাদের "লোন ডিফল্টার" এর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়,যেদিক থেকে ইসলামী ব্যাংক অনেক নিরাপদ থাকে।
ইসলামে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করে যাকাত।সম্পদের মালিক তার সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দান করবেন যার দ্বারা দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নয়ন করা হবে।বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় যাকাত ফান্ড আছে আর সেখানে যাকাত উত্তোলন করে তা দরিদ্রদের জন্য ব্যবহারও করা হয়।
আমাদের দেশে এখন ইসলামি ব্যাংক আছে ৭টা।এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই,সেটা এখন এতোটা ছড়িয়ে গেছে যে আপনি যেই এলাকাতেই থাকুন না কেন তার আশেপাশে এই ব্যাংকের একটি শাখা দেখতে পাবেন নিশ্চিত।এক্সিম ব্যাংকের স্লোগানে তো পরিষ্কার লিখে দেয়া "একটি শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক"।

অর্থাৎ সরকারী নীতিমালা বা গনতন্ত্র কেউ ইসলামের বিরোধীতা তো করছেই না বরং আমাদের দেশে ইসলামি হওয়ায় কিছু প্রতিষ্ঠান জায়গায় জায়গায় বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।অর্থাৎ,চাইলেই আপনি শরিয়াহ মতে চলতে পারেন।নিজের মত চলুন,আপনাকে সেই ব্যবস্থা করেই দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

তাহলে কেন এদের এই মিথ্যা আস্ফালন?অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।এদের মতে শরীয়াহতে বলা সব কিছুই অন্ধ ভাবে অনুসরণ করতে হবে।এরা অন্ধবিশ্বাসে ধরেই নিয়েছে এটা "আল্লাহ"এর দেয়া বিধান তাই এতে যদি না খেতে পেয়ে মানুষ মরেও তাহলেও সেটাই ঠিক (যতসব মূর্খের দল)।এরা ভেবেও দেখেনি যে যেই ব্যবস্থা নিয়ে এদের এত আস্ফালন সেটা কিন্তু এত বিশাল জনসংখ্যার উপরে কখনওই প্রয়োগ করা হয় নি,এই তত্ত্বের গ্রোথ মডেল বলে পরীক্ষিত কিছুই নেই,এই শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থনীতির সাস্টেইনেবিলিটিও শূণ্যের কোঠায়-কারণ,মুদ্রাভিত্তিক ব্যবস্থার সাথে তা মোটেও পরিচিত নয়।এখন যে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং তা মুদ্রা ভিত্তিক ব্যবস্থার ছায়াতল ছাড়া মোটেও টিকে থাকার উপযোগী না।এখন সুপ্রাচীণ গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডে ফিরে যাওয়ার সুর ধরলে তাদের মত অতি প্রাচীণ বর্বরদের আসলে আর কিছু বলারই থাকে না।গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড গুঁড়িয়ে দিয়েই এসেছে আধুনিক মুদ্রা ব্যবস্থা তো সেখান থেকে পিছন দিকে হেঁটে কী সুফলটা আসবে?কার্যত কিছুই না।ষড়যন্ত্র তত্ত্বধারীরা হাজার কথা বলুক প্রকৃত সত্য এটাই যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড শুধু অকেজোই না,সম্পূর্ণ সময়ের অপচয়।তা কেন সেটা নিয়ে অন্য কোনও পোস্টেই নাহয় আলোচনা করব।

সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী মতে চললে গরীবদের ঋণ দেবে কে?তাদের তো কোনও সম্পত্তি নেই,তাই তারা জামানতও রাখতে পারবে না আর এর ফলে তারা ঋণও পাবে না,তাই না?(বাহ!কী সুন্দর দারিদ্র দূরীকরণ ব্যবস্থা!)

সেই সেমেটিক সময়ে জ্ঞানকে আলাদা কোনও মূল্যে ধরা হতো না,এখন জ্ঞানের আলাদা মূল্য আছে।প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন 'টেকনিক্যাল নো হাউ' হেডের অধীনে জ্ঞানের আর্থিক মূল্য স্বীকৃত।সেই সময়ে গ্রন্থস্বত্ব ছিল না,এখন আছে।বিজ্ঞানের গবেষনায় তখন প্রধাণ ছিল রসায়ন আর পদার্থবিদ্যা আর এখন জীববিদ্যা।এই জীববিদ্যার গবেষনা এখন এতটাই সুদূরপ্রসারী যে জিন(gene) থেকে কৃত্রিম অংগ প্রত্যংগ সৃষ্টির চেষ্টাও প্রায় সফলতার মুখ দেখতে চলেছে।এই রকম কাজকে এইসব জংগীবাদি নর্দমার কীটগুলো কী বলবে?'খোদার উপর খোদকারী' বলে বন্ধ করে দিবে?এই গবেষনার ক্ষেত্রগুলোতে অর্থ যোগান দেবার নীতিমালা আছে কোনও?

যেসব অসভ্য বর্বর এইসব সেমেটিক চিন্তা ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়,তা বিশ্বাস করে আর তা চাপিয়ে দিতে মানুষ খুন পর্যন্ত করে সেগুলো শুধু জানোয়ার না,সেগুলো একইসাথে কপট,ভন্ড আর প্রতারক।এইসব প্রতারককেই ইসলামে ঘৃনা করতে বলা হয়েছে সর্বোতভাবে।

সামনের খন্ডগুলিতে অন্যান্য ক্ষেত্রে এদের ভন্ডামি এবং ভন্ডামি খন্ডানোর যুক্তিগুলো তুলে ধরার আশা রাখছি।


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×